প্রতীকী ছবি।
‘‘আমাদের বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হয়েছিল বিগ ব্যাং-এ, এক অকল্পনীয় শক্তি ফেটে গিয়ে। কিন্তু এই অকল্পনীয় শক্তি এল কোথা থেকে?’’ লিখেছেন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ, তাঁর ‘বিগ ব্যাং শেষ কথা নয়’ নিবন্ধে (২৭-১০)। ‘‘...বিগ ব্যাং-এরও আগে আর একটি বিশ্বজগৎ ছিল, আর একটি বিশ্বজাগতিক যুগে।... এক বিশ্বজগতের কবর থেকে আর এক বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হয়ে চলেছে।... অনন্ত কাল ধরে অনন্ত বিগ ব্যাং হয়ে চলেছে।’’ বিশ্বজগৎ সৃষ্টির সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব ‘বিগ ব্যাং’-এর মতো একটি কঠিন বিষয়কে সহজ সরল ভাষায় তিনি তুলে ধরেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই তত্ত্বও সম্পূর্ণ নয়। অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।
উত্তর খুঁজতে কয়েকটি তত্ত্ব উঠে এসেছে, মাল্টিভার্স, সমান্তরাল মহাবিশ্ব ইত্যাদি। এ সবই এক-একটা প্রস্তাব, কোনওটাই বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে নেই। যেমন, নিবন্ধকার প্রশ্নের আড়ালে প্রস্তাব করেছেন, ‘‘ঘুরে ফিরে হয়েল, নারলিকার, সিয়ামার স্টেডি স্টেট বিশ্বজগৎ নয় তো?’’ বিগ ব্যাং নিয়েই প্রশ্ন জাগতে পারে। আগের বিশ্বজগৎ, অর্থাৎ যার ‘কবর’ থেকে এই বিশ্বজগৎ-এর সৃষ্টি আর এই বিশ্বজগৎ সর্বার্থেই এক, না ভিন্ন? এক হলে, সময়ের পথ ধরে একই ভাবে জগতের বিবর্তন হবে, তৈরি হবে এই সৌরমণ্ডল, এই পৃথিবী? তার পরও প্রশ্ন থেকে যায়। মানুষের চিরকালীন সেই প্রশ্ন, “কে আমি?” এই প্রশ্নের উত্তর দেবে কোন ‘সুপার বিগ ব্যাং’ তত্ত্ব? সময়ের পথ ধরে জন্ম নেবে বুদ্ধ, আর্কিমিদিস, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, জন্ম নেব আমি। আমার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, পাড়া প্রতিবেশী, এই পথঘাট সব কি আগের মতো গড়ে উঠবে, না এ সবই এই প্রথম আর এই শেষ? ভাবতেই বিস্ময়ের অতলে হারিয়ে যেতে হয়, যেমন হারিয়ে যেতে হয় ‘‘অনন্ত কাল ধরে অনন্ত বিগ ব্যাং হয়ে চলেছে, এবং হবে’’— বিষয়টি জেনে। সবই ঘটে চলেছে, পূর্ণ পরিকল্পনামাফিক, না এ সবই আকস্মিক ঘটনার ফল, জানা নেই। বিশ্ব সসীম না অসীম জানা নেই। ‘অকল্পনীয় শক্তি’ থেকে, না শূন্য থেকে এই বিশ্বজগতের সৃষ্টি— জানা নেই। এই বিশ্বজগতের আগে অনন্ত বিগ ব্যাং হয়ে থাকলে, এই বিশ্বজগৎ কত-তম বিগ ব্যাং-এর ফল, সেই প্রশ্নও অবান্তর। শেষ কথাটি হয়তো রবীন্দ্রনাথই বলে গিয়েছেন— শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে।
অসিত কুমার রায়
ভদ্রেশ্বর, হুগলি
শেষ পরিণতি
বিকাশ সিংহ পেনরোজ়ের কনফর্মাল সাইক্লিক কসমোলজি তত্ত্বের সূত্র ধরেই অনাদি অনন্ত বিশ্ব সম্পর্কে লিখেছেন, যেখানে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ঘটে চলেছে একের পর এক বিগ ব্যাং। সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে পেনরোজ়ের দাবি, বিগ ব্যাং-এর আগেও অস্তিত্ব ছিল আর একটি বিশ্বজগতের। পেনরোজ়ের সাইক্লিক তত্ত্ব, অসিলেটিং ইউনিভার্স থিয়োরি বা ‘ক্লোজ়ড ইউনিভার্স মডেল’-কেই সমর্থন করে। এতে উল্লেখ রয়েছে অনন্তকাল ধরে হয়ে আসা এবং হতে চলা সৃষ্টি ও প্রলয়ের খেলা। বিকাশ সিংহ লিখেছেন, ‘‘ফ্রেড হয়েল, জয়ন্ত নারলিকার, সিয়ামা-র বিশ্বরূপ দর্শনে বিশ্বজগৎ স্টেডি স্টেটই থাকে; ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি, শূন্যতাকে আবার নতুন করে তৈরি করে নেওয়া।’’ পেনরোজ়ের তত্ত্ব ব্যাখ্যার প্রসঙ্গে মহাবিশ্বের ‘স্টেডি স্টেট থিয়োরি’র উল্লেখ কিছুটা বিভ্রান্তিকর। ১৯৪৮-এ প্রকাশিত হারম্যান বন্ডি, টমাস গোল্ড আর ফ্রেড হয়েলের ‘স্টেডি স্টেট থিয়োরি’র মূল বক্তব্যই ছিল যে, মহাবিশ্ব চির সম্প্রসারণশীল। কিন্তু তার গড় ঘনত্ব সর্বদা ধ্রুব।
সেটা কী রকম? আয়তন বাড়লে যে মাধ্যমের ঘনত্ব কমে, এ কথা জানা। এর পিছনে তাঁরা এক অকাট্য যুক্তি খাড়া করেন, মহাবিশ্বের শূন্যস্থান থেকে নিরন্তর সৃষ্টি হয়ে চলেছে নতুন কণা। অর্থাৎ, কিছু নেই থেকে সব কিছু। এই ভাবেই চলছে অনন্তকাল। ১৯৬৪ সালে ‘কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন’-এর আবিষ্কার ব্রহ্মাণ্ডের আদি মুহূর্তের ছবি তুলে ধরে বিগ ব্যাং-এর সপক্ষে জোরালো যুক্তি খাড়া করে, একই সঙ্গে নাকচ করে স্টেডি স্টেট থিয়োরিকেও। ব্রহ্মাণ্ডের আদি মুহূর্ত যদি থেকেই থাকে, তা হলে তা অনাদি হবে কী করে! এই ঘটনার পরে পালসারের রেড শিফট কিংবা ব্ল্যাক হোল বিগ ব্যাং-কে আরও অক্সিজেন জোগালেও হয়েল কিন্তু তাঁর মতামত পাল্টাননি। বরং ১৯৯৩-এ জেফ্রি বারবিজ় আর অধ্যাপক নারলিকারের সঙ্গে তিনি একটি বিবর্তিত পেপার প্রকাশ করেন ‘কোয়াসি স্টেডি স্টেট থিয়োরি’ নামে, যেখানে তিনি টুকরো টুকরো সৃষ্টি অথবা ‘মিনি-ক্রিয়েশন ইভেন্ট’-এর উল্লেখ করেছেন। এ সব কিছু থেকেই বিগ ব্যাং থিয়োরি এবং পেনরোজ়ের সাইক্লিক কসমোলজির তত্ত্ব কিন্তু সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।
কসমোলজিস্টদের খাতায় ‘ক্রিটিক্যাল ডেনসিটি’ বা ‘সঙ্কট ঘনত্ব’ একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম। এডউইন হাবল প্রবর্তিত এই ঘনত্ব নির্দেশ করে সেই চূড়ান্ত সময়কে, যা ঠিক করে দেবে মহাবিশ্ব চির সম্প্রসারণশীল হবে, না কি আবার সঙ্কুচিত হয়ে পর্যবসিত হবে ‘সিঙ্গুলারিটি’তে? সম্প্রসারণের কারণে মহাবিশ্বের ঘনত্ব দিনে দিনে কমছে এবং যে দিন এই ঘনত্ব ক্রিটিক্যাল ডেনসিটিকে স্পর্শ করবে, বা তার চেয়েও কমে যাবে, সে দিন শেষ হবে সম্প্রসারণ। আবার সঙ্কুচিত হতে হতে তার ‘সিঙ্গুলারিটি’ প্রাপ্তি ঘটবে। তার পর আবার একটি বিগ ব্যাং। ঘটনাটি ঘটতে থাকবে চক্রাকারে। এটিই মহাবিশ্বের ‘ক্লোজ়ড মডেল’, যা ধ্বংসের সঙ্গে ফের সৃষ্টিকে নির্দেশ করে। পেনরোজ় যে কাজের জন্য নোবেল পেয়েছেন (আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের চূড়ান্ত পরিণতিই হল ব্ল্যাক হোল), সেটিও এই ‘ক্লোজ়ড মডেল’-এরই সমর্থক। অর্থাৎ, ব্ল্যাক হোলই বিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি, চির সম্প্রসারণ নয়। বরং স্টেডি স্টেট মডেল চির সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব বোঝায়। এটি মহাবিশ্বের ‘ওপেন মডেল’। এ ক্ষেত্রে মহাবিশ্বের গড় ঘনত্ব কখনও ক্রিটিক্যাল ডেনসিটির নীচে নামবে না।
সায়ক সিংহ
গণিত বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
টাকা পাইনি
সরকারি সংস্থা, ডিবিটি-র প্রকল্প ‘রাইস’ (রিসার্চ ইন্টার্নশিপস ইন বায়োটেকনোলজি-বেসড সায়েন্সেস অ্যান্ড এঞ্জিনিয়ারিং)-এর একটি ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। গত বছর জুন থেকে অগস্ট অবধি বসু বিজ্ঞান মন্দিরে ইন্টার্নশিপ করি। গত বছর অক্টোবর নাগাদ প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা দিয়েছি। আমার গাইড ওঁর প্রাপ্য টাকা পেয়ে গিয়েছেন এই বছরের গোড়ায়। কিন্তু আমি এখনও প্রাপ্য টাকা পাইনি। এর সঙ্গে যুক্ত অন্য ছাত্রছাত্রীরাও পাননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক জানিয়েছেন, ওঁরা নাকি আদালতের সঙ্গে মামলায় লিপ্ত, ফলে কবে টাকা দিতে পারবেন, বা একেবারেই দেওয়া সম্ভব কি না, বলতে পারছেন না। আদালতে মামলা চলাকালীন গাইড টাকা পেলে স্কলারশিপের টাকা থেকে ছাত্রছাত্রীরা কেন বঞ্চিত হবেন?
নীলাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়
এম এসসি বায়োটেকনোলজি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ধর্ম ও ধর্মান্ধতা
বর্তমানে ধর্ম এবং ধর্মান্ধতাকে এক করে দেখা হচ্ছে, যা দুর্ভাগ্যজনক। ধর্মান্ধতা ধর্মের দূষণ। মানুষ পরিবেশ দূষণের জন্য পরিবেশকে দায়ী করে না। তাকে দূষণমুক্ত করতে চেষ্টা করে। ধর্মের ক্ষেত্রে একই দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া উচিত।
ধর্ম ও বিজ্ঞানের সহাবস্থানে কোনও অসুবিধা নেই। এর সপক্ষে তিনটি তথ্য উল্লেখ করছি— বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা জেনেটিক্স-এর প্রবর্তক গ্রেগর মেন্ডেল ছিলেন ধর্মযাজক। স্বয়ং আইনস্টাইনও নৈর্ব্যক্তিক ঈশ্বরের ধারণায় (দার্শনিক স্পিনোজ়া প্রবর্তিত) বিশ্বাস ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘‘আই বিলিভ ইন স্পিনোজ়া’স গড।’’ ২০১১ সালে ভারতে বিজ্ঞানচর্চার সর্বোচ্চ সম্মান ভাটনগর পুরস্কারের অন্যতম প্রাপক গণিতজ্ঞ স্বামী বিদ্যানাথানন্দ (মহান মহারাজ) ছিলেন এক জন সন্ন্যাসী।
স্বর্ণদীপ রায়
কলকাতা-৯১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।