Rally

সম্পাদক সমীপেষু: মিছিলের সেই মুখ

প্রকৃতপক্ষে, শহুরে নেতারা আজ কর্পোরেট সংস্কৃতির জালে জড়িয়ে গিয়ে মিছিলের সেই স্বপ্নগুলোকে ক্রমাগত জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৭
Share:

অমরেন্দ্র নাথ ধর তাঁর চিঠিতে (‘মিছিল, আজও’, ১৫-১২) রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের ‘মিছিলের শব্দ শুনি না, হারিয়েছে প্রতিবাদী সমাজ’ (৫-১২) প্রবন্ধের বক্তব্যে বলেছেন, “এই শহরে আজও, প্রায় প্রতি দিনই কোনও না কোনও সময় বামপন্থীরা কোনও না কোনও বিষয় নিয়ে মিছিল করেন, করে চলেছেন। অথচ, অবাক হলাম রুদ্রবাবুর চোখে কোনও মিছিল ধরা পড়ে না, মিছিলের শব্দ তাঁর কানে যায় না।” প্রায় সাড়ে সাত দশক আগে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মিছিলের মুখ’ কবিতাটি এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য— “আজও দুবেলা পথে ঘুরি/ ভিড় দেখলে দাঁড়াই/যদি কোথাও খুঁজে পাই মিছিলের সেই মুখ।” আর এখন প্রাবন্ধিকের কলমে সমাজের বাস্তব ছবিটা যে ভাবে তাঁর মর্মবেদনা হয়ে ধরা পড়েছে, সেই স্পন্দন পত্রলেখক সম্ভবত ধরতে পারেননি!

Advertisement

এটা সত্য যে, কলকাতা এক সময় মিছিলনগরী আখ্যা পেয়েছিল বামপন্থীদেরই সৌজন্যে। সে কারণেই হয়তো ‘মিছিলের মুখ’ কবিতায় সমুদ্রের একটি স্বপ্ন খুঁজেছিলেন কবি। এখন প্রায় প্রতি দিন যে মিছিল আমাদের চোখে পড়ে, তা আসলে শৌখিন মজদুরিমাত্র। কখনও বা মিছিলের শেষে ভাষণের জন্য ‘আমন্ত্রিত বিশেষ বক্তা’ হিসাবে নাম দেখা যায় কোনও পিএইচ ডি নেতা-নেত্রীর। পল্লি, গ্রামগঞ্জের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রান্তিক মানুষগুলো কেমন করে বেঁচে আছেন; অসুখবিসুখে অশেষ যন্ত্রণা সয়েও কেমন করে তাঁরা নিজেকে সারিয়ে তোলেন; কিংবা তাঁরা কী খান কী পরেন, কেমন ঘরে বসবাসে অভ্যস্ত— সে-সব কিছুর কি খবর রাখেন ওই বক্তারা?

প্রকৃতপক্ষে, শহুরে নেতারা আজ কর্পোরেট সংস্কৃতির জালে জড়িয়ে গিয়ে মিছিলের সেই স্বপ্নগুলোকে ক্রমাগত জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছেন। তাঁদের লক্ষ্য যে একটাই— ক্ষমতা পুনরুদ্ধার। আর সেই কাজ করতে গিয়ে বামপন্থী দলগুলো (মূলত সিপিএম) কার্যত সেফটিপিনে রূপান্তরিত হয়ে বসে আছে। অর্থাৎ, তাদের কাজ এখন দক্ষিণপন্থী দলের ছেঁড়াফাটা জামাপ্যান্ট খামচে ধরার ব্যর্থ প্রয়াস। স্বভাবতই এই কারণে বামেদের মিছিল আজ প্রকৃত বামমনস্ক মানুষগুলোকেও সামান্যতম উজ্জীবিত করে না। এবং তার ফলস্বরূপ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘটে এক নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ, রাজ্যের সব ক’টি নির্বাচনেই যেটা প্রতিফলিত হচ্ছে।

Advertisement

শক্তিশঙ্কর সামন্ত

ধাড়সা, হাওড়া

ঝাঁঝহীন

নাট্যকার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দুই সংবেদনশীল সহ-নাগরিকের বক্তব্য পড়লাম (সম্পাদক সমীপেষু, ১৫-১২)। আলোচনার প্রেক্ষাপট কলকাতা পুর নির্বাচন। কলকাতাকে বলা হত ‘মিছিল নগরী’— প্রতিবাদের পীঠস্থান। গলি থেকে রাজপথ, স্লোগানের সমস্বরের ধ্বনির উত্তাল কলরব, এ সবই কলকাতার সচল হৃৎস্পন্দনের প্রতীক ছিল। ‘চলছে না চলবে না’, ‘হাত ওঠাও’ ‘নইলে গদি ছাড়তে হবে’ ক্ষোভ প্রকাশের নিজস্ব ছন্দের স্বরক্ষেপণ এখনও মাঝে মাঝে শোনা যায় বটে, তাতে সেই ঝাঁঝ-উত্তাপে কিছু খামতি আছে বইকি! নীরব প্রতিবাদের হাতিয়ার ছিল বন‌্‌ধ, হরতাল। এ-ও কলকাতার নিজস্ব ঘরানার স্মারক। প্রতিবাদী কলকাতা এখন যুগোপযোগী হয়ে মোমবাতি নিয়ে নীরব মিছিল করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সংস্করণ হোক কলরব, রাস্তায় না বেরিয়ে কোনও একটি পরিসরে জমায়েত ইত্যাদি। বহুতলে ছয়লাপ কলকাতার বাসিন্দাদের গায়ে এর আঁচ কতটা লাগে, সময় বলবে।

অঞ্জন কুমার শেঠ

কলকাতা-১৩৬

শুধুই মোদী?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাশীতে নবনির্মিত বিশ্বনাথ মন্দিরের পুজোপাঠ, গঙ্গায় স্নান প্রভৃতি ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক মহল থেকে নানা কটাক্ষ করা হয়েছে (‘কাশীতে ডুব ভোট গঙ্গায়’, ১৪-১২)। বলা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশে ভোটের দিকে তাকিয়ে এ সব করা হয়েছে। প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যদি নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর ধর্মীয় রীতি পালন করেন, তাতে এত শোরগোল কেন? প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ধর্মীয় আচার পালনে তাঁকে কটাক্ষ করা হবে কেন, যেখানে দেশের সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম পালনের অধিকার স্বীকৃত? এটা নাগরিকের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ নয় কি?

এ দেশের সব রাজনৈতিক দলকেই দেখা যায় (বামপন্থীরা বাদে) হিন্দু ভোট পেতে ভোটের আগে নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিতে। হালে পানি না পেয়ে অনেকে নিজেকে ব্রাহ্মণ পরিবারের হিন্দু বলে দাবি করেন। রাজনৈতিক মঞ্চে চণ্ডীপাঠ, গীতা পাঠ করতে দেখা যায়। আবার তাঁরাই মুসলিম ভোট পেতে মসজিদে যান। কেউ পড়েন হনুমান চালিশা। কেউ মাচান বাবার পা মাথায় নেন। ধর্মীয় বিশ্বাসে মলম বুলিয়ে ভোট চাওয়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই অঙ্গ। শুধু প্রধানমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুললে সত্যের অপলাপ হয় না কি?

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল

কোন্নগর, হুগলি

কঠিন প্রশ্ন

অকস্মাৎ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দেশের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, তাঁর স্ত্রী ও ১৩ জন উচ্চপদস্থ সেনার মৃত্যুর খবরে দেশবাসী শোকস্তব্ধ। দুঃখের বিষয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী এই কঠিন সময়ে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে চরম উদাসীনতার নিদর্শন রেখে গঙ্গাবক্ষে বা মন্দির ভ্রমণে সময় অতিবাহিত করছেন। এক দিকে করোনার মতো অতিমারির প্রভাব, অর্থনৈতিক কারণে সাধারণ মানুষের চরম দুরবস্থা, অন্য দিকে দেশের প্রতিরক্ষার সর্বোচ্চ পদের দুঃখজনক পরিণতি— কোনও কিছুই আমাদের প্রচারপ্রেমী প্রধানমন্ত্রীকে ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট টানা থেকে বিরত করতে পারেনি। এই সঙ্কটকাল তাই দেশবাসীর কাছে এক কঠিন প্রশ্ন তুলেছে— দেশ আগে না ধর্ম আগে?

সুমিত সাহা

কলকাতা-৩১

মানবিক পুলিশ

পুলিশের দুর্ব্যবহার ও দুর্নীতির খবর সংবাদে প্রায়ই আসে, কিন্তু তাঁদের মানবিক ব্যবহারের উদাহরণও কি নেই? ‘ফোনের সূত্র ধরে দু’বোনকে পড়াশোনায় ফেরাল পুলিশ’ (১৫-১২) শীর্ষক সংবাদটি তেমনই দেখাল। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ে অভিযোগ জানাতে যান থানায়। পুলিশের কাজ হল সেই সমস্যার সুরাহা করা। সুভাষগ্রামের এক কলেজছাত্রীর মোবাইল ছিনতাই হলে তিনি সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিছু দিন পর পুলিশ সেই মোবাইল উদ্ধার করে মেয়েটির হাতে তুলে দেয়। কিন্তু এখানেই সব শেষ হয়ে যায়নি। মোবাইল হাতে পেয়ে মেয়েটি হাউহাউ করে কেঁদে ওঠেন। পুলিশ জানতে পারে, অতিমারিতে মেয়েটির বাবার কাজ চলে যাওয়ায় একটি আবাসনে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে এই মোবাইলে তিনি ও তাঁর বোন অনলাইনে ক্লাস করতেন। মোবাইল চুরি যাওয়ায় তাঁরা পড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তখন সোনারপুর থানার আধিকারিকরা মেয়েটির ও তাঁর বোনের পড়াশোনার সমস্ত খরচের দায়িত্ব নেন।

এটি অত্যন্ত মানবিক একটি উদ্যোগ। এই অতিমারিতে বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রী পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এমতাবস্থায় এই প্রতিভাদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর এই কাজে শিক্ষক, অধ্যাপক, আধিকারিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, পুলিশ— সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও এই বিষয়ে উদ্যোগ করতে হবে। গত ১৬ নভেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুললে দেখা যাচ্ছে বহু শিক্ষার্থী পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এদের খুঁজে বার করে যতটা সম্ভব এদের সমস্যার সমাধান করে শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনাটাই হবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। না হলে অনেক কুঁড়ি ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে যাবে।

ভাস্কর পাল

কলকাতা-১১৩

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement