‘নতুন কমিটি ঘিরে অসন্তোষ বিজেপিতে’ (২২-৬) শীর্ষক খবরের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘দলের শৃঙ্খলা না মেনে যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ জানাচ্ছেন, তাঁরা আদৌ বিজেপি মনোভাবাপন্ন কি না, সন্দেহ আছে!’ আমার কিন্তু তিলমাত্র সন্দেহ নেই যে, দিলীপবাবু যাঁদের নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তাঁরাই সাচ্চা বিজেপি সমর্থক। তাঁরা বহু বছর ধরে, যখন দলটির ভোট-প্রাপ্তির হার পাঁচ শতাংশও নয়, তখন বা তার আগে থেকেই দলটি করছেন বহু ত্যাগ স্বীকার করে। তাঁদের অধিকাংশই এখন ব্রাত্য। বিজেপি-র পালে হাওয়া দেখে এখন দলটির দিকে যাঁরা দ্রুত ছুটছেন, এত দিন তাঁরাই বিজেপি-বিরোধী ছিলেন। দলের দুর্দিন এলে, এঁরাই ছাড়বেন দল। কারণ, তাঁরা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এসেছেন।
সুভাষ চন্দ্র সরকার
কলকাতা-৩৫
হারাবে কে?
‘এখন ভোট হলে ফিরবে তৃণমূলই’ (১৭-৬) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে বলি— সারদা-নারদা কেলেঙ্কারি, ভাটপাড়া-কাণ্ড, কাটমানি, কেন্দ্রীয় দলের ঘন ঘন রাজ্য সফর, মমতা সরকারকে চাপে কিংবা অস্বস্তিকে রাখতে রাজভবনের অতি সক্রিয়তা— কোনও কৌশলেই রাজ্য সরকারকে ঢিট করা যাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের পর এক ঝক্কি সামলে দিচ্ছেন। তৃণমূলের এক ঝাঁক বিধায়ক ভাঙিয়ে আনার যে পরিকল্পনা বিজেপি করেছিল বলে শোনা যায়, তা-ও মাঠে মারা গিয়েছে। রাজ্য বিজেপি আজ পর্যন্ত এমন কোনও দলীয় মুখ হাজির করতে পারেনি, বাঙালি সমাজে যাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে। বাঙালি মনের গভীরে যে সাংস্কৃতিক চেতনা আজও বহমান, তাকে মান্যতা দিয়েই বিজেপি দলকে ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ভাবতে হবে। রাজনীতির এ অঙ্কে বিজেপি হেরে বসে আছে। অন্য দিকে বামেদের অবস্থা করুণ। মোদীভাই-দিদিভাই স্লোগান আউড়ে কি আর ভোটে জেতা যায়!
বিগত লোকসভার ভোটে ‘মোদী ফ্যাক্টর’ কাজ করেছিল, রাজ্যের ১৮টি আসন তাই বিজেপি-র ঝুলিতে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ইমেজকে কাজে লাগিয়ে কি আর বিধানসভার ভোটে জেতা যায়? বিধানসভার ভোটে আর একটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার গঠনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলে সে দল অনেক বিরুদ্ধ ভোট টেনে নেয়। ভোটার জনগণের মনের ভাবখানা হল— হেরে যাবে যে, তাকে ভোট দিয়ে কী লাভ! সরকার-বিরোধী হয়ে ভবিষ্যতের দিনগুলো কাটুক, এমন ভাবনা অনেক ভোটারের পছন্দ নয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, আগামী ভোটেও তৃণমূল দলের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
শিবাশিস দত্ত
কলকাতা-৮৪
মাফ নয়
‘টাকা ফেরত দিলেই মাফ হয় না অপরাধ’ (২৬-৬) শীর্ষক খবরের প্রেক্ষিতে বলি, সরকারি অর্থবণ্টনে প্রতারণা করলে দল থেকে বহিষ্কার বা পদত্যাগেই সাত খুন মাফ হয় না। আমপান কাণ্ডে ক্ষতি ছাড়াই যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁরা এখন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এসে বলছেন, ‘ভুল করে’ তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাওয়ায় তাঁরা সরকারকে তা ফেরত দিতে চান। জেলা প্রশাসন সেই টাকা নাকি ফিরিয়েও নিচ্ছে। কাজটা ভুল হচ্ছে। প্রথমত, ‘ভুল করে’ অন্যের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণত জেলা প্রশাসনের ঘাড়ে এসে পড়ছে। আর যাঁরা প্রতারণা করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, সরকারি টাকা চেকে বা নগদে ফেরানো যায় না। তার জন্য স্টেট ব্যাঙ্কের টিআর-৭ ফর্ম ফিল-আপ করে ব্যাঙ্কে জমা করতে হয়। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা প্রতারকদের এ ভাবে আড়াল না করলেই মঙ্গল।
মলয় মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-১১০
তবুও চুপ
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে কথার মূল্য বোঝার সুপরামর্শ দেন, তখন মনে পড়ে, কী ভাবে মোদী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চুপ করে থাকার জন্য কঠোর সমালোচনা করতেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘তবলার বোল মুখে বলা সহজ, হাতে তোলা শক্ত।’ নানা বিষয়ে নীরবতা রক্ষা করার জন্য মোদী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কম সমালোচনা করেননি! তিনি পাকিস্তান প্রসঙ্গে তাঁর চওড়া ছাতির কথাও বলেছিলেন। বস্তুত, মনমোহন সিংহের নীরবতাকে তাঁর সাহসহীনতার প্রতীক করে তুলেছিলেন মোদী। এখন দেখছি, সেই নীরবতাকেই মোদী তাঁর নিজের অস্ত্র করে নিয়েছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হলে তিনি নীরব। বহু মানুষের নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কায় তিনি নীরব। এখন যখন চিন ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, তখনও তিনি নীরব।
অভিজিৎ চক্রবর্তী
হাওড়া
নতুন শব্দ চাই
গালওয়ান উপত্যকার বিবাদে নিহত সৈনিকদের ‘শহিদ’ না বলে ‘নিহত’ বলায় অনেকেই মর্মাহত। কিন্তু শহিদ শব্দটির উৎস সন্ধান করলে দেখা যায়, যাঁরা ইসলামের জন্য প্রাণ দেন, তাঁদের শহিদ বলা হয়। যাঁরা ইসলামের জন্য লড়েছেন, কিন্তু প্রাণ দেননি, তাঁদের বলা হয় গাজি। যাঁরা ‘শহিদ’ শব্দটি ব্যবহৃত না হওয়ায় দুঃখ পেয়েছেন, তাঁদের কাছে আমার অনুরোধ— যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দেন, তাঁদের জন্য একটি নতুন শব্দ খুঁজে বার করুন।
বিদ্যুৎ সাধু
ডিহিকা, আসানসোল
অপমানজনক
‘৫ লাখ সাহায্য দুই সেনার পরিবারকে’ শীর্ষক খবরে (১৮-৬) জানা গেল, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন গালওয়ানে নিহত এই রাজ্যের দুই জওয়ানের পরিবারকে রাজ্য সরকার পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে। মন্দভাগ্য মা-বাবারা পুত্রহারা হয়েছেন। কোনও কিছুর বিনিময়ে এই ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করাটা অপমানজনক নয় কি? রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যদি এমন বিবৃতি দেওয়া হত যে, ওই দুই পরিবারের অপূরণীয় দুঃখে আমাদের আন্তরিক সমবেদনা ও অর্থ সহায়তায় পাঁচ লক্ষ টাকা করে দিয়ে তাঁদের আত্মত্যাগকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা হল, তা হলে ভাল লাগত।
প্রবীর চক্রবর্তী
জয়নগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
অন্যায় যুদ্ধ
রাত্রির অন্ধকারে ঝিলম নদী পেরিয়ে আলেকজ়ান্ডার পুরুর রাজ্যে অতর্কিতে আক্রমণ চালান। রাত্রিকালীন যুদ্ধবিরতি বিশ্রামের জন্য— এই নীতি লঙ্ঘন করেই হয়েছিল আক্রমণ। বখতিয়ার খিলজি হঠাৎ হানা দিয়েছিলেন লক্ষ্মণ সেনের রাজ্যে। মহাকাব্যেও এমন অন্যায় হত্যার উদাহরণ আছে। রামায়ণে রামের হাতে বালির মৃত্যু যুদ্ধের নিয়মে ন্যায়সঙ্গত ছিল না। মহাভারতেও অন্যায় যুদ্ধের দায় বর্তায় অর্জুন আর অশ্বত্থামার ওপর। অর্জুন হত্যা করেছিলেন নিরস্ত্র কর্ণকে, আর রাতের অন্ধকারে অশ্বত্থামা পাণ্ডব শিবিরে গিয়ে মেরেছিলেন একাধিক নিদ্রিত যোদ্ধাকে। অর্থাৎ, ইতিহাসের শিক্ষা হল, প্রতিপক্ষের নৈতিকতার ওপর ভরসা করলে চলবে না। প্রতিপক্ষের আক্রমণ কখন কী ভাবে ঘটবে, সে বিষয়ে আরও সতর্কতা জরুরি। প্রতিরোধ করাও তো সীমানারক্ষার একটা কৌশলগত দিক। যেখানে জায়গাটি অবস্থানগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ আর বিরোধ দীর্ঘ দিনের, সেখানে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতিতে ফাঁক থেকে যাবে কেন? ভুললে চলবে না, ‘প্রেম এবং যুদ্ধ কোনও ন্যায়-নীতির ধার ধারে না।’
রঘুনাথ প্রামাণিক
কালীনগর, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।