মণিপুরে হিংসা কমার বদলে ক্রমে বেড়েই চলেছে। —ফাইল চিত্র।
‘আবার পুলিশের ছদ্মবেশে হানার আশঙ্কা মণিপুরে’ (১৮-৬) পড়ে আঁতকে উঠলাম। রাজ্যের দেড় হাজার পুলিশ সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে ছুটি নিয়ে বসে আছে। পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে লুট হয়ে গিয়েছে চার হাজার স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, কারবাইন, মেশিনগান, রকেট লঞ্চার, লাথোড গান। হাওয়া হয়ে গিয়েছে পাঁচ লক্ষ গুলি, মর্টার ও শেল। গত দেড় মাস ধরে চলছে নানান হিংসাত্মক ঘটনা। হাজার হাজার মানুষ আশপাশের রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। হিংসা কমার বদলে ক্রমে বেড়েই চলেছে। অথচ, আশ্চর্যজনক ভাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চুপ, নির্বাক।
এর মধ্যে কয়েক জন দুষ্কৃতী বিজেপির রাজ্য সভাপতি সারদা দেবীর বাড়িতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। রাজ্যের মন্ত্রী টি বিশ্বজিৎ সিংহের বিধানসভা কেন্দ্রের সদর দফতর পুড়িয়ে দেওয়া হল। পুলিশ ও আধা সেনার পোশাকে জলপাই রঙের জিপে করে গ্রামে হামলা চালাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন। এর শেষ কোথায়? সেনা, আধা সেনা নামানো সত্ত্বেও শান্তির কোনও লক্ষণই নেই। মেইতেইদের সঙ্গে কুকি ও অন্য জনজাতিদের দাঙ্গা আজ এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই অরাজকতা যদি কোনও অবিজেপি শাসিত রাজ্যে দেখা যেত, তা হলে কেন্দ্র কি তখনও এ রকমই চুপ থাকত?
এ পর্যন্ত একশোর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। পঞ্চাশ হাজারের উপর ঘরছাড়া। অমিত শাহ মণিপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে, বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হল না। সংবাদে প্রকাশ, মণিপুরের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’ চলাকালীন রাস্তায় রেডিয়ো আছড়ে ভেঙে ফেলেছে। আরএসএস-এর সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেও হোসাবলে মণিপুরের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রকে সমস্যা সমাধানে তৎপর হতে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে কেন্দ্রের সে রকম তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তাই, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহের মতো আমাদেরও প্রশ্ন— মণিপুর কি ভারতের বাইরে?
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
জল কই
সুন্দরবনের দু’টি দ্বীপ— সাগরদ্বীপ ও ঘোড়ামারা। একটি থানা— নাম সাগর থানা। সাগর ও ঘোড়ামারার রাজধানী রুদ্রনগর। রুদ্রনগরকে রাজধানী বলা হয় কারণ, রুদ্রনগরে সাগর থানার ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসারের অফিস, সাগর গ্রামীণ হাসপাতাল, জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি অনতিদূরে থানাও বিদ্যমান। এই রুদ্রনগরের পূর্বপাড়া আমার জন্মভূমি। পেটের দায়ে চাকরির জন্য বাইরে থাকি। এখানেই আমাদের শৈশব, কৈশোরকাল অতিবাহিত হয়েছে। এ বার বাড়ি গিয়ে দেখলাম স্নানের, খাওয়ার, রান্না করার, এমনকি শৌচাগারেও জল নেই। ছেলেবেলায় পুকুরে স্নান করতাম, সেখানেও জল নেই। প্রতিবেশীরা জানালেন, বাড়ি বাড়ি জল দেওয়া হবে, এই প্রচারে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারের বিদ্যমান পাবলিক হেলথ এঞ্জিনিয়ারিং (পিএইচই) লাইন ভেঙে ফেলেছে। নতুন লাইন যদিও হয়েছে, জলের রিজ়ার্ভার সম্পূর্ণ হতে আরও পাঁচ-ছ’মাস লাগবে।
আমাদের প্রশ্ন, নতুন লাইন তৈরি করার আগেই পুরনো লাইন ভেঙে দেওয়া কি জরুরি ছিল? জল, বিদ্যুৎ সরবরাহতেও কি রাজনীতিরই খেলা থাকা উচিত?
রায়পদ কর, রুদ্রনগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
নেপথ্য নায়ক
‘মাঝ আকাশে দুর্যোগে কপ্টার, চোট মুখ্যমন্ত্রীর’ (২৮-৬) প্রতিবেদন পড়ে এই চিঠি। বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে সবাই স্বস্তি পেয়েছে। কিন্তু এই খবরের যিনি প্রধান নায়ক, মানে সেই পাইলটের নাম বা কোনও ছবি কোনও কাগজে তন্নতন্ন করেও খুঁজে পেলাম না। এতগুলো টিভি চ্যানেলের এত জন সাংবাদিক— কারও বুম দেখলাম না তাঁর সামনে ধরতে। মাটি থেকে কয়েক হাজার ফুট উপরে মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপি-কে নিয়ে যখন দুর্যোগে কপ্টার বেসামাল হয়ে যাচ্ছে, তখন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে কপ্টারের মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে অচেনা শালুগাড়া এয়ারবেসে জরুরি অবতরণ অসাধ্য সাধন বলা যেতে পারে। পাইলটের সিদ্ধান্ত একটু ভুল হলে জীবন-মৃত্যুর দূরত্ব কিন্তু বেশি থাকত না। শালুগাড়া এয়ারবেসের পাইলটরা দেখলাম এই পাইলটের দারুণ প্রশংসা করেছেন। দুর্ঘটনা ঘটলে কিন্তু পাইলটের দোষগুণ নিয়ে পোস্টমর্টেম করতে সকলে লেগে পড়ত।
এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে ২০২১ সালে সেনাবাহিনীর প্রধান বিপিন রাওয়ত-সহ তেরো জনের হেলিকপ্টার-দুর্ঘটনায় মৃত্যু। সেই কপ্টার ছিল রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক এমআই-১৭ হেলিকপ্টার। এখানে যেমন পাইলট আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখেই আকাশে উড়েছিলেন, সেখানেও তা-ই করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতির উপরে মানুষের হাত নেই। সেখানে ভারতের শ্রেষ্ঠ পাইলটরা আধুনিক কপ্টার নিয়েও বাঁচতে পারেননি।
এই অনামী পাইলট হয়তো চিরকাল ক্যামেরার পিছনেই থেকে যাবেন। জনসমক্ষে কোনও মঞ্চে কোনও পুরস্কার নিতে এঁদের দেখা যাবে না।
মিতালি মুখোপাধ্যায়, খাঁমুড়াগাছা, নদিয়া
কাঠের পুতুল
‘কোন খেলা যে খেলবে!’ (২৯-৬) শীর্ষক দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখাটি অনবদ্য। যে কথাটি তিনি প্রবন্ধের শুরুতে বলেছেন, “ঢের ঢের নির্বাচন দেখেছি... এ রকম একটা ঘেঁটে যাওয়া পরিস্থিতি আগে কখনও হয়েছে বলে মনে পড়ে না”— সেটি প্রণিধানযোগ্য। নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ নিয়ে প্রাথমিক টালবাহানার পর, তিনি প্রথম দিন থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনটিকে প্রহসনে পরিণত করেছেন। কোনও সর্বদলীয় বৈঠক না করে আচমকা ভোটের দিন ঘোষণা, পুরো রাজ্যে রাজ্য পুলিশ দিয়ে এক দিনে ভোট করানোর চেষ্টা, মনোনয়নের সংক্ষিপ্ত সময় ইত্যাদি নানান কুনাট্য ভরা তাঁর ঘোষণা। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য কোনও রকম ভাবনাচিন্তার প্রস্তুতি ও সদিচ্ছা সেখানে ছিল না। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। নির্বাচনের আগেই মনোনয়নপর্ব থেকে চরম বিশৃঙ্খলা, মনোনয়ন দিতে বাধা, গুন্ডামি, মারামারি, খুনোখুনি, নাম প্রত্যাহার করতে হুমকি— এমন নানান অবাঞ্ছিত ঘটনায় নির্বাচনের আগে দশ জনের অমূল্য প্রাণ গিয়েছে।
এ দায় কার? অবশ্যই নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের। কারণ, সরকারের ইঙ্গিতেই নির্বাচন কমিশন কাঠের পুতুলের মতো চলেছে। উনি এক জন আইএএস আধিকারিক হয়েও যে ভাবে বার বার আদালতের ধমক খেয়েছেন, তাতে কাদা লেগেছে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আইএএস-বর্গের গালে।
অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
স্বচ্ছ পরিষেবা
‘রেলের অভিযান’ (২৮-৬) শীর্ষক খবরে দেখলাম, পুজোর সময়ে রেল-ভ্রমণের টিকিট বিক্রি শুরু হতেই, ‘নিশ্চিত’ টিকিট-সহ ‘অপেক্ষা’র টিকিটও বহু বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বলা হচ্ছে, এর পিছনে দালালচক্র আছে। সেই নিয়ে রেলের অভিযানও শুরু হয়েছে। প্রত্যেক পুজোর সময় এই একই ঘটনা ঘটে। আমার মনে হয়, যদি প্রতি টিকিটের সঙ্গে যাত্রীর আধার নম্বর যোগ করা শুরু করা যায়, তবে প্রকৃত যাত্রীরাই টিকিট কাটতে পারবেন। দুষ্কর্ম কমই হবে। আর টিকিট ফেরত হবে যাত্রার দিনের পরে এবং ফেরতের সময় আধার-এর প্রতিলিপি মিলিয়ে ফেরত দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ফেরতযোগ্য মূল্য একটু বাড়িয়ে দিলে, এই ব্যাপারে সকলেরই উৎসাহ থাকবে বলে মনে হয়।
রূপেন্দ্র মোহন মিত্র, কলকাতা-৪৭