Partha Chatterjee

সম্পাদক সমীপেষু: শাসকের চরিত্র

ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’। রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিপক্ষের যুক্তিকে ভাঙার জন্য এই পরিচিত স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২২ ০৪:৫৮
Share:

ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘অফেন্স ইজ় দ্য বেস্ট ডিফেন্স’। ইদানীং রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিপক্ষের যুক্তিকে ভাঙার জন্য এই বহুলপরিচিত স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে। রাজ্য রাজনীতিতে যখন এসএসসি দুর্নীতি আর কোটি কোটি টাকার প্রসঙ্গ আলোচিত হচ্ছে, তখন রাজ্য সরকার বা তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা কী ভাবে নিজেদের দোষকে লঘু করা যায়, সে খেলায় মত্ত। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ হোক বা টিভি চ্যানেলের বিতর্ক সভা, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যানের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি যেখানে স্পষ্ট, সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্র খুঁজে পান। বিষয় যেখানে এসএসসি দুর্নীতি, সেখানে তৃণমূলের নেতা এবং কর্মীরা বিরোধীদের যুক্তি খণ্ডন করতে কখনও চলে যান মধ্যপ্রদেশের ব্যপম কেলেঙ্কারি বা ২জি স্ক্যাম-এর প্রসঙ্গে। অথবা, টেনে আনেন বাম আমলের কোনও দুর্নীতি বা সাম্প্রতিক ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার প্রসঙ্গ।

Advertisement

বিরোধীরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁদের সেই সময়ের দুর্নীতি নতুন করে খুঁড়ে বার করার কোনও মানে হয় না। তাঁরা যে ভুল করেছিলেন, এটা মানুষ বুঝতে পেরেই তাঁদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বর্তমান সরকারকে সেই জায়গায় নিয়ে এসেছে। আসলে কোন সরকারের আমলে কী দুর্নীতি ঘটেছে, তা তুলে ধরে বর্তমান সরকার নিজেদের দোষ ঢাকতে চায়। বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বর্তমান সরকার দায়বদ্ধ নয়, তার কারণ তাদের আমলেও ব্যাপক দুর্নীতি ও অত্যাচার হয়েছে। এই সবের একটাই অর্থ হয়— দুর্নীতি তোমার আমলেও ছিল আর বর্তমান আমলেও আছে। তাই তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা বাধ্য নই।

শাসকের পরিবর্তন হয়, কিন্তু শাসকের চরিত্রের পরিবর্তন হয় না— বর্তমান রাজনীতির পরিবেশ এটাই প্রমাণ করে।

Advertisement

জগন্নাথ পাড়ুই, শান্তিনিকেতন, বীরভূম

বাকিরা শুদ্ধ তো?

আজকের বাংলায় দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় আর অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ছাড়া আমরা বাকি সবাই সৎ। আমরা যেন কেউ কোনও দিন কোনও ভাবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিইনি। পার্থবাবু যদি ঘুষ নিয়ে চাকরি দিয়ে থাকেন, তবে অজস্র লোকও কিন্তু নিজেদের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পিছনের দরজা দিয়ে চাকরি পাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছে। এই কথাগুলো কি অস্বীকার করা যায়? ঘুষ দেওয়া লোকগুলোকে কেন বিচারের আওতায় আনা হবে না?

আমরা তো সবাই সৎ! আমরা দুর্নীতি করি না, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিই না। আমরা এক কালে টেলিফোন বা গ্যাস কানেকশন বেলাইনে নেওয়ার জন্য ধরাকরা করিনি। আমাদের ঘরের কেউ পুলিশে ধরা পড়লে পুলিশকে ঘুষ অফার করিনি, ট্রেনে বিনা টিকিটে ধরা পড়িনি, ধরা পড়ে পালাইনি, নিদেনপক্ষে হাতে কিছু গুঁজে দেওয়ার অফার অবধি করিনি! বাসে ভাড়া না চাইলেও প্রত্যেক বার ডেকে ডেকে ভাড়া দিয়েছি, ভাড়া না দিয়ে বাস থেকে নেমে চট করে পালাইনি। অফিসের টিএ বিল, মেডিক্যাল বিল, টিউশন ফি-র বিলে জল মেশাইনি। ভাল স্কুলে পড়ানোর জন্য সেই স্কুলের টিচারের কাছে ছেলেমেয়েকে টিউশন দিইনি! সর্বোপরি, পরেশ অধিকারীর যত জন আত্মীয় চাকরি পেয়েছেন সব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কৃপায়, কেউ বাম আমলে পাননি!

আমরা নিজেরা যে কোনও বাজে কাজ করিনি, তা-ই নয়, আমাদের নেতারা পর্যন্ত করেননি। মহারাষ্ট্রের বিধায়করা গুজরাত হয়ে গুয়াহাটি গিয়েছিলেন শুধু উত্তর-পূর্ব ভারতের শোভা দেখার জন্য। সেখানে তাঁরা সম্ভবত কোনও ধর্মশালায় একেবারে বিনেপয়সায় ছিলেন! মধ্যপ্রদেশ বা কর্নাটকের সরকার এমনি এমনি পড়ে গিয়েছিল, কেউ হটায়নি। রানিহাটিতে ধরা পড়া ঝাড়খণ্ডের এমএলএ-রা গাড়ি চালিয়ে কলকাতা থেকে শাড়ি কিনতে যাচ্ছিলেন।

পার্থবাবু দল থেকে বিতাড়িত। দল এখন শুদ্ধ। আর কেউ অসৎ ব্যক্তি নেই রাজ্যের শাসক দলে। আর এই রাজ্যের পুরনো শাসক বা কেন্দ্রের শাসক দলে তো সবাই সৎ। মনে পড়ে যায় জজসাহেবের সেই বিখ্যাত উক্তি, যা নিয়ে সিনেমা পর্যন্ত হয়েছে— ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’। এ রাজ্যে আর কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়!

ভাববেন না, পার্থবাবুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তাতে আমার বিন্দুমাত্র সমর্থন আছে। আমিও চাই দুর্নীতি করলে তাঁর জেল হোক। একই সঙ্গে চাই, সব দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি শাস্তি পাক। শয়তানেরা সাধু সেজে ঘুরে বেড়াবে আর কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়বে, এটা অসহ্য!

পার্থ নন্দী, শেওড়াফুলি, হুগলি

ব্যর্থতা

দেবাশিস ভট্টাচার্যের প্রবন্ধ ‘বাইশ কোটির প্রতিক্রিয়া’ (২৮-৭) প্রসঙ্গে কিছু কথা। তৃণমূল দল সর্বসম্মতিক্রমে পার্থবাবুকে দল ও মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারিত করেছে। দেরিতে হলেও দলের বোধোদয় যে হয়েছে, সেটাও অনস্বীকার্য। আজ রাজ্য সরকারের যে সমস্ত মন্ত্রী ও পদাধিকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে অহরহ, তা যে ফাঁকা আওয়াজ নয়, পার্থবাবুর ঘটনা তাকেই মান্যতা দিয়ে গেল। দুর্নীতির শিকড়টি কত দূর তার বাহুকে বর্ধিত করেছে, তা ভেবেই শিহরিত হয়ে উঠছি। আতঙ্কিত হয়ে পড়ি সেই সব নিরলস, নির্লোভ, দলঅন্তপ্রাণ সাধারণ কর্মীদের কথা ভেবে। তাঁরা নিঃস্বার্থ ভালবাসা দিয়ে দলের জন্য সব কিছু উজাড় করে দেন, অথচ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আচরণ প্রতিনিয়ত তাঁদের বিড়ম্বনায় ফেলে। নেতারা দল পরিবর্তন করলেই তাঁদের শুদ্ধিকরণ ঘটে, যা কর্মীদের পক্ষে কখনও সম্ভব নয়। দলনেত্রী বিগত বিধানসভা নির্বাচনে একক দক্ষতায় বিজেপির মতো (ছদ্মবিরোধী সিপিএম-সহ) সর্বভারতীয় দলকে পরাস্ত করে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, এই রাজ্যের সিংহভাগ মানুষ আস্থা রাখেন তাঁর নেতৃত্বে। এ-হেন নেত্রীর দলে তবে কি বিশ্বাসঘাতকতার বাতাবরণ তৈরি হল, যা নেত্রীর দৃষ্টি এড়িয়ে গেল? কেন বার বার তাঁর মন্ত্রী, পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ দানা বাঁধে? দল ‘করে খাওয়ার’ জায়গা নয়, এই বার্তা ঘোষণা করার আগেই এই দুর্নীতিবাজদের ছেঁটে ফেলা হয় না কেন? দলের প্রশাসনিক দিকটির ব্যর্থতাই এতে প্রকট হয়ে ওঠে।

সাধারণ কর্মীদের আস্থা, ভরসা অবিলম্বে ফিরিয়ে আনতে গেলে শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয়, আরও অনেক দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করতে হবে।

রাজা বাগচী , গুপ্তিপাড়া, হুগলি

বেহাল দশা

রুশতী সেনের ‘রতনের থেকে বহু দূরে’ (১৭-৭) শীর্ষক প্রবন্ধটি বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন ও শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক নজরকাড়া পদক্ষেপ। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের যোগসূত্রের মাধ্যম হল পরিবেশ, যার উপর নির্ভর করে মানুষের অন্তরাত্মার সার্বিক বিকাশ। বলা বাহুল্য, এই উন্নয়ন সর্বাংশে নির্ভর করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতির উপর। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা যে ভাবে তার প্রকৃতি বদলাচ্ছে, বলা যায় অচিরেই শিক্ষিতের মুখোশধারী অশিক্ষিতের দল সমাজের অবক্ষয়ের ভিত রচনার প্রক্রিয়া আরও তরান্বিত করবে। কেন শিক্ষার এই বেহাল দশা? অতীতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব, গুরুগৃহে থেকে কঠোর অনুশীলন আর নিয়মানুবর্তিতার মোড়কে চলত শিক্ষাগ্রহণ পদ্ধতি। মনে পড়ে, প্রকৃতির বুকে কবিগুরুর আশ্রমিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা। সে সময় ছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি গভীর মমত্ববোধ, আন্তরিক প্রচেষ্টা, সর্বোপরি শিক্ষাদানের স্বচ্ছতা। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম কান্ডারি, হর্তাকর্তাবিধাতাদের অবহেলার শিকার হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। তবুও কেন এত নীরবতা? শিক্ষিত সমাজের শিক্ষাদানের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের চেষ্টায় পরিবর্তিত হতে পারে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা। এই মাটির ঢেলা ছাত্রসমাজকে সরস্বতীর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত করা যেতেই পারে। বন্ধ হোক অনর্থক মেধাবৃত্তির ফল্গুধারা। তা হলেই শিক্ষার রূপ, রস, গন্ধ ফিরে আসবে।

জুনিপার চট্টোপাধ্যায়, তালপুকুর, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement