Israel-Hamas

তবু আশঙ্কা

আপাতত স্থির হয়েছে, ৩৩ ইজ়রায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, বাকিদেরও পরবর্তী পর্যায়ে মুক্তি মিলবে। বিপরীতে, ধৃত ও বন্দি এক হাজার প্যালেস্টাইনিকে ছেড়ে দেবে ইজ়রায়েল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৫৫
Share:

কেন নয়ন আপনি ভেসে যায় জলে, কবি ভেবেছিলেন। আর একবিংশ শতকের প্রথম-চতুর্থাংশ শেষের ক্ষণে দাঁড়িয়ে ইজ়রায়েলের মুখে শান্তির বার্তা শুনে বিশ্বময় শুভবোধসম্পন্ন নাগরিকের মনে হতে পারে, কেন তবু কিছুতে স্বস্তি না মেলে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েল ও হামাসের ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ শুরু হওয়ার ১৫ মাস পর, এক লক্ষ কুড়ি হাজার মৃত বা আহতের সংখ্যার বিপুলতার সামনে দাঁড়িয়ে, হিসাবহীন নারী, শিশু, বয়স্কের নিথর শরীরের কথা মনে করে, উনিশ লক্ষ ঘরছাড়া সহায়সম্বল হারানো প্যালেস্টাইনির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভেবে— ইজ়রায়েলের শান্তিবার্তায় কেউ যদি আনখশির উৎফুল্ল হতে না পারেন, তা হলে তাঁকে বিশেষ দোষ দেওয়া চলে না। শোনা গিয়েছে, ইজ়রায়েল মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের পিছনে আছে কাতার এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তাড়না। এই তাড়না কেন আগে দেখা যায়নি? এখন কেন এই তাড়নায় সার্থক ফল মিলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে? খামোকা তর্ক তোলার জন্যই প্রশ্ন নয়, প্রশ্নের পিছনে আছে অনুমান যে, ইজ়রায়েল যখন হামাসকে চূড়ান্ত শিক্ষা দেওয়ার নামে প্যালেস্টাইনের গাজ়া অঞ্চলে অমানবিকতার রক্তপ্লাবন বইয়ে দিচ্ছিল, তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষমতা রাখে যে সব দেশ, তাদের অনেকেই ছিল নীরব কিংবা অবস্থা বুঝে অত্যন্ত সীমিত-রব। প্যালেস্টাইনের গাজ়া অঞ্চলের হাজার হাজার নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় দুরবস্থায় নিক্ষেপ করার জন্য ইজ়রায়েলের পাশাপাশি এই দেশগুলিকেও কিন্তু কম অপরাধী বলা যায় না!

Advertisement

আপাতত স্থির হয়েছে, ৩৩ ইজ়রায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, বাকিদেরও পরবর্তী পর্যায়ে মুক্তি মিলবে। বিপরীতে, ধৃত ও বন্দি এক হাজার প্যালেস্টাইনিকে ছেড়ে দেবে ইজ়রায়েল। যে ত্রাণ ও সহায়তা ছাড়া গাজ়ার অবশিষ্ট মানুষগুলিকেও বাঁচিয়ে রাখা যাবে না, গাজ়ায় তা এ বার প্রবেশ করার অনুমতি দেবে ইজ়রায়েল। ক্ষতবিক্ষত মানুষগুলিকে গাজ়া থেকে বার করে মিশরে নিয়ে যাওয়া যাবে বাকি চিকিৎসার জন্য। তবে এর মধ্যেও কিছু অস্পষ্টতা। বন্দিদের ছাড়ার ক্ষেত্রে ইজ়রায়েলের কিছু বাধ্যতামূলক নীতি আছে, যা মানতে গেলে অনেক আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। আশঙ্কা, পদ্ধতিগত অস্পষ্টতার চোটে পুরো যুদ্ধবিরতির পথটিই আরও অনিশ্চিত, আরও দীর্ঘ হয়ে যেতে পারে। ইজ়রায়েলের কাছ থেকে প্যালেস্টাইন প্রশ্নে কখনও সোজাসুজি শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা শোনা যায় না, এবং হামাসের মতো চরমবাদী গোষ্ঠী সেই অস্পষ্টতার সুযোগ নেয় পুরো মাত্রায়।

সুতরাং, পরবর্তী প্রশ্নগুলি ক্রমেই এসে জড়ো হবে। যেমন, এই যুদ্ধবিরতি মানে কি দুই তরফেই সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার? হামাস ছাড়া অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি কি আক্রমণ প্রত্যাহারের নীতি মেনে চলবে? প্যালেস্টাইনে উগ্রবাদী শক্তি অনেক, তাই তারা যদি সংঘর্ষের পথ থেকে সরে না আসে তা হলে হিংসা ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়, বিশেষ করে এত অকারণ প্রাণক্ষয়ের পর প্রতিশোধস্পৃহা খুবই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষেরও সমর্থন পাবে প্রতিশোধ-নির্ণায়ক উগ্রবাদীরা। প্যালেস্টাইনের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা, নতুন করে নির্মাণ করার দায় কে নেবে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, গাজ়ার রাজনৈতিক দখল এ বার কার হাতে থাকবে? ইজ়রায়েলই বলে দিয়েছে, অতঃপর প্যালেস্টাইনে হামাস আর কোনও ভূমিকা পালন করতে পারবে না। পাশাপাশি যে শেষ প্রশ্নটি ইজ়রায়েলিদের মনে নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে গুঞ্জরিত হচ্ছে, তা হল, আগামী সোমবার থেকে যখন বাইডেনের বদলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমস্ত রাষ্ট্রীয় ভূমিকা স্থির করবেন, তখন কি ইজ়রায়েল এ-যাবৎ কালের বন্ধু-উপদেশক-ত্রাতা দেশটির ভূমিকা পাল্টাবে? কতটা পাল্টাবে? অনেক কিছুই বড় অনিশ্চিত, ফলত এখনই নিশ্চিন্ত বোধ করার জো নেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement