Teachers

সম্পাদক সমীপেষু: শিক্ষার স্বার্থে

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আজ তলানিতে। পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে শুনতে পাওয়া যায় ‘আজকাল স্কুলে মাস্টাররা আবার পড়ায় নাকি?’

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৪:৪৩
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘নিজের জোরে চলার শিক্ষা’ (২৭-৯) প্রবন্ধটি শিক্ষাব্যবস্থার এক ক্ষুদ্র অংশীদার হিসাবে মনের এক যন্ত্রণাকে আবার উস্কে দিল। উদ্যোগী শিক্ষাকেন্দ্রটির শিক্ষকেরা আলোর পথের দিশারি হিসাবে অনেকগুলো সূত্রকে সামনে এনে দিয়েছেন, যেগুলিকে পরিকল্পনার মধ্যে আনতে পারলে অশিক্ষা বা প্রকৃত শিক্ষার অভাব দূর করা সহজ হবে। একটি শিশুর মনের মধ্যে যদি শিক্ষার্থী হওয়ার খিদে প্রথম থেকে তৈরি করা যায়, তা হলে শিশুটি প্রকৃতি পরিবেশ থেকে সব সময় শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য উন্মুখ থাকবে। আর সেটা ভালবেসেই করবে। আমাদের খিদে পেলে যেমন খেতে ভাল লাগে, তেমনই ওদেরও জানার আগ্রহ অপরিসীম হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাকে এমন সুন্দর ভাবে পাক (রান্না অর্থে) করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা সেটা গোগ্রাসে গ্রহণ করে। বয়সের ফেরে শিক্ষা তৈরির কৌশল ভিন্ন ভিন্ন হতে হবে। এই শিক্ষার দায়িত্ব বাড়িতে অভিভাবক আর বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও পরিবেশের উপর ন্যস্ত থাকবে। অভিভাবকের শিক্ষা ভাল হলে শিশুর উপর তার প্রভাব ইতিবাচক হয়। অন্য দিকে, শিক্ষকতা শুধু একটা পেশা নয়, একটা আদর্শও। কিন্তু আজ নিয়োগকর্তার কাছে শিক্ষকরা চাকরিজীবী, কর্মচারী। জনগণের বৃহৎ অংশের কাছে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে বা করা হয়েছে যে, শিক্ষকরা ফাঁকিবাজ, বসে বসে মাইনে পান। এতে তাঁরা আজ অপমানের পাত্র।

Advertisement

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আজ তলানিতে। পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে শুনতে পাওয়া যায় ‘আজকাল স্কুলে মাস্টাররা আবার পড়ায় নাকি?’ শিক্ষার্থীরা এই ধারণা নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনাতে আগ্রহী হয় না। তারা ধরে নেয়, স্কুলে যা পড়াচ্ছে তা ওরা টিউশনে গিয়ে ঠিক করে নেবে। কিন্তু টিউশন যাঁরা করেন, তাঁরাও তো এক ধরনের শিক্ষক। সেখানেও অর্থের বিনিময়ে নোটস দিয়ে নম্বর পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা চলে। আর যথেষ্ট নম্বর দেওয়ার হুকুম তো শিক্ষকদের উপরে আছেই। এতে অভিভাবকরা ভাবেন— সন্তান ভালই শিখছে। ফলে এই শিক্ষার কারণে শিক্ষক দিবসে শিক্ষার্থীদের উপহার কেনার ধুম পড়ে যায়। কিন্তু শিক্ষকদের বড় উপহার তো শিক্ষার্থীদের মানুষের মতো মানুষ হওয়া। ফলে শিক্ষক দিবস উৎসবে পরিণত হলেও হারিয়েছে আসল উদ্দেশ্য।

তা হলে করণীয় কী? শিক্ষার্থীদের দুঃখ ভাগ করে নিতে হবে— শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রশাসন— সবাইকে। তা হলেই তারা ভালবাসতে শিখবে। সবার মনে ধারণা তৈরি হবে শিক্ষকেরা পারেন তাদের সমস্যা দূর করতে। তার প্রতিকার করতে তিনি অন্তত চেষ্টা করবেন। সাধ্যের বাইরে হলে সরকারকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন। শিক্ষার জন্য খরচ করলে হয়তো ভোটে তার প্রভাব যথেষ্ট পড়বে না, কিন্তু ‘সকলের জন্য শিক্ষা’-র পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখবে।

Advertisement

শুভেন্দু মণ্ডল, বগুলা, নদিয়া

ভবিষ্যৎ ভাবনা

‘পৃথিবী বাঁচবে কী ভাবে’ (৬-১০) প্রবন্ধটি প্রসঙ্গে লেখক ইন্দ্রজিৎ রায়-কে ধন্যবাদ জানাই অতি গুরুত্বপূর্ণ এই জাতীয় বিষয়টিকে জনগণের সামনে তুলে আনার জন্য। বস্তুত জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কোনও লেখালিখিই আজ আর অতিরিক্ত নয়।

‘বিদ্রোহী’ সংস্থা হিসাবে গ্রেটা থুনবার্গের ‘ইয়ুথ ফর ক্লাইমেট’ গোষ্ঠীর উল্লেখ বোধ হয় আরও বেশি গুরুত্বের। কারণ আগামী দিনের জলবায়ু ধ্বংসের প্রধান ভুক্তভোগী হবে আজকের কিশোর-তরুণ সমাজ। তাদেরকেই চলতি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ করতে সংগঠিত করছে এই গোত্রের আন্দোলন। এদের মধ্যে থেকেই ভবিষ্যতের রাজনীতি এবং অর্থব্যবস্থার ধারক-বাহকরা আসবে। জলবায়ু পরিবর্তন আগামী দু’তিন দশকে মানুষকে সঙ্কটের দিকে নিয়ে যেতে চাইবে। তাই তরুণ-তরুণীদের আন্দোলনকে বেশি প্রচার করে শক্তিশালী করে তোলা দরকার বলে মনে করা হচ্ছে। ‘আর্থ আপরাইজ়িং’, ‘ইয়ুথ ফর নেচার’, ‘ক্লাইমেট কার্ডিনালস’— এই সব নামের যুব-জোটগুলি নানা দেশে কাজ করছে। ভারতেও কারও কারও শাখা-প্রশাখা আছে। বিশ্বে যতটুকু সাড়া এবং কাজ হচ্ছে, তার পিছনে এদের ভূমিকা প্রচুর। রাষ্ট্রপুঞ্জের চেয়ারম্যান আন্তনিয়ো গুতেরেস এই ক্লাইমেট বিদ্রোহীদের নিয়ে বিশেষ উপদেষ্টা সংসদ তৈরি করেছেন ও তাঁদের কথাকে বিশ্বনেতাদের সামনে বলার সুযোগ করে দিচ্ছেন।

নেদারল্যান্ডসের গো-পালকদের প্রসঙ্গে লেখক যে সমস্যার কথা লিখেছেন, সত্যিই সেটা অন্য বহু ক্ষেত্রে সব দেশেই প্রযোজ্য। কিন্তু সেখানে অপসৃত রোজগারের প্রতি সহানুভুতির সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের জীবন বাঁচানোর কথা মাথায় রেখে কঠোরতারও প্রয়োজন আছে। হাতের কাছেই আছে উদাহরণ। বহু জায়গায় পাতলা প্লাস্টিক ব্যবহারের ব্যবস্থা জিইয়ে রাখার পিছনে প্লাস্টিক তৈরির কারখানা মালিকদের কায়েমি স্বার্থ কাজ করছে। বহু দিন যাবৎ প্রচার এবং নিষেধ সত্ত্বেও তাঁরা আইন ও ভবিষ্যৎকে পাত্তা দিচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। পরিবেশে দূষণ ছাড়াও প্লাস্টিকজনিত কারণে নিকাশি-নালা বন্ধ হওয়ায় নোংরা জলের নরক নিয়ে প্রান্তিক মানুষদেরই ভুগতে হয় বেশি।

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন যত বেশি বাড়বে, কয়লা-ডিজ়েলনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ততই কমবে। প্রকৃতপক্ষে সেটাই শুভ হবে পৃথিবীর স্বাস্থ্যের জন্য। তাই পুরনো জ্বালানি-নির্ভর কর্মসংস্থান কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক। ভারতেই একটা সফল যোজনা চলছে, যেখানে আইটিআই পাশ করা তরুণ-তরুণীরা বিনা খরচে সৌরবিদ্যুতের কারিগর হতে পারবে। এর নাম ‘সূর্যমিত্র স্কিল উন্নয়ন যোজনা’। চলছে ২০১৫ সাল থেকে। এই পথে চাকরি বাড়ছে দ্রুত। আরও তিন বছর আগের কথা। আমেরিকায় কয়লা-গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনে যখন মাত্র দেড় লক্ষ চাকরি, সৌর, বায়ু ইত্যাদি নির্ভর বিদ্যুতে তখনই সাড়ে চার লক্ষ কর্মসংস্থান এসে গিয়েছে। এই রকম চাকরির বিবর্তন এ দেশেও হতেই থাকবে।

ইলেকট্রিক গাড়ি বাড়বে, তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে চার্জিং স্টেশন। তার ইনস্টলেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এ সবের কাজও বাড়বে। ভারতে সরকারি যোজনার সাহায্য নিয়ে গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় ছোট আকারে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তাই নিয়ে ইলেকট্রিক দু’চাকা, তিন চাকা চার্জিং করে ছোট ব্যবসা সম্ভব। দেশের অনেক শহরে, আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসারে গণ পরিবহণে মেট্রোরেল বেড়ে চলেছে। শহরের স্টেশনগুলির সঙ্গে বিভিন্ন মহল্লার থেকে ফিডার রুটগুলিতে প্রচুর বৈদ্যুতিক অটো, টোটো চালকদের জীবিকার সুযোগ বাড়ছে।

নতুন ব্যবস্থার প্রতি নিরন্তর রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকাটা অবশ্যই জরুরি। নয়তো অনেক খরচে তৈরি সাইকেল-ট্র্যাকও হকার-দখলে চলে যায়, তার উদাহরণ লেখক প্রস্তাবিত নিউ টাউনেই অনেক রয়েছে। আর উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়াটা মানবতাধর্মী নিশ্চয়ই, তবে সেটা কেবলমাত্র অর্থ দিয়ে দায়সারা না হলেই ভাল। তাঁদের নতুন সুস্থিত অর্থব্যবস্থার মধ্যে রোজগারের রাস্তা দেখাতে ও তাতে সাহায্য করতে হবে। লেখকের উল্লিখিত ‘পৃথিবী বাঁচাতে’ নতুন চিন্তা ও কর্মোদ্যোগ ভীষণ ভাবে দরকার।

সুব্রত দাশগুপ্ত, কলকাতা-১৫৭

এটিএম কাউন্টার

হাওড়া জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম গঙ্গাধরপুরে বর্তমান সময়ে নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় এলাকার মানুষ-সহ বাইরে থেকে আগত ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এখানে নেই কোনও এটিএম কাউন্টার। কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার থাকলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শ্রীমন্ত পাঁজা, গঙ্গাধরপুর, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement