সম্পাদক সমীপেষু: সাফল্যের শিখরে

যোগ্যতার দিক থেকে ঝুলন গোস্বামীও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পঁচিশটি ওয়ান ডে ক্রিকেটে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০২
Share:

গোটা বছর ধরে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ এবং পুড়িয়ে মারার খবরের স্রোতের মুখে বর্ষশেষে ভারতীয় নারীদের বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে অসাধারণ সাফল্যের খবরে (‘আইসিসি বর্ষসেরা দু’দলেই মন্ধানা, আছেন ঝুলনও’, ১৮-১২) যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস এনে দিল। বিশ্বক্রিকেটের আঙিনায় ভারতীয় মহিলা খেলোয়াড়রা নিজেদের আধিপত্য ও আধিক্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। আইসিসি-র বর্ষসেরা মেয়েদের ক্রিকেট দলে স্থান করে নিয়েছেন বাঁ-হাতি ওপেনার স্মৃতি মন্ধানা, ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি— দুটো দলেই। ওয়ান ডে দলে আরও আছেন ঝুলন গোস্বামী, পুনম যাদব এবং শিখা পান্ডে। টি-টোয়েন্টি দলে মন্ধানার সঙ্গে আরও আছেন অলরাউন্ডার দীপ্তি শর্মা আর উনিশ বছর বয়সি রাধা যাদব। তেইশ বছর বয়সি মন্ধানা ভারতের হয়ে খেলেছেন ৫১টি ওয়ান ডে এবং ৬৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এই দু’টি ক্রিকেটে তাঁর সংগ্রহে যথাক্রমে ২,০২৫ এবং ১,৪৫১ রান। তা ছাড়া দু’টি টেস্ট ম্যাচেও খেলেছেন। টেস্ট ম্যাচে ভারতের হয়ে প্রথম খেলেন ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং জয় এনে দেন দু’টি ইনিংসে যথাক্রমে ২২ ও ৫১ রান করে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে তাঁর প্রথম শতরান (১০২) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬’য়, এবং দ্বিতীয় শতরান (অপরাজিত ১০৬) ২০১৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে। চলতি বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর দ্রুততম অর্ধশত রানের (মাত্র ২৪ বলে) রেকর্ড। সুতরাং যোগ্য খেলোয়াড় হিসেবেই দুটো দলেই সুযোগ পেয়েছেন মন্ধানা।

Advertisement

যোগ্যতার দিক থেকে ঝুলন গোস্বামীও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পঁচিশটি ওয়ান ডে ক্রিকেটে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দশটি টেস্ট ম্যাচে তাঁর সংগ্রহে ৪০টি উইকেট। অলরাউন্ডার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর সংগ্রহ ২৭১টি উইকেট এবং ১৫৯৩ রান, যার মধ্যে অর্ধশত রান তিনটি। সুতরাং ওয়ান ডে দলে অন্তর্ভুক্তিতে ঝুলন গোস্বামীর যোগ্যতাও প্রশ্নাতীত। আশা করা যায় ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটাররা বিশ্বে ভারতের মুখ আরও উজ্জ্বল করবেন।

প্রমথরঞ্জন ভট্টাচার্য

Advertisement

কলকাতা-৮৪

বোকা বানানো

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বের ভারতীয়দের আকাঙ্ক্ষার কথা ভেবে চার মাসের মধ্যেই অযোধ্যায় রামমন্দির গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে। গোটা বিশ্বের কথা থাক, দেশের বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে অমিত শাহেরা বাদে, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী— তামাম ভারতবাসী চাইছেন আগে দেশ বাঁচুক, মন্দিরের কথা পরে। এই মুহূর্তে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিক পঞ্জি প্রত্যাহারের দাবিতে দেশ উত্তাল। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। প্রতিবাদে মুখর হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পথে নেমেছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া থেকে সর্বস্তরের নরনারীরা। আর সেই প্রতিবাদ দমনের নামে পুলিশের বর্বরোচিত আচরণে রক্ত ঝরছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরও। এ দিকে আইসিইউ-তে শুয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। উত্তরণের কোনও দিশা নেই। অপর দিকে দেশ জুড়ে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে মহিলাদের ওপর অত্যাচার, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংস ঘটনা। নিতান্ত শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। অথচ বছরের পর বছর ধরে জমে থাকছে ধর্ষণের মামলা। আতঙ্কে, হতাশায়, ক্ষোভে প্রহর গুনছে নির্যাতিতার পরিবার। যদিও সরকার নির্বিকার। দেশ জ্বলছে, আর সেই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মজে আছেন চার মাসের মধ্যে রামমন্দির গড়ার কাজ শুরু করার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে। বরং অমিত শাহ যদি বলতেন, দেশবাসীর প্রতিবাদকে মর্যাদা দিয়ে চার মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করা হবে কিংবা পুনর্বিবেচনা করা হবে এবং এর পর থেকে তাঁর সরকার অভিযুক্ত সব ধর্ষণকারীর যাবতীয় বিচার প্রক্রিয়া চার মাসের মধ্যে শেষ করে যথোপযুক্ত শাস্তিদানের ব্যবস্থা করবে, তা হলে বাস্তবসম্মত হত। আসলে এই সরকার সব সময়ই চেয়েছে সমস্যা থেকে জনসাধারণের দৃষ্টিকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে। যা একান্তই নিন্দনীয়।

অমিত শাহকে এব্রাহাম লিঙ্কনের একটি বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিই। তিনি বলেছিলেন: অল্প কিছু লোককে অল্প কিছু দিন বোকা বানানো যায়, বেশ কিছু লোককে বেশ কিছু দিন বোকা বানানো যায়, সব লোককে চিরদিন বোকা বানানো যায় না।

সমীর কুমার ঘোষ

কলকাতা-৬৫

হঠাৎ অনাগরিক?

