সম্পাদক সমীপেষু: দেশান্তরি তো নন

ইতিহাস বলে, ভূমিপুত্রের কণ্ঠ চিরকাল চাপা পড়ে এসেছে। রাজা হরি সিংহ যেমন কাশ্মীরিদের মতামত নিয়ে ভারতে যোগদান করেননি, তেমনই তৎকালীন নেতারা বাংলা বা পঞ্জাবের জনগণের মতামত নিয়ে তাঁদের দু’দেশের মধ্যে ভাগ করে দেননি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৬
Share:

ওঁদের মানানো যাবে তো?’ (৮-৮) শীর্ষক নিবন্ধে সেমন্তী ঘোষ কাশ্মীরের তিনটি মনের কথা বলেছেন। বাস্তব। কিন্তু কাশ্মীরও তো তিন টুকরো। পাক অধিকৃত, আকসাই চিন আর ভারতের অংশ, কোনও স্বরই পুরো অখণ্ড কাশ্মীর নিয়ে আন্দোলন করে না। কোনও রাজনৈতিক বা জঙ্গি স্বরও না, এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে শুনিনি। সবার বিদ্বেষ যেন শুধু ভারত সরকারের উপর এবং যত সমস্যা এখানে, যার সমাধান করলেই কাশ্মীর শান্ত সুন্দর।

Advertisement

‘‘কাশ্মীর সমস্যা থেকে বিলকুল বাদ পড়ে গিয়েছে কাশ্মীর নিজেই।’’ ইতিহাস বলে, ভূমিপুত্রের কণ্ঠ চিরকাল চাপা পড়ে এসেছে। রাজা হরি সিংহ যেমন কাশ্মীরিদের মতামত নিয়ে ভারতে যোগদান করেননি, তেমনই তৎকালীন নেতারা বাংলা বা পঞ্জাবের জনগণের মতামত নিয়ে তাঁদের দু’দেশের মধ্যে ভাগ করে দেননি। দেশান্তরি উদ্বাস্তুরা যদি অচেনা ভূমিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন, বুঝতে অসুবিধা হয় কাশ্মীরিদের সমস্যা কোথায়। তাঁদের তো আর যা-ই হোক, দেশান্তরি হতে হচ্ছে না।

সুদীপ নাথ

Advertisement

কলকাতা-৩২

কাশ্মীরি কারা?

সেমন্তী ঘোষের ‘ওঁদের মানানো যাবে তো?’ শীর্ষক নিবন্ধ এবং কয়েকটি চিঠিপত্র পড়ে, এই চিঠি। কাশ্মীরি বলতে কাদের বুঝিয়েছেন ওঁরা? কাশ্মীরি পণ্ডিতরা কি কাশ্মীরি নন? তাঁরা কিন্তু কাশ্মীর উপত্যকারই আদি জনগোষ্ঠী! কিন্তু তাঁদের নাম না ওই প্রবন্ধে এল, না চিঠিপত্রগুলিতে। সেমন্তী লিখেছেন, ‘‘অথচ কাশ্মীর সমস্যা থেকে বিলকুল বাদ পড়ে গিয়েছে কাশ্মীর নিজে।’’ তাই কি? উনি এবং পত্র-লিখিয়েরা কি কাশ্মীরি বলতে শুধুমাত্র উপত্যকার মুষ্টিমেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্রপন্থী এবং বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত নেতাদেরই বোঝেন?

দ্বিতীয় বিষয় হল, ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা প্রত্যাহার করার বিষয়ে কাশ্মীরিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। ঠিকই। কিন্তু কথা হল, ওই ধারাগুলি বলবৎ কি তাঁদের সঙ্গে কথা বলে করা হয়েছিল? না। বরং সংবিধানের প্রধান রূপকার বি আর অম্বেডকর ও অন্যদের আপত্তি সত্ত্বেও জওহরলাল নেহরু পীড়াপীড়ি করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদকে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করিয়েছিলেন। ওই আইন দু’টির কোনও সাংবিধানিক বৈধতাও নেই। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে ওই ধরনের কোনও আইন করতে হলে তা ভারতীয় সংসদ এবং কাশ্মীরের বিধানসভায় পাশ করাতে হয়; ওই ধারা দু’টির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। আর রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তি দ্বারা কোনও আইন জারি করা যায় না, সংবিধানের ৩৬৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। সুতরাং, রাষ্ট্রপতির
বিজ্ঞপ্তি দ্বারা আইন দু’টি প্রত্যাহারই সঠিক পথ।

বিনয়ভূষণ দাশ

আই সি কলোনি, মুম্বই

অভিযোজন

সেমন্তী ঘোষ তাঁর নিবন্ধে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন, কাশ্মীরের মানুষজন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন কি না। আশঙ্কা অমূলক। কাশ্মীরের অধিবাসীরা হঠাৎ করে একটি নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এই নবসৃষ্ট রাষ্ট্রনীতি ছাড়া অন্য সব কিছু মোটের উপর তাঁদের অনুকূলে আছে। তাঁদের নিজস্ব বাস্তু থেকে উৎখাত করা হয়নি। তাঁরা কর্মচ্যুত হননি। নতুন কোনও ভাষা-পরিবেশে গিয়ে পড়েননি। সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুরা ওড়িশা মধ্যপ্রদেশ ছত্তীসগঢ়ের শুষ্ক রুক্ষ ভূমিতে মানিয়ে নিতে পেরেছেন, নদীমাতৃক পূর্বপাকিস্তানের হিন্দুরা আন্দামানের সমুদ্রকে আপন করে নিয়েছেন। বাংলার অসংখ্য গ্রামীণ উদ্বাস্তু কলকাতার শহর-জীবনকে আত্মস্থ করে নিয়েছেন। কাশ্মীরের সমস্যা তুলনায় অনেক সহজ। সনাতন পাঠক

ইমেল মারফত

দরবা লেন

পশ্চিমবঙ্গের জনমানসে একটি ধারণা প্রচলিত আছে, এই রাজ্যের শাসক দলটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বড়ই নিবেদিতপ্রাণ, যাকে সংখ্যাগুরুদের এক বৃহৎ অংশ ‘নির্লজ্জ সংখ্যালঘু তোষণ’ বলে মনে করেন। এই ভাবনা এই রাজ্যে হিন্দুত্বের পালে যথেষ্ট বাতাস লাগার অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত হয়।

কিন্তু এই ধারণা যে কত ভ্রান্ত, তা নবগঠিত ভাটপাড়া থানার ঠিক বিপরীতে তথা কাঁকিনাড়া জুটমিলের পিছনে ৫৯টি মুসলিম পরিবারের দরবা লেন নামক সারিবদ্ধ বস্তিবাড়ি পরিদর্শন করলেই বুঝতে পারবেন। এই কাঁকিনাড়া-ভাটপাড়া অঞ্চলই তৃণমূল বনাম বিজেপির এলাকা দখলের লড়াইয়ে প্রায় আড়াই মাসেরও অধিক সময় ধরে ভুগছে। গত ১৯ মে দুষ্কৃতীরা প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এই দরবা লেনের বাসিন্দাদের ঘরদোর ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। এবং ২০ মে ভোর থেকে শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট, অবাধ ধ্বংসলীলা। ঘরবাড়ি ভাঙা, আসবাব দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া তো হয়েছেই, চেঁচেপুঁছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চাল-ডাল, হাতা-চামচ পর্যন্ত। ভাঙা দরজা বা দেওয়ালের গায়ে লিখে দিয়ে গিয়েছে ‘জয় শ্রীরাম’। এই সময়ে রাজ্য প্রশাসন বা আরক্ষাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ ছিল। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে নির্বাচন কমিশনের আইনি ক্ষমতার এমন অন্ধত্ব প্রদর্শনের নজির বোধ হয় আর দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না।

গত আড়াই মাস এই হতভাগ্যেরা আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের গৃহে, মসজিদে, কেউ বা স্কুলবাড়িতে। বেশ কয়েক জন পাড়ি দিয়েছেন বিহারে। জনৈকা হামিদা বানু তাঁর স্বামীকে নিয়ে দিনযাপন করছেন জগদ্দল স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের টিকিট কাউন্টার চত্বরে। পরিবারগুলি রাজ্য সরকারের তরফে প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে পরিবারপিছু ৬৩০০ টাকা। পরবর্তীতে পাবে আরও ১৮৭০০ টাকা, অর্থাৎ মোট ২৫০০০ টাকা পরিবারপিছু, যদিও নামের বানান ইত্যাদি ভুলের দরুন কোনও কোনও পরিবারের হাতে এসে পৌঁছয়নি ওই ১৮,৭০০ টাকা। সন্দেহ নেই, এই অর্থসাহায্য নিতান্ত অপ্রতুল। ধ্বংস ও লুটপাটের শিকার হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ঠিক ভাবেই, কেউ কেউ সুপারিশ অনুযায়ী পেয়েছেন পুরো টাকাটাই। কয়েক জন আবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ৩৫০০০ টাকা করে।

অনেক দিন ধরেই শুনছি দরবা লেন বাসযোগ্য করে, অধিবাসীদের ওখানে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু কাজ এগোচ্ছে শম্বুকগতিতে। কবে শেষ হবে, কেউ জানে না। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক তৎপরতার অভাব রয়েছে যথেষ্ট। এ বছর দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার ঘাটতি ওই হতভাগ্য জনগোষ্ঠীর কাছে নিঃসন্দেহে আশীর্বাদস্বরূপ। কেবল ছাদ সারিয়ে দেওয়া, ঘরদোর বাসযোগ্য করে দেওয়া, নিত্যব্যবহার্য তৈজসপত্র, বিছানা-লেপ প্রদানই যথেষ্ট নয়। আমাদের এই ভাইবোনেদের দরকার একটু ভালবাসা, একটু সহানুভূতি। কোনও কোনও শিশুর প্রয়োজন ট্রমা কেয়ারের। নাট্যকর্মী, চলচ্চিত্রশিল্পী ও প্রখ্যাত সমাজকর্মীরা ঘটনাস্থল একাধিক বার পরিদর্শন করে গিয়েছেন। তাঁদের অনুভবের বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে। অথচ একদম লাগোয়া একদা নৈয়ায়িক চর্চার পীঠস্থান ভাটপাড়া বা কাঁকিনাড়া স্টেশনের পূর্ব দিকের বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষজন কেমন যেন নির্লিপ্ত, উদাসীন। বর্ষা দেরিতে হলেও আরও কিছু দিন বারিধারা ঢালবে হয়তো। সামনে এগিয়ে আসছে শীতের প্রকোপ। কী করবেন ওঁরা? বাচ্চাদের বইখাতা, বিদ্যালয়ের পোশাক লুট হয়ে গিয়েছে। কিছু বিবেকী মানুষ সেগুলির বন্দোবস্ত করছেন। দরবা লেনের উৎখাত হয়ে যাওয়া অধিবাসীদের সম্মানজনক পুনর্বাসনই শুধু নয়, চাই ঠিক ওই স্থলে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প।

শুধু বুঝতে পারছি না রাজ্য সরকারের রিলিফ প্রদানে এত বৈষম্য কেন? কেন এত গয়ংগচ্ছ ভাব? ওঁরা কি তবে নিছক ভোটব্যাঙ্ক?

সন্দীপ সিংহ রায়

ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement