সম্পাদক সমীপেষু: রাজনীতির মাটি
‘ধর্ম ও রাজনীতির যোগে প্রাণ পাবে দুর্গা’ (১৩-৯) প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই চিঠি। ভারতে আজন্মকাল ধরে বিভেদ সৃষ্টি করে আসছে ধর্ম ও রাজনীতি। তাদের আবার দুর্গাপুজোয় যুক্ত করা কেন? অতিমারির সময় অভিনব প্যান্ডেল, অভিনবতর প্রতিমা বা মণ্ডপসজ্জার দেখনদারির সুযোগ সীমিত, তাই প্রচারের আলোকবৃত্তে থাকার জন্যই কি দুর্গাপ্রতিমায় রাজনৈতিক দলগুলোর দফতরের মাটি ব্যবহারের ভাবনা? এই রাজনৈতিক দলগুলি চিরবিবদমান (গণতান্ত্রিক পরিসরে নিরস্ত্র বিবাদ কাম্য, তবুও), তদুপরি এরা চিরকাল সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করেছে। তাদের দফতরের মাটি, কখনওই মহাস্নানে বর্ণিত শাস্ত্রবিহিত কোনও মৃত্তিকার সমতুল্য বা পবিত্র নয়। ‘অন্য রকম’ ভাবনা ভাবতে গিয়ে শাস্ত্রোক্ত মৃত্তিকাগুলির ব্যবহারের সামাজিক তাৎপর্যকেও সংশ্লিষ্ট পুজো উদ্যোক্তারা সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন।
তা ছাড়া, আজকের রাজনৈতিক দলগুলি কি সমাজের সব স্তরের মানুষের প্রতিনিধি? দুর্গাপুজোয় সেই দলগুলি গলাগলি করে মানবকল্যাণে ব্রতী হবে, পুজোকমিটির এহেন ধারণা আকাশকুসুম মাত্র। বিভেদের জন্যই যাদের জন্ম ও কর্ম, তাদের দফতরের মাটি পুজোয় ব্যবহারের ভাবনাটিকে কখনও মেনে নেওয়া যায় না। তর্কের খাতিরে যদি শাস্ত্রকেও সরিয়ে রেখে কেবল দুর্গাপুজোর সামাজিকতার কথা বলি, তাতেও বলা যায়— পুজোয় কোনও রাজনৈতিক দল বা দফতরের মাটি এসে পড়লে সার্বিক কল্যাণের আবাহনই মাটি।
নীলোৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫১
নবকন্যা
‘ধর্ম ও রাজনীতির যোগে প্রাণ পাবে দুর্গা’ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানাই, দুর্গাপুজোর প্রয়োগতত্ত্ব ও আচার-অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে তন্ত্রের প্রভাবাশ্রিত সঙ্কেত ও প্রতীকের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণের চোখে এই সঙ্কেত-শব্দগুলির যে অর্থ, তার সঙ্গে তন্ত্রের অর্থের কোনও মিল নেই। এমনই একটি শব্দ ‘বেশ্যা’, যা পুজোর অনুষঙ্গে বেশ কয়েক বার এসেছে, বিশেষত পুজোর উপচার হিসেবে। মহানির্বাণ তন্ত্রের শ্লোক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, প্রচলিত অর্থে ‘বেশ্যা’ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে না। ‘‘অভিষিক্তা ভবেৎ বেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে’’— এতে বোঝানো হচ্ছে, দীক্ষা পুরশ্চরণ ইত্যাদি সংস্কারের পর মন্ত্রচৈতন্য হওয়ার ফলে যিনি দেবত্বে উন্নীত হয়েছেন, সেই অভিষিক্তাই বেশ্যা। তন্ত্রে অভিজ্ঞরা মনে করেন, পুজোর উপচার হিসেবে পতিতালয় নয়, এমন ভক্তের ঘরের মাটির কথাই বলা হয়েছে। গুপ্তসাধনতন্ত্রেও কুলশক্তির অর্চনা প্রসঙ্গে কুলাঙ্গনার ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। এই সাধনার জন্য নটী, কাপালিকী, বেশ্যা, রজকী, নাপিতানি, ব্রাহ্মণী, শূদ্রকন্যা, গোপকন্যা ও মালাকারকন্যা, এই নয় কুলাঙ্গনার কথা বলা হয়েছে। এঁরা ‘নবকন্যা’ নামে পরিচিত। শাস্ত্রমতে নবকন্যার সকলেই দুর্গার অংশ। সে কারণেই তাঁদের দরজার মাটি নিয়ে প্রতিমা তৈরির কথা বলা হয়েছে।
প্রতিটি উপচারের মূলে রয়েছে তন্ত্রের গভীর দর্শন। সেই দর্শন মেনেই মহাশক্তির অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে নবকন্যাকে, যার মধ্যে আছেন বেশ্যাও। চক্রবেড়িয়া পুজোকমিটি যে আপাত-সমন্বয়বাদী ভাবনা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের মাটি এনে মূর্তি গড়ার পরিকল্পনা করেছে, পুজোর দর্শনের সঙ্গে তা কোনও ভাবেই খাপ খায় না। সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দেওয়া যেতেই পারে, তবু এই পরিকল্পনাকে দিনের শেষে শুধু উৎসবের গিমিক বলেই মনে হয়।
অমিতাভ পুরকায়স্থ, কলকাতা-১২৯
সেই বাড়ি
‘আই ওয়ান্ট রিয়াল টিয়ার্স’ (পত্রিকা, ১২-৯) পড়ে মলিনা দেবী সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা গেল। লেখককে ধন্যবাদ। একটি জায়গায় বর্ণিত রয়েছে— “১৯৪৭ সনে, স্বাধীনতার বছরেই ভবানীপুরে মিত্র ইনস্টিটিউশনের উল্টো দিকের গলিতে একতলা বাড়ি কিনে আড়ে-বহরে বাড়িয়ে সেখানে উঠে এসেছিলেন মলিনারা।’’ এই প্রসঙ্গে জানাই, স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্নভূমি মায়াবতীতে প্রতিষ্ঠিত অদ্বৈত আশ্রমের কলকাতা প্রকাশনা বিভাগ অন্যান্য স্থান ঘুরে ১৯৩১ সালে ৪ ওয়েলিংটন লেনে স্থানান্তরিত হয়। রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের চতুর্দশ প্রেসিডেন্ট শ্রীমৎ স্বামী গহনানন্দজি মহারাজের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় যে, ওয়েলিংটন লেনের সেই বাড়িটি তখন ভাড়ায় ছিল, কেনা হয়নি। পূজ্যপাদ মহারাজ ১৯৪২ সালে এই বাড়িতে কর্মীরূপে যোগ দেন। এর পর মায়াবতী থেকে তিনি ফিরে এসে শোনেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী মলিনা দেবী ওই বাড়িটি কিনে নিয়েছেন।
কেনার পর মলিনা দেবী লোক পাঠিয়ে জানতে পারেন যে, ওখানে, অর্থাৎ ৪ ওয়েলিংটন লেনের বাড়িতে, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একটি শাখা আছে। সন্ন্যাসীরা তাঁর বাড়িতে থাকছেন, এটি ছিল মলিনা দেবীর কাছে আনন্দের বিষয়। তবে তিনি জানান যে, তাঁর নিজের জন্য কেবলমাত্র একটি ঘর ছেড়ে দিলেই হবে। কিন্তু সন্ন্যাসীদের কাছে এটি সমস্যা হয়ে দেখা দিল। পরে সুরাহা হয়। জানা গেল, মলিনা দেবী আরও একটি ভাল বাড়ি পেয়ে গিয়েছেন, এবং অদ্বৈত আশ্রমের যদি প্রয়োজন হয়, তবে ওই বাড়ি তিনি আশ্রমকে বিক্রি করতে রাজি আছেন। ওই বাড়ি তখন কেনা হয়। বিবেকানন্দের স্বপ্নভূমি, অদ্বৈত আশ্রম বইটিতে এই তথ্য পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, উক্ত গ্রন্থের ১৭৮ পৃষ্ঠায় ৪ ওয়েলিংটন লেনের বাড়ির একটি আলোকচিত্র মুদ্রিত হয়েছে।
মোহিতরঞ্জন দাস, কলকাতা-৯৬
তিনি সুভাষ
‘ভারতাত্মা’-য় (সম্পাদকীয়, ১৯-৮) লেখা হয়েছে, ‘‘১৯৩৮ সালে, জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে, ভারতে যখন ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি গঠিত হইয়াছিল...।’’ উদ্ধৃতাংশটিতে নেতৃত্ব-দানকারীর নাম নেওয়া হলেও যাঁর দ্বারা এই কমিটি গঠিত হয়েছিল, তাঁর নাম নেওয়া হয়নি।
তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর দেশ কী ভাবে এগোবে, তার নীল নকশা তৈরির জন্য তিনি ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি গঠন করেন। তিনি নেহরুকে এই কমিটির চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করেছিলেন। হরিপুরা কংগ্রেসে সভাপতি হয়ে নেতাজি স্বাধীনতার লক্ষ্যে দলের কর্মকাণ্ডে যে গতিময়তা আনেন, তাতে গাঁধীবাদী অহিংস নেতারা ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে ত্রিপুরী কংগ্রেসে সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন— এই কলঙ্কজনক ইতিহাস আমাদের জানা। কিন্তু ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি প্রসঙ্গে যে ভাবে নেহরুর স্তুতি করা হয়, তা খুবই বেদনাদায়ক। স্বাধীনতার পরে নেহরু যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, তা ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটিরই ফসল।
মৃগাঙ্ক শেখর সাহা, রামপুর, কোচবিহার
দু’আনা সের
‘বরফ ব্যবসার অনুমতি পাননি প্রিন্স দ্বারকানাথ’ (রবিবাসরীয়, ৬-৯) প্রসঙ্গে জানাই, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক শ্রীপান্থ তাঁর কলকাতা বইতে লিখেছেন রজার্স সাহেবকে সংবর্ধনা দেওয়ার পর কলকাতায় একটি ঠান্ডাঘর তৈরি হয়েছিল ব্যক্তিগত মালিকানায়। লর্ড বেন্টিঙ্কের পরের সরকার আরও এক ধাপ এগিয়ে লখনউতে বরফের কল বসিয়েছিল।
সেই বরফ কারখানা ছিল সরকারি কারখানা। সরকার বিজ্ঞাপন দিয়েছিল কাগজে— ‘‘এখন সরকারি কারখানায় তৈরি বরফ দু’আনা সের দরে মিলবে। এই অমূল্য বিলাসদ্রব্য সরকার মানুষের কাছে নিয়ে আসছে এমন দামে যাতে প্রতিযোগিতা চলে না।’’ এ ভাবেই সরকার বাহাদুর বাজারে বরফ বিক্রি শুরু করেছিল।
অভিজিৎ ঘোষ, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।