Women Safety

সম্পাদক সমীপেষু: সুরক্ষার উপায়

বড় বড় সংস্থা থেকে শুরু করে ছোট ছোট কুটিরশিল্প, বা ইটভাটাতে কাজ করতে আসা মহিলা শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ০৪:১১
Share:

নীরবে হয়রানি সহ্য করাই মেয়েদের কাজ করার শর্ত, এই ছবিটি স্বাতী ভট্টাচার্য এক চটকল মহিলা শ্রমিকের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন (‘ফাইট করে টিকে আছি’, ২৭-৬), যা প্রতীকী মাত্র। যে কোনও সরকারি বা বেসরকারি সংস্থায় নারী কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ধারা চিরবহমান। বড় বড় সংস্থা থেকে শুরু করে ছোট ছোট কুটিরশিল্প, বা ইটভাটাতে কাজ করতে আসা মহিলা শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মস্তান ও তোলাবাজ পুরুষ— কাজের প্রয়োজনের জন্য মেয়েরা সবার শিকার হন। এ যে অন্যায়, তা তাঁরা জেনেও প্রতিবাদহীন হয়ে পড়েন। কারণ, তাঁরা জানেন এ ব্যাপারে মুখ খুললে তাঁদেরই গায়ে ‘ব্যভিচারিণী’ তকমা সেঁটে যাবে, কাজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে, এবং সমাজের বুকে হেয় প্রতিপন্ন হতে হবে। হয়তো ভিক্ষা করে সংসার চালাতে হবে। মেয়েদের সুরক্ষা দেওয়া, পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। বেসরকারি সংস্থাগুলিতে যে শ্রমিক ইউনিয়নগুলি রয়েছে, তার সদস্যরা কাজ হারানোর ভয়ে সর্বদাই ভীত-সন্ত্রস্ত। তাই নারী শ্রমিক নিরাপত্তার ব্যাপারে আন্দোলনে তাঁরা সম্পূর্ণ পঙ্গু। ফলে, তাঁরা মহিলা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে মাথা ঘামান না, তাঁদের সুরক্ষার জন্য আন্দোলনও করেন না।

Advertisement

যদি রাজ্যের মহিলা কমিশন বেসরকারি সংস্থার নারীদের কাজে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিতে সচেষ্ট হয়, তা হলে ওই নারী শ্রমিকদের কাজ টিকিয়ে রাখার জন্য চিরদিন আর ‘ফাইট’ করতে হবে না। তবে এটাও দেখতে হবে, কোনও নারী শ্রমিক যেন মহিলা কমিশন বা কমিটিকে সুরক্ষার ঢাল করে কোনও নিরপরাধ পুরুষকে ফাঁদে না ফেলেন!

তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া

Advertisement

জোট বাঁধতে হবে

‘ফাইট করে টিকে আছি’ লেখাটিতে একটি অনালোচিত, অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য ধন্যবাদ জানাই। লেখক প্রশ্ন করেছেন, কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের হয়রানি রোখার কাজে ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়ন, শিক্ষক ইউনিয়ন কোথায়? সেই সূত্রে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই। কলকাতার সরকারি ব্যাঙ্কের এক বড় কর্তা এক অল্পবয়সি মহিলা অফিসারকে তার কাচের ঘরে ডেকে কিছু একটা বলেছেন। সে থমথমে মুখে বেরিয়ে অন্য মেয়েদের বলল যে, ব্যাঙ্কের কোনও বিষয় নয়, সে কেন প্রেম করে আগে বিয়ে করে নিল— এ সব ব্যক্তিগত কথা বলেছেন ওই কর্তা, এবং কথা বলার সময় আধিকারিকের চোখ দৃষ্টিকটু ভাবে মেয়েটির বুকের দিকে নিবদ্ধ ছিল। সব মেয়ে মিলে ওই অফিসারকে প্রায় ঘেরাও করা হল। সর্বভারতীয় ইউনিয়ন লিডার তাকে ‘ধুয়ে দিল’ বলা যায়। এর অল্প কাল পরে ওই আধিকারিক মানে মানে ট্রান্সফার নিয়ে নেন।

কলকাতার অন্য এলাকায় এই সরকারি ব্যাঙ্কেরই ‘অ্যাকাউন্টস সেকশন’ ছিল। শাখা নয়, কাজেই পাবলিক ডিলিংস নেই, অন্য প্রদেশের ম্যানেজার ট্রান্সফার হয়ে এসেছেন। কম্পিউটারে ব্যাঙ্কের ডেটা ইচ্ছা করে দেরি করে পাশ করতেন ওই ম্যানেজার, যাতে ওখানে দায়িত্বরত মহিলার ফিরতে দেরি হয়। ঘর ফাঁকা হয়ে যায়, ভয় পেয়ে ওই মেয়েটি তাঁর মহিলা সহকর্মীদের কাছে সে কথা বলেন। ঠিক হয়, তিনি উপরের তলায় কলিগদের সঙ্গে তাঁদের একটি কম্পিউটারে নিজের পাসওয়ার্ড দিয়ে কাজ করবেন।

এর মধ্যে এক সোমবারে শোনা গেল, অন্য এক জন মহিলা কর্মী শনিবার দুপুরে ছুটির পরে বোনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ খেয়াল করেন ওই ম্যানেজার নিঃশব্দে তাঁর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি চমকে গিয়ে চেঁচিয়েমেচিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েন। এমন আরও অনেক বেচাল শোনা গেল ওই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। অ্যাকাউন্টস সেকশনের সব মহিলার সই-করা চিঠি গেল একেবারে কেন্দ্রীয় ‘অ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট’ ডিপার্টমেন্টে, কলকাতার ‘স্টাফ সেকশন’-কে জানিয়ে। মহিলা আধিকারিকের কমিটি এসে জানতে চাইল, অ্যাকাউন্টস সেকশনের মেয়েরা ওই ম্যানেজারের চাকরি যাক তা চান কি না, কারণ তেমন আইনও আছে। মেয়েরা অবশ্য তাঁকে দূরের শাখায় বদলির সুপারিশ করেছিল।

দীর্ঘ দিন সরকারি ব্যাঙ্কে কাজ করার সুবাদে দেখেছি, মেয়েরা যদি ‘জোট বাঁধো, তৈরি হও’ নীতি নেয়, সরকারি ব্যাঙ্কের যৌন হয়রানি প্রতিরোধক আইন, যা বস্তুত খুব কড়া, তার সুযোগ নেয়, সে ক্ষেত্রে মেয়েদের অপমান করার হিম্মত কারও হবে না। এমন একটিও ঘটনা আমি অন্তত জানি না যে, এই কারণে কোনও মেয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। বরং অনেক বেশি মহিলা চাকরি ছেড়েছেন সন্তান পালনের জন্য, কম ছুটি ও কম সুযোগসুবিধা থাকার জন্য।

রবীন্দ্রনাথ সেই কবে শান্তিনিকেতনে মেয়েদের কুস্তি শেখাতে ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান’ গান লিখেছেন। যে সাংবাদিকরা দুরূহ জায়গায় গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন, যাঁদের জন্য আমরা গর্ববোধ করি, তাঁদের অসম্মানে কাজ ছেড়ে দিলে অন্য জায়গায় কাজ মেলে না, এমন ‘নিগ্রহের নেটওয়ার্ক’-এর কথা জেনে আশ্চর্য হলাম। সংবাদমাধ্যমগুলির কর্তৃপক্ষকে এ ক্ষেত্রে ধিক্কার জানাই। চটকল শ্রমিক বা চা বাগানের মহিলা কর্মীদের নিগ্রহের ইতিহাস বহু দিনের। মেয়েদের ব্যবহৃত মেশিনগুলিকে যে ‘মাগিকল’ বলা হয়, মানবাধিকার কমিশন সেখানে কী করছে? মেয়েরা সম্মানের সঙ্গে কেন কাজ করতে পারবে না? যৌন হয়রানির শিকার হয়ে কেন এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে পাঠানো কর্মক্ষেত্র থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলা চটকল শ্রমিকদের প্রায় সবাইকেই ফিরে আসতে হয়।

শ্রমিক নেতারা যদি ন্যূনতম বেতন, পেনশন আর গ্র্যাচুইটির উপর ‘ফোকাস’ করেন, অথচ মেয়েরা কাজই যদি না করতে পারেন, তা হলে এই সব সুবিধের কথা অর্থহীন। চটকল, চা বাগান, অন্যান্য কারখানায় মেয়েদের নিজেদের জোটবদ্ধ জোরালো শ্রমিক সংগঠন তৈরি করতে হবে, যেখানে নেত্রীরা জোরের সঙ্গে নিজেদের অধিকার দাবি করতে পারবেন। সব ক’টা সরকারি ব্যাঙ্কে মহিলাদের শ্রমিক ইউনিয়ন কিন্তু অনেক কাল আগে থেকেই সক্রিয়।

শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

স্বজনপোষণ

পুনর্জিৎ রায়চৌধুরীর ‘দুর্নীতি যে ভাবে ভাঙন ধরায়’ (১৫-৭) প্রবন্ধে উল্লিখিত বিষয়ের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতার মিল রয়েছে। বছর কয়েক আগে হাবরা শহরের সফল ও প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ী, একান্ত আলাপচারিতায় জানতে চেয়েছিলেন যে, আমি ‘কোন দল’ করি? রসিকতার সুরে আমি উত্তর দিয়েছিলাম যে, আমি ‘কোন্দল’ পছন্দ করি না। আসলে, আমার রাজনৈতিক কোনও পরিচয় আছে কি না, সেটা তিনি জানতে চাইছিলেন। কারণ, রাজনৈতিক পরিচয়ই নাকি এখন একমাত্র ব্যক্তিপরিচয় বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।

বলতে দ্বিধা নেই, আমার পিতৃদেব এক সময় কেন্দ্রীয় সরকারি পদস্থ কর্মী ছিলেন। জনশ্রুতি, সেই পদাধিকারকে পাথেয় করেই নাকি আমার এক কাকা ও এক মামা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরি পেয়েছিলেন, এবং এক নিকট আত্মীয় সরকারি স্তরে মাল সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কারণ, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা অন্য কোনও দক্ষতা ওই সব পদে কাজ পাওয়ার শর্তের পরিপূরক ছিল না। বর্তমানে তাঁরা প্রত্যেকেই আয়েশে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় সফল হয়ে চাকরি পাওয়ার পর প্রথম প্রথম অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করতেন যে, পিতৃদেব আমার জন্য কোথায় ‘বন্দোবস্ত’ করেছেন?

বছর চব্বিশের যুবক হিসেবে সে সময় ভীষণ খারাপ লাগত বলে, নিরুত্তর থাকতাম। আজ ছাপ্পান্নতে পা দিয়ে বুঝতে পারলাম, ‘সামাজিক আস্থা’ এ ভাবেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল বহু আগে থেকেই। রাজনৈতিক দুর্নীতিপরায়ণতার কারণে তার গতি বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র।

অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement