— প্রতীকী ছবি।
বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ছবিটা কত অন্য রকম ছিল’ (১০-৭) শীর্ষক নিবন্ধের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। আশ্চর্য, ওই তারিখের আনন্দবাজারেই প্রকাশিত ‘সর্পাঘাতে ছপুরা বিবির মৃত্যু’ আমাদের আরও এক বার মনে করিয়ে দিল বিজ্ঞান আন্দোলনকে আমরা মাটির কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারিনি। আসলে আমাদের দেশে বিজ্ঞান আন্দোলন পরিপূর্ণতা না পাওয়ার প্রধানতম অন্তরায় হল ‘ভাববাদী দর্শন’। চার্বাক দর্শন বা লোকায়ত দর্শন ভারতীয় দর্শনের প্রধান শাখাগুলোর অন্যতম। ক’জন মানুষ এই চার্বাক দর্শনের চর্চা করেন? এই দর্শন ভারতবর্ষেই ছিল, আমরা সযত্নে তাকে পিছনে সরিয়ে দিয়েছি। এই ভারতভূমিতেই আড়াই হাজার বছর আগে শাক্যসিংহ ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘জগতে দুঃখ আছে— দুঃখের কারণ আছে। দুঃখের নিবৃত্তিও সম্ভব।’’ কত বড় মুক্তচিন্তার কথা। আজকের হস্তরেখাবিদরা আপনার দুঃখের কারণ হিসেবে হয় গ্রহবৈগুণ্য নয় আপনার পূর্বজন্মের কর্মফলের কথা বলবেন, অথবা ললাটলিখন বলে হাত ধুয়ে ফেলবেন।
আশ্চর্যের বিষয়, বিদ্যাসাগরের যে তুখড় বস্তুবাদী মনন ছিল, সেটা কিন্তু কখনওই সামনে আসে না। সারাটি জীবন তিনি ভাববাদী দর্শনের বিরুদ্ধাচার করে গিয়েছেন, ব্রাহ্মণ-সন্তান হয়েও গায়ত্রী মন্ত্র বিস্মৃত হয়েছিলেন, জপ-তপের ধার ধারতেন না, তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র ছিল মানুষ কী ভাবে ভাল থাকবেন। এই ধারণা কিন্তু জনমানসে পৌঁছয়নি। বিস্মৃত বিরল বাঙালি ব্যক্তিত্ব অক্ষয়কুমার দত্ত কিংবা গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের কথা না-ই বা তুললাম।
আর বিগত ৩৪ বছরের বামশাসনে ক্যাডাররা ভদ্রদস্তুর মতো ‘র্যাশনালিস্ট কাম কমিউনিস্ট’ না হয়ে একেবারে সটান ‘সিপিএম’-এ পরিণত হয়েছিলেন। যার মূল্য আজ বামপন্থীরা কড়ায় গন্ডায় চোকাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কোথায় যাব? খবরের কাগজের দ্বিতীয় পাতা খুললেই জ্যোতিষ ভারতী কিংবা জ্যোতিষার্ণবদের বর্ণময় দাপট। টিভিতে বহু চ্যানেল এই ঈশ্বরবাদী তথা দুর্জ্ঞেয় দর্শনকে দূরদূরান্তরে পৌঁছে দেওয়ার নিবিড় প্রচেষ্টায় মগ্ন। বড় বড় ফ্লেক্স-ব্যানারে জ্যোতিষ কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রচার চলছে। পাশাপাশি রাজশক্তির উজাড় করা সহায়তা তাদের মহীরুহে পরিণত করছে।
বিজ্ঞান আন্দোলনকে আরও গণমুখী এবং মাটির কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য আমাদের বেশ কিছু সাহায্য চাই। যেমন: ১) বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমাদের নিয়মিত সামান্য স্থান দেওয়া। ২) বৈদ্যুতিন মাধ্যমগুলিতে স্বল্প সময় হলেও নিয়মানুগ ভাবে স্লট দেওয়া। ৩) বিভিন্ন মেলা তথা জমায়েতে বিজ্ঞানকর্মীদের বিনামূল্যে কয়েকটি স্টল দেওয়া। ৪) বিজ্ঞানকর্মীদের বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে নানা রকম ‘টুলস’-এর প্রয়োজন হয়, যেগুলো খরচ-সাপেক্ষ। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা সেই খরচ বহন করেন, তা হলে খুব ভাল হয়। ৫) সব থেকে বেশি করে চাই রাজশক্তির সামগ্রিক সহায়তা। না হলে অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞান আন্দোলনের ক্ষীণ ধারা অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বিশ্বদীপ ভট্টাচার্য
কল্যাণগড়, উত্তর ২৪ পরগনা
সমীক্ষা বলছে, জাতীয় অর্থনীতিতে মহিলাদের যোগদান ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ আজ অনেক উজ্জ্বল। বিভিন্ন প্রকল্প ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মাধ্যমে গৃহবধূদের যোগদান অর্থনীতিকে অনেক শক্তিশালী করেছে। পশ্চিমবঙ্গে কর্মহীনতার হার ৪.৬ শতাংশ। যার মধ্যে গ্রামীণ বেকারত্ব ৩.৮ শতাংশ ও শহরে বেকারত্ব ৬.৪ শতাংশ। তুলনায় গুজরাতে কর্মহীনতার হার বেশি। সেখানে গ্রামীণ বেকারত্ব ৫.২ শতাংশ ও শহরে ৪.২ শতাংশ। এবং সামগ্রিক ভাবে কর্মহীনতার হার ৪.৮ শতাংশ।
গ্রামীণ রাস্তাঘাট নির্মাণ ক্ষেত্রেও প্রথম দশটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ উপরের সারিতে বিদ্যমান। তা হলে মোদী ও অমিত শাহ দিল্লি থেকে কী কারণে প্রায়ই চিৎকার করে বলেন যে, এ বার বাংলাকে দখল করে তাঁরা নাকি ‘সোনার বাংলা’ গড়বেন?
হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৮
চিকিৎসা যোগ্যতা
২০১৭ সালে লোকসভায় আনা ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল বিল’-এর সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়টি ছিল ‘ব্রিজ কোর্স’, যেখানে বলা হয়েছিল, আয়ুষের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ হোমিয়োপ্যাথি, আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি চিকিৎসকদের সংক্ষিপ্ত ফার্মাকোলজির পাঠ দানের পর তাঁদের কিছু অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ লেখার ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
চিকিৎসক সংগঠনগুলির তীব্র প্রতিবাদের জন্য ধারাটি থেকে ‘ব্রিজ কোর্স’ বিষয়টি বাদ দিয়ে বলা হয়েছে, গ্রামে প্রাথমিক চিকিৎসার দায়িত্বের কিছু অংশ ছ’মাস প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘জনস্বাস্থ্য পরিষেবক’-দের উপর ন্যস্ত করা হবে। গত অধিবেশনে উভয় কক্ষে বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছে।
বিতর্কিত অংশটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে ‘যোগ্যতার নির্মাণ’ (৯-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে, যথার্থ কিছু প্রশ্ন তুলে এবং কিছু আশঙ্কা প্রকাশ করেও, বিলের মূল উদ্দেশ্যকে সমর্থন করে বলা হয়েছে, ‘‘বহু দেশে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হইয়াছে, উপকারও মিলিয়াছে।’’ কিন্তু এই বাস্তব অবস্থাটি না মেনে দু’টি বৃহত্তম চিকিৎসক সংগঠন আজও কেন আপত্তি জানিয়ে চলেছে, বোঝা দুষ্কর।
সম্পাদকীয় শুরুই করা হয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে, ‘‘ভারতে বৈধ চিকিৎসকের তুলনায় ছায়া চিকিৎসকের, অর্থাৎ ডিগ্রিহীন ডাক্তারের সংখ্যা অধিক।’’ ২০১৬ সালেই ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা’ একটি রিপোর্টে জানিয়েছিল, ভারতে ৫৭.৩% অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের চিকিৎসার কোনও স্বীকৃত ডিগ্রি নেই, অধিকাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। এই পরিসংখ্যান থেকেই বুঝতে অসুবিধা হয় না, গ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থা কোয়াক ডাক্তারদের উপর কী ভাবে ন্যস্ত হয়ে আছে।
অবাক করা তথ্য, ভারত স্বাস্থ্য সূচকে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কার পিছনে, যখন ভারত কিনা ঔষধশিল্পে, মেডিক্যাল টুরিজ়ম, ইনফর্মেশন টেকনোলজি, মহাকাশ গবেষণায় অনেক এগিয়ে। কোনও সরকারই এই অবস্থা দীর্ঘ দিন চলতে দিতে পারে না।
চার দশক আগে, আশির দশকের প্রথম দিকে, পশ্চিমবঙ্গে বাম সরকার চিনের ‘খালিপদ ডাক্তার’-এর অনুকরণে তিন বছরের অ্যালোপ্যাথিক মেডিক্যাল শিক্ষা চালু করেছিল। তখনও চিকিৎসক সংগঠনগুলি এই ভাবেই প্রতিবাদ করেছিল। বাম সরকারের সেই কার্যক্রম সফল হলে, গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা এই ভাবে কোয়াক ডাক্তারদের উপর নির্ভরশীল হত না।
গ্রামে, প্রত্যন্ত স্থানে এমবিবিএস চিকিৎসকরা যাবেন না, তিন বছরের মেডিক্যাল শিক্ষা চলবে না, ‘ব্রিজ কোর্স’ চলবে না, বাধ্য হয়েই সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। নয়তো ‘যোগ্যতার নির্মাণ’ কোনও দিনই হবে না।
অসিত কুমার রায়
ভদ্রেশ্বর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
গাড়ি ধরো, টাকা নাও...’ শীর্ষক খবরে (পৃ ১, ২২-৮) কলকাতার পুলিশ কমিশনারের নাম অনুজ শর্মার বদলে অনুজ পাণ্ডে লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।