Hilsa

সম্পাদক সমীপেষু: কেন নেই সেই স্বাদ 

ছোট ট্রলারের ভীষণ রাগ বড় ট্রলারের উপর। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছের ঝাঁক খুঁজে মাছ ধরে বড় ট্রলারগুলো।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৩৬
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

দাঁড়িয়েছিলাম ফ্রেজ়ারগঞ্জ মৎস্য বন্দরে, বেনফিশের জেটিতে। শ্রাবণে ইলিশের ভরা মরসুম। হুগলি নদীর খাঁড়ি দিয়ে একের পর এক ট্রলার ঢুকছে। মাছ নামছে। তবে বড় মাছ ক‌ই, সব‌ই তো খোকা ইলিশ। চোখের সামনে দেখছি ট্রলারের পেট থেকে বার করে পেটি পেটি মাছ ঢালা হচ্ছে। প্রায় সব‌ই ইলিশ, দেড়শো থেকে দু’শো গ্রাম বড়জোর। জেটি থেকেই বাছাই হয়ে বরফ চাপা হয়ে ট্রাকে করে চলে যাবে ডায়মন্ড হারবার মাছের আড়তে। সেখান থেকে কলকাতার বড় বড় মাছ বাজার হয়ে শহরের অলিতে গলিতে।

Advertisement

প্রশ্ন করেছিলাম, “এত ছোট ছোট মাছ ধরেন কেন?” উত্তর এসেছিল, “না ধরলে খাব কী?” সপাট জবাবে থমকেই গিয়েছিলাম। আইন আছে অবশ্য কিছু— ৯০ সেন্টিমিটারের ছোট ফাঁসজাল ব্যবহার করা যাবে না। ৩৫০ গ্রামের কম ওজনের ‌ইলিশ ধরা যাবে না। ধরলেও বিক্রি করে পাওয়া অর্থের অর্ধেক সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে। পড়শি বাংলাদেশে কিন্তু আইন ভাঙলে জেল হয়। তবে এখানে? গুটখা খাওয়া লালচে দাঁতে একমুখ হেসে এক মাছ ব্যবসায়ী জানালেন, পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ‘সেটিং’ হয়ে যায়।

ছোট ট্রলারের ভীষণ রাগ বড় ট্রলারের উপর। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছের ঝাঁক খুঁজে মাছ ধরে বড় ট্রলারগুলো। ফলে নদীর মুখে মাছ পায় না ছোট ট্রলার।

Advertisement

একটা মাঝারি ট্রলারের এক সপ্তাহে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার তেল লাগে। সুতরাং লোক-লস্কর, মজুরি, মেরামতি ধরে ২ লক্ষ টাকার কম মাছ ধরলে পুরো লোকসান। কপালজোরে দিন দুই-তিনেক মাছ পাওয়া গেলে ভাল, ন‌ইলে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরের সমুদ্রে জল কামড়ে পড়ে থাকেন ওঁরা, যদি মাছ মেলে। ফিরতেও তো তেল পুড়বে, বাড়বে লোকসানের বহর। পূর্ব মেদিনীপুর আর দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রায় হাজার দশেকের বেশি ট্রলার আছে। কয়েক বছর আগেও সংখ্যাটা চোদ্দো হাজার মতো ছিল। সাগরে এর মধ্যে জল বয়েছে অনেক। সাগর কৃপণ হয়েছে। যুদ্ধক্লান্ত প্রচুর ট্রলার চিরস্থায়ী বসে গিয়েছে চড়ার কাদামাটিতে।

সাগরে-ধরা ইলিশে স্বাদ হয় না, ওঁরাই স্বীকার করলেন। কী করে চিনতে হবে সাগরে ধরা আর নদীতে ধরা ইলিশ, তা-ও চিনিয়ে দিলেন। সাগরের মাছে গায়ে লাল লাল দাগ, নদীর মাছ রুপোলি ফরসা। সাগরের মাছে উপর থেকে দেখলে ঘাড় সরু। নদীর মাছে ঘাড় মোটা। তবে ইলিশ-পাগল জনতার অত বোঝার সময় কোথায়? তাই জেলেরা হন্যে হয়ে সাগরে ফাঁস-জাল ফেলেন।

সুমন মজুমদার, কলকাতা-৪০

ফিরুক মহিমা

পুবালি হাওয়া আর ঝিরঝিরে বৃষ্টির দৌলতে বেশ কয়েক বছর বাদে বাজারে ইলিশের যথেষ্ট আমদানি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু ছোট, বড় বা মাঝারি, সাইজ় যা-ই হোক না কেন, ইলিশের সেই স্বাদ বা গন্ধ অনুপস্থিত। খালবিলের খলসে, পুঁটি, মৌরলা বা বেলে মাছ বর্তমানে লুপ্তপ্রায়। ইলিশও যদি তার স্বাদ-গন্ধ হারায়, তা হলে শুধুমাত্র রসনা তৃপ্তির ঘাটতি নয়, মৎস্যজীবীরাও এক সময়ে চাহিদার অভাবে সমস্যায় পড়বেন। ইলিশকে কেন্দ্র করে বিরাট এক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড ধাক্কা খাবে। জলের এই রুপোলি শস্যটিকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে মৎস্যবিজ্ঞানীদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭

নদীর ইলিশ

ঝমঝমে বৃষ্টির সঙ্গে পাতে খিচুড়ি আর ইলিশ, ঠিক যেন অমৃত। কিন্তু সেই ইলিশ-বিলাসে এ বার মন ভরছে না। কারণ, ইলিশ তার পুরনো স্বাদ হারাচ্ছে। কেন? সে বিষয়ে নানা রকম মত মিলছে। একটি মতে, ইলিশ মাছ যখন নোনা জল থেকে মিষ্টি জলে আসে, তখন তার শরীরে অনেক ধরনের বদল হয়। সমুদ্রে থাকার সময়ে ইলিশের শরীরে থাকে আয়োডিন-সহ অন্য বহু উপাদান। মিষ্টি জলে ঢোকার পরেই, মাছ সেগুলো শরীর থেকে বার করে দিতে শুরু করে। এর পরে শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্তমানে নদীর চাইতে সমুদ্র থেকে বেশি ইলিশ ধরা হয়। ফলে মাছের স্বাদ ভাল হয় না। মাছকে নদীতে অন্তত ৩০-৪০ কিলোমিটার ঢুকতে দিতে হবে। তবেই ইলিশ আগের স্বাদ কিছুটা ফিরে পাবে। নদীতে ঢোকার পরে নদীর উজানে মানে স্রোতের বিপরীতে যখন চলে, সে সময় এদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জমা হয়। এই তেলের জন্যই ইলিশের স্বাদ হয়।

আর একটি মতে, ইলিশের স্বাদ কমার পিছনে বিশ্ব উষ্ণায়ন অন্যতম কারণ। উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্র ও নদীর জলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালে জলের যে তাপমাত্রা থাকার কথা, তার থেকে অনেক বেশি থাকছে। ইলিশ-সহ সব মাছের জীবনচক্রে তার প্রভাব পড়ছে। কমছে স্বাদ।

প্রশ্ন জাগে, সমুদ্র বা গঙ্গার ইলিশের চেয়ে পদ্মার ইলিশের স্বাদ বেশি হয় কেন? আসলে মা ইলিশ যখন ডিম দেওয়ার জন্য সমুদ্র থেকে নদী অভিমুখে যাত্রা করে, তখন খাওয়া বন্ধ রাখে। এ সময় শরীরে সঞ্চিত ফ্যাট ভেঙে সুস্বাদু ফ্যাটি অ্যাসিড জাতীয় তেলে পরিণত হয়। তাই যে ইলিশ মাছ সমুদ্র থেকে যত দূরে পাওয়া যায় তার তেল তত বেশি এবং তত সুস্বাদু। পদ্মা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদী, সমুদ্র থেকে সবচেয়ে দূরে। সে কারণে পদ্মার ইলিশ সবচেয়ে সুস্বাদু। আবার অনেকে মনে করেন, পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকায় জলের প্রবাহের ধরন কিছুটা আলাদা, যার ফলে ইলিশের স্বাদেও পার্থক্য থাকে।

পরিশেষে, ইলিশ মাছের ডিমের সঙ্গে স্বাদের একটি সম্পর্ক আছে। ডিম আসার সঙ্গে সঙ্গে মাছের শরীর তেলে ভরে যায়। ওটাই স্বাদের উৎস। ডিম পাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে সব পুষ্টি ডিমে সঞ্চিত হয়, মাছের স্বাদ কমে যায়। তাই ডিম পাড়ার পর পরই ইলিশের স্বাদের ঘাটতি দেখা যায়। ইলিশ কিনতে হলে ডিম আসি-আসি করছে, সবে ডিম তৈরি হয়েছে, এমন ইলিশ কিনতে হবে। সেই মাছের স্বাদ অবর্ণনীয়। ও রকম একটি ইলিশ মাছ কুটে জলে ধুয়ে রাখতে গেলে হাত ইলিশের তেলে চকচকে ও পিচ্ছিল হয়ে যাবে।

কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

দামি কেন?

সুমন বল্লভের তোলা ছবিতে মানিকতলা বাজার ইলিশমাছের বিকিকিনি (১৭-৭) দেখে খুব ভাল লাগল। সঙ্গে চন্দন বিশ্বাসের প্রতিবেদনটি (‘বাদলা দিনে ইলিশের দর্শন বাজারে, দাম নিয়ে আক্ষেপ’) খুবই যুক্তিপূর্ণ। বাজার ইলিশে ছয়লাপ, দাম কিন্তু আগুন। বড়লোক মনের সুখে ইলিশ কিনলেও, মধ্যবিত্ত ও গরিব প্রহর গুনছে, কবে ইলিশ আর একটু সস্তা হবে। দামটা যদি সাধ্যের মধ্যে থাকত, তা হলে বাঙালি ইলিশ-ভাতে কব্জি ডুবিয়ে খেতে পারত। ইলিশের জোগান থাকলেও দাম শুনে চমকে উঠতে হবে কেন? সব জিনিসেরই দাম এখন চড়া, কিন্তু যখন ইলিশ আসছে শয়ে শয়ে, সেখানে এত দাম হলে খাবে কী করে সাধারণ মানুষ?

গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১

পথের খাবার

সাধারণ মানুষের রসনা তৃপ্তিকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পথ-খাবারের ভূমিকা অপরিসীম। যে দামে তাঁরা খাবার বিক্রি করেন, তাতে অবাক হতে হয়। ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে চাকরিজীবীদের আদর্শ খাদ্য কেন্দ্র হিসাবে পথ-খাবার ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং আগামী দিনে এর জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে। বেশ কয়েক বছর আগে রাস্তার ধারে পথ-খাবার বিক্রেতাদের যে সংখ্যা ছিল, বর্তমানে তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। কর্মসংস্থানের অভাব শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীকেও পথ-খাবারের বিক্রেতা হতে বাধ্য করেছে। এই বাধ্যবাধকতাকে সামনে রেখে যে কোনও রেস্তোরাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তাঁরা প্রস্তুত।

কুন্তল চক্রবর্তী, খয়রামারি, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement