নিউজ়িল্যান্ডের পার্লামেন্টের আসনে বসে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ একটি শিশুকে বোতলে দুধ খাওয়াচ্ছেন, এই ছবি আমাকে বিস্মিত করেছে। আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যেখানে কেবল মেয়েদের জন্য স্থির আছে গৃহকাজ এবং শিশুপালন, সেখানে এই ঘটনা পুরুষদেরও কি একটু নাড়াবে? পুরুষ যদি চান, তবে পারেন এই সহজ পদ্ধতিতে গৃহকাজ ও শিশুর পরিচর্যা করতে। এ তো মানবিকতা!
কুহু দাস
কলকাতা-৫৭
উচ্চশিক্ষায় নারী
ভারত যখন স্বাধীন হল তখন সারা দেশে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬০০ ও ২৫। ২০১৭-য় সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০,০০০ ও ৮০০-য়। আমাদের রাজ্যে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বেশ কিছু নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যার সাপেক্ষে কলেজের সংখ্যাবৃদ্ধি কম। তবে সেই কম যে বেশ কম জানতে পারলাম অচিন চক্রবর্তীর ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি ছেলেমেয়ে এলেই শিক্ষিত বেকার বাড়বে?’(২৬-৮) পড়ে। তেলঙ্গানায় প্রতি এক লক্ষ ১৮-২৩ বছর বয়সিদের জন্য কলেজের সংখ্যা ৫৯ সেখানে আমাদের রাজ্য মাত্র ১১!
এই বাংলায় নারী শিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যিনি ভেবেছিলেন বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃত উন্নতি তখনই সম্ভব যদি নারী জাতির উন্নতি ঘটে। সেই বাংলায় ১৮-২৩ বছর বয়সি মেয়েদের গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিয়ো ২০১০-১১’তে ছিল ১০.৯ শতাংশ। ২০১৫-১৬’তে তা বেড়ে হয়েছিল ১৫.৮ শতাংশ। ওই সময়ে সারা দেশের হার ছিল ১৭.৯ ও ২২ শতাংশ। শুধু কলেজের সংখ্যায় পিছিয়ে তা নয়, পিছিয়ে মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রেও। গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিয়োতে ব্রাজিল (৫০.৫), রাশিয়া (৮১.৮) শুধু এগিয়ে তা নয়। ২০১৪’র এক পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে ওই দুই দেশে প্রাথমিক শিক্ষিকা হিসেবে মেয়েদের সংখ্যা ৯৮.৮১ ও ৮৯.৬৪ শতাংশ। ভারতে ৪৯.৪৯ শতাংশ।
অন্য দিকে সারা বিশ্বে স্টেম (STEM: Science, Technology, Engineering, Mathematics) ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা কম। ইউনেস্কোর ২০১৪-র রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে ৪০% স্টেমে স্নাতক (যেখানে আমেরিকায় ১৫%)। এর সঙ্গে মিলে যায় ২০১৮-র জুন মাসে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্য তালিকায় মহিলাদের উপস্থিতি। ভারতের ২৫৫ জন সদস্যের মধ্যে মহিলা ২৬ জন (৯%)। যেখানে সারা বিশ্বের গড় ১৬%। তালিকায় সবচেয়ে উঁচুতে রয়েছে আর্জেন্তিনা। এখানে ১৪৭ জনের মধ্যে মহিলা ৫৭ জন (৩৮%)। গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিয়ো বা স্টেম দু’টি ক্ষেত্রেই মেয়েদের উপস্থিতি বাংলা তথা দেশে কম।
নন্দগোপাল পাত্র
সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
মিড-ডে মিল
চুঁচুড়ার একটি স্কুলে ‘মিড-ডে মিলে ফ্যান-ভাত’ (২০-৮) দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু স্কুলে মিড-ডে মিলে অনেক অনিয়ম, কোথাও কুয়োর জলে, আর্সেনিক যুক্ত জলে রান্না হচ্ছে, কোথাও পোকা ধরা চাল, পাতলা জলের মতো ডাল, তেলমশলা ছাড়া সয়াবিনের তরকারি, দু’কেজি চালে ৯০ জন পড়ুয়ার ভাত রান্না হচ্ছে ইত্যাদি, অথচ এই পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে ‘নিয়মের মিল অমিল’ বিভাগে স্কুল ধরে ধরে প্রতি দিন একটি করে স্কুলের ‘মিড-ডে মিল’ নিয়ে যে হাল হকিকত প্রকাশিত হয় সেখানে এমন লজ্জাজনক বেনিয়ম উঠে আসেনি, সর্বত্রই ‘প্রতি দিনের মেনু-বোর্ড’ মেনে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়, সব প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকার একটাই সাধারণ অভিযোগ থাকে, মিড-ডে মিলের বরাদ্দ অনেক কম। ওই কম বরাদ্দেও বহু স্কুলের মিড-ডে মিলের সাধারণ মেনু-তালিকায় থাকে এই রকম— দু’দিন ডাল, সয়াবিন, দু’দিন ডিম, দু’দিন ডাল, তরকারি। যে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি, সেই সব স্কুলে আর্থিক সমস্যা কম, কারণ, কিছু পড়ুয়া অনুপস্থিত থাকে, কিছু পড়ুয়া মিড-ডে মিলে অংশ গ্রহণ করে না, ফলে যে অর্থের সাশ্রয় হয় তা অনেক স্কুল অনৈতিক হলেও পড়ুয়াদের স্বার্থে মিড-ডে মিলের মান ভাল রাখার চেষ্টা করে, আবার অনেক স্কুল এই বেঁচে যাওয়া অর্থ ছাড়াও নিম্নমানের মিড-ডে মিল দিয়ে অর্থ হাতায়, যা লজ্জার, দুঃখের। অনেক প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া খুব কম, শিক্ষক সংখ্যা এক জন বা দু’জন সেখানে মিড-ডে মিল চালানো, একই সঙ্গে পাঠদানের কাজ সুষ্ঠু ভাবে করা যায় না। এই স্কুলগুলিতে কেন্দ্রীয় ভাবে মিড-ডে মিলের রান্নার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
যে সময় জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়ায় স্কুল পড়ুয়াদের দুপুরে মিড-ডে মিলের পাশাপাশি স্কুল শুরুর সময়ে প্রাতরাশ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে (‘স্কুলে দুধ-ফলে প্রাতরাশ দেওয়ার প্রস্তাব’, ৭-৬-১৯), ইতিমধ্যেই যখন কেরল ও গুজরাতের সরকারি স্কুলগুলিতে প্রাতরাশ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, তখন মিড-ডে মিলের যে ছবি এ রাজ্যে প্রকাশ পাচ্ছে তা বেশ উদ্বেগের। এই বিভাগে আমার একটি পত্র ‘না খেয়ে ক্লাস কেন’ (৫-৯-১৭) প্রকাশিত হয়েছিল। চিঠির মূল বক্তব্য ছিল, মিড-ডে মিল চালু হওয়ার আগে প্রত্যেক শ্রেণিতে দু’চার জন পড়ুয়া না খেয়ে স্কুলে আসত, আর মিড-ডে মিল চালুর পর আরও বেশি সংখ্যক পড়ুয়া না খেয়ে স্কুলে আসতে লাগল। প্রস্তাব ছিল, মিড-ডে মিল অর্থাৎ পেট ভরে খাওয়াটা স্কুল শুরুর আগে করা হোক, আর দুপুরে সকলের জন্য টিফিনের ব্যবস্থা থাকুক। অনেকেই স্কুলে আসে বাড়ি থেকে ভাত খেয়ে, ফলে এতে যে অর্থের সাশ্রয় হবে তাতে টিফিনের ব্যবস্থা করা সমস্যা হবে না। শিক্ষা নীতির প্রস্তাব কার্যকর করতে গেলে আরও অর্থের প্রয়োজন, অর্থবরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ওই রাজ্য দু’টি থেকেও উঠেছে। অর্থবরাদ্দ বৃদ্ধির এই ন্যায্য দাবি সরকার না মানলে, মিড-ডে মিলের গুণগত মান খারাপ হবে, প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ওই দু’টি রাজ্যে মিড-ডে মিলে কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে আর এতে সরকারের মহৎ উদ্যোগে খামতি থেকে যাবে।
অসিত কুমার রায়
ভদ্রেশ্বর, হুগলি
প্রীতিলতারই ছবি
‘রবিবাসরীয়’তে ‘ইতিহাসে উপেক্ষিত’ (১১-৮) ও ‘প্রীতিলতা না কনকলতা কার ছবি?’ (১৮-৮) শীর্ষক প্রবন্ধ দু’টিতে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং শহিদ কনকলতা বরুয়ার ছবি লইয়া যে সংশয় দেখা দিয়াছে, তাহাতে আলোকপাত করিতেছি। ছবিটি ১০০% প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-এর ছবি, কনকলতা বরুয়ার নহে। তবে, প্রবন্ধে প্রীতিলতা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হইয়াছে, তাহা সঠিক নয়। তিনি মাস্টারদা সূর্য সেনের অনুগামী বিপ্লবী ছিলেন এবং চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে অবস্থিত ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর শহিদ হন।
গোপা ওয়াদ্দেদার
কলকাতা-১৩১
আশ্চর্য
সত্যি আশ্চর্য লাগে একই দলের প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রযান-২’এর জন্য বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন দিচ্ছেন আর সেই দলের সাংসদ বিধায়করা কেউ বলছেন বিরোধীরা মারকশক্তি (তুকতাক) প্রয়োগ করে তাঁর দলের নেতাদের মেরে ফেলছেন, কেউ বলছেন গোকুলে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি শুনে গাভিরা প্রচুর দুধ দিত। আশঙ্কা হয় আগামী দিনে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের চাঁদে পা পড়লে প্রধানমন্ত্রীর দলের সাংসদ, বিধায়করা রে রে করে উঠে বলবেন না তো: চন্দ্রদেবের বুকে পা রাখার জন্য দেশটার এই দুরবস্থা। এঁদের কি শিক্ষা দেওয়ার কেউ নেই, না প্রধানমন্ত্রী সব দেখে শুনেও চুপ থাকবেন।
শুভ্রাংশু বসু
বড়নীলপুর, পূর্ব বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।