বারাণসীর ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয়েছে গঙ্গারতি। ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, বারাণসীর ধাঁচে এ রাজ্যেও গঙ্গারতি করা হবে। ইতিমধ্যে স্থানও নির্বাচন করা হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন, এতে গঙ্গার কী কল্যাণ সাধিত হবে? গঙ্গার জলের দূষণ আজ মাত্রা ছাড়িয়েছে। কারখানার বর্জ্য এসে মিশছে গঙ্গায়। মিশছে শৌচনালার অপরিশোধিত বর্জ্যও। মুখে দেওয়ার অনুপযুক্ত হয়েছে গঙ্গার জল। সেই সঙ্গে পলি পড়ে গঙ্গা নাব্যতা হারাচ্ছে, ফলে বর্ষাকালে গঙ্গায় জল ধারণের ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। অল্প বৃষ্টিপাতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, হাওড়ায় গঙ্গায় ভাঙন এখন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাইলের পর মাইল চাষের জমি ও বাস্তু জমি তলিয়ে যাচ্ছে, মানুষ বাস্তুহারা হচ্ছেন। হারাচ্ছে রুজিরোজগার। গঙ্গার এই ভয়াবহ সঙ্কটের প্রতিকার না করে, ও গঙ্গা উপকূলে বাসিন্দাদের দুঃসহ পরিস্থিতির উপশম না করে, সরকার গঙ্গা আরতিতে মজে গেল।
গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করে, নিয়মিত পলি তুলে নদীর নাব্যতা বাড়ানোর কাজকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল। গঙ্গা আরতির কোনও বৈজ্ঞানিক সারবত্তা নেই, আছে কেবল ধর্মীয় সুড়সুড়ি ও মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণা। তা দিয়ে শুধুমাত্র ভোটবাক্সে কিছুটা ভোট বাড়ানো যেতে পারে। কোটি কোটি ভারতবাসীর উপর গঙ্গার প্রভাব অপরিসীম। দূষণমুক্ত করে ও নাব্যতা বাড়িয়ে গঙ্গাকে বাঁচাতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক দিকে ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ার কথা বলছেন, অন্য দিকে বারাণসীতে গঙ্গা আরতির সূচনা করে দেশকে পশ্চাতে ঠেলে দিচ্ছেন। এই বৈপরীত্য কেন?
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
মামলার দায়
আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনে সরকারের বিভিন্ন কাজে বাধা তৈরি করা হচ্ছে বলে ক্ষোভ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (‘মামলা লড়তেই ভাঁড়ার ফুরোচ্ছে, ক্ষোভ মমতার’, ২৫-১১)। আইনি লড়াই চালাতেই সরকারের সব অর্থ শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রশ্ন হল, তাঁর সরকার অনৈতিক ভাবে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ করল কেন? কেনই বা যোগ্য প্রার্থীরা পথে বসে অপেক্ষা করবেন, কবে মুখ্যমন্ত্রীর কৃপাদৃষ্টি পাবেন তাঁরা? ন্যায়বিচার চাইলে মামলা করা ছাড়া এঁদের সামনে দ্বিতীয় পথই বা কী?
মুখ্যমন্ত্রী যদি মামলায় আগ্রহী না হন, তা হলে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের ন্যায্য ডিএ-র দাবিকে বার বার নস্যাৎ করে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন কেন? শেষে কলকাতা হাই কোর্ট যখন তিন মাসের মধ্যে ডিএ মিটিয়ে দিতে বলল, তখন তিনি সেই পথে না হেঁটে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন। এই মামলা লড়ার কোনও প্রয়োজন হত না, যদি তিনি সময়ে ডিএ মিটিয়ে দিতেন। অর্থের অপচয়ের দায় তা হলে কার?
তপন কুমার ঘোষ, শ্রীরামপুর, হুগলি
অকালপক্ব
শিশু দিবস ক্যালেন্ডারের নিয়ম মেনে আসে যায়, স্কুলে পালিতও হয় সাড়ম্বরে। কিন্তু শিশুরা যে অকালেই শৈশব হারাতে বসেছে, সেই বিষয়টি বড়দের চোখে উপেক্ষিত থেকে যায় (‘হারিয়ে যাচ্ছে কল্পনার রং’, ১৪-১১)। সত্যিই বেশির ভাগ অভিভাবক প্রত্যাশা পূরণের মোহে, সামাজিক চাপে পড়ে বাচ্চাদের বাধ্য করেন ইঁদুর দৌড়ে শামিল হতে। সেই অবৈজ্ঞানিক এবং অমানবিক রুটিন সামলাবার পর এখনকার বাচ্চাদের নিজস্ব খেলার সময় বলে যদি কিছু থেকে থাকে, সেই অমূল্য সময়টুকু অনেকাংশে যন্ত্রনির্ভর। ফলত তাদের আচরণও যান্ত্রিক। শিশুর একটা নিজস্ব জগৎ থাকে কল্পনার এবং সে সেই জগতেরই বাসিন্দা। এইটাই তার সঙ্গে বয়স্কদের মৌলিক প্রভেদ। কিন্তু বাস্তবের এই রুক্ষ মাটিতে শিশুর কল্পনাবৃক্ষের আকাশকুসুমটি হারিয়ে যাচ্ছে বিবিধ যন্ত্রের পর্দার ও-ধারে। আমরা যারা বই বা ক্যাসেটের মাধ্যমে ঠাকুরমার ঝুলি-র লালকমল নীলকমলের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, তারা মনে মনে প্রতিটি চরিত্রের চেহারা কল্পনা করে নিতাম। এতে শিশুর মৌলিক সৃজন ক্ষমতাও পরিণত হয়ে উঠত। চাঁদের পাহাড় উপন্যাস পড়ে মনে মনে আমাদেরও আফ্রিকা ভ্রমণ সারা হত। কিন্তু বর্তমানে দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমের বাড়বাড়ন্তের কারণে বাচ্চাদের আর নতুন করে ভাবার বা কল্পনা করার পরিসরটুকু থাকছে না। ফলে তাদের সৃজনক্ষমতাও ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে তাদের মনের নির্মল সারল্য। কোভিড পর্বে তো বটেই, তার আগে থেকে অনেক সময়েই অভিভাবকেরা বাচ্চার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত রাখতে চেয়েছেন বা বাধ্য হয়েছেন। শৈশব বা কৈশোরে অনুপ্রবেশ ঘটছে এমন বিবিধ শব্দ বা দৃশ্যাবলির, যা তার গোচর হওয়া উচিত ছিল শারীরিক এবং মানসিক ভাবে আরও খানিকটা পরিণত হয়ে ওঠার পর। ভাষাশিক্ষার পাঠ্যক্রমে নির্বাচিত গল্প-কবিতা পড়ে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরাই সেগুলিকে নিতান্ত শিশুসুলভ বলে উপহাস করছে। অর্থাৎ, তাদের মন চাইছে আরও পরিণত কিছু, আরও জটিল পটভূমির আখ্যান। শিশুরা কেন অকালে বড় হয়ে যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন আজ বার বার মনে জাগে।
অনির্বিত মণ্ডল, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
ভোটের আগে
সম্প্রতি ব্যাঙ্কক থেকে কলকাতায় আসা দুই ভারতীয় উড়ান-যাত্রীর কাছ থেকে প্রায় ৬২ লক্ষ টাকার সোনা বাজেয়াপ্ত করেছে বিমানবন্দরের শুল্ক দফতর। কয়েক দিন আগে হাওড়া স্টেশনে বাইরে থেকে আসা মালিকানাহীন লক্ষ লক্ষ টাকা দেখা গেল। প্রত্যন্ত জেলায় প্রায়শই বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণ হচ্ছে, খেলতে গিয়ে বোমার আঘাতে শিশু-মৃত্যু হচ্ছে, অথচ প্রশাসনের হেলদোল নেই। পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি পর্বে রাজ্যে যে পরিমাণ মালিকানাহীন কালো টাকা, বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র এবং অবৈধ সোনা আমদানি হচ্ছে, তাতে এ বারও ভয় দেখিয়ে, বোমাবাজি করে গ্রামে-গঞ্জে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হবে, এমন আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। প্রত্যন্ত জেলাগুলিতে বোমা বিস্ফোরণের পরে অনেক গ্রামের পুরুষ-মহিলা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন! আশঙ্কা হয়, হয়তো ‘শান্তিপূর্ণ ভাবে’ জনমানবহীন গ্রামে সব ভোট শাসক দলই পেয়ে যাবে বিনা বাধায়।
সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৯১
শীতের প্রাণী
‘শীতের পোশাক’ (৯-১২) শীর্ষক রেড রোডের কাছের ছবিটি স্মৃতি উস্কে দিয়ে গেল। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি ছাগলের গায়ে পরিয়ে দিয়েছেন জামা জাতীয় একটা পোশাক। গ্রামগঞ্জের দিকে শীত পড়লেই দেখতাম, বাড়ির গৃহপালিত প্রাণীটি ঠান্ডায় কাঁপে। তখন বাড়িতে থাকা পুরনো জামা তাদের পরিয়ে দেওয়া হত। তারাও দিব্যি সে সব পরে চলাফেরা করত বা রাতে ঘুমাত। সকালে মাঠের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় সেগুলোই হয়ে উঠত তাদের শীতের পোশাক। আর গরু-বাছুরের ক্ষেত্রে দেখা যেত চটের বস্তা শরীরের মাপে কেটে বেঁধে দেওয়া হত গায়ে। বোঝা যেত, শীত নিবারণের এই উপায় তারা বেশ উপভোগই করছে। গোয়াল বা থাকার আস্তানায় আগুন জ্বালিয়ে ঘর গরম করা ও মশার হাত থেকে বাঁচাতে দেওয়া হত ধোঁয়াও। এখন রাস্তাঘাটে দেখি পথকুকুররা সারা রাত খোলা জায়গায় গুটিসুটি হয়ে থাকে, কষ্ট পায় শীতে। কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিলে, নিবে যাওয়া ছাইয়ের উপর জবুথবু হয়ে একটু উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টা করে। এই প্রাণীরা দারুণ শীতে বড় অসহায়।
সনৎ ঘোষ, খালোড়, হাওড়া