Population

সম্পাদক সমীপেষু: যে ভ্রান্তি জনপ্রিয়

সর্বশেষ জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিক ভাবে দেশে প্রতি এক হাজার পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যা ৯৪০।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

‘হিন্দুরা সংখ্যালঘু হচ্ছেন না’ (১৭-২) শীর্ষক সময়োচিত তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধটির জন্য অভিনন্দন জানিয়ে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটি জনপ্রিয় ভ্ৰান্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বস্তুত এ দেশে মুসলমানদের জন্মহার বেশি হওয়ার মূল কারণ অশিক্ষা ও দারিদ্র। সে কথা পাশ কাটিয়ে, তাঁদের মধ্যে প্রচলিত বহুবিবাহ প্রথাকে নির্বিচারে দায়ী করা হয়। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক, এক জন মুসলিম পুরুষের সর্বাধিক চারটি বিয়ে করার ধর্মীয় অনুমোদন রয়েছে। এই বহুবিবাহের ফলে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিতে সন্তান সংখ্যা বাড়তে পারে ঠিকই, কিন্তু সামগ্রিক জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে এই বহুবিবাহের প্রভাব নেহাতই নগণ্য। কেন নগণ্য, সে কথাই বলি।

Advertisement

সর্বশেষ জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিক ভাবে দেশে প্রতি এক হাজার পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যা ৯৪০। হিন্দু এবং মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রতি হাজার পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৯৩৯ ও ৯৫১। অর্থাৎ চাইলেই প্রতিটি মুসলিম পুরুষ একাধিক বিয়ে করার মতো নারী পাবেন না!

তা ছাড়া, সন্তান গর্ভে ধারণ করেন তো শুধুমাত্র নারীরাই। তা হলে চার জন নারীর সঙ্গে পৃথক চার জন পুরুষের বিয়ে না হয়ে, এক জন পুরুষের সঙ্গে বিয়ে হলে, মুসলিম জনসংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বাড়বে কোন যুক্তিতে? ধরা যাক, এক জন মুসলিম পুরুষ তিনটি বিয়ে করেছেন। তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর তিনটি করে সন্তান, এবং তৃতীয় স্ত্রীর সন্তান-সংখ্যা দু’টি। তা হলে পরিবারের মোট সন্তান আটটি। এখন, ওই মুসলিম ভদ্রলোক যদি প্রথম বিয়েতেই ক্ষান্ত থাকতেন, তা হলে তাঁর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্ত্রীর নিশ্চয়ই অন্যত্র বিয়ে হত। সে ক্ষেত্রে তাঁদের দু’জনের মোট সন্তান সংখ্যা পাঁচের বেশি হত না— তার নিশ্চয়তা কোথায় ?

Advertisement

আসলে বিভ্রান্ত অথবা বিদ্বিষ্ট মনের মানুষেরাই কেবল মুসলিমদের বহুবিবাহের সঙ্গে জন্মহার জুড়ে দিয়ে, প্রায়শই এই মূর্খামিপূর্ণ পাণ্ডিত্যটি জাহির করেন।

চন্দ্রপ্রকাশ সরকার

বিবেকানন্দ পল্লি, মুর্শিদাবাদ

তথ্যের দিকে

‘হিন্দুরা সংখ্যালঘু হচ্ছেন না’ (১৭-২) শীর্ষক নিবন্ধের প্রেক্ষিতে কয়েকটি তথ্য জানাতে চাই।

রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে আগত অভিবাসীর সংখ্যা ২০০০ এবং ২০১৭ সালে যথাক্রমে ৩১ লক্ষ এবং ৩৭ লক্ষ। আবার জনগণনা অনুযায়ী, জন্মস্থানের নিরিখে ভারতে (মোট) বাংলাদেশির সংখ্যা ২০০১ সালে ৩৭ লক্ষ এবং ২০১১ সালে ২৭ লক্ষ (মোট জনসংখ্যার ০.২২%)। গত দুই দশক ১৯৯২-২০০১ এবং ২০০২-২০১১’য়, বাংলাদেশি অভিবাসী বৃদ্ধির সংখ্যা যথাক্রমে ২,৮০,০০০ জন এবং ১,৭২,০০০ জন। অতএব, জনগণনার হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা কমছে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে অভিবাসী ফেরত যাচ্ছেন।

এই পর্যবেক্ষণ সঠিক কি না, তা বুঝতে আমাদের দেশের কর্মসংস্থানের হারের গতির দিকে তাকাতে হবে। জনগণনা অনুযায়ী, ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০১১ সালে ভারতে কর্মসংস্থানের হার ছিল যথাক্রমে ৩৫.৬৪%, ৩৭.১১%, ৩৯.১৩% এবং ৩৯.৮০%।

অর্থাৎ, গত তিন দশক ১৯৮১-১৯৯১, ১৯৯১-২০০১ এবং ২০০১-২০১১’য় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১.৪৭%, ২.০২% এবং ০.৬৭%। ওই তিন দশকে জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ২.৩৫%, ২.১৫% এবং ১.৭৬%। অতএব, এটা পরিষ্কার যে ২০০১-২০১১ দশকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় অনেক কমেছে।

২০১৮-১৯ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৬.১০% এবং ৭.৩০%।

অতএব, সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এখন ভারতে বাংলাদেশির সংখ্যা ২৭ লক্ষেরও কম এবং ১৯৯২-২০১১ (দুই দশকে) বাংলাদেশিরা ফেরত গিয়েছেন। সুতরাং, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য এবং নতুন ভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশের যুক্তিযুক্ত কারণ দেখা যাচ্ছে না।

রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন রিপোর্ট অনুযায়ী, যে সব দেশ থেকে প্রবসন হয়েছে তাদের মধ্যে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের স্থান প্রথমে। ভারত থেকে ওই সাল পর্যন্ত মোট প্রবসন হয়েছে (অর্থাৎ ভারত থেকে অন্য দেশে চলে গিয়েছেন) ১ কোটি ৬৬ লক্ষ। চতুর্থ স্থানে চিন: ১ কোটি। পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ: ৭৫ লক্ষ। তাই অবৈধ অনুপ্রবেশের অযৌক্তিক জিগির তুলে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে বিপুল অর্থব্যয় করে এনআরসি এবং এনপিআর করার কোনও অজুহাতই ধোপে টেকে না। আর মনে রাখতে হবে, অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রাচীর তুললে, প্রবসনের বিরুদ্ধেও প্রাচীর উঠতে পারে।

পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়

খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা

মিথ্যাচার

অনুপ্রবেশ নিয়ে যদি বিজেপি নেতারা সত্যিই উদ্বিগ্ন হতেন, তবে অনুপ্রবেশকারীদের ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতেন না। আসলে বিজেপি নেতারা চিন্তিত অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করা নিয়ে। বাস্তবে অনুপ্রবেশ ইসুটি হল বছরে ২ কোটি চাকরি কিংবা কালো টাকা উদ্ধার করে সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার মতোই একটি মিথ্যাচার। না হলে তো জবাব দিতে হবে, উত্তরপ্রদেশে মাত্র ৩৬৮টি পিয়ন পদের জন্য যে ২৩ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছিল, তার জন্য কি অনুপ্রবেশ দায়ী? দেশের ৭৩% সম্পদ যে ১% ধনকুবেরের হাতে জমা হয়েছে, তার জন্য কি অনুপ্রবেশ দায়ী?

বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, প্রতি দিন অজস্র বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকে পড়ছেন। কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বিজেপিরই সরকার। সীমান্তে প্রহরারত নিরাপত্তা বাহিনী তো কেন্দ্রীয় সরকারেরই অধীন। দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নটিও এর সঙ্গে যুক্ত। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অমিত শাহকেই নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করতে হবে।

গৌরীশঙ্কর দাস

সাঁজোয়াল, খড়্গপুর

অযুক্তির জয়

এ দেশের বস্তাপচা অযৌক্তিক বিশ্বাসের পরম্পরা অব্যাহত রেখে মালদহের গাজলে কুসংস্কারের শিকার হল দুই শিশু। ঝাড়ফুঁক, তেলপড়া-জলপড়া করতে করতেই কেটে গেল প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক। গ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই এক শিশুর মৃত্যু হল, অন্য জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হলে, পর দিন তারও একই পরিণতি হল। এই ঘটনা আরও এক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, এ দেশে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিকতা শুধু বছর-গণনার হিসেবে। বাস্তবে দেশ পড়ে রয়েছে মধ্যযুগে।

আসলে, বহু মানুষের কাছে প্রকৃত শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে ব্যর্থ আমরা। শিক্ষা মানে শুধু পুঁথিগত শিক্ষা নয়, যুক্তিনির্ভর হওয়াও, তা আমরা বোঝাতে পারিনি তাঁদের।

দ্বিতীয়ত, যে গ্রামীণ হাসপাতালগুলো রয়েছে সেগুলির পরিকাঠামো এতটাই খারাপ যে রোগ নিরাময় দূরের কথা, প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও হয় না। তাও গ্রামীণ হাসপাতাল সব জায়গায় নেই। আর রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল তো দূরবর্তী গ্রামের কাছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অসহায় মানুষেরা স্বাভাবিক ভাবেই আঁকড়ে ধরেন ভাঁওতাবাজ ওঝা, বাবাজি-মাতাজিদের।

তা ছাড়া, অযৌক্তিক কুসংস্কারের প্রশ্রয় দেখা যাচ্ছে তথাকথিত ‘উঁচু’ স্তরের মানুষদের মধ্যেও। গণ্যমান্য ব্যক্তিরা গায়ে তাগা-তাবিজ, সুতো বাঁধছেন। নেতা-মন্ত্রীরা উদ্ভট নানা কথা বলছেন। নেতারা দেশি গরুর দুধে সোনা থাকার কথা বললে, সাধারণ মানুষ সেই সোনা খুঁজতে গিয়ে গরুর লাথি খান, গোবরে পা পিছলে পড়ে যান। গণ্যমান্যদের সচেতন হয়ে কথা বলা উচিত।

সোফিয়ার রহমান

অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement