—ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তাপস সিংহের ‘বেয়াড়া প্রশ্ন যাতে না করেন’ (২৯-৩) প্রবন্ধটি মননশীল ও প্রাসঙ্গিক। প্রবন্ধকার উল্লেখ করেছেন, ইউএপিএ অর্থাৎ বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন প্রয়োগ করে জি এন সাইবাবা (ছবি) ও তাঁর সঙ্গীদের গ্রেফতার করা হয় ২০১৪ সালের মে মাসে। অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র নানান ধারা প্রয়োগ করে মহারাষ্ট্র সরকার। নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতের বিভিন্ন রায়ের শেষে পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য ২০২২ সালে সাইবাবা মুক্তি পেলেও, ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘মাওবাদী’ তকমা সেঁটে মহারাষ্ট্র সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে স্থগিতাদেশ আনতে সমর্থ হয়। মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত থাকা, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উস্কানি দেওয়া প্রভৃতি অপরাধে নিম্ন আদালত তাঁকে এবং সঙ্গীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
অধ্যাপক জি এন সাইবাবা গ্রেফতার হন ২০১৪ সালের মে মাসে। দীর্ঘ ১০ বছর পর এ বছর ৫ মার্চ বম্বে হাই কোর্টের নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতিরা তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দেন। মুক্তি পান তাঁর সঙ্গীরাও। যদিও ইতিমধ্যে জেলে মারা যান পাণ্ডু নারোতে। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়নি। মহারাষ্ট্র সরকার আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, বম্বে হাই কোর্টের রায় ‘অত্যন্ত সুচিন্তিত’। প্রশ্ন তোলে, অকারণে কেন সাইবাবাকে ১০ বছর কারাবাস করতে হল?
মনে পড়ছে, ঝাড়খণ্ডের অশীতিপর জেসুইট ফাদার স্ট্যান স্বামীকে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফাদার চিকিৎসা ও জামিনের জন্য বার বার আর্জি জানাতে জানাতে শেষ পর্যন্ত অন্ধকার কারাকক্ষেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর অপরাধ ছিল, তিনি আমৃত্যু জনজাতিদের জন্য লড়েছেন। অন্য দিকে তেলঙ্গানার অধ্যাপক, কবি, প্রতিবাদী মানবাধিকার কর্মী ভারাভারা রাওকে ২০১৮ সালে জামিন অযোগ্য বেআইনি কার্যকলাপের অপরাধে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগও আনা হয়। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর অসুস্থতা ও চিকিৎসার জন্য ২০২২ সালে মুক্তি দিলেও আজও তিনি গৃহবন্দি। এই সূত্রে স্মরণীয়, দিল্লির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক করণ সাঙ্গোয়ান অনলাইন টিউটোরিয়াল ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “শিক্ষিত মানুষজনকে ভোট দাও; অশিক্ষিত রাজনীতিকদের চাই না।” তাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। যে ভাবে অধ্যাপক, নাট্যকার, কবি-সাহিত্যিক, ধর্মযাজক, সাংবাদিক বা মানবাধিকার কর্মীদের উপর আইনের বিভিন্ন ধারা প্রয়োগ করে বছরের পর বছর জেলে বন্দি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলছে, সে বিষয়ে ক’টি সংগঠন বা রাজনৈতিক দল সরব?
সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪
তীব্র বৈষম্য
‘অসাম্যের শীর্ষে’ (সম্পাদকীয়, ২-৪) পড়ে ভাল লাগল। গত ১০০ বছরে এমন বৈষম্য দেখেনি দেশবাসী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সহযোগীরা যখন দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার, অর্থাৎ সাত ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির ধুয়ো তুলে খোয়াব দেখছেন এ বারের ভোটটা পার করার, ঠিক সেই সময়ে ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাব’-এর একটি মারাত্মক রিপোর্ট ফুটো করে দিয়েছে প্রচারের সেই ঢাউস ফানুস। জানা গিয়েছে, গত একশো বছরের মধ্যে মোদীর শাসনকালেই দেশের আর্থিক বৈষম্য সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। ভারতের মোট আয়ের ২২.৬ শতাংশ এবং মোট সম্পদের ৪০ শতাংশেরও বেশি জমা হয়েছে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষের হাতে। আর দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের কাছে পড়ে আছে দেশের মোট আয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ। এই ১ শতাংশের বাৎসরিক আয় গড়ে ৫৩ লক্ষ টাকা, যা বাকি ৯৯ শতাংশ ভারতবাসীর গড় আয়ের ২৩ গুণ। এই ১ শতাংশের মধ্যে প্রথম কয়েক জনের আয় আবার ঘণ্টায় কয়েকশো কোটি টাকা। রিপোর্টে আরও দেখিয়েছে, গত শতকের ৮০-র দশকের পর থেকে অসাম্য ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছিল ভারতে। অবশেষে ২০১৪-১৫ থেকে ২০২২-২৩ সময়কালে, অর্থাৎ কেন্দ্রে বিজেপি সরকারে আসার পর থেকে ধনী-গরিবের আর্থিক বৈষম্য চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। ভারতের মতো একটি রাষ্ট্রে অর্থব্যবস্থার নিজস্ব নিয়মেই ধনী-গরিবের আর্থিক বৈষম্য থাকার কথা। ফলে, ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পরেও স্বাধীন ভারতে আর্থিক বৈষম্য ঘোচেনি।
অতীতের কংগ্রেস সরকারের পথ ধরে হেঁটে বর্তমান বিজেপি সরকার আরও কয়েক ধাপ এগিয়েছে। এই সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে গোটা দেশের প্রায় সমস্ত সম্পদ হাতের মুঠোয় পুরেছে আদানি-অম্বানীদের মতো হাতেগোনা বৃহৎ পুঁজিপতি। তাই ক্রমাগত নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত হয়ে চলেছেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষ। এক ধনবাদী রাষ্ট্রের শোষণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিণতি এমনই। সেই সত্যই উঠে এসেছে ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাব’-এর সাম্প্রতিক এই রিপোর্টে। বর্তমানে অর্থনীতিবিদেরা যত উপদেশই দিন না কেন, সেগুলি সাময়িক টোটকা দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। একমাত্র পুঁজিবাদী শোষণমূলক সমাজের উচ্ছেদ ছাড়া কোনও দাওয়াই-ই টিকবে না। যে দলই ক্ষমতায় আসছে, তারা পুঁজিবাদের সেবা করতে গিয়ে নিজেরাই চরম দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং জনগণকে শোষণ করছে। সব দলই ভোটের আগে জনগণের ত্রাতা সাজে, গরিবের স্বার্থের কথা বলে, নানা গালভরা প্রতিশ্রুতি দেয়, কল্পতরু রূপ ধারণ করে। পরে এরাই ভোটে জিতে মসনদে বসে গরিবের বিরুদ্ধে একটার পর একটা নীতি গ্রহণ করে, আর ধনীদের সেবা করে।
বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া
তালাবন্ধ
দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে বাংলা জুড়ে একাধিক জায়গায় গণশৌচালয় তৈরির সুব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সরকারি অর্থে তৈরি ওই সমস্ত গণশৌচালয়ের অধিকাংশই সব সময় তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকছে। এমনকি যেগুলো চালু রয়েছে সেগুলোকেও ঠিক ভাবে প্রতি দিন পরিষ্কার করা, এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এর উদাহরণ জগদ্দলের ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল বা গোলাঘর হাসপাতালে ২০২১ সালে নির্মিত গণশৌচালয়টি। তৈরির পর থেকে তিন বছর হয়ে গেলেও বন্ধ হয়ে রয়েছে সেটি। অনেকেই বাধ্য হয়ে হাসপাতাল চত্বরের আশেপাশে, গাছের আড়ালে লুকিয়ে, জঙ্গলের ভিতর ঢুকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন। অথচ, ঝাঁ-চকচকে গণশৌচালয়টির আশেপাশে সম্প্রতি টাইলস বসিয়ে বাহার আরও বাড়ানো হয়েছে। পানীয় জলেরও সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি দেওয়ালে বসানো বোর্ডে বড় বড় হরফে জানানো হয়েছে— খোলার সময়: ভোর ৬টা হইতে রাত্রি ১০টা পর্যন্ত। মাঝে কেবলমাত্র দুপুর দেড়টা থেকে দুটো পর্যন্ত পরিষ্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বন্ধ রাখার কথা। নির্দেশিকা জারি করা সত্ত্বেও শৌচালয়টি কিন্তু সব সময়ই বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
সৌরভ সাঁতরা, জগদ্দল, উত্তর ২৪ পরগনা
পেরেক সমস্যা
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হোক কিংবা রাজনৈতিক দলের প্রচার, আজকাল অনেক জায়গাতেই বড় তোরণ করে প্রচার করা হয়। সমস্যা হল, তোরণগুলো খোলার পর প্রচুর ছোট পেরেক রাস্তায় পড়ে থাকে। পরে পথচলতি মানুষের পায়ে পেরেক ফুটে রক্তারক্তি হয়, গাড়ি, সাইকেলের টায়ার পাংচার হয়ে যায়। উদ্যোক্তাদের কাছে অনুরোধ, পেরেকগুলো যাতে রাস্তায় পড়ে না থাকে, সেটা নিশ্চিত করুন। দরকারে চুম্বক ব্যবহার করে এগুলি তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
সুদীপা রায় ঘোষ, সোনাচূড়া, পূর্ব মেদিনীপুর