Indian Railways

সম্পাদক সমীপেষু: নিয়মের লঙ্ঘন

সম্প্রতি হাওড়া থেকে চম্বল এক্সপ্রেসে আগরা যাওয়ার পথে এমনই অভিজ্ঞতা হল। দিল্লি হয়ে ফিরতি পথে পূর্বা এক্সপ্রেসের অভিজ্ঞতাও একই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:১৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

‘নির্দায়’ (৩১-১০) সম্পাদকীয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী। ঘন ঘন রেল-দুর্ঘটনা, যাত্রী-অস্বাচ্ছন্দ্য, সংরক্ষিত কামরায় অবাঞ্ছিত যাত্রীদের উৎপাত, দায়সারা গোছের রেলের কর্তব্যপালন, প্রভৃতি ঘটনা এক রকম গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। আয় বাড়াতে মরিয়া রেল দফতর এখন যে সব বিষয়ে পদক্ষেপ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম প্রবীণ নাগরিকদের ছাড়-এ কোপ, তৎকাল টিকিট ও বন্দে ভারত ট্রেনের ব্যয়বহুল ভাড়া, প্রভৃতি। পাশাপাশি, সংরক্ষিত কামরার আসন-কোটা শেষ হওয়ার পরেও, শেষ মুহূর্তে আতান্তরে পড়া যাত্রীদের দেদার ওয়েটিং লিস্টে পাঠিয়ে দেওয়া। এর ফলে শত শত যাত্রীর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা, কিংবা বাড়তি কামরা সংযোজন না করেই নন-এসি সংরক্ষিত কামরায় ঠাসাঠাসি গাদাগাদি করে ওয়েটিং লিস্টে থাকা যাত্রীরা সফর করবেন, এটা সম্ভবত মেনে নিয়েছে রেল প্রশাসনও।

Advertisement

সম্প্রতি হাওড়া থেকে চম্বল এক্সপ্রেসে আগরা যাওয়ার পথে এমনই অভিজ্ঞতা হল। দিল্লি হয়ে ফিরতি পথে পূর্বা এক্সপ্রেসের অভিজ্ঞতাও একই। প্রতিটি কুপে আপার-লোয়ার বার্থ দখল-শেয়ার করে যাত্রীরা দিব্যি সফর করছেন। এমনকি বাথরুম যাওয়ার পথে এবং প্রতিটি কুপের মেঝেতে প্লাস্টিক বিছিয়ে শুয়ে-বসে থাকছেন এই সব আগন্তুক! ঢাউস মাপের গ্যাজেট হাতে টিটিই কোনও মতে এক চক্কর দিয়েই তাঁর দায় সেরেছেন। রেল পুলিশও নির্বিকার।

তারা কার্যত মেনে নিয়েছে, এই অবাঞ্ছিত যাত্রীদের সংরক্ষিত কামরায় অনুপ্রবেশের অধিকারকে। অথচ ই-টিকিটের ইনস্ট্রাকশন গাইড-এ লেখা আছে, ওয়েটিং লিস্ট-এ থাকা ব্যক্তিদের ট্রেনে ওঠার নিয়ম নেই, উঠলে তাঁদের টিকিটহীন যাত্রী বলেই ধরে নেওয়া হবে। এই নির্দেশ অমান্য করার ফলে অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য মাঝ পথে বাথরুমের জল শেষ হয়ে যায়। নোংরা বাথরুম ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বাথরুমের গা ঘেঁষে অবৈধ যাত্রীদের সমাবেশ সংরক্ষিত কামরাকে অচিরেই নরককুণ্ডে পরিণত করে। শুধু দায় সামলানোই যথেষ্ট নয়, সঠিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ভারতীয় রেলকে বিশ্বের দরবারে অনন্য নজির হিসাবে তুলে ধরতে হবে।

Advertisement

অমরেশ পাল, মল্লিক ফটক, হাওড়া

বৃদ্ধের সম্মান

তারক সাহার ‘বার্ধক্যের অভিশাপ’ (সম্পাদক সমীপেষু, ২-১১) শীর্ষক পত্রটি পড়ে, নিজে এক জন প্রবীণ নাগরিক হয়েও ভারী দুঃখ পেলাম। সহানুভূতি কুড়োবার এই প্রচেষ্টা সামগ্রিক ভাবে প্রবীণ নাগরিকদের আত্মসম্মানের পক্ষে হানিকর বলেই আমার ধারণা। প্রবীণরা কি কৃপাপ্রার্থী, না কি করুণার পাত্র? বার্ধক্য তো বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ নয় যে, এক দিন হঠাৎ করে এসে পড়বে। তার পরেও তিনি যদি উপার্জন কালে তার প্রস্তুতি না নিয়ে থাকেন, সেই দায় কি সমাজের?

পত্রলেখক তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে সুকৌশলে জুড়ে দিয়েছেন রেলগাড়িতে প্রবীণ নাগরিকদের ভাড়া ছাড়ের প্রসঙ্গটি। আমি নিজে যদিও প্রবীণ নাগরিক, তথাপি আমি এই ভাড়া ছাড়ের বিরুদ্ধে। রেলগাড়িতে প্রবীণ নাগরিকদের ভাড়া ছাড়ের ধারণাটি লালু প্রসাদ যাদবের অবদান। এই ধারণাটি, এবং ‘অটোমেটিক আপগ্রেডেশন’ ভারতীয় রেলের সর্বনাশ করেছে। এর ফলে বাতানুকূল কামরায় কিছু লোক মূল্য না দিয়েই উঠে এসেছেন। ভাড়ায় ছাড় নেওয়া এক জন প্রবীণ নাগরিক বা অটোমেটিক আপগ্রেডেশন পেয়ে উচ্চতর শ্রেণিতে ভ্রমণ করা এক জন যাত্রী যে পরিষেবা পান, পুরো ভাড়া দিয়ে ভ্রমণ করা এক জন যাত্রী ঠিক সেই পরিষেবাই পান, কিন্তু উচ্চতর মূল্যে। এই ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক, পুরোভাড়া দিয়ে ভ্রমণ করা যাত্রীটিকে প্রতারণার শামিল।

এক জন অলিম্পিক পদকজয়ীকে বা নোবেল প্রাপককে রেলগাড়ির ভাড়ায় ছাড় দেওয়া হয় তাঁদের মেধার স্বীকৃতিতে, যাতে তাঁদের দেখে আরও দশটা লোক তাঁদের মতো হওয়ার চেষ্টা করে। এক জন অসুস্থ লোককে চিকিৎসার জন্য ছাড় দেওয়াও মানবিকতা। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে প্রবীণদের রেলগাড়ির ভাড়ায় ছাড় দেওয়ার পক্ষে যুক্তি কী? লোক তো প্রবীণ হয় প্রকৃতির নিয়মে, যোগ্যতায় বা কৃতিত্বে নয়। অর্থনীতির সূত্রে ভর্তুকি দেওয়া হয় গরিব প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা দানে। ভারতের গরিব প্রান্তিক মানুষ রেলের সংরক্ষিত কামরায় আদৌ ওঠেন কি না, বা কোনও দিন উঠেছেন কি না, সন্দেহ আছে। উঠলেও তিনি ওঠেন স্লিপার ক্লাসে, বাতানুকূল শ্রেণিতে নয়। কিন্তু, অসংরক্ষিত কামরায় প্রবীণ নাগরিকদের ভাড়া ছাড়ের কোনও বন্দোবস্ত নেই। তাই গরিব মানুষের কল্যাণে চালু প্রকল্পের শাঁস খেয়ে যাচ্ছেন শহুরে মধ্যবিত্ত।

প্রবীণ নাগরিকদের ভাড়া ছাড় যদি ফের চালু করতেই হয়, তবে তা চালু হোক শুধুমাত্র স্লিপার ক্লাসে; রাষ্ট্রের অনুদান গিয়ে পৌঁছক গরিব প্রান্তিক মানুষটির কাছে। বাতানুকূল শ্রেণিতে প্রবীণ নাগরিকদের ভাড়া ছাড় চালু করে বাবুয়ানিতে ভর্তুকি প্রদান সমাজের পক্ষে কল্যাণকর নয়।

তপন পাল, কলকাতা-১৪০

নিরাপত্তার প্রশ্ন

বহুতল বাড়ি নির্মাণের সময়ে উপর থেকে পড়ে গিয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, এমন খবর বার বার মিলছে। এই সব দুর্ঘটনা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রায়ই দেখা যায়, অনেক উচ্চতায় কাজ করলেও সেফটি বেল্ট বাঁধা হয় না, অথবা শ্রমিকের দেহ বাঁধা রাখার সরঞ্জামে ত্রুটি রয়েছে। হেলমেটও পরা থাকে না। এগুলি অনভিপ্রেত।

সরকারের নিয়ম ও নির্দেশিকা অনুযায়ী নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও বেল্ট ছাড়া দোতলা বা তার উপরে কোনও মিস্ত্রির কাজ করা নিষেধ। তবু প্রতি বারই দুর্ঘটনার পরে দেখা যায়, পুলিশ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। নির্মাণ শুরু হওয়ার আগেই কেন এগুলি নিশ্চিত করা হয় না? সরকারি কাজে ঠিকাদাররা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করলেও, শ্রমিকরা তা ঠিক মতো ব্যবহার করছেন কি না, তা নিয়মিত দেখা দরকার। বেসরকারি কাজে, বিