একে বলে পাহারা?
২-৮ তারিখে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখে ধাক্কা লাগল। ছবির নীচে ক্যাপশন লেখা: ‘‘উন্নাওয়ে নির্যাতিতার বাড়ির বাইরে পুলিশি পাহারা।’’ কিন্তু এই কি পাহারা দেওয়ার ভঙ্গি? সাত জন পুলিশ কি সত্যিই পাহারা দিচ্ছেন? কেউ বিশ্রাম নিচ্ছেন, কেউ মোবাইল দেখছেন, এক জন তো শুয়েই পড়েছেন এবং মোবাইলে ছবি দেখছেন। বাকিদের অবস্থাও ওই রকমই। কাউকে দেখেই তো মনে হল না আক্রমণ ঠেকাতে প্রস্তুত। তাড়াতাড়ি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁরা বাড়িটাকে রক্ষা করতে উদ্যত হবেন, ছবি দেখে এমনটা বিশ্বাস করা শক্ত। কিন্তু ভাবুন তো, এটা যদি আমাদের কোনও বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর বাড়ি হত?
প্রলয় কিশোর দাশগুপ্ত
কলকাতা-৭৫
অন্যায্য
‘ন্যায্যতার দাবি’ (৩১-৭) শীর্ষক সম্পাদকীয় পাঠ করিয়া স্তম্ভিত হইতে হয়। উচ্চ ন্যায়ালয় এক বৎসরের পর্যবেক্ষণ ও শুনানির উপর ভিত্তি করিয়া যে মহার্ঘ ভাতাকে ‘অধিকার’ বলিয়া স্বীকৃতি প্রদান করিল, তাহাকে ‘গোলমেলে’ বলিয়া দাগিয়া দেওয়া হইল!
লেখা হইয়াছে, ‘‘কর্মী নিয়োগের সময় সরকার জানাইয়া দেয়, যখন যে রকম ভাতা দেওয়া হইবে, তাহাই কর্মীর প্রাপ্য।’’ প্রকৃতপক্ষে কর্মী নিয়োগের চুক্তিপত্রে লেখা থাকে: "...plus other usual allowances as admissible under the existing rules and orders of the Govt. issued from time to time." মহার্ঘ ভাতা হইল এই রকমই একটি usual allowance, যাহার বিধান সরকার প্রণীত ROPA'2009 Rules-এ বর্ণিত।
লেখা হইয়াছে, ‘‘...মহার্ঘ ভাতা কর্মদাতার আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল।’’ যে কর্মদাতার নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য, উন্নয়নের সূচক গড় জাতীয় বৃদ্ধির অনেক উচ্চে, প্রতি বৎসর লক্ষকোটি টাকার বিনিয়োগ আসিতেছে, সর্বোপরি যে রাজ্যে মন্ত্রী, বিধায়ক, পঞ্চায়েত/পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের ভাতা এক ধাক্কায় একশত শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পায়, সেই রাজ্যের আর্থিক অবস্থা কী রূপ বলিয়া ধারণা হয়?
লেখা হইয়াছে, ‘‘...প্রথায় কর্মীর কুশলতা ও কর্মদক্ষতা বিচারের কোনও অবকাশ নাই।’’ সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রেও OPR/ACR/SAR জাতীয় কিছু প্রথা আছে, যাহার মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করিয়াই ‘পাইকারি হার’-এর পরিবর্তে নিয়ন্ত্রিত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়।
লেখা হইয়াছে, ‘‘সমস্তরের সব কর্মীর সমান হারে বেতন বাড়াইবার বাধ্যবাধকতা নহে, দক্ষ কর্মীকে তাঁহার দক্ষতা ও পরিশ্রমের পুরস্কার দেওয়াই লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন।’’ উত্তম প্রস্তাব, কিন্তু যে সরকারি কর্মচারিগণের ‘শুভচেতনার’ উপরেই সম্পাদক বিশ্বাস রাখিতে পারিতেছেন না, তাঁহাদের দক্ষতার বিচারের ভার যাঁহার হাতে রাখিতে চাহিতেছেন, তিনিও তো সরকারি কর্মচারী!
লেখা হইয়াছে, ‘‘বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব যেখানে সকলের উপর সমান ভাবে পড়ে, সেখানে তাহার মোকাবিলা করিতে মহার্ঘ ভাতা কেবল সরকারি কর্মীদেরই প্রাপ্য হইবে কেন?’’ কারণ সরকারি কর্মীরা কোনও দ্বিতীয় পেশার সহিত যুক্ত হইতে পারেন না, যাহার দ্বারা প্রাত্যহিক জীবনের সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা করা যাইত। এই বিধি অন্য ‘সকলের উপর’ আরোপিত নাই। নিউজ়প্রিন্টের দাম বৃদ্ধি পাইলেই যে রূপ সংবাদপত্রগুলি ‘বৃহত্তর ন্যায্যতার দাবি’ অগ্রাহ্য করিয়া মূল্যবৃদ্ধি ঘটাইয়া থাকে, সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে সরকারি সেই ব্যবস্থার নামই হইল মহার্ঘ ভাতা।
সরকারি কর্মীদের যোগ্যতা ‘স্বোপার্জিত’ কি না, সেই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হইয়াছে, তাহাদের যোগ্যতার মধ্যে ‘ঐতিহাসিক বঞ্চনার ইতিহাস’ আবিষ্কার করা হইয়াছে— এই পর্যবেক্ষণ সৎ, দক্ষ, পরিশ্রমী কর্মীদের কতখানি আঘাত দিতে পারে তাহা হয়তো অনুভব করিতে পারিবেন না, আহত হৃদয়ে কেবল এটুকুই বলিতে চাই, বৃহত্তর ন্যায্যতার কথা যদি কেহ ভাবিয়া থাকেন তাহা এই সরকারি কর্মী সমাজই, যাঁহারা বিগত ১০ বৎসরে প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতা না পাইয়াও কোনও ধর্মঘট আহ্বান করেন নাই বা পরিষেবা বন্ধ করিয়া পথ অবরোধ করেন নাই বা অবস্থানে বসেন নাই।
সন্দীপ কুমার দত্ত
উদয়গঞ্জ, পশ্চিম মেদিনীপুর
সুনীল, সিপিএম
‘তিনি এক জন কবিও’ (৩-৮) শীর্ষক চিঠিটির পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৯৮২-র বিধানসভা নির্বাচনে কাশীপুর কেন্দ্রে শ্রীভট্টাচার্য পরাজিত হওয়ায়, দ্বিতীয় বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় তাঁর জায়গা হয়নি। সে বার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী হন সিপিএমেরই প্রভাস ফদিকার। সুতরাং ১৯৮৩ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বঙ্কিম পুরস্কার পাওয়ার কারণে ফরওয়ার্ড ব্লকের থেকে ওই দফতর সিপিএমের হাতে চলে যায়— এ কথা ঠিক নয়।
এক জন দূরবর্তী পাঠক হিসাবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দলীয় সমর্থনের কোনও ইঙ্গিত বুঝতে না পারলেও, তাঁর ‘ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ’ লেখাটি পড়লে সমাজতন্ত্রের আদর্শের প্রতি তাঁর সমর্থন সহজেই বোঝা যায়।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর দেশের বিভিন্ন অংশ দাঙ্গার আগুনে জ্বললেও বামশাসিত পশ্চিমবঙ্গ ছিল তুলনামূলক ভাবে শান্ত। ওই সময় শ্রীগঙ্গোপাধ্যায়ের বহু লেখা আনন্দবাজার-সহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার অনেকগুলিতে এ রাজ্যে দাঙ্গা দমনে তদানীন্তন বাম সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন সুনীল।
শ্রীমন্ত মিত্র
কলকাতা-১৫৬
মহাশ্বেতা?
‘রবীশের রামন ম্যাগসাইসাই’ (৩-৮) শীর্ষক খবরে আর যাঁরা এ দেশ থেকে এই পুরস্কার পেয়েছেন তাঁদের নাম দেওয়া আছে। ১৯৯৭ সালে মহাশ্বেতা দেবী ম্যাগসাইসাই পেয়েছিলেন। তাঁর নাম নেই কেন?
প্রভাতকুসুম রায়
বাঁকুড়া
বাঙালিরা
‘রবীশের রামন ম্যাগসাইসাই’ (৩-৮) শীর্ষক খবরে কয়েক জন ভারতীয়ের নাম দেওয়া আছে, যাঁরা ম্যাগসাইসাই পেয়েছেন। হতেই পারে, ওইটুকু জায়গায় সব এমন ভারতীয়ের নাম দেওয়া অসম্ভব,
তবু বাংলা কাগজে ম্যাগসাইসাই-জয়ী বাঙালিদের নাম থাকবে, আশা করেছিলাম। অমিতাভ চৌধুরী (১৯৬১), কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় (১৯৬৬), সত্যজিৎ রায় (১৯৬৭), শম্ভু মিত্র (১৯৭৬), গৌরকিশোর ঘোষ (১৯৮১) এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।
রতন চৌধুরী
কলকাতা-৩৩
ধর্ম জানব?
ব্রিটিশ রাজত্ব তার স্বার্থে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ করে দুই গোষ্ঠীকে লড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, যাতে ব্রিটিশরা ভারতকে শোষণ করতে পারে। সেই সাম্প্রদায়িকতা আবার সাম্প্রতিক কালে ফিরে আসছে, তা কি বেকারত্ব বা শিল্প-শিক্ষা-কৃষি-বাণিজ্য ক্ষেত্রে দুর্দশা থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার কারণে? আমরা সারা ক্ষণ ভাবব, কোন মানুষ কোন ধর্মের? হোটেল-রেস্তরাঁয় রাঁধুনি, বেয়ারা, ক্যাশিয়ারের ধর্ম জেনে তবে যেতে হবে? দোকানদার বা মল-এর বিক্রেতার ধর্ম জেনে তবে যাব? কৃষকের ধর্ম জেনে, তবে সবজি কিনব? চাকরিতে বস-এর আদেশ তখনই মানব যখন তিনি আমার ধর্মের হবেন? ইন্টারভিউ-কর্তা স্বধর্মের হলে তবে ইন্টারভিউ দেব? কারণ ‘ধর্ম জানা আমার অধিকার’?
প্রবীরকুমার মিত্র
কদমতলা, হাওড়া