বিশ্বজিৎ রায়ের প্রবন্ধ (‘প্রতিহিংসার অস্ত্র ইতিহাস’, ২৪-৭) প্রসঙ্গে সামান্য সংযোজন। হিন্দুধর্মের মধ্যে তো অন্তর্ভুক্ত বৈষ্ণব, শাক্ত, তান্ত্রিক, ব্রাহ্ম, শৈব, নাথ। প্রত্যেকেই নিজস্বতা বজায় রেখে চলে। যদি ধরা যায় অশোকের কলিঙ্গ যুদ্ধকে, কারা মারা গিয়েছিলেন? নাগা সাধুরা কুম্ভমেলায় কাদের উপর তাণ্ডব চালিয়ে হাজারখানেক তীর্থযাত্রীকে মেরেছিলেন? শঙ্করাচার্য কত জন বৌদ্ধকে হত্যার জন্য দায়ী, হিসেব আছে তার? আর চৈতন্যদেবের পুরীতে অন্তর্ধানের ব্যাপারটা? শৈব বা নাথ সম্প্রদায়ের মধ্যেও কি বেশ মধুর সম্পর্ক ছিল? দেশের ধর্ম-সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট আলোচনায় একই ধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্বিরোধের বিষয়টা মাথায় রাখা দরকার।
ইতিহাসের নির্বাচিত কয়েকটি উপাদান বা ঘটনাকে এমন ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে— যেমন ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ, তাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সত্য আড়ালে চলে যাচ্ছে। যাঁরা এ দেশে রয়ে গেলেন, তাঁরা দেশটাকে ভালবেসেই থেকে গেলেন। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা সব নতুন করে দেখতে চাইছেন ইসলাম ধর্মের মানুষকে বাদ দিয়ে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের কথা বার বার ওঠে। কেউ ভুলেও তোলে না বর্ণহিন্দু জমিদারদের হাতে শূদ্র অন্ত্যজদের নিপীড়িত হওয়ার ইতিহাস। বর্তমান রাজনীতির দুরভিসন্ধিমূলক পাশা খেলায় সহজ, অনায়াস, অথচ গভীর সম্প্রীতির নমুনা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। মনে পড়ছে না হিজরি, ফুরফুরা, ঘুটিয়ারি, খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগা, বা হাড়োয়ার পির ফকিরের, আসান নগরের লালন মেলার সমন্বয়ী রূপের কথা? করোনায় মৃতের সৎকারে মুসলিম প্রতিবেশীর অকুতোভয় সক্রিয়তার দৃষ্টান্ত? পিরের দরগায় হিন্দুদের সিন্নি দানের মতো ধর্মনিরপেক্ষ, সমন্বয়ী ধারার অস্তিত্ব যেন ছিলই না।
রঘুনাথ প্রামাণিক, কালীনগর, হাওড়া
আক্রান্ত হিন্দুও
বিশ্বজিৎ রায় লিখেছেন, “সেই রাজনীতির সমর্থনে অতীত ভারতের যে ইতিহাসের ছবি সমানেই তুলে ধরা হচ্ছে, তাতে মুসলমানদের হাতে হিন্দুদের কচুকাটা হওয়ার ঘটনাকেই বড় করে দেখানো দস্তুর। উদ্দেশ্যটা আলোর মতো স্পষ্ট। যে মুসলমানরা এ ভাবে হিন্দুদের নিকেশ করেছিল, তাদের উত্তরসূরি ভারতীয় মুসলমানদের এ বার দেখে নেওয়া চাই।” জানতে ইচ্ছে করে, অতীতে মুসলমানদের হাতে হিন্দুদের কচুকাটা হওয়ার ঘটনা কি লেখক অস্বীকার করেন? হিন্দুদের উপর মুসলিমদের অত্যাচার, বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা নিয়ে লেখক একটি বাক্যও খরচ করেননি! মুসলমানরা যদি ভারতে যুগ যুগ ধরে অত্যাচারিত হয়ে থাকে, তবে তারা এ দেশে ৯০০ বছর রাজত্ব করল কী ভাবে? মোগল আমলে ভারতে প্রায় ১৬,০০০ মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। ঔরঙ্গজেব হিন্দুবিরোধী না হলে তাঁর আমলে হিন্দুরা অত্যাচারিত, লুণ্ঠিত ও ধর্মান্তরিত কেন হয়েছিল? মুসলমানরা এ দেশে দীর্ঘ কাল শক্তিশালী এবং বিত্তবান শাসক ছিল, আর হিন্দুরা গরিব ও দুর্বল প্রজা। দুর্বলের পক্ষে কখনও শাসককে অত্যাচার করা সম্ভব কি?
মোগলরা এ দেশে এসে তরবারি দিয়ে শাসন ক্ষমতা দখল করেছে ও এ দেশে বসবাস করেছে। তবে, চেঙ্গিস, তৈমুর ও নাদির শাহ ভারত তথা হিন্দুদের কত অত্যাচার ও লুণ্ঠন করেছে, সে ইতিহাস সবারই জানা। লেখকের একটি বক্তব্যের সঙ্গে এক মত— “হানাহানির পুরনো ছবিকে তুলে ধরে হিন্দু-মুসলমান হানাহানির একেলে পথ যাঁরা প্রস্তুত করতে চান, তাঁদের প্রতিহত করাই আশু প্রয়োজন।” দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, অসাম্প্রদায়িক মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলি সেই চেষ্টাই করে চলেছে। তার উৎকৃষ্ট নমুনা, রাজ্যে সদ্য-সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের ফল। বিজেপির সাম্প্রদায়িক তথা মুসলমান-বিদ্বেষী রাজনৈতিক আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করে বাংলার মানুষ সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে সমর্থন করেছে। এই বিষয়টি লেখক এড়িয়ে গিয়েছেন!
কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
দূরের গ্রহ?
আশির দশকের গোড়ার দিকে সেন্ট ক্যাথরিনস কলেজের ফেলো সুগত বসু যে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথার যোগ্য আলোচক হবেন, সন্দেহ নেই (‘সূর্যাস্তের আলোয়, ছেড়ে আসা তীর-ভূমি’, পুস্তক পরিচয়, ১০-৭)। কিন্তু বিনীত জিজ্ঞাসা, একটি গ্রন্থ-আলোচনা কাদের কথা ভেবে প্রকাশ করা হয়? এখনও বাংলাভাষী যে গুটিকয় মানুষ ইংরেজি পড়ে বুঝতে পারেন, তাঁদের কথাই মাথায় থাকে কি? অমর্ত্য সেন যে বিরাট জ্ঞানবিশ্বের অগ্রনায়ক, আনন্দবাজার-এর পাঠক-গোষ্ঠীতে সেই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ক’জন? তাঁরা অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, এমআইটির জ্ঞানবিশ্বের খবর জানার জন্য অমর্ত্যর জীবনী পড়বেন, না কি বিলুপ্তপ্রায় ভদ্র-শিক্ষিত বাঙালি শ্রেণির প্রতীক হিসেবে অমর্ত্যর জীবনী পড়বেন? কলকাতা, যাদবপুর, শান্তিনিকেতনে যে ইংরেজি-শিক্ষিত বাঙালিরা গত দু’শো বছর ধরে বিশ্বজ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার ধারাটি বয়ে চলেছেন, যা বঙ্কিমচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথ থেকে সত্যজিৎ হয়ে চিন্ময় গুহ, সুকান্ত চৌধুরীর মধ্যেও বয়ে চলেছে, তাঁদেরই এক জন অমর্ত্য সেন। বাংলা ভাষায় তাঁর স্মৃতিকথার আলোচনা কি সেই নিরিখে অধিক বিবেচিত হতে পারে না পাঠকের কাছে?
অমর্ত্যের স্মৃতিকথা কেন শিক্ষিত বাঙালির কাছে পাঠ্য, সেটিই তো হতে পারত এমন আলোচনার সূচিমুখ। পাঠকদের কাছে অমর্ত্য কি নিজেদের কেউ, না কি যে জীবনের কল্পনা পাঠক করতে পারেন না, সেই দূরের গ্রহ? আর সমালোচক সে গ্রহের আলোর আভাস পৌঁছে দিচ্ছেন পাঠকের কাছে? অক্স-ব্রিজ-এমআইটির ঝলমলে আলোর কথা ছেড়েই দেওয়া যাক, কলকাতা, যাদবপুর, শান্তিনিকেতনের স্তিমিত আলোও যেখানে পৌঁছয় না, জ্ঞানচর্চার নিরিখে তেমন নিষ্প্রদীপ গ্রাম-মফস্সলই তো আজও পশ্চিমবঙ্গের বিষণ্ণ বাস্তব। সেখানে সমাজবিজ্ঞানের কোনও আগ্রহী পাঠক, যে এই বইটি কেনার আগ্রহ রাখে, কিন্তু কিনে উঠতে পারবে না, তাঁকে অমর্ত্যর মতো দার্শনিকের স্মৃতিকথার অন্তর্নিহিত দর্শনটি কোনও ভাবে কি ধরিয়ে দেওয়া যেত না? ইতিহাসের ছাত্ররা কি আলোচনাটুকু থেকে হদিস পেতে পারত না, ব্রিটিশ শাসনের কী সুগভীর বিশ্লেষণ অমর্ত্য করলেন? অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথার আলোচনা করছেন সুগত বসু— বাতিল হয়ে যেতে যেতেও সাধারণ পাঠকের আশা একটু বেশি হয় বই কি!
শ্রুত্যানন্দ ডাকুয়া, হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
বৈধ পার্কিং
স্থলবন্দর পেট্রাপোল নিয়ে রিয়া সিংহের প্রবন্ধে (‘নজর নেই স্থলবাণিজ্যে’, ২৭-৭) বনগাঁ পুরসভা সম্পর্কে অসত্য তথ্য পেশ করা হয়েছে। সরকার-অনুমোদিত পুরসভার গাড়ি পার্কিংকে তিনি ‘সিন্ডিকেট’ আখ্যা দিয়েছেন। কালীতলার পুরসভা পার্কিং থেকে বর্ডারের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার, অথচ তিনি লিখেছেন কুড়ি কিলোমিটার। কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক পুলিশ ও পুরসভা পার্কিং পরিচালনা করে, এবং যৌথ ভাবে সিরিয়ালের ভিত্তিতে গাড়ি ছাড়া হয়। হাজার হাজার গাড়ি এর সুবিধে নেয়। অসাধু পরিবহণ ব্যবসায়ীদের পুরসভা এলাকায় কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
গোপাল শেঠ, প্রশাসক, বনগাঁ পুরসভা
স্বাস্থ্যসাথীর সীমা
শম্পা সেনগুপ্তের ‘বিমাহীন মনোরোগী’ (২-৮) চিঠিটির সঙ্গে একমত। প্রসঙ্গত জানাই, আমার পরিবারও এমন এক ঘটনার শিকার। দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়সাপেক্ষ এক অসুস্থতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা স্বাস্থ্যসাথীর সুবাদে এক কপর্দকও সাহায্য পাইনি। যদি স্বাস্থ্যসাথীর এই ধরনের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থেকে থাকে, তবে এ রকম বিমাপত্র থেকে লাভ কী?
সুগত মিত্র, কলকাতা-৮৯