উৎসব করব, আনন্দ করব, আর সশব্দে বাজি ফাটিয়ে আশপাশের লোকজনকে জানান দেব না, তাদের কানের পর্দা ফাটাব না, বুকে ধড়ফড়ানি আনব না— তা আবার হয় নাকি? আর হয় না বলেই, শুধুমাত্র কালীপুজোয় বাজি ফাটানোর লক্ষ্মণরেখা মুছে দিয়ে এখন আমরা বিভিন্ন উপলক্ষের পাশাপাশি বিয়েবাড়িতে বাজি ফাটানোর রেওয়াজ চালু করে দিয়েছি। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল— প্রিয় দল জিতলে উল্লাসে মেতে উঠে বাজি ফাটাই নিয়ম করেই। এ ছাড়া কালীপুজোয় বেশি বাজি ফাটানো হয়েছে, না ছটপুজোয়— এই বিষয়ে খুব শীঘ্রই হয়তো আসতে চলেছে বিভিন্ন পুরস্কারের ঘোষণা। তবে হ্যাঁ, একটা ব্যাপারে আমরা গর্ব করতে পারি! ইংরেজি নববর্ষের রাতে সামান্য সময়ের জন্যে বাজি ফাটিয়ে দূষণ ঘটালেও, বাংলা নববর্ষকে আমরা পুরোপুরি ভাবে দূষণমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছি। অন্তত এখনও অবধি।
গৌতম মুখোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
মানুষ দেবতা
‘আশ্চর্য আপত্তি’ (১০-১০) শীর্ষক চিঠিতে পড়লাম, লেখিকাকে টিটিই মুসলিম সহযাত্রীর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘‘ইয়াহাঁ পর আপকি সিকিয়োরিটি মে প্রবলেম হো সকতি হ্যায়।’’ তার পর পাশের কুপে চলে যেতে বলেন।
ট্রেনের সহযাত্রী সম্পর্কে আমার একটি অভিজ্ঞতা বলি। আমি ৭৬ বছরের নড়বড়ে বৃদ্ধ, ৩২ বছরের ডায়াবিটিক রোগী। একটি ভ্রমণ সংস্থার সাহায্য নিয়ে সস্ত্রীক চলেছি পুজোতে কেরল ভ্রমণে। স্লিপার কোচে উঠলাম ২ অক্টোবর রাত দশটায়। ঘণ্টা দুয়েক পর আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে কোচের মেঝেতে বমি করে ফেললেন। প্রায় জ্ঞানহীন স্ত্রীকে কোনও রকমে শুইয়ে দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করলাম। খানিক পরে উনি টয়লেটে যেতে চাইলেন। কিন্তু দাঁড় করাতে গেলেই উনি পড়ে যাচ্ছেন। ওঁকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।
ওই কামরায় ছিল একটি পপ-সঙ্গীতের টিম। তাঁদের কেউ এগিয়ে এলেন না সাহায্য করতে। কপালে চন্দন-সিঁদুর, হাতে তাবিজ পরা, মোবাইলে নিশ্চিন্তে আঙুল-ঘষা দু’জন আধুনিক যুবক তাকিয়েও দেখলেন না আমাদের দিকে। ভ্রমণ সংস্থার ম্যানেজার অন্য কামরায় মোবাইল অফ করে রেখেছেন।
আশপাশের বার্থে বাকি সবাই অশিক্ষিত মুসলমান রাজমিস্ত্রি। কাজের জন্য চেন্নাই চলেছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে এক মহিলা তাঁর স্বামীকে নিয়ে এগিয়ে এসে, বেশ কয়েক বার টয়লেটে নিয়ে গেলেন আমার স্ত্রীকে ধরে ধরে। এমনকি মহিলাটি আমার স্ত্রীর অঙ্গ পরিষ্কারও করিয়ে দিলেন। সারা রাস্তায় আমাদের জল ও খাবারের জোগান দিলেন তাঁরা। তার পর প্রায় দুই দিন আড়াই রাত ওঁরা আমাদের যে ভাবে সেবা করলেন, তা আমি সারা জীবনে ভুলব না। মায়ের আগমনের ঠিক আগে চতুর্থীর দিনই আমি আমার মুসলমান মা দুর্গার সাক্ষাৎ পেয়ে গেলাম।
সেই মুসলমান মা আর মুসলমান মহাদেবরা না থাকলে, আমাদের ‘সিকিয়োরিটি মে প্রবলেম’ যে কী পরিমাণ হত, ভাবতেও পারছি না। হয়তো বাঁচাতেই পারতাম না আমার স্ত্রীকে। ট্রেনের টিটিই, বা দেশের চালকরা যেন কোনও ধর্মের মানুষদের বিষয়ে অযথা যাত্রীদের আতঙ্কগ্রস্ত না করেন।
অশোককুমার দাস
কলকাতা-৭৮
সংস্কৃত পড়া
‘টোল উন্নয়ন ও পণ্ডিত-ভাতা বাড়াতে কমিটি’ (১-১০) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা। সত্যি বলতে কী, বামফ্রন্ট জমানায় সংস্কৃত পঠন-পাঠন ছিল আগাগোড়াই উপেক্ষিত। মাধ্যমিক স্তর থেকে সংস্কৃত তুলে দেওয়ায় যে বিরাট ফাঁক তৈরি হয়, ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে পরে (ডিগ্রি কোর্সে) তা পূরণ করা দুষ্কর হয়ে ওঠে। গৃহশিক্ষকের ‘নোটস’ মুখস্থ করে ভাল ফল করলেও, অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভুল সংস্কৃত লেখায় তাদের বড়সড় খামতি থেকে যায়। সাম্মানিক (অনার্স) কোর্সেও বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে সংস্কৃত লিখতে অপারগ। দীর্ঘ ৪০ বছরের অধ্যাপক জীবনে এমন অভিজ্ঞতাই হয়েছে।
মাধ্যমিক স্তরে সংস্কৃতকে যদি আবার আবশ্যিক (কম্পালসরি) করা হয়, তবেই ধারাবাহিক ভাবে এই ভাষা শিক্ষার রাস্তা সহজ হবে। বর্তমান রাজ্য সরকার সংস্কৃত কলেজকে ‘ডিমড ইউনিভার্সিটি’র মর্যাদা দিয়ে সংস্কৃত অনুরাগের পরিচয় দিয়েছে। নবদ্বীপে আর একটি উন্নত মানের প্রতিষ্ঠান তৈরি করার উদ্যোগও প্রশংসনীয়।
কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে আবার নতুন করে টোল নিয়ে ভাবনাচিন্তা কি আদৌ গৌরবের? পুরনো ঢঙে এমন শিক্ষাপদ্ধতি একেবারেই যুগোপযোগী নয়। কাউকে অসম্মান করে বলছি না, আগের মতো নিষ্ঠাবান, বাঘা পণ্ডিতই বা কোথায়? প্রমথনাথ তর্কভূষণ, পঞ্চানন তর্করত্ন, হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ, শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য প্রমুখ পণ্ডিত তো আজ ইতিহাস!
যদি সদিচ্ছা নিয়ে মৃতপ্রায় টোলগুলির পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করা হয়, তা হলে সিলেবাসে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। যেমন, দর্শন নিয়ে কেউ যদি আদ্য-মধ্য-উপাধি পড়তে চান, তাঁকে কিছুটা পাশ্চাত্য দর্শন পড়তে হবে। কাব্য পড়ার সময় পাশ্চাত্য সাহিত্যের সঙ্গে তুলনামূলক পরিচিতিও গড়ে ওঠা দরকার। ব্যাকরণ নিয়ে এগোতে গেলে ভাষাবিজ্ঞানের নিরিখে তার পর্যালোচনা প্রয়োজন। আবার কাব্যতত্ত্ব জানতে গেলে অ্যারিস্টটল প্রমুখ পণ্ডিতের সঙ্গে পরিচিত হলে ভাল হয়। তা ছাড়া টোলগুলিতে এখন ইংরেজি শেখার কিছুটা সুযোগও রাখা উচিত। তা না হলে পশ্চাদগামিতা আরও বাড়বে। আধুনিক মননের জগতে বসে সংস্কৃতচর্চা না করলে সবটাই হবে ভস্মে ঘি ঢালার শামিল। মনে রাখতে হবে, বিশ্বায়নের যুগে মান্ধাতা আমলের একপেশে পড়াশোনার কোনও দাম নেই।
ঘটা করে এখন বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। পিতার প্রবল ইচ্ছা সত্ত্বেও এই বিদ্যাসাগর কিন্তু টোল খুলে ‘টুলো পণ্ডিত’ হননি। যদি হতেন, ‘তথাকথিত’ ব্রাহ্মণসমাজে তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি হয়তো অনেক বেড়ে যেত। কিন্তু আমরা কি প্রাতঃস্মরণীয় বিদ্যাসাগরকে পেতাম?
আধুনিক স্কুল-কলেজ খুলে তাদের পরিচর্যাতেই তো তিনি সারাটি জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন।
বাণীবরণ সেনগুপ্ত
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
প্রয়োজনের স্তর
মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার নির্বাচনের ফল প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখ্য মনস্তাত্ত্বিক আব্রাহাম ম্যাসলো (১৯০৮-৭০) কৃত NEED HIERARCHY তত্ত্বটি, যা ১৯৪৩-এ প্রকাশিত। এই তত্ত্বে তিনি বলেছেন, মানুষের প্রয়োজনের পাঁচটি স্তর আছে, প্রথম স্তরটি মিটলে তবে মানুষ দ্বিতীয় স্তর মেটাবার চিন্তা করে, দ্বিতীয়টি মিটলে তবে তৃতীয়টি...
এই স্তরগুলি হল— ১) ক্ষুধা ও যৌনতা, ২) নিরাপত্তা, ৩) প্রেম ও বন্ধুত্ব, ৪) আত্মমর্যাদাবোধ, ৫) স্বীয় ক্ষমতার পূর্ণতা-প্রাপ্তি ও নানা ভাবমূলক ও আদর্শমূলক বিষয়। দেশপ্রেমের স্থান এই পঞ্চম স্তরে।
ভোটের ফল প্রমাণ করল, ভারতবাসী এখন ক্ষুধা ও নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত, তাই ভাবাদর্শমূলক বিষয় এখন গৌণ।
শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য
কলকাতা-৩৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘মাতৃসঙ্গীত গেয়েছেন...’ (রবিবাসরীয়, ২৭-১০) নিবন্ধে তানসেনের সময়কাল ভুল লেখা হয়েছে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রকাশিত ‘ভারতকোষ’ ৩য় খণ্ড অনুযায়ী তানসেনের জীবনকাল ১৫০৬-৮৫ খ্রিস্টাব্দ। রেওয়াধিপতি রাজারামের আমন্ত্রণে তিনি তাঁর সভাগায়ক পদ গ্রহণ করেন (১৫৪৫-৬০ খ্রি)। পরে দিল্লিতে একটি সঙ্গীতসভা প্রতিষ্ঠা করে সম্রাট আকবর তাঁর নবরত্নের শ্রেষ্ঠ আসনে তানসেনকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।