আমাদের বাড়ি একটি গলির মধ্যে। গলির এক দিকে দেশপ্রাণ শাসমল রোড, অন্য মুখটি শেষ হচ্ছে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। বড় রাস্তার যানজট এড়ানোর জন্য অনেক সময়ই বাইক-আরোহীরা এই দুই রাস্তার সংযোগকারী গলিটি ব্যবহার করেন।
সমস্যা হল, এক-একটি বাইকের হর্ন এতই তীব্র যে, কান ফেটে যাওয়ার জোগাড় হয়। তা ছাড়া, কয়েক জন অল্পবয়সি ছেলে এমন ভাবে বাইক নিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করে যে, সারা পাড়া কাঁপতে থাকে। এদের বারণ করেও কোনও লাভ নেই। কিছু বললে যে ভাবে তাকায়, তাতে মনে হয় অপরাধটা আমারই। এটাও বলতে শুনেছি— রাস্তাটা বানানো হয়েছে যাতায়াতের জন্যই। অসুবিধে হলে জানালা বন্ধ করে রাখুন। শব্দদূষণ নিয়ে এত লেখালিখি হয়, নির্দিষ্ট আইনও আছে। বাইক নিয়ে যে অসভ্যতা প্রতি দিন চলছে, তা কি সেই আইনের আওতায় পড়ে না?
তপনিকা দাস
কলকাতা-৩৩
অসাম্য
রাজ্যে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধীনে রাজ্য শিশু শিক্ষা মিশনের তত্ত্বাবধানে ১৬,০০০ শিশু শিক্ষাকেন্দ্র এবং প্রায় ২০০০ মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র চলে। এগুলো কিন্তু সম্পূর্ণ বিধিবদ্ধ বিদ্যালয়। ২০১৯ সালের সরকারি সমীক্ষার তথ্য অনুসারে দেখা যাচ্ছে, ১২ লক্ষেরও বেশি শিক্ষার্থী এই কেন্দ্রগুলির সঙ্গে যুক্ত, যাদের ৮২ শতাংশই পিছিয়ে পড়া পরিবারের। এরা ক’জন অনলাইন পঠনপাঠনের সুযোগ পেল, বা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ‘কর্মপত্র’ পেল (যেমন পেয়েছে সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা), সেই হিসেব কি পঞ্চায়েত বা শিক্ষা দফতরের কাছে আছে? এই শিশুদের শিক্ষার অধিকার রক্ষা হচ্ছে কি না, তা বোঝার জন্য এই দুই দফতরের মধ্যে কোনও সমন্বয় আছে কি?
কোভিড-পরিস্থিতির আগে থেকেই নানা ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র শিশুদের জন্য এই শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার অধিকার আইন চালু হওয়ার পর থেকে শিশু শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ আছে। শিক্ষকের অভাবে অনেক কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেগুলো চলছে, সেগুলো অধিকাংশই চলছে এক জন শিক্ষক দিয়ে। রাজ্যে বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের পোর্টালে শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের নাম না থাকায় তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির সমস্যা হচ্ছে। আমপানে অনেক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এবং তাদের তথ্যাদি জমা দেওয়া হলেও এখনও কেন্দ্রগুলি ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। শিক্ষা দফতর থেকে বলা হয়েছিল, এই সব কেন্দ্রে কর্মরত শিক্ষা সহায়িকা ও শিক্ষা সম্প্রসারকরা প্যারাটিচারের সমান সুবিধা পাবেন, কিন্তু আজও তার কোনও নির্দেশিকা প্রকাশ হয়নি।
আইনের চোখে সব শিশু সমান। শিক্ষা পাওয়ার সমান অধিকার দরিদ্র, পশ্চাৎপদ পরিবারের শিশুদের নেই?
মেঘদীপ সেন
কলকাতা-১৫৬
ই-বাংলা
ডিজিটাল পরিষেবার সঙ্গে আধুনিক জীবন-জীবিকা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিনোদন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সরকারি পরিষেবা, পরিবহণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাঙ্কিং-সহ জীবনের সব ক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষা কোথায়? তার ব্যবহার সামান্যই গতি পেয়েছে। যেটুকু অগ্রগ্রতি হয়েছে, তা ব্যবহারের অভাবে অন্য ভাষা থেকে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে।
ভাষার মধ্যে দিয়েই একটা জাতির ঐতিহ্য, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সংগ্রাম জীবিত থাকে। তথ্যবিপ্লবের এই সময়ে বাংলা ভাষাকে বহুমাত্রিক ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে তার অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। ভাষা রক্ষা, প্রচলন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার ও রাষ্ট্রশক্তির বড় ভূমিকা আছে। ভাষাকে সজীব ও সচল রাখার প্রতি সরকারি উদাসীনতায় বহু ভাষার, এবং সেই সঙ্গে বহু জাতির অপমৃত্যু ঘটেছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলার বহুমাত্রিক প্রয়োগ ও ব্যবহারকে সুনিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম কর্তব্য। বাংলা ভাষাকে বিশ্বমানের ‘ই-বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার সময় যেন পেরিয়ে না যায়।
সুমাল্য দাস
নাকাশিপাড়া, নদিয়া
গবেষকের দশা
করোনা যুগে ভারতের অর্থনীতি বা শিক্ষানীতি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু গবেষকদের নিয়ে কোনও আলোচনা শুনছি না। ইউজিসি একটা নির্দেশিকায় গবেষকদের কথা বলেছে ঠিকই। তার একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হল, অন্তিম বর্ষের পিএইচ ডি বা রিসার্চ স্কলারকে অতিরিক্ত ছ’মাস সময় দেওয়া হবে গবেষণা শেষ করার জন্য। কিন্তু, নির্দেশিকাটি ভাল করে পড়লেই বোঝা যায়, এটি মূলত আর্টস বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রেই উপযোগী। সায়েন্সের জন্য, বিশেষত যাঁদের গবেষণাগারে কাজ করতে হয়, তাঁদের জন্য ততটা ফলপ্রসূ নয়।
সায়েন্সে, বিশেষত রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাসায়নিক লাগে, প্রয়োজন হয় সজীব বস্তুর। উদাহরণস্বরূপ,আমাদের ল্যাবের কাজ জৈবরসায়ন ভিত্তিক। আমরা কাজ করি ক্যানসার কোষ নিয়ে। কয়েক মাস ধরে যে হেতু ল্যাবের সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ, তাই এই কোষগুলিরও পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এগুলো নিয়ে কাজ করা যাবে কি না, সংশয় রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে রাসায়নিক, যেগুলির কার্যক্ষমতাও অব্যবহারে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এই কোষ ও রাসায়নিকগুলি কিন্তু আর্থিক বিচারেও খুবই মূল্যবান। সুতরাং, লকডাউনে ভারতের গবেষণাগারগুলির কত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা বলা কঠিন। এই বিষয়ে কোনও সমীক্ষাও চোখে পড়ল না।
অন্য দিকে, করোনাকালীন বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুরবস্থা ও গবেষকদের পরিস্থিতি নিয়ে তথ্যবহুল ফিচার বেরিয়েছে নেচার-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে। সেগুলো পড়লে বোঝা যায়, বিশ্বের অগ্ৰগণ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাকেন্দ্রগুলি অর্থের জন্য নির্ভর করত বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের উপর। বিদেশি আয় প্রায় শূন্যে চলে আসে এপ্রিল-মে মাসে। এই ধরনের সমীক্ষার প্রয়োজন যে ভারতেও আছে, তা বলা বাহুল্য।
আইসিএমআর-এর গবেষক হিসেবে চাইব, ভারতেও আলোচনা হোক কী ভাবে করোনা আবহে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আর্থিক অনুদান দেওয়া হোক। ভবিষ্যতের শিক্ষানীতি নিয়ে তর্ক করার চেয়ে হাতের কাছে বর্তমানে যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, তাকে নিয়ে আলোচনা করা ও তাকে সমৃদ্ধ করা বোধ হয় বেশি জরুরি।
সৌম্যজিৎ বিশ্বাস
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়
নিষিদ্ধ মাঠ
তেঁতুলতলা গ্রাউন্ড পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরেই অবস্থিত। গোটা পশ্চিমবঙ্গে যখন খেলার মাঠের অভাব, সেখানে এই মাঠ জেলার গর্ব। ছ’টি ছোট-বড় মাঠ এর মধ্যে রয়েছে। এই মাঠ জেল পুলিশের অধীন। ছ’টি মাঠকে ডান দিকে, বাঁ দিকে রেখে মাঝখানে খুব সুন্দর বীথিকা ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত পিচ রাস্তা রয়েছে। আগে শহরের মানুষ সকালে-বিকেলে হাঁটতে আসতেন, ছেলেরা ফুটবল-ক্রিকেট খেলত।
করোনা পরিস্থিতিতে জেল কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০-১৫ বর্গ কিমি সুন্দর গ্রাউন্ডটির চার দিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে এবং সামনে পুলিশ মোতায়েন করেছে। কিছু মানুষ কাঁটাতারের কিছুটা ভেঙে লুকিয়ে বিকেলে এর মধ্যে হাঁটেন। কিন্তু কেন এই ভাবে হাঁটতে হবে? এটা তো জনগণেরই সম্পত্তি। প্রবেশের পথে কিছু সিভিক পুলিশ এমন ব্যবহার করেন, মনে হয় আমরা অপরাধী।
নির্মল নাথ
মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।