‘সিঙ্গুর নিয়ে ফের মামলা’ (২০-৩) শিরোনামে খবরটি পড়লাম। জানা গেল, সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর নিয়ে জনস্বার্থে একটা মামলা করা হয়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে করা মামলায় দাবি করা হয়েছে, অধিগ্রহণের আগে যেমন সিঙ্গুরের জমি চারফসলি ছিল, ঠিক তেমন জমিই ফেরত দিতে হবে। এবং অভিযোগ করা হয়েছে, এখনও ওই জমির কিছু অংশে কারখানার কাঠামো, রাস্তা, জলাশয় থেকে যাওয়ায়, অনেক চাষি তাঁদের জমির কাগজ হাতে পেলেও কোনটা তাঁদের জমি, তা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এ বার সিঙ্গুর নিয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা বলি।
দীর্ঘ কাল ধরে চলা সিঙ্গুর কৃষক আন্দোলনের পর এত দিনে নিশ্চয়ই সবার মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই, সিঙ্গুরের ওই জমিটি সত্যিই চারফসলি ছিল। এই বক্তব্যের সপক্ষে সরকারি দু’একটি তথ্য তুলে ধরব। তার আগে বলি, পেশাগত গরজে দীর্ঘ কয়েক বছর (২০০৬ সালের ২৫ মে থেকে) সিঙ্গুরে যাওয়ায় সুবাদে সেখানে সারা বছর কৃষিজমি চাক্ষুষ করে বুঝেছি, বাজেমেলিয়া, গোপালনগর, বেড়াবেড়ি, খাসের ভেড়ি, সিংহের ভেড়ি ইত্যাদি মৌজার জমিগুলো অবশ্যই বহুফসলি জমি। এই মৌজাগুলির বিশাল কৃষিজমিই (৯৯৩ একর) তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার টাটাকে দিয়েছিল গাড়ি কারখানা গড়তে এবং ক্রমাগত ওই জমিটিকে একফসলি জমি বলে দাবি করে গিয়েছিল, যা ছিল সর্বৈব মিথ্যা।
কিন্তু বর্তমান সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি নিয়ে কৃষক তথা রাজ্যের মানুষের সঙ্গে কোনও মিথ্যাচার করেননি। সুপ্রিম কোর্টের রায় কৃষকদের পক্ষে যাওয়ায় পর, তিনি জমিটিকে ফের চাষযোগ্য করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং এক ঝাঁক কৃষিবিজ্ঞানীসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরকে ময়দানে নামিয়েছিলেন। সেইমতো যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে কাজ শুরু হয়, মিডিয়ার দৌলতে তা সবাই জেনেছেন। ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুরে একটি সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কৃষকদের হাতে জমির কাগজপত্র তুলে দেন, সে-কাজও আজ সম্পূর্ণ।
তবে যেটা বলার, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যেমন মিথ্যাচার করেননি, কিন্তু এটাও ঠিক, জমিটি আদৌ ফের চারফসলিতে রূপান্তরিত হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ থেকেই যাচ্ছে। আর যদি হয়ও, তা হতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। জমি উর্বর করার কাজ আশি শতাংশ হয়েছে (শেষ বলা যাবে না), বাকি কুড়ি শতাংশের কাজ হয়নি। অর্থাৎ অধিকাংশ জমিই চাষের উপযুক্ত হয়েছে, কিন্তু তা চারফসলিতে ফিরতে দেরি, এ-কথা চাষিরাই বলছেন। স্থানীয় ঘিয়া নদী (সেচ খাল) থেকে পলিমাটি তুলে জমিতে ফেলার কাজ চলছিল, ফলে একই সঙ্গে নদী সংস্কারের কাজও হচ্ছিল, সে-কাজের গতি এখন অত্যন্ত ধীর। মনে হয়, আমলা ও মন্ত্রীরা একটু তৎপর হলে, বাকি কাজটা শেষের পর্যায়ে পৌঁছবে। এ-সব কারণেই যেটা এই মুহূর্তের বাস্তব, তা হল, সামান্য কিছু জমিতে এখনও রাস্তা, জলাশয়, কারখানার অবশিষ্টাংশ রয়েছে। ৩০০-৪০০ একর জমির কৃষকরা চাষাবাদে নামতে পেরেছেন। বোরো ধান, আলুও ফলেছে জমিতে। সিঙ্গাপুরি কলাচাষের প্রস্তুতিও চলছে।
এ বার, কিছু তথ্য। সিঙ্গুরের চার-পাঁচটি মৌজার এই সেই জমি, যেখানকার কৃষকরা ২০০৪-০৫ সালে সরকারকে ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা জলকর দিয়েছিলেন। এই কর নিয়েছিল সরকারের ‘দামোদর ইরিগেশন রেভিনিউ ডিভিশন’, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জলসম্পদ উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র সেচ দফতরের রিপোর্টে এর উল্লেখ রয়েছে। এই তথ্যে এটা পরিষ্কার যে, জমি বহুফসলি বলেই এক বছরে চাষিরা এত টাকা জলকর দিয়েছেন। ‘জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র ১৯৫৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিজমি সংক্রান্ত মানচিত্রে গঙ্গা ও দামোদরের মধ্যবর্তী হুগলি জেলাকে ‘নব্য পলিগঠিত অঞ্চল’ (নিউ অ্যালুভিয়াল সয়েল) বলে দেখানো আছে, যেখানকার সিঙ্গুরসহ অন্যান্য চাষের জমি পৃথিবীর উর্বরতম মাটি। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত শুধু সিঙ্গুর ব্লকেই সরকার ছ’টি ছোট, বড়, মাঝারি সেচপ্রকল্পের উদ্যোগ করেছিল, যার মধ্যে তিনটি সেচখাল রয়েছে। যেগুলি হল, কানা, ঘিয়া, জুলকিয়া। দামোদর নদ থেকে তৈরি করা এই খালগুলিকে এখন নদীই বলা হয়। এরই পরে চাষাবাদের আরও উন্নতিতে ওই মৌজাগুলিতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ডিপ-টিউবওয়েল। এর পরেও তৎকালীন বাম সরকার সিঙ্গুরের জমি চারফসলি, এটা স্বীকার না করে একফসলি বলে এবং কিছু জমি অচাষযোগ্য বলে মিথ্যাচার করেছিল কোন স্বার্থে, অজানাই থেকে গেল!
সমীর সাহা শ্রীরামপুর, হুগলি
সিট খালি
বিকাশ সিংহের ‘শিক্ষা তো বাজারের পণ্য নয়’ (২৮-৩) পড়লাম। প্রাচীন যুগের কথা বাদ দিলে, আধুনিক কালের বিদ্যা মাত্রই অর্থকরী। সমাজ-জীবনে দেখি, যাঁদের ঘরে শিক্ষিতের সংখ্যা বেশি, তাঁরাই বেশি অর্থ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকেন। প্রেসিডেন্সিতে (এখন বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষা নিয়ে ঐতিহ্য আছে ঠিকই, তবে কী করে বলি, প্রেসিডেন্সি অর্থোপার্জনের ভিত তৈরি করে না? এখন প্রেসিডেন্সিতে যাঁরা পড়তে আসেন, বেশির ভাগেরই লক্ষ্য থাকে খ্যাত অধ্যাপক, নামী বিজ্ঞানী অথবা আইএএস বা আইপিএস হওয়া। এই লক্ষ্য ‘অর্থহীন’ নয়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে পড়তে বা চাকরি করতে যেতে চান। দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রেসিডেন্সির তুলনা করছি না, কিন্তু মূল বিষয়টা হল, প্রেসিডেন্সিতে আসন খালি থাকবে কেন? সিট খালি রইল, কিন্তু পরিকাঠামোর খরচ কমল না—
এ তো অর্থের অপচয়। নির্দিষ্ট মানের সামান্য হেরফের ঘটিয়ে খালি সিটে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো যেত না? কিছু ছাত্রছাত্রী তো সুযোগ পেত তাতে। একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, এক জন যাত্রীর টু এসির ওয়েটিং লিস্টে নাম আছে। বার্থ নেই। এসি প্রথম শ্রেণিতে একটা খালি বার্থে তাঁকে ভ্রমণ করতে দেওয়া হল অতিরিক্ত অর্থ না নিয়ে। যাত্রী-ভাড়ার অর্থ ফেরত দিতে হল না। এতে রেলের লাভ। এই উদাহরণ প্রেসিডেন্সির সিট খালির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য মনে করি।
রঞ্জিতকুমার দাস বালি, হাওড়া
বিদ্যাসাগর
‘ভাঙার কারণ’ (২৩–৩) চিঠিতে লেখক মূর্তি ভাঙার পক্ষে নকশালদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁদের এক নেতার উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ‘যুবশক্তি, শ্রমিক ও জনতা মূর্তি ভাঙছেন শুধু মূর্তি ভাঙার জন্য নয়...’ বাস্তবে সে-দিন নকশালদের মূর্তি ভাঙার কর্মসূচিতে শ্রমিক ও জনতার অংশগ্রহণ কি সত্যিই ছিল? না কি তা ছিল নকশাল নেতাদের ভুল তত্ত্বে বিভ্রান্ত অথচ নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখা একদল সরলমনা যুবকের কাজ? এই কর্মসূচিতে শ্রমিক ও জনতার যুক্ত থাকার কথা বলে এটাকে একটা মহৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের রূপ দেওয়ার চেষ্টা অনৈতিহাসিক, তা একে যতই ‘দুই লাইনের লড়াই’, ‘দুই শ্রেণির লড়াই’ বলা হোক না কেন৷
লেখক বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে সিপিআই (এমএল)–এর ক্ষোভের কারণ হিসাবে বলেছেন, ‘বিদ্যাসাগর যখন সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তখন সেই কলেজ প্রাঙ্গণে সিপাহি বিদ্রোহের সময় ইংরেজ ফৌজের ছাউনি পড়েছিল।’ এর দ্বারা কি প্রমাণ হয় যে, বিদ্যাসাগর সিপাহি বিদ্রোহের বিরোধিতা করেছিলেন? কলেজ ভবন ছেড়ে দেওয়ার সরকারি আদেশের প্রতিক্রিয়ায় ১১ অগস্ট ১৮৫৭ বিদ্যাসাগর বাংলা গভর্নমেন্টকে একটি চিঠি লেখেন। মূল্যবান এই চিঠিটি আজও পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই চিঠির উত্তরে ১৭ অগস্ট গর্ডন ইয়ং বিদ্যাসাগরকে লিখেছিলেন, ‘আপনি কালবিলম্ব না করে এখনই গ্যারিসন–কমান্ডারের হাতে আপনার বিদ্যালয়গৃহ ছেড়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করবেন।’ তার মানে, ১১ অগস্টের চিঠিতে বিদ্যাসাগর কলেজ ভবন ছাড়তে রাজি হননি বা দেরি করছিলেন। পরে সরকার বিকল্প ভাড়াবাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে বাধ্য হয়।
সমর মিত্র কলকাতা–১৩
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়