Paintings

সম্পাদক সমীপেষু: শিল্পী মনের মৃত্যু

ঘরে ঘরে প্রতি দিন এমন ঘটনাই ঘটে চলেছে। আমরা অধিকাংশ বাবা-মা ছকে বাঁধা বাজারচলতি বইয়ের পাতায় রং লাগানোটাকেই ছবি আঁকা শেখার প্রাথমিক শিক্ষা বলে মনে করি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

শুভব্রত নন্দীর ‘আকাশের রং সবুজ’ (২৩-১১) লেখাটির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। যে কোনও সৃজনশীল কাজ করতে দরকার একটি সৃষ্টিশীল মন। চার পাশের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করতে করতেই শিশুমন ধীরে ধীরে পরিণত হয়। ছোটরা যত বেশি দেখে, তত বেশি শেখে। ওদের কৌতূহলী মনে নানা প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করে। তা থেকে যে সকল ভাবনা ডালপালা বিস্তার করে, তা একান্তই তার ব্যক্তিগত উপলব্ধি সঞ্জাত। সেখানে অপরের খবরদারি নিষেধ। পেনসিল বা তুলি দিয়ে সে ছবিতে যে রং লাগায়, তা নিজের পছন্দের রং। মনের ক্যানভাসে আঁকা কল্পনার রং। বিচিত্র সে সব রং কোনও ব্যাকরণ মানে না। “আর এখানেই ঘটে বিপত্তি: মনের আনন্দে আকাশের গায়ে সবুজ আর গাছের পাতায় নীল রং বোলানো শিশুটির উপর রে-রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ি আমরা।” আর তখনই শিশুটি বড়দের ইচ্ছে অনুযায়ী ছবি আঁকার কথা ভাবতে শুরু করে। অপমৃত্যু ঘটে ছোটদের শিল্পীমনের।

Advertisement

ঘরে ঘরে প্রতি দিন এমন ঘটনাই ঘটে চলেছে। আমরা অধিকাংশ বাবা-মা ছকে বাঁধা বাজারচলতি বইয়ের পাতায় রং লাগানোটাকেই ছবি আঁকা শেখার প্রাথমিক শিক্ষা বলে মনে করি। বইমেলা থেকে গুচ্ছের আঁকার বই কিনে অভিভাবকেরা বাড়ি ফেরেন। সন্তানকে তাতে রং বোলাতে শিখিয়ে দিয়েই আমরা তৃপ্তি পাই। ছোটরাও রং করার নতুন বই পেয়ে মনের আনন্দে তাতেই রং লাগায়। পাশের রং করা ছবি দেখে দেখে ফাঁকা জায়গায় রং করায় পটু হয়ে ওঠে সে। বাবা-মায়েরা বেশি খুশি হন, আর্ট টিচারের শেখানো পথে এগিয়ে গিয়ে ছবি আঁকতে পারলে। আমরা আরও বেশি খুশি হই পাড়ার ‘বসে আঁকো প্রতিযোগিতা’য় নিজের সন্তানটি একটি পুরস্কার হাতে করে বাড়ি ফিরলে। যদিও ‘বসে আঁকো প্রতিযোগিতা’য় যোগদানকারীরা শেষ পর্যন্ত কত জন শিল্পী হিসাবে নিজেকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারল, সেই খোঁজ আমরা কখনও রাখিনি, রাখবও না।

শিশুরা যত বেশি প্রকৃতিকে দেখবে, তত সে কল্পনার জগতে বিচরণ করার সুযোগ পাবে। ছোটরা গাছপালা, ফুল-ফল, পশু-পাখি, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, বাজারহাট, মেলা, যানবাহন ইত্যাদি দেখতে দেখতে বই ছাড়াই বহু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে শিখে যায়। আর তা থেকেই শিশুমনের গভীরে ছবি আঁকা চলে। শিশু যে অঞ্চলে বসবাস করছে, তাকে অন্তত সেটুকুই দেখার সুযোগ করে দেওয়া দরকার। ছকে বাঁধা গণ্ডিবদ্ধ জীবনে মনের বিকাশ কতটুকু হয়? অথচ আজকের শিশুরা সেই গণ্ডিবদ্ধ জীবনের মধ্যেই বড় হচ্ছে। লেখক ঠিকই বলেছেন যে, শিশুর কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটার আগেই তার মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রকরণের বোঝা।

Advertisement

পরিশেষে বলব, শিশুদের ভাবতে শেখার আগেই আঁকতে শেখানোর উদ্যোগ আদৌ কোনও দিন বন্ধ হবে কি না, জানি না। তবে ছোটদের ছবি আঁকার বিষয়টিকে আমরা বেশির ভাগ মানুষ যে এখনও তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করি না, সেটা প্রমাণিত সত্য। তাই ‘বসে আঁকো প্রতিযোগিতা’র ট্র্যাডিশন যেমন চলছে, চলবে। আমরা অভিভাবকেরা নিজের নিজের সন্তানকে সেই প্রতিযোগিতায় যোগদান করিয়েই তৃপ্তি পেতে আগ্রহী। এই পাওয়াটুকুর মধ্যে যে গগনচুম্বী ফাঁক ও ফাঁকি থেকে যাচ্ছে, তা ছোটরা না বুঝুক, বড়রাও কেন বুঝতে পারছি না?

রতন রায়চৌধুরী, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

চিন্তার পাখা

শুভব্রত নন্দীর প্রবন্ধটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। শিশুদের কল্পনার জগতের বিস্তার বিশাল, কিন্তু প্রথাগত শিক্ষা তার কল্পনার জগৎকে সীমাবদ্ধ করে দিতে চায়। শিশুটি যখনই স্কুলে যেতে শুরু করে (এখনকার দিনে শিশুরা দু’-আড়াই বছর বয়স থেকেই স্কুলে যায়) নানা রকম বিধিনিষেধ তাকে ঘিরে ধরে এবং এক গতানুগতিক শিক্ষার দিকে সে এগিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে হোমওয়ার্ক আর প্রোজেক্ট ওয়ার্কের চাপ তাকে সুস্থ ভাবে কিছু কল্পনা করতে বাধা দেয়। প্রবন্ধকার সঠিক ভাবেই বলেছেন যে, শিশুদের শিল্পশিক্ষার সঙ্গে তার ভবিষ্যতে চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠার কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এই শিল্পশিক্ষা এক জন সংবেদনশীল মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছবি আঁকা, কবিতা বলা, গান শেখা ইত্যাদি বিষয়গুলি মানুষের মনের সুকুমারবৃত্তিগুলির বিকাশে সাহায্য করে। তবে বর্তমানে সব কিছুই শিশুদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়। মা-বাবা চান সব কিছুতেই তাঁদের সন্তান প্রথম হোক। ফলে পরবর্তী সময়ে শিশুরা এই বিষয়গুলি সম্পর্কে আগ্রহ হারায়। ছবি আঁকা থেকে পড়াশোনা, সব ক্ষেত্রেই এক নিয়মতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করতে গিয়ে ছোটরা কল্পনার জগতে বিচরণ করার কোনও পথ পায় না। এর উপর এখন ছোটদের হাতেও এসেছে মোবাইল। কল্পনার জগৎ তৈরি করার সুযোগ তাদের কমে গেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘ছেলেটা’ কবিতায় বলেছেন, যদি শিশুপাঠে লেখা কবিতাগুলি পড়তে শিশুর মন না লাগে তা হলে ‘সে ত্রুটি আমারই’। তাই শিশুদের শিল্পশিক্ষার বিষয়টি যদি আকর্ষণীয় না হয়ে শুধুমাত্র গতানুগতিক পথের অনুসরণ হয়, এবং শিশুর স্বাধীন চিন্তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে তা শিশুর ব্যক্তিত্বের উপযুক্ত বিকাশকে ব্যাহত করে।

দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৬

অক্ষর-চিত্র

‘আকাশের রং সবুজ’ প্রসঙ্গে আমার ছবি আঁকতে শেখার কিছু গল্প বলি। আঁকলে হাতের লেখা ভাল হবে— এই ধারণার বশবর্তী হয়ে আমাকেও ছোটবেলায় আঁকার স্যরের কাছে পাঠানো হয়েছিল। স্পষ্ট মনে আছে, উনি বাংলা অক্ষরমালা দিয়ে পশু-পাখি আঁকতে শিখিয়েছিলেন, ফলে চার পাশের প্রকৃতিকে নতুন ভাবে চিনেছিলাম। এই বনিয়াদি শিক্ষার পর আমার অঙ্কনবিদ্যার পাঠ চলল দেবনাথ ঘোষের কাছে। মোম রং ঘষতে শেখার প্রথম দিন উনি বলেছিলেন: “জলের নিজস্ব কোনও রং নেই, আকাশের রং নীল বলে জলকে নীল মনে হয়। জলকে যে পাত্রে রাখা হয় জল সেই পাত্রের রং ধারণ করে, জলে যার প্রতিফলন ঘটে জল তার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নেয়।” রং সম্পর্কে এমন সহজ সুন্দর কথা শুনেছিলাম বলেই পারিপার্শ্বিক পরিবেশের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির রং-রূপ, তার সর্বত্র প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলা আলো-ছায়ার খেলা সম্পর্কে জেনেছিলাম। চোখের সামনে যে কোনও জিনিস, ফুল-ফল, আনাজপাতি রেখে সে সব দেখে যেমন এঁকেছি, তেমনই ফিগার ড্রইং স্কেচ করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বা আঁকার স্কুলের সহপাঠীদের মডেল হিসাবে বসিয়ে হরেক রকম ভঙ্গিমা, ত্বকের ভাঁজ, আঙুলের গড়ন, নাক-কান-ঠোঁটের ধরন, চোখের চাহনি আঁকতে আঁকতে কখন যে বিভিন্ন মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে তাদের স্বভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভাবতে শুরু করেছি, খেয়াল নেই। তাই দেবনাথ স্যর যখন কোনও বিষয় বলে সেটা নিয়ে আঁকতে বলতেন, তখন সাদা পাতায় মন নিজের আনন্দ ও অনুভূতি প্রকাশ করত। ‘বড়দের মতো’ আঁকতে পারতাম না বলে প্রতিযোগিতা থেকে পাওয়া পুরস্কারের সংখ্যা খুবই কম। তবে স্যরের শেখানো ‘পার্সপেক্টিভ’, ‘ভ্যানিশিং পয়েন্ট’, আর মানুষের মাথার মাপ যে তার সম্পূর্ণ শরীরের সাত ভাগের এক ভাগ— সব এখনও মনে আছে।

অনিশা ঘোষ, পাণ্ডুয়া, হুগলি

মিষ্টির মেয়াদ

যে কোনও খাবার জিনিস এবং প্রসাধনী দ্রব্যের মেয়াদ ফুরোনোর তারিখ থাকে। কিন্তু দোকানের মিষ্টির মেয়াদ ফুরোনোর কোনও সময় থাকে না। যত ক্ষণ না মিষ্টি গন্ধ হচ্ছে, তত ক্ষণ দোকান থেকে তা চালিয়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া গন্ধওয়ালা মিষ্টিগুলো একটি, দু’টি করে ভাল মিষ্টির সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করা হয়।

মঞ্জুশ্রী মণ্ডল, তারকেশ্বর, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement