‘মহামারিতে কবি’ (রবিবাসরীয়, ১৭-৫) পড়তে পড়তে মনে পড়ল, শান্তিনিকেতনে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি পথ ব্যবহার করেছিলেন কবি, যা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কেউ কেউ স্মরণ করছেন। কবি সে সময় আয়ুর্বেদিক উপায়ে একটি প্রতিষেধক তৈরি করেন এবং আশ্রমিকদের মধ্যে প্রয়োগ করে সুফল পান। এই চমকপ্রদ ঘটনাটি পাওয়া যায় ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা শান্তাদেবীর লেখা ‘পুণ্য স্মৃতি’ গ্রন্থ থেকে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত প্রতিটি আশ্রমিক রোগীকে রবীন্দ্রনাথ নিজে পরীক্ষা করে দেখতেন এবং খোঁজখবর নিতেন। কবির তৈরি করা প্রতিষেধকটির নাম ছিল, ‘পঞ্চতিক্ত পাঁচন’। পাঁচ রকমের ভেষজ উৎস থেকে তা তৈরি করা হত— নিম, গুলঞ্চ, নিশিন্দা, তেউরি (কলা গাছের শিকড়) এবং থানকুনি। এগুলিকে নির্দিষ্ট পরিমাণে সংগ্রহ করে বেটে তৈরি করা হত পাঁচন।
১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি, জগদীশচন্দ্র বসুকে কবি চিঠিতে লিখছেন, ‘‘আমার এখানে প্রায় দুশো লোক, অথচ হাসপাতাল প্রায় শূন্য পড়ে আছে— এমন কখনো হয় না— তাই মনে ভাবছি, এটা নিশ্চয়ই পাঁচনের গুণে হয়েছে।’’
শঙ্খ অধিকারী
সাবড়াকোন, বাঁকুড়া
অসিতকুমার
শংকর লিখিত ‘মহামারিতে কবি’ রচনার প্রথম দিকে একটি অংশে আছে, “…আমার মাস্টারমশাই অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সব কিছু মনে রাখতে পারিনি। অসিতদা যখন বেঁচে ছিলেন অসুবিধে হয়নি, ফোন ধরেই যে কোনও প্রশ্নের ঝটপট উত্তর দিতে পারতেন, বলে দিতেন কোন বইয়ের কোন খণ্ডে আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর আছে। অসিতদা ফোনের অপর প্রান্তে আছেন বলেই কষ্ট করে কিছু পড়ার বা মনে রাখার প্রয়োজন মনে করতাম না।” রবীন্দ্রনাথ-কেন্দ্রিক রচনাটির প্রথমাংশে এই অসিত-বন্দনার সূত্র ধরে, এই চিঠিতে, মূলত ‘সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান’ থেকে, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কিছু তথ্য জানালাম।
বাংলা সাহিত্যের ছাত্রছাত্রীদের পড়ার টেবিলে যে গ্রন্থটির অবস্থান অপরিহার্য, তা অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত ‘বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত’। ছাত্রবোধ্য এই পৃথুল গ্রন্থটি আসলে ন’খণ্ডে রচিত অসিতকুমারের দীর্ঘ শ্রমের ফসল ‘বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত’-র সারাৎসার। এ ছাড়াও ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ ও বাংলা সাহিত্য’, ‘বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর’, ‘সাহিত্য জিজ্ঞাসায় রবীন্দ্রনাথ’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রন্থ। সম্পাদনা করেছেন ‘শ্রেষ্ঠ গল্প শ্রেষ্ঠ লেখক’, ‘জীবনের গল্প গল্পের জীবন’, ‘সত্যেন্দ্র রচনাবলী’, ‘বিদ্যাসাগর রচনাবলী’ ইত্যাদি। তাঁর আত্মকথা ‘স্মৃতি বিস্মৃতির দর্পণে’ এক সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
অসিতকুমার ১৯৩৮ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে বাংলায় সাতাত্তর শতাংশ নম্বর (সে কালের প্রেক্ষিতে বিস্ময়কর) পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন। রিপন কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় বাংলা ও অসমের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি প্রথম হন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর, দুটো পরীক্ষাতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
অসিতবাবু ‘ফরোয়ার্ড’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪১-৪২ সাল নাগাদ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সায়গন থেকে যে বক্তৃতা দিতেন তার বঙ্গানুবাদ করতেন অসিতকুমার, উল্লিখিত পত্রিকার জন্য। প্রথম জীবনে একাধিক ছোটগল্প লিখেছেন, প্রকাশিত হয়েছে ‘দেশ’ ও অদ্বৈত মল্লবর্মণ সম্পাদিত ‘নবশক্তি’ পত্রিকায়। নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে অধ্যাপনা-জীবন শুরু। কিছু দিন সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ানোর পর ১৯৫৭ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের শরৎচন্দ্র নামাঙ্কিত চেয়ারও অলঙ্কৃত করেছেন তিনি।