‘অমিত শাহের দাবি, নাগরিকত্ব দেবে শুধু এনআরসি’ (১৮-১২) সংবাদে পড়লাম নাগরিকত্ব প্রমাণে আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের কোনও ভূমিকা নেই। খুবই উদ্বেগজনক প্রতিটি ভারতীয়দের কাছে। এনআরসিতে যাঁদের নাম উঠবে কেবলমাত্র তাঁরাই প্রমাণিত হবেন ভারতীয় নাগরিক। ভারী অদ্ভুত যুক্তি। এবং চিন্তারও বিষয় বটে। তা হলে এনআরসিতে নাম তোলার জন্য কী কী কাগজপত্র দাখিল করতে হবে? আগে সরকার সেটা স্পষ্ট করে জানাক। এ ভাবে ধোঁয়াশার মধ্যে রাখা কোনও কাজ নয়। অসমে এনআরসিতে দেখেছি একই পরিবারের সদস্যদের কারও নাম আছে কারও নেই। এটা কোন ধরনের যুক্তি? অসমে বহু বছর ধরে বসবাস, জন্ম, পড়াশোনা, চাকরি সবই অসমে হওয়া সত্ত্বেও এনআরসিতে কেন নাম নেই সরকারের কাছে তার সঠিক উত্তর নেই। এ রকম তো অন্যান্য রাজ্যেও হতে পারে। ফলে সাধারণ মানুষের এনআরসি নাম শুনলে আতঙ্কিত হওয়ারই কথা। আতঙ্কে মানুষ মারা যাচ্ছেন।

এক অসমে এনআরসি করতে সরকারের খরচ হয়েছে ষোলো হাজার কোটি টাকা। তা হলে সারা ভারতে প্রতিটি রাজ্যে এনআরসি করতে ব্যয় হবে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। এই টাকার পুরোটাই জনগণের দেওয়া কষ্টার্জিত করের টাকা। সরকার ইচ্ছেমতো নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য লক্ষ কোটি টাকা খরচ করতে পারে কি? যে দেশে ৭৭ শতাংশ মানুষ দু’বেলা পেট পুরে খেতে পান না। বিনা চিকিৎসায় মারা যান লক্ষ লক্ষ মানুষ, সে দেশে এনআরসির নামে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা সাজে কি? তা ছাড়া এনআরসি করলে সাধারণ মানুষের কী উপকার হবে? এনআরসি করলে গরিব মানুষের চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার ব্যবস্থা সরকার বিনামূল্যে দেবে কি? উত্তর নেই। তা হলে এত খরচ করে এনআরসি করার কোনও দরকার আছে কি?

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে সারা দেশে আগুন জ্বলছে। শত শত কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে। মানুষের বিড়ম্বনা বাড়ছে। বাড়ছে মানুষের আতঙ্ক। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল স্থগিত রাখুক সরকার। বন্ধ করুক এনআরসি। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, এনআরসির থেকে এখন বেশি দরকার মানুষের রুটি, রুজি। এনআরসি না করে সেই টাকায় সরকার বরং কারখানা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল গড়ে তুলুক। তাতে দেশবাসী উপকৃত হবেন।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল

কোন্নগর, হুগলি

পোশাক এবং

ভিড়ে ঠাসা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ছাড়ল শিয়ালদহ থেকে। অনেক বাতিল ট্রেনের এককাট্টা ভিড় একটি ট্রেনে। পুরী-ফেরত সংরক্ষিত কামরায় হঠাৎ উঠলেন দু’জন বয়স্ক লোক এবং এক শিশু— যাবেন মালদহ। চোখ বুজে থাকা শ্রেয় মনে করে আমি এবং আমার মতো অনেকেই ঘুমানোর ভান করে থাকলাম। শুধু জেগে থাকা দু’জন উঠে জায়গা ছেড়ে দিল বয়স্ক দু’জনকে। আধখোলা চোখে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করে আবার নিমীলিত করলাম চক্ষু।

হ্যাঁ, পোশাক দেখেই চেনা গিয়েছিল দু’জনকে। নাম তাঁদের জামির আর আখতার, এঁরাও মালদহ যাবেন। এঁদের তো তবু পোশাক দেখে চেনা যাচ্ছে। কী চিনছি, সেটাই কথা। পোশাক যদি সকলকে এক রকম করে দিতে পারত, আর কি চিন্তা ছিল? দুর্ভেদ্য মুখোশের আড়ালে আসলি মুখগুলো চেনাটাই না কাজ!

শুভেন্দু দত্ত

কলকাতা-১০১

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement