—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ঢাকে কাঠি পড়েছে। চার দিকে সাজো সাজো রব। বনেদি বাড়ির পুজো কিংবা বারোয়ারি পুজোর কর্মকর্তাদের তৎপরতা এখন অনেক বেশি। তবে সময়ের পরিবর্তনে পুজো-দালান বা মণ্ডপের ছবিটা খুব দ্রুত বদলে গিয়েছে। আগেকার দিনে বনেদি বাড়ির পুজো-দালান বা বারোয়ারি পুজোমণ্ডপে ঠাকুর গড়ার কাজ দেখতে কার না ভাল লাগত? স্কুল চলাকালীন মনটা সব সময় আঁকুপাঁকু করত কখন পুজো-দালানে হাজির হব। ঠাকুরদালানে কুমোরকাকা-সহ সহকারীরা কাঠামো গড়া থেকে একমেটে, দোমেটে, রং করা, চোখ আঁকার কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা চটকদার মজার মজার কথায় যে হাসির খোরাক জোগাতেন, তা উভয় পক্ষের কাছেই বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠত। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে কুমোরকাকাদের জায়গাটা দখল করে নিয়েছেন কুমোরপাড়া বা কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। তাঁদের তৈরি রেডিমেড মূর্তি এখন শোভা পায় মণ্ডপে।
আর কুমোরপাড়া বা কুমোরটুলি থেকে লরি, টেম্পো বা ট্রাকে করে প্রতিমা আনার সময়ে হইচই, নাচ-গান, চিৎকার-চেঁচামেচি এখন পুজোর পরিবর্তনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগেকার দিনের পুজোমণ্ডপে হাতের তৈরি কারুকার্য শিল্পকলার পরিচায়ক হয়ে উঠত। এখন সে জায়গায় চলে নানান থিমের পুজো। সেখানে পরিবেশবান্ধব উপকরণের তুলনায় পরিবেশ-দূষণই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনেদি বাড়ির পুজোয় আগেকার দিনে ভোজনপর্ব সবই বাড়িতে। ভিয়েন বসিয়ে টাটকা খাবার বানানো হত। সেগুলোর গুণগত মানও ছিল খুবই উৎকৃষ্ট। এ কালের পুজোয় সে জায়গাটা চলে গিয়েছে কেটারিং গোষ্ঠীর হাতে, যাদের খাবারের গুণগত ও পরিমাণগত মান প্রশ্নাতীত নয়। খাবার মেনুতেও ঘটে গিয়েছে বিরাট পরিবর্তন। আগে যেখানে দুপুরের খাবার বলতে ভাত, ডাল, ধোঁকার ডালনা, ঝিঙেপোস্ত, কুমড়োর ঘ্যাঁট, আলুর দম লোকে পাতপেড়ে চেটে-পুটে খেত, এখন সেখানে জায়গা নিয়েছে ফাস্ট ফুডের রকমারি, যেগুলো শুধুই বাড়তি ক্যালরি দিতে পারে, কিন্তু মন ভরাতে পারে না। বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলার চল এখনও রয়েছে ঠিকই, তবে এখন পাড়ায় পাড়ায় পুজোমণ্ডপে এই খেলাকে কেন্দ্র করে সেলফি-সহ ফটো তোলার মাতামাতিই দেখা যায়। তাতে সেই প্রাণের আবেগ বা হৃদয়ের অনুরাগ কোথায়? ঠাকুর বিসর্জনের পরে পারস্পরিক কোলাকুলি, বড়দের প্রণামের রীতির বদলে জায়গা করে নিয়েছে সমাজমাধ্যমে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা, প্রণাম বার্তা।
কালের নিয়মে সব কিছু বদলের সঙ্গে সঙ্গে পুজো বদলও ঘটে যাচ্ছে দ্রুত ভাবে।
প্রদীপ কুমার দাস, শ্রীরামপুর, হুগলি
পুজোসংখ্যা
ঈশা দাশগুপ্তের ‘পুজোর গন্ধ আর পূজাবার্ষিকী’ (৭-১০) বিষয়ে কিছু সংযোজন। পুজো মানেই সৃজনশীল মানুষের ‘সৃষ্টিসুখের উল্লাস’। পুজোর ভ্রমণ, সাজগোজ, পুজোর গান, খাওয়া, নতুন লেখায় সেজে ওঠে আমাদের পুজোসংখ্যাগুলি। অজস্র লিটল ম্যাগাজ়িনের পাতায় পাতায় সাজানো হয় অনুপম সৃষ্টি। বড় ম্যাগাজ়িনগুলোর অপ্রকাশিত রচনার সম্ভার সত্যিই অতুলনীয়। করোনার করাল গ্রাস অক্ষর উৎসবে কিছুটা থাবা বসালেও, আজ কিন্তু তা আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। পুজোর মাস তিনেক আগে থেকেই চলে এর প্রস্তুতিপর্ব। সাহিত্যিক থেকে সম্পাদক, এমনকি ছাপাখানার কর্মীদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকথা প্রভৃতিকে অপার লাবণ্যে ভরিয়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান সবাই। বিভিন্ন পুজো-কমিটি যেমন একটি বছর ধরে তাদের প্রিয় পুজোটিকে আরও সুন্দর, আরও ব্যতিক্রমী, জনমোহিনী করে তোলার স্বপ্ন লালন করে, ঠিক তেমনই লেখক-প্রকাশক সেরা সম্ভারে ফসলের ফরমান আমজনতার দরবারে তুলে ধরতে প্রস্তুত থাকেন।
পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষেই এই পুজোসংখ্যাগুলোর প্রকাশ ঘটত। আজ সময়ের স্রোতে আগে প্রকাশের দ্রুততায় একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় পুজোর দু’মাস আগেই বাজারে চলে আসছে পুজোসংখ্যা। এই প্রকাশের ইঁদুরদৌড়ে বড় পত্রিকাগুলো যতটা মানিয়ে নিয়েছে, ছোট পত্রিকাগুলো ততটাই সমস্যায় পড়েছে। চড়াই উতরাই পেরিয়ে নিজের শেষ সম্বলটুকু উজাড় করে দেন ছোট কাগজের সম্পাদক, প্রকাশকরা। বর্ষে বর্ষে মা আসেন, শারদসম্ভার সাজে অনন্য নিবেদনে।
অরিজিৎ দাস অধিকারী, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর
করণিকের কাজ
‘কাজ বেশি টাকা কম, ক্ষুব্ধ প্রধান শিক্ষকেরা’ (১০-৯) শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষকদের আর্থিক বঞ্চনার কথা বলা হয়েছে এবং কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী-সহ নানা সরকারি প্রকল্প রূপায়ণের গুরুদায়িত্ব তাঁদের উপর ন্যস্ত থাকার উল্লেখও করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এটা ঠিক, কারণ কিছু স্কুল করণিক ছাড়াই চলছে। কিন্তু সিংহভাগ স্কুলে এই কাজগুলি সম্পন্ন হয় পিছনের সারিতে থেকে যাওয়া বিদ্যালয়ের করণিক দ্বারা। করণিকের চাকরি মাধ্যমিক মানের, অথচ তাঁদের কাজগুলি এই মানের অনেক উপরে। কাজের পরিধি বিস্তার হলেও চাকরি আজও সেই মাধ্যমিক মানেই রয়ে গেছে। বেতন কাঠামো হাস্যকর। কোনও পদোন্নতি নেই। প্রাপ্য ডিএ না পাওয়ায় অবস্থা আরও শোচনীয়।
স্কুলের করণিকের চাকরির ইন্টারভিউতে আমাকে যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছিল, তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল ক্লার্কের কাজ কী কী। আমার দেওয়া উত্তরের পর ইন্টারভিউ বোর্ডের এক জন সদস্য আমাকে বলেছিলেন, এক কথায় ক্লার্কের উপর নির্ভর করে স্কুল চলবে। তার পর একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে যোগদান করে বুঝতে পারি ওঁর কথার মর্ম। চাকরির ১০ বছর পার করে আমি আজও নির্দিষ্ট ভাবে জানতে পারিনি এক জন ক্লার্কের কাজ কী। স্কুলের ক্লার্কের সমস্ত কাজের ফিরিস্তি দেওয়া এখানে সম্ভব না হলেও কয়েকটি কাজের উল্লেখ করছি। যেমন, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, মেধাশ্রী, ঐক্যশ্রী, এসসি/ এসটি/ ওবিসি প্রি ম্যাট্রিক, পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ, সবুজ সাথী (সাইকেল), তরুণের স্বপ্ন (ট্যাব), এসভিএমসিএম স্কলারশিপ, মিড-ডে মিল, বাংলার শিক্ষা পোর্টাল, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন, অডিট ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও, গ্রুপ ডি স্টাফের অনুপস্থিতিতে (কিছু ক্ষেত্রে উপস্থিতিতে) তাঁর সমস্ত কাজ করা, নানা কারণে (যেমন, ট্যাব কেনার রসিদ বা পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণাপত্র সংগ্রহ) ছাত্রদের বাড়ি যাওয়া, সার্কল অফিস, ডিআই অফিস, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস, পুরসভা, ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন অফিসে যাওয়া, অসংখ্য ফোন করা। আছে আরও অনেক, সেগুলি দিয়ে এই চিঠি আর দীর্ঘায়িত করছি না।
বিশ্বমঞ্চে যে সমস্ত প্রকল্প রাজ্যের মুখোজ্জ্বল করেছে, সেই প্রকল্পগুলি বাস্তবে যাঁরা শ্রম দিয়ে রূপায়িত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন, সেই স্কুল ক্লার্কদের বেতন কাঠামো পরিবর্তন করতে এবং তাঁদের চাকরি আজও মাধ্যমিক মানের কি না, সে বিষয়ে ভাবতে সরকারকে অনুরোধ করছি।
অভিজিৎ রায়, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
শ্রবণ-যন্ত্রণা
শিয়ালদহ ডিভিশনের বিভিন্ন শাখায় কয়েক জন স্বঘোষিত গায়ক উপার্জনের আশায় চড়া স্বরে অধিকাংশ যাত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গান গেয়ে চলেন। একটা বড় যন্ত্র এনে প্রথমে সিটের উপরে বসিয়ে দেন, তার পর কর্ডলেস স্পিকার ব্যবহার করে গান শুরু করেন। তীব্র আওয়াজে ট্রেনযাত্রা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। আর গান শেষ হলে টাকার জন্য এমন কথা বলেন যে, বহু যাত্রী লজ্জায় টাকা দিতে বাধ্য হন। রেল কর্তৃপক্ষের কি কিছুই করণীয় নেই?
রতন দত্ত,কলকাতা-৮৬