‘গঙ্গা জল স্নানের উপযোগী: কেন্দ্র’ (১৫-৩) প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই পত্র। কেন্দ্র এমন দাবি করলেও জলের ‘ফিকল কলিফর্ম’-এর মাত্রা জানায়নি। জলের উৎকর্ষ কেবলমাত্র ‘বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড’-এর (বিওডি) উপরেই নির্ভরশীল নয়, ‘কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড’-এরও (সিওডি) প্রয়োজন রয়েছে। সব ক’টিই জলের গুণমানের নির্দেশক। গঙ্গার জল একই সঙ্গে মানুষের স্নানের জন্য এবং মাছের জলবাসের জন্য উপযোগী হওয়া দরকার। দেরিতে হলেও দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য গঙ্গার দূষণ রুখতে বাংলা উদ্যোগ করেছে। সেই অভিনব উদ্যোগ অন্য রাজ্যকে পথ দেখিয়েছে। চেষ্টা করলে প্রশাসন পারবে ১৫০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পরিশুদ্ধ করে গঙ্গায় ফেলতে।
গঙ্গার যাত্রাপথে প্রায় ৩০০ কোটি লিটার অপরিশোধিত তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে মিশছে। এই তরল বর্জ্য পরিশোধন এবং গঙ্গার পবিত্রতার পুনরুদ্ধারে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ (১৯৮৬) এবং ‘নমামি গঙ্গে’ (২০১৪) প্রকল্পের সূচনা।
এ রাজ্যের শ’দুয়েক নালা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে গঙ্গায় পড়েছে। তার মধ্যে তিনটি ৭০ ভাগের বেশি দূষণ সৃষ্টিকারী বলে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন। যেমন— নাজিরগঞ্জ খাল, বালি খাল এবং আদি গঙ্গা। বর্তমানে বাংলায় গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় ২১টি বর্জ্য পরিশোধনের কারখানা রয়েছে, যেগুলি প্রতি দিন ২৮.৫ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধনের ক্ষমতা রাখে। যা মোট তরল বর্জ্যের ২০ শতাংশের কম। অর্থাৎ রোজ ১১৪ কোটি লিটার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি গঙ্গায় গিয়ে মিশছে। আগামী দিন আরও ১৬টি কারখানা বসানোর প্রস্তাব রয়েছে। অথচ লকডাউন পূর্বের তথ্য, গঙ্গাজলে সিএফ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। দক্ষিণেশ্বরে তিন লক্ষ হলে গার্ডেনরিচে পাঁচ লক্ষ, যা স্নানের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়। আন্দোলন, অনশনে গঙ্গা মুক্তি পায়নি। দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে না পারলে মা গঙ্গারও গঙ্গাপ্রাপ্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সুব্রত পাল
শালবনি, বাঁকুড়া
ষাটে সল্টলেক
১৬ এপ্রিল ষাট পূর্ণ হল কলকাতার উপনগরী সল্টলেকের। মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের আমন্ত্রণে ওলন্দাজ ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা নেডিকো শহরের পূর্ব দিকে থাকা লবণাক্ত জলাশয়গুলির সার্ভে করে দেখেছিল, কী করে অঞ্চলটিকে বাসযোগ্য করা যায়। দেখা গেল, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জলাশয়গুলির তলদেশের উচ্চতা আশপাশের জলবহনকারী খালের থেকে কম। অর্থাৎ, শুধুমাত্র লবণাক্ত জল সরিয়ে দিলেই হবে না। এই বিপুল জমিকে ভরাট করে উচ্চতাবৃদ্ধি করতে হবে। ইতিমধ্যে হুগলি নদীর নাব্যতা বজায় রাখতে ব্যাপক ড্রেজিং-এর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। অতএব মাটির ব্যবস্থা হল। ১৯৫৬-র মে মাসে সরকার ১৭৩.৭ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে দখল নিল। গ্লোবাল টেন্ডারের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হল যুগোস্লাভ ফার্ম ‘ইনভেস্ট ইমপোর্ট’-কে। এই ফার্ম বলল, গঙ্গা থেকে পলি কেটে বহন করে এনে ফেলতে যা খরচ, তার থেকে অনেক অল্প খরচে কাজ হবে যদি পাইপলাইনের মাধ্যমে পাম্প করে সরাসরি জল-মেশানো পলি ফেলা হয় জমিতে। অতিরিক্ত জলটুকু অচিরেই মাটি টেনে নেবে এবং বাসযোগ্য হয়ে উঠবে এই প্রান্তর। ১৯৬২ সালের ১৬ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় ও সেচমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায় উদ্বোধন করলেন এই বিশাল কর্মযজ্ঞের।
১৯৭১-৭২ থেকে বাঙালি ভদ্রলোকেরা আসতে শুরু করলেন। প্রথম বাড়ি হিসেবে যেটি স্বীকৃতি পেয়েছে, এবি ব্লকের ‘মূলঘর’। সাদামাটা দোতলা বাড়ি। শোনা যায়, পুব বাংলায় মালিকদের গ্রামের নাম ছিল ‘মূলঘর’। বিডি-১ নম্বর বাড়িটিও প্রাচীন। ১৯৭১-এ জাতীয় কংগ্রেসের সেশন বসেছিল সল্টলেকের প্রান্তরে। ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন খড়ের ছাউনি দেওয়া ‘ইন্দিরা ভবন’-এ। পরে এটি জ্যোতি বসুর বাসস্থান হয়।
১৯৫০-এর দশকে সার্বিয়ার স্থপতি ও টাউন প্ল্যানার তোস্কোভিচ (যাঁকে সল্টলেকের নগর পরিকল্পনার জনক ধরা হয়) এক আলো হাওয়া-সমন্বিত, নাতি-উচ্চ বসতপল্লির পরিকল্পনা করেন। কিছু দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে পঁচাশি বছরের তোস্কোভিচ জানান, প্রাথমিক সমীক্ষায় তাঁরা দেখেছিলেন বাঙালি তখনও ‘ফ্ল্যাট-কালচার’-এ অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। তারা আলাদা বাড়িতে থাকতে পছন্দ করছে, অথচ এক সঙ্গেও থাকতে চায়। তাই সল্টলেকের ব্লক-ব্যবস্থা। তিন-চারশো বাড়ির জন্যে একটা করে পার্ক, বাজার। পার্কগুলোতে সরকারি তদারকিতে বাবলা, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, পলাশ-সহ নানা ধরনের গাছ লাগানো হল। আশির দশকের মধ্যেই তারা বেশ বড়সড় হয়ে ছায়া দিতে শুরু করে। গত পঞ্চাশ বছর ধরে এই সব গাছের পাতা পড়েই তৈরি হয়েছে সল্টলেকের বর্তমান টপ সয়েল।
সত্তরের দশকেও সল্টলেক ছিল ধু ধু প্রান্তর। এ দিক-ও দিক দুয়েকটা বাড়ি মাথা তুলেছে। ইতিমধ্যে গঙ্গার পলি থেকে জল নিষ্কাশিত হয়ে সাদা বালির রূপ নিয়েছে। সেই বালিতে না হয় গাছ, না তা ইমারতি কাজে লাগে। মাথা তুলেছে কাশফুলের ঝাড় আর লম্বা ঘাসের জঙ্গল। দুটো শালখুঁটির মাথায় খড়ের আবরণ দিয়ে তৈরি বাসস্টপ। নিচু বাড়ি, অনেকটা নীল আকাশ আর গাছপালার ছাউনি— এই ছিল আদি সল্টলেক।
নব্বই-এর উদার অর্থনীতির পিঠে সওয়ার হয়ে এল সফটওয়্যার-ঢেউ, ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেল পরবর্তী প্রজন্মের এক বড় অংশকে। অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রজন্ম পৈতৃক ভিটে বিক্রি করে শহরতলির দিকে সরে গেল। ইতিমধ্যে ৯৯৯ বছরের লিজ়ের বাধা কাটিয়ে, জমি হস্তান্তর আইনি বৈধতা পেয়েছে। বাড়ির উচ্চতা-সম্পর্কিত বিধিও শিথিল হয়েছে, দেড়-দোতলা ভেঙে মাথা তুলছে অতিকায় তিন-চারতলা বাড়ি। সল্টলেক আর নাতি-উচ্চ নেই, ষাট বছরে এসে সে চরিত্র বদল করছে, বহরেও বেড়েছে খানিকটা।
অনেকে বলেন সল্টলেকের নিজস্ব সংস্কৃতি নেই। নেই প্রতিবেশীসুলভ সৌহার্দ। কথাগুলো সত্যি, কিন্তু যাদের মাধ্যমে এ সব হওয়ার কথা ছিল, সেই দ্বিতীয় প্রজন্মটাই যে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে!
জয়জিৎ লাহিড়ী
ইমেল মারফত
জল অপচয়
‘সাড়ে ৯ কোটি লিটার জল খরচ শুধু রং ধুতে’ (২০-৩), দোলের পর এই খবর শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, লজ্জার ও চিন্তার। সারা পৃথিবীতে ৬৬.৩ কোটি মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে ভুগছেন। পৃথিবীর মোট জলের ৯৭ শতাংশ হল সমুদ্রের নোনা জল। ফলে তা পানযোগ্য নয়। বাকি তিন শতাংশের মধ্যে ২ শতাংশ বরফ হয়ে হিমবাহ বা অন্য জায়গায় জমে রয়েছে। ফলে সারা পৃথিবীর মানুষের ব্যবহারের জন্য রয়েছে শুধুমাত্র ১ শতাংশ জল।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, যে হারে জল অপচয় হচ্ছে, তাতে পৃথিবীর জীববৈচিত্র সঙ্কটে পড়বে। কিন্তু জল অপচয় থামেনি। রাস্তাঘাটে টাইম কল খোলা থাকলে বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই বোধ করেন না। আবার কেউ জল যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করেন। আজও ভারতে এমন জায়গা আছে, যেখানে মাইলের পর মাইল হেঁটে, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সহ্য করে পানীয় জল নিয়ে আসেন মানুষ। তাই জল অপচয় বন্ধ করা উচিত।
আব্দুর রউফ মোল্লা
শান্তিপুর, নদিয়া
রেল সমস্যা
আদ্রা-আসানসোল রেলপথটির উপর নির্ভরশীল বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার হাজার হাজার রেলযাত্রী। দীর্ঘ দিন হয়ে গেল দক্ষিণ-পূর্ব রেল এই পথের লোকালগুলো চালু করছে না। সারা দিনে বারোটি ট্রেনের মধ্যে পাঁচটি চালানো হচ্ছে। এ ছাড়াও এই লাইনে চলাচলকারী খড়্গপুর-আসানসোল প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে হঠাৎ এক্সপ্রেস ঘোষণা করে সর্বনিম্ন ভাড়া তিরিশ টাকা করা হল। অবিলম্বে ট্রেনটিকে আগের মতো লোকাল হিসেবে চালানো হোক। ন্যূনতম ভাড়া দশ টাকা করা হোক।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
তিলুরি, বাঁকুড়া