এ সবের পাশাপাশি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ এবং পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি ছিলেন। এশিয়াটিক সোসাইটিতে যুক্ত ছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গবেষক হিসেবে। ১৯৮১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বুদ্ধভাববাদ মহাসম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
শুভাশিস চক্রবর্তী
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
গৃহদাহ
বাংলা শিল্পে ও সাহিত্যে মহামারি নিয়ে দুটি চিঠি (‘মহামারি ও বাংলা শিল্প’, ১০-৫, ‘জ্বরের কথা’, ১৪-৫) প্রকাশিত হয়েছে , কিন্তু কোথাও শরৎচন্দ্রের ‘গৃহদাহ’ উপন্যাসের উল্লেখ নেই।
‘গৃহদাহ’তে ডিহরীর কাছে মাঝুলি অঞ্চলে ভয়াবহ প্লেগের বর্ণনা আছে। সেখানে ডাক্তারও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই উপন্যাসের দ্বিতীয় নায়ক সুরেশ আর্তের চিকিৎসা করতে মাঝুলিতে ছুটে যায় ও নিদারুণ প্লেগের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শেষে সুরেশ মারা যায়। উপন্যাসের শেষ দিকে পাঁচটি পরিচ্ছেদ জুড়ে প্লেগ ও তার সম্পর্কিত ঘটনাপ্রবাহের কথা আছে।
মহিম-অচলা-সুরেশের মধ্যে যে ত্রিকোণ প্রেমের উদ্ভব হয়েছিল, তা এই ভাবে পরিসমাপ্তি লাভ করে। উপন্যাসটির সমাপ্তি বিধানে প্লেগ এখানে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য
কলকাতা-৩৯
প্রীতি আছে
আফরোজা খাতুনের ‘বিদ্বেষের সংক্রমণ চলছেই’ (২০-৫) নিবন্ধের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নই। লকডাউনের মধ্যে বহু মুসলমান প্রতিবেশী হিন্দুর মৃতদেহ সৎকার করতে সাহায্য করেছেন। কত জন রোজা ভেঙে হিন্দু ভাইবোনকে রক্ত দিয়েছেন। বহু হিন্দু প্রতিবেশী, হিন্দু সংগঠন মুসলমান ভাইদের ঘরে ইফতারের খাবার পৌঁছে দিয়েছেন, অন্যান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনিতে পাশাপাশি বসবাস করা হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভাল। পাড়ার চায়ের দোকানে, ক্লাবে একসঙ্গে আড্ডা দেন, উৎসব অনুষ্ঠানে একে অপরের বাড়ি যান, বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সমস্যা তৈরি করা হয় রাজনৈতিক স্বার্থে এবং উভয় সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থী সংগঠনের চক্রান্তে। ছোটখাটো ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রং চড়িয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। আজকাল সামাজিক মাধ্যম এ কাজে ইন্ধনদাতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবু এর ভেতরেই ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ মাথায় রেখে মানুষ এখনও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পাশাপাশি বসবাস করছেন।
গৌতম পতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
আসল কারণ
‘কেন এখন এই সংস্কার?’ (২০-৫) নিবন্ধে অভিরূপ সরকার জাতীয় সম্পদ বেসরকারিকরণ সম্পর্কে অনেক ধারণাই দিয়েছেন, কিন্তু ‘আসল কারণ’টা বলেননি। কেন্দ্রীয় সরকার ভাল করেই জানে, তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা শ্রমিক-বিরোধী। ফলে এই সিদ্ধান্তের জন্য তাদের শ্রমিক সংগঠনগুলির বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে। কিন্তু বতর্মান পরিস্থিতিতে, যেখানে করোনা সংক্রমণের ভয় রয়েছে, সমস্ত রকম পরিবহণই প্রায় বন্ধ, সংগঠনগুলির বিশাল আকারে শ্রমিক জমায়েত করা অসম্ভব। যদি জমায়েত হয়ও, তা হলে মহামারি আইন প্রয়োগ করে তা ভেঙে দেওয়া সহজ হবে। তাই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের তো এটাই সঠিক সময়।
সুমন দে
দুর্গাপুর,পশ্চিম বর্ধমান
বাকি থাকে কেন
রাখঢাক না রেখে এ বার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের ধাঁচে স্বাধীন ভারত সরকারেরও বেসরকারিকরণ হোক। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ম্যানেজাররাই দেশটা চালান।
অশোককুমার দাস
কলকাতা-৭৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।