‘স্বচ্ছতার দাবি’-র (সম্পাদকীয়, ২১-৮) জন্য ধন্যবাদ। সর্বোচ্চ আদালত যে যুক্তিতে পিএম কেয়ার্স-কে সরকারি হিসাবরক্ষকের অধীনে আনার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেছে, তা সর্বাংশে সন্তোষজনক নয়।
আদালত বলেছে, ওই তহবিল সরকারের অর্থ গ্রহণ করেনি। বিলক্ষণ করেছে! তবে একটু ঘুরপথে করেছে। সরকার পরিচালিত রেল দফতর থেকে ১৫০ কোটি টাকা দান করা হয়েছে পিএম কেয়ার্স তহবিলে। অথচ এই রেলই হতদরিদ্র অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনা ভাড়ায় ঘরে ফেরার ব্যবস্থাটুকুও করতে পারেনি! পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবহণ বাবদ জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত রেল দফতর আয় করেছে ৩৬০ কোটি টাকা। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটাই। করোনা ত্রাণের নামে সংগৃহীত পিএম কেয়ার্স থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের ভাড়ার টাকা রেলকে মেটানো উচিত ছিল। তাতে এক দিকে অসহায় মানুষগুলোর কিছুটা উপকার হত, আবার সরকারের টাকা প্রকারান্তরে সরকারের হাতেই থাকত।
এটা তো খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন যে, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রবক্তা প্রধানমন্ত্রী আমজনতার কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থের ব্যাপারে এত অস্বচ্ছ কেন? এ ক্ষেত্রে আদালতই ছিল সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা। সাম্প্রতিক রায়ের পরে সেই ভরসা চোট খাবে না তো?
চন্দ্রপ্রকাশ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
দানের মূল্য
করোনা মোকাবিলায় ২ কোটি ১২ লক্ষ টাকা দান করেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। এই অর্থদান প্রশংসাযোগ্য হত, যদি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা করা হত। কিন্তু দান করা হল পিএম কেয়ার্স তহবিলে, যার আয়-ব্যয়ের হিসেব কেন্দ্রীয় অডিট সংস্থা ক্যাগ দ্বারা অডিট করা যাবে না। শুধুমাত্র কেন্দ্র-নিযুক্ত অডিট সংস্থা, বা বলা ভাল বিজেপি-ঘনিষ্ঠ সংস্থাই অডিট করতে পারবে। এর কর্ণধার আবার নিযুক্ত হয়েছেন সুনীল গুপ্ত, যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপির একাধিক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ।
পিএম কেয়ার্স তহবিল নিয়ে সারা দেশে বিরোধী দলগুলি অনৈতিকতা ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছেন। এবং এর কোনও সদুত্তর শাসকদল দিতে পারেনি, যে শাসকদল ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ করে ব্যাঙ্ক শিল্পকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। সারা ভারতের অবসরপ্রাপ্ত ওই ১ লক্ষ ২৫ হাজার কর্মীও তাঁদের চাকরিজীবনে নিশ্চয়ই সেই সমস্ত আন্দোলনে শামিল ছিলেন।
ব্যাঙ্কের ১০ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ শোধ করেননি যে সব শিল্পপতি, তাঁরা বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষক। তা হলে সরকারি ত্রাণ তহবিলে দান না করে পিএম কেয়ার্সে কেন করা হল? এই দানের আদৌ কি কোনও সামাজিক মূল্য আছে?
পীযূষকান্তি বালা
কলকাতা-৫৫
বিস্তর সন্দেহ
পিএম কেয়ার্স তহবিল নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠেছে। দেদার টাকা জমাও পড়েছে। কিন্তু হিসেবে বিস্তর গরমিল আছে বলে ব্যাপক গুঞ্জন উঠেছে। যে হেতু এই তহবিল অধিকর্তা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তাই স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। জনমনে যে সন্দেহ, তার নিরসন দরকার। নইলে ভুল বার্তা যাবে দেশবাসীর কাছে। আশা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে স্বচ্ছতা ও তথ্য জানার অধিকারকে মান্যতা দেবেন।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
ফের রাহুল?
সনিয়া গাঁধীর পর ভারতে কংগ্রেস পার্টির সভাপতি পদে কে বসবেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। অনেক নামের চর্চাও শুরু হয়ে গিয়েছে। কে বা কারা কতটা গ্রহণযোগ্য, সে আলোচনায় বার বার একটা কথাই ঘুরে-ফিরে আসছে— যিনিই সভাপতি হন না কেন, তিনি গাঁধী পরিবারের প্রতি অনুগত কি না। অর্থাৎ, গাঁধী পরিবারের নির্দেশমতো তাঁকে দল পরিচালনা করতে হবে। অনেকে ফের রাহুল গাঁধীকেই সভাপতির পদে চাইছেন। যদিও এর আগে তিনি নিজেই এই পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন।
কংগ্রেসি রাজনীতিতে ক্ষমতা এবং শাসনের কৌশল যে বরাবরই গাঁধী পরিবার-কেন্দ্রিক, তা অবশ্য নতুন কথা নয়। এত বড় একটি রাজনৈতিক দল, দেশের স্বাধীনতার ৭৩ বছর কেটে গেলেও, পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারেনি। রাজনীতিতে এই ধারা আজ সারা দেশে ছেয়ে গিয়েছে। নেতা থেকে শুরু করে নেতার ভাই, কাকা, দাদা, ছেলে, মেয়ে, ভাইপো— একটি পরিবারের সবাই ঠাঁই পেয়ে যায় রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায়। আখেরে তাঁদের প্রভাব, প্রতিপত্তিই দিনে দিনে বাড়তে থাকে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দল কবে পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্ত হবে?
অরুণ মালাকার
কলকাতা-১০৩
কার দিন?
১ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ দিন ধরে এই রাজ্যে ‘ছাত্র শহিদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বার হঠাৎ রাজ্য সরকার ওই দিনটিকে ‘পুলিশ দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে আয়োজিত ছাত্রদের মৌনমিছিলে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের পুলিশ নির্মম গুলি চালিয়ে ৮ জন ছাত্রকে হত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকে ওই দিনটি প্রতি বছরই ছাত্র শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে চলেছে এ রাজ্যের গণতন্ত্রপ্রিয় ছাত্রসমাজ। পশ্চিমবঙ্গের গণআন্দোলনের ইতিহাসে এই ঘটনা একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে সাধারণ মানুষ মনে রেখেছে। পুলিশের লাঠি-গুলিতে অসংখ্য বার রক্তাক্ত হয়েছে এ দেশের রাজপথ। তা সত্ত্বেও যে ভাবে পুলিশের ভূমিকাকে প্রশংসা করে ১ সেপ্টেম্বর দিনটিকেই ‘পুলিশ দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা করা হল, তা সমর্থনযোগ্য নয়। এতে পুলিশের সেই নৃশংসতাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
সমুদ্র গুপ্ত
কলকাতা-৬
ভেদবুদ্ধি
‘এ বার তবে অন্য ভূমিকায়’ (২০-৮) নিবন্ধে প্রেমাংশু চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘বিজেপি নেতারা বলছেন, হিন্দু প্রধানমন্ত্রী নিজের ধর্মাচরণ করতেই পারেন। অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে ভেদাভেদ না করলেই হল। সেটাই ধর্মনিরপেক্ষতা।’’
এই প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিছু দিন আগে কী বলেছেন, দেখা যাক। প্রসঙ্গত, যোগী আদিত্যনাথ এক জন বিজেপি বিধায়ক। ‘‘যদি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রশ্ন করা হয়, আমার কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায় নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু এক জন সন্ন্যাসী হিসেবে আমি কোনও ভাবেই যাব না।...মসজিদের শিলান্যাসে আমাকে কেউই আমন্ত্রণ জানাবেন না। আমিও যাব না।’’ (‘মসজিদ শিলান্যাসে যাবেন না যোগী,’ ৭-৮)।
একই দলের নির্বাচিত সাংসদ তথা প্রধানমন্ত্রীর জন্য দলের ব্যাখ্যা এক রকম। আবার বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ম নিয়ে অন্য রকম ভাষ্য। এ কি ধন্দে ফেলে না? অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে ভেদাভেদ যে তিনি করবেন, আদিত্যনাথের বক্তব্য থেকে তা পরিষ্কার। রাজ্যবাসীর কোনও এক অংশ তাঁকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন সন্ন্যাসী হিসেবে নয়, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। তিনি তো ধর্মনিরপেক্ষ দেশের এক অঙ্গরাজ্যের মুখ্য শাসক। সকলেই তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে তিনি মুখ্যমন্ত্রী, না সন্ন্যাসী? ভারতের সংবিধান কি কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতার বিভিন্ন বিধানের পরিসর রেখেছে?
রঘুনাথ প্রামাণিক
কালীনগর, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।