সম্পাদক সমীপেষু: মার্কিন হিংস্রতা

কয়েক বছর আগে, মার্কিন মুলুকের কলোরাডো-র কলম্বাইন স্কুলের দুই ছাত্র গুলি চালিয়ে, ১৩ জন সহপাঠী ও এক জন শিক্ষককে মেরে ফেলেছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০০:১০
Share:

‘ভার্জিনিয়ায় গুলি, হামলায় হত ১২’ (২-৬) শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে এই চিঠি। এক ওয়েবসাইট হিসাবে দিয়েছে, ৩১ কোটি জনসংখ্যার তথাকথিত সুসভ্য স্বপ্নের দেশে ৩০ কোটি অস্ত্র ঘোরে নাগরিকদের হাতে হাতে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর তথ্য বলছে, ফি বছর আগ্নেয়াস্ত্রের শিকার হন ৩০ হাজার মার্কিন নাগরিক। এঁদের মধ্যে ১১ হাজার খুন হন, আর বাকি ১৭ হাজার আত্মহত্যার জন্য বেছে নেন বন্দুককে। মার্কিন ভূখণ্ডে প্রতি দিন ১৯ বছরের কম বয়সি ৩টি জীবন কেড়ে নেয় দগদগে বুলেটক্ষত।

Advertisement

কয়েক বছর আগে, মার্কিন মুলুকের কলোরাডো-র কলম্বাইন স্কুলের দুই ছাত্র গুলি চালিয়ে, ১৩ জন সহপাঠী ও এক জন শিক্ষককে মেরে ফেলেছিল। ‘ফারেনহাইট ৯/১১’-র পরিচালক মাইকেল মুর সে দিন তৈরি করেছিলেন তাঁর অস্কারজয়ী তথ্যচিত্র— ‘বোলিং ফর কলম্বাইন’ (ছবিতে তারই পোস্টার)। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘ফি বছর আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যার সংখ্যা যেখানে জার্মানিতে ৩৮১, ফ্রান্সে ২৫৫, কানাডায় ১৬৫, ব্রিটেনে ৬৮, অস্ট্রেলিয়ায় ৬৫, জাপানে ৩৯, সেখানে আমেরিকায় ১১ হাজার ১২৮ জন।’’ তিনি দেখিয়েছেন, মার্কিন হিংসার সংস্কৃতিতে আমেরিকার বিদেশনীতি এবং সমরাস্ত্র তৈরির বাজেটের ভূমিকা। মিডিয়ার ভূমিকাও। বলেছেন, অপরাধের মাত্রাতিরিক্ত প্রতিবেদনেও দেশে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়, হিংসা উৎসাহ পায়।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলি এখন নেশার আখড়া। যাঁরা ড্রাগের বিরুদ্ধে আপসহীন যুদ্ধের ডাক দেন, বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ হয়েও, সেই মার্কিনরাই বর্তমান বিশ্বের উৎপাদিত ৬০ শতাংশ কোকেন ব্যবহার করেন। আমেরিকায় ৫০০০-এর বেশি মানুষ অবৈধ ড্রাগ ব্যবহারে মারা যান প্রতি বছর। নারীস্বাধীনতার তথাকথিত নন্দনকাননে ধর্ষিতা হন প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে ১ জন। স্ট্যাচু অব লিবার্টির দেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ কারাগারে থাকেন। প্রতি ২০ জনে ১ জন হাজতবাসী।

Advertisement

‘বোলিং ফর কলম্বাইন’ ছবিটি অস্কার বিজয়ী হওয়ার মুহূর্তের স্মৃতির বিষয়ে মুর বলেছেন, ‘‘দর্শকরা উঠে দাঁড়ালেন।... তাঁরা এমন একটি ছবির জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন, যে-ছবি বলে আমরা আমেরিকানরা এক হিংস্র জাত। আমরা আমাদের বন্দুক দিয়ে পরস্পরকে এবং অন্য অনেক দেশের মানুষকে মারি।’’

অঞ্জন সাহা

কলকাতা-৫১

যোগ্যতা অর্জন

ক্ষমতা দখলের যে তাড়াহুড়ো বিজেপি নেতারা দেখাচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মাটির তলায় বুঝি পেট্রোলিয়ামের অফুরন্ত সম্ভার লুকিয়ে আছে! ঠিক তৃণমূলের কায়দায় দল ভাঙাচ্ছেন, আজেবাজে লোককে দলে নিচ্ছেন, আর নিজেরা ক্ষমতায় আসার আগেই যা ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন, তাতে তাঁদের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেকছে বুঝতে পারছেন না। ওঁরা যদি ভেবে থাকেন, কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে অশান্তি জিইয়ে রেখে (এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা জিইয়ে রেখে), হিন্দু ভোটকে ২০২১ সাল অবধি টেনে নিয়ে যাবেন নিজেদের ঝুলিতে, তা হলে খুবই ভুল ভাবছেন।

ধর্মনির্বিশেষে বাঙালি চায় বুদ্ধিদীপ্ত শাসক— যাঁদের ক্ষুরধার চিন্তাভাবনা পশ্চিমবঙ্গকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বামেদের ভণ্ডামি আর তৃণমূলের গুন্ডামি থেকে মুক্তি পেতেই গত লোকসভা ভোটে এক বিরাট সংখ্যক মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। বিজেপি নেতাদের প্রতি আবেদন, সেই জনাদেশকে সম্মান করুন। বৌদ্ধিক চর্চা করুন, বিতর্কসভার আয়োজন করুন, আপনারা ক্ষমতায় এলে কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক হাল ফেরাবেন, সে সব পরিকল্পনা ব্যক্ত করুন।

তৃণমূলের মুসলিম তোষণ নীতির, কাটমানি দুর্নীতির নিন্দা করবেন না কেন, হাজার বার করুন। কিন্তু ‘জয় শ্রীরাম’ হুঙ্কার দিয়ে নিরীহ মুসলিম যুবককে ভয় দেখানো বন্ধ করুন। বরং চেষ্টা করুন, তাকে কট্টরপন্থার হাতছানি থেকে বিযুক্ত করে, দেশের ও রাজ্যের আর্থিক সমস্যা, কর্মসংস্থানের সমস্যা, পরিবেশের সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে ভাবার ক্ষেত্রে পাশে থাকতে।

পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে যে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে এবং তাঁর দূরদৃষ্টির ফলস্বরূপ যে সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির জন্ম হয়েছে, সেগুলির প্রাণখোলা প্রশংসা করতে শিখুন। বিরোধী হলেই শাসকের সব কিছুরই নিন্দা করতে হবে, গণতন্ত্রে এ কথা কোথায় বলা আছে? মোট কথা, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত সাংস্কৃতিক ভাবধারার সমীপবর্তী হোন, তবেই এ রাজ্যের শাসক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।

সুরজিৎ দত্ত

পান্ডাপাড়া, জলপাইগুড়ি

ভাটপাড়া

‘ভাটপাড়া তখন’ (রবিবাসরীয়, ৩০-৬) প্রতিবেদনে অর্জুনদেব সেনশর্মা বিস্তৃত ভাবে ভাটপাড়ার ঐতিহ্য বর্ণনা করেছেন। বহু পণ্ডিত নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছেন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অবদান এখানে বলা প্রয়োজন মনে করছি।

পণ্ডিত শিরোমণি আচার্য পঞ্চানন তর্করত্ন প্রথম জাতীয়তাবাদী পণ্ডিত ছিলেন, যিনি হিন্দু সমাজ বিরোধী সারদা আইনের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি ত্যাগ করেন। কাশী সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয়ের আহ্বানে ভাটপাড়ার দুই প্রখ্যাত পণ্ডিত— পঞ্চানন তর্করত্ন ও প্রমথনাথ তর্কভূষণের অবদান উল্লেখযোগ্য। তর্করত্ন মহাশয়ের সুযোগ্য পুত্র পণ্ডিতপ্রবর শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ— বহুমুখী প্রতিভাধর ছিলেন। অসামান্য অবদানের জন্য মহামহোপাধ্যায়, ডি লিট (কলকাতা, বর্ধমান, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়) দেশিকোত্তম (শান্তিনিকেতন) ও রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ পণ্ডিত ড. অনিল ভট্টাচার্য তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্ববন্দিত হয়েছিলেন। ড. শিবজীবন ভট্টাচার্য ও ড. প্রভাতকুমার ভট্টাচার্য স্বক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

দীপক ভট্টাচার্য

কলকাতা-১১৫

উত্তরণের পথ

‘শত্রু ক্যানসার, লড়াইয়ে ভরসা মনের জোর ও বন্ধুরা’ (১-৭) সংবাদে জানা গেল, এক শীর্ষ স্তরের স্বাস্থ্যকর্তা বলছেন, ‘‘কিন্তু যেখানে খরচটা অস্বাভাবিক এবং রোগীর জীবনের মেয়াদ বাড়ার সম্ভাবনা ছিটেফোঁটা, সেখানে যে কোনও আকাশছোঁয়া দামের ওষুধের ব্যবস্থা করা সরকারের পক্ষেও অসম্ভব হয়ে পড়ে।’’ জানি না, খেলাধুলার উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ক্লাবকে, উৎসব ও মেলার নামে বিভিন্ন কমিটিকে লাখ লাখ টাকা দেওয়ার সময় সরকারের এই ধরনের অসহায়তার কথা মনে আসে কি না।

তবে সরকার যখন অসহায়, তখন এ থেকে উত্তরণের পথ কী, সেটাও ভাবা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকার এই ধরনের চিকিৎসার ব্যয় বহনের জন্য একটি তহবিল গঠন করতে উদ্যোগী হতে পারে। এই তহবিলে যাঁরা অর্থ দান করবেন, তাঁরা আয়করে ছাড় পাবেন।

এই তহবিলে অর্থ খরচের শর্ত থাকতে পারে এ রকম: ১) রোগী গরিব পরিবারের হবেন, ২) চিকিৎসা খরচ ৫ লাখের উপর হবে, ৩) চিকিৎসা সরকারি প্রতিষ্ঠানে হতে হবে, ৪) সাহায্যের অর্থ দেওয়া হবে ৬০:২০:২০— এই অনুপাতে।

অর্থাৎ চিকিৎসা খরচের ৬০ শতাংশ অর্থ সাহায্য হিসেবে দেওয়া হবে, ২০ শতাংশ বিনা সুদে ধার হিসেবে দেওয়া হবে, আর বাকি ২০ শতাংশ সুদ-সহ ধার হিসেবে দেওয়া হবে। তবে কারা এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, তা সরকার গঠিত একটি কমিটি স্থির করবে। সমস্যা
হয়তো আসবে, তবে সদিচ্ছা
যেখানে বড় জোর, সেখানে সমাধানও বেরিয়ে আসবে।

প্রশান্ত দাস

অনন্তপুর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement