আবার ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারালেন দমকলকর্মী, রেল আধিকারিক, নিরাপত্তা কর্মী এবং কলকাতা পুলিশের কর্মী-সহ ন’জন। কেন লিফট ব্যবহৃত হয়েছিল, কেন দমকলকর্মীদের গায়ে অগ্নিনিরোধক পোশাক ছিল না, কেন অর্ধশতাব্দী প্রাচীন বহুতলের অগ্নিপরীক্ষা হয়নি, এর জন্য অবশ্যই রেল দফতর এবং রাজ্য সরকার কমিশন বসিয়ে তদন্ত করবে। ভোটের মুখে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের তরজাও জমে উঠবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আর কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ দেবেন মৃতের পরিবারকে। এ ভাবেই তদন্তের রিপোর্টে ধুলো পড়বে। আবার কোথাও আগুন লাগবে, কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হবেন এক বা একাধিক মানুষ। সমস্যার শিকড় যে অনেক গভীরে, তা চাপা দেওয়াই যেন রাষ্ট্রের একমাত্র দায়।
যে নগ্ন সমস্যা সর্বসমক্ষে উঠে এসেছে তা হল, নিহত দমকলকর্মীদের মধ্যে তিন জন অস্থায়ী কর্মচারী। এ রকম নাকি তিন হাজার অস্থায়ী কর্মচারী দমকলে সহায়ক হয়ে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের স্থায়ী চাকরির আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য তিন মাসে এক দিন কাজে ছেদ করে দেওয়া হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলি বার বার সমকাজে সমবেতনের দাবি করলেও, এঁদের ন্যূনতম মজুরিও অনেক সময়ে জোটে না।
বিভিন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিক কর্মচারীদের নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণমূলক যে বিভিন্ন আইনি সুযোগ-সুবিধা ছিল, তাতে ক্রমশ বাজেট বরাদ্দ কমাচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। একে সরকারের বিচ্যুতি বলে আর মনে করা হয় না, নয়া উদারবাদে এটাই সরকারি নীতি। ব্যাঙ্ক, বিমা প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে তিন দশক ধরে শূন্যপদে কর্মী বহাল না করে, অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে কাজ চালিয়ে, এখন সেই সব পরিষেবার বেসরকারিকরণের পথে যাচ্ছে সরকার। এখন দমকল, পুলিশের মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবাও ঠিকাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবকদের ভরসায় চালাতে চায়। তার পরিণাম কী হতে পারে, তা দেখিয়ে দিল নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিং-এর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।
পার্থসারথি দাশগুপ্ত, রহড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
এই ভবিতব্য?
নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিং-এ ১৪ তলার অগ্নিকাণ্ড বুঝিয়ে দিল যে, নন্দলাল মার্কেটে ২০০৮ আর ২০১৯ সালের ভয়াবহ আগুন থেকে রাজ্যের দমকল দফতর কোনও শিক্ষা গ্রহণ করেনি। আমরা স্কুলজীবন থেকে শুনে এসেছি যে, আগুন লাগলে লিফট চালাতে নেই। দমকল বাহিনীর প্রথম কাজ হল, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। এর কোনওটাই রেলের কয়লাঘাট বিল্ডিং-এর অগ্নিকাণ্ডে পালন করা হয়নি দেখে প্রশ্ন জাগে, তবে কি দমকলকর্মীরা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত ছিলেন না? কেন আধুনিক প্রযুক্তির সরঞ্জাম দিয়ে দমকল বিভাগকে আজও উন্নত করা যায়নি?
এখনও কলকাতার অনেক বহুতল বাড়ি ও অফিস বিল্ডিং রয়েছে, যেখানে অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই, বা থাকলেও সেটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আগুন লাগলে মন্ত্রী-নেতারা সেখানে ছুটে যান, আর অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আহত আর নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে ক্ষান্ত হন। আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে পুড়ে মরে ক্ষতিপূরণ পাওয়াটাই কি দমকলকর্মীদের ভবিতব্য?
মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১
বেপরোয়া
স্ট্র্যান্ড রোডে অবস্থিত নিউ কয়লাঘাট ভবনে নাকি প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে, অর্থাৎ উদ্বোধনের পর থেকেই, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলির কোনও পরীক্ষা হয়নি। বহু দিন আগুন নেবানোর কোনও মহড়া বা প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি! ওই বহুতলের কোনও মানচিত্রও কোথাও লাগানো নেই, যা প্রতিটি তলায় অবশ্যই থাকার কথা। অগ্নিসুরক্ষার শংসাপত্রও ওই বহুতলের অফিসে নেই! কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে রেলের দফতরে কী করে যে এত অনিয়ম থাকে, তা বোধগম্য হয় না। আগুন লাগার পরেও কী করে লিফট চালু থাকে? রেলের মতো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরে এই ধরনের উদাসীনতা, বেপরোয়া ভাব কেন? এটা অনৈতিক ও অপ্রত্যাশিত।
আগুনে ন’জনের অকালমৃত্যু যে ঘটল, তার দায়িত্ব কার? অতীতে দেখা গিয়েছে যে, আগুন লাগার খবর পাওয়ামাত্র মন্ত্রী ও নেতারা আসেন। দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন, ক্ষতিপূরণের কথা বলেন, চাকরির প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু কে দোষী, কী করে আগুন লাগল, তার কিনারা হয় না। কেন দমকল, পুরসভা, পূর্ত দফতর, বা সংশ্লিষ্ট অফিস ও বহুতল ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা নৈতিক দায়িত্ব পালন করেন না? কেন তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি হয় না?
শহর, তথা রাজ্যের সমস্ত বহুতল ও পুরনো বাড়ি, তথা বাজার ও সিনেমা হল ইত্যাদি জায়গায় প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ও সুরক্ষাব্যবস্থা আছে কি না, এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় কি না, তার নজরদারি প্রয়োজন। অবহেলা করলে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
অসহায়
ফায়ার ব্রিগেড, পুলিশ আর মেডিক্যাল ইমারজেন্সি পরিষেবা, তিনটেই সমান দরকারি। এই তিন পরিষেবার কর্মীদের যুদ্ধ করতে হয়, যা জেতার জন্যে চাই বিশেষ প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা আর যুদ্ধের অস্ত্র। এগুলো বাদ দিয়ে কাউকে যুদ্ধে পাঠানো খুন করার শামিল। কয়লাঘাট ভবনের আগুনে ন’টা জীবন না গেলে আমরা জানতাম না, দমকলের ৪০% কর্মী অস্থায়ী। এঁরা অসহায়, পেটের আগুন তাঁদের জোর করে ঠেলে দেয় আগুনের দিকে।
ক’দিন আগে আমাদের বাড়ির গলিতে খাবারের দোকানে আগুন লাগল। এখানে গ্যাসে রান্নাবান্না হয়। দমকল এসে আগুন নেবাল। পরের দিন সকালে আবার রান্না আরম্ভ হল। আগুন যাতে না লাগে, সে ব্যাপারে দমকলের কিছু করার ক্ষমতা নেই।
পোপো মুখোপাধ্যায়, গড়িয়া, কলকাতা
ভরতপুর স্তূপ
পূর্ব বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর সাব ডিভিশনের বুদবুদ থানার অন্তর্গত গলসি ব্লকের ভরতপুরে রয়েছে বাংলার আদিতম বৌদ্ধ স্তূপ। যা ‘ভরতপুর বৌদ্ধ স্তূপ’ নামে খ্যাত। ১৯৯৪-৯৫ সালে বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট গেজ়েটারে লেখা আছে, এটি সপ্তম-নবম শতকে নির্মিত হয়েছিল। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার অধ্যক্ষ শৈলেন্দ্রনাথ সামন্তের মতে, ভরতপুর স্তূপের নির্মাণকাল খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতাব্দী। এটি স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবঙ্গে আবিষ্কৃত প্রথম বৌদ্ধস্তূপ। ১৯৭১ সালে ভরতপুরে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান শুরু হয় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের পূর্বাঞ্চলীয় শাখা ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে। এই ইতিহাস-সমৃদ্ধ স্থানটি বর্তমানে অযত্নে পড়ে রয়েছে। আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া স্থানটির তত্ত্বাবধানে থাকা সত্ত্বেও কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি চোখে পড়েনি। এই স্থানটির রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে ইতিহাসের পাতায় এর অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে থাকবে না।
নবারুণ বড়ুয়া, মহেশতলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা