Basusree Cinema

সম্পাদক সমীপেষু: বাঁচাতে হবে বসুশ্রী

পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের সকালে জলসা হত। আজ ভাবলে অবাক হতে হয়, সেই বসুশ্রী ধুঁকছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০০
Share:

‘বসুশ্রীর সেই আড্ডাটা’ (রবিবাসরীয়, ৬-৯) নিবন্ধের সঙ্গে ‘বসুশ্রী সিনেমা হল এখন’ ক্যাপশন-সহ ছবিটি দেখে মর্মাহত হলাম। বসুশ্রীর কর্ণধার ছিলেন মন্টু বসু। পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের সকালে জলসা হত। আজ ভাবলে অবাক হতে হয়, সেই বসুশ্রী ধুঁকছে। যে কোনও সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অথচ এই প্রেক্ষাগৃহে কত মহান অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা অনুষ্ঠান করেছেন। এমনকি হিন্দি ছবি দো আনজানে-র শুটিংও হয়েছিল। মহানায়ক উত্তমকুমার এখানে জলসাতে এসে নিজের কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। প্রায়ই তাঁদের আড্ডা চলত খোশমেজাজে।

Advertisement

১৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ সালে এমএস শুভলক্ষ্মী-অভিনীত মীরা ছবির প্রদর্শন করে শুভারম্ভ হয়েছিল এই ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলের। উদয়শঙ্করের কল্পনা এবং সত্যজিৎ রায়ের ইতিহাস সৃষ্টিকারী পথের পাঁচালী, অপরাজিত শুভমুক্তি লাভ করেছিল এখানেই। সত্যি বলতে, আজ দেখলে দুঃখ হয়। যে ভাবে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার, হাতিবাগানে বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহ ও থিয়েটার হল অবলুপ্তির পথে, তেমনই দক্ষিণ কলকাতাতেও অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহ হয় বন্ধ, না হলে ভেঙে মল তৈরি হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত মিনার, বিজলী, ছবিঘর কর্ণধার সোমনাথ পালের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নতুন আঙ্গিকে টিকে আছে। কিন্তু একে একে নিবিছে দেউটি।

৭৪ বছরের পুরনো বসুশ্রীকে যে ভাবে হোক, বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করুক, সেটাই আমরা চাই।

Advertisement

গৌতম মুখোপাধ্যায়

কলকাতা-১০১

নক্ষত্র তিনিও
শ্রদ্ধেয় অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র গৌতমের নিবন্ধের (‘বসুশ্রীর সেই আড্ডাটা’) সঙ্গে ‘নক্ষত্রমণ্ডলী’ ক্যাপশন-সহ যে ছবিটি ছাপা হয়েছে, তাতে শ্যামল মিত্রের উপস্থিতি থাকলেও ছবির পরিচয়লিপিতে তাঁর নাম উল্লিখিত হয়নি। কালজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এবং সুরকার শ্যামল মিত্রের নামোল্লেখ একান্তই প্রয়োজন ছিল।
তাপস চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৩৯

মিঠে কথা
যে হাত কাগজের ঠোঙায় এক গোছা কচুরি আর মাটির ভাঁড়ে আলুর তরকারি দ্রুত প্যাক করে দিত, ‘‘এক জায়গায় দুটো লেডিকেনি আর এক জায়গায় ছ’টা ক্ষীরকদম’’ ধরে দিত চটপট, সেই হাতগুলো আজ আনাজ বা মাছ বিক্রি করছে। ভাবতেই তেতো হয়ে যায় মনটা। তুলনায় নিরাপদ পেশা বলে এগুলির দিকেই ঝুঁকেছেন কর্মীরা। মিষ্টির দোকানে কম ভিড় তো শুধু মিষ্টান্ন শিল্পের সমস্যা নয়, বাঙালির সংস্কৃতিরও সঙ্কট। তবে অতীতেও বেশ বড়সড় ধাক্কা খেতে হয়েছে বাঙালির প্রিয় মিষ্টান্ন শিল্পকে।
দুই শতক ধরে বাংলা মুখোমুখি হয়েছে বহু দুর্ভিক্ষ ও মহামারির। উনিশ শতকে বর্ধমান জ্বরের প্রাদুর্ভাবে অনেকে হুগলি ও বর্ধমান থেকে কলকাতায় এসে মিষ্টান্ন ব্যবসায় যুক্ত হন। আর একটু অতীতে যাওয়া যাক। জনশ্রুতি অনুসারে, গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের রাধাকৃষ্ণ-যুগলের ভোগরাগ নির্মাণের জন্যই ময়রা বা মোদকের পেশা তথা জাতের জন্ম। সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দী নাগাদ এই পেশার আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলায়। কিন্তু গাণপত্যরীতির সঙ্গেও ময়রা-মোদকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাই মনে হয়, বাংলাতে অন্য পেশায় নিযুক্ত কোনও গোষ্ঠী সেই সময়ে পেশা পরিবর্তন করে গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতাদর্শের সঙ্গে সংযুক্ত হন। এর আভাস মেলে উইলিয়াম হান্টারের সমীক্ষাতেও, যেখানে তিনি মোদক বা ময়রাদের কৈবর্ত জাত-গোষ্ঠীর একটি অংশ বলে উল্লেখ করেছেন, যাঁদের আদি পেশা ছিল মাছ ধরা। তেমনই, নৌকা চালনা, কৃষিমজুর, নাপিত পেশা থেকেও মিষ্টির কারিগর এসেছেন।
স্বাধীন ভারতেও পেশা পরিবর্তনের পালা এসেছিল। বাজারে যথেষ্ট দুধের জোগান বজায় রাখতে ১৯৬৫ সালে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছানার মিষ্টির উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ হয়। ‘দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন’ তৈরি হয়। মিষ্টির দোকানে সন্দেশ-রসগোল্লাকে ফের দেখা যায় ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৭ সালে। এই দুই বছরে নকুড়, ভীম নাগ-সহ বহু নামী দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক মিষ্টির দোকান বাধ্য হয়ে ভাজা নোনতা খাবার বিক্রি শুরু করে। ডাল, বেসন, ময়দার উপর নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বোঁদে, দরবেশ, লাড্ডু প্রভৃতি অবাঙালি মিষ্টি চালু ছিল। কিন্তু ছানার মিষ্টি হারানোয় সেই দু’বছর ছিল এক অন্ধকার যুগ। বহু মিষ্টান্ন শিল্পী অন্য পেশা থেকে আর ফেরেননি।
সব পরিবর্তনই জন্ম দেয় নতুনত্বের। আজকের সঙ্কটও হয়তো অলক্ষে জন্ম দিচ্ছে উদ্ভাবনের। বাঙালির পাত মিষ্টিহীন হবে না।
অরুণিমা রায়চৌধুরী
কলকাতা-৯৪

মানবিক
সোনু সুদ। ক’দিন আগেও মুম্বইয়ের ছবিতে এই অভিনেতাকে পার্শ্বচরিত্রে দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল দর্শক। আজ নেপথ্য থেকে সামনে এসে বাস্তবের ‘নায়ক’ হয়ে উঠেছেন তিনি। পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘ঈশ্বর’ তিনি। যে কাজ অনেক আগেই কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার, তথা রাজনৈতিক দলগুলোর করা উচিত ছিল, কিন্তু করেনি, সেগুলোই করে দেখালেন তিনি। পর্দার ‘ভিলেন’ দেশবাসীর হাত ধরে বললেন, ‘‘ম্যাঁয় হুঁ না...।’’
নিজেও এক দিন নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বই নগরীর পথে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সোনু, মাথার ওপর ঠাঁইটুকুও ছিল না সে ভাবে। তাই হয়তো নিজেকে দিয়েই অনুভব করতে পেরেছিলেন কোটি কোটি মানুষের যন্ত্রণা। অতিমারিতে সবাই যখন ঘরবন্দি, সেই সময় নিজের নিরাপত্তার কথা ভুলে পথে নামলেন তিনি, নিজের পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা মানুষদের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এ রকম একটা কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ার ফলে টানা তিন-চার মাস নিজের পরিবারের মানুষগুলোকে পর্যন্ত জড়িয়ে ধরেননি তিনি, আলাদা থেকেছেন দিনের পর দিন। ওঁর কাজের সিকিভাগও যদি কেউ করতে পারি, তবে ‘অনুপ্রেরণা’ শব্দটা সার্থক হবে। এ কাজে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন তাঁর বন্ধুরাও।
সোনুর কথায়, ‘‘একের পর এক ব্লকবাস্টার হিট সিনেমাও এতটা আনন্দ দেয়নি, যতটা পরিযায়ী শ্রমিক-ভর্তি একটা বাস বা ট্রেন ছাড়ার মুহূর্ত আমাকে আনন্দ দিয়েছে।’’ এঁদের কাজ শুরু হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া দিয়ে, কিন্তু পরিসর বেড়েছে ক্রমশ। এখন দুঃস্থ মানুষদের অভাব দূর করা তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। ভাল লাগে দেখে যে, এই দুনিয়ায় মানবিকতা এখনও শেষ হয়ে যায়নি।
কেয়া রায়
আলিপুরদুয়ার

সহোদর
‘মানিকদা ও মঙ্কুদির বন্ধু’ (কলকাতার কড়চা, ৭-৯) শীর্ষক প্রতিবেদনটি মনোগ্রাহী। বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানমের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সৌভাগ্য হয়েছে, হয়েছে তাঁর ঢাকার বাসায় যাওয়ার সুযোগও। সেই সূত্রে জেনেছি তাঁর বড়দাদার কথা। তিনি এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আবদুল আহাদ। আবদুল আহাদ (১৯১৮-১৯৯৪) দুই বঙ্গেই বিস্মৃতপ্রায়। অথচ এক কঠিন সময়ে স্রোতের বিরুদ্ধে হেঁটে তিনি শান্তিনিকেতনে সঙ্গীত ভবনের প্রথম মুসলিম ছাত্র হয়েছিলেন। ১৯৩৮-১৯৪২ এই চার বছর সেখানে ছিলেন, পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য। দেশভাগের সময়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যান। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে তোলেন এক সুস্থ সাঙ্গীতিক পরিবেশ।
সে কালে শান্তিদেব ঘোষ, পঙ্কজকুমার মল্লিক, সন্তোষ সেনগুপ্ত, সুচিত্রা মিত্র প্রমুখ বিখ্যাত শিল্পী তাঁর প্রশিক্ষণে গান রেকর্ড করেছেন। শান্তিনিকেতনে দল বেঁধে নৃত্যনাট্যের মহড়া হত। আত্মজীবনী আসা যাওয়ার পথের ধারে-তে লিখেছেন শ্যামা-র মহড়ার অভিজ্ঞতা— ‘‘একদিন আমরা রিহার্সালের জন্য গিয়ে বসেছি, একটু পরেই কবিগুরু ঢুকলেন, সঙ্গে রয়েছেন জওহরলাল নেহেরু।... কবিগুরু হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি কখনও অভিনয় করেছ?’ নেহেরুজী বললেন, ছাত্রজীবনে একবার অভিনয় করেছিলাম একটি নাটকে।’’ সাইদা খানমকে নিয়ে লেখার সূত্রে মনে পড়ল তাঁর সহোদরকেও।
সুশীল সাহা
হৃদয়পুর, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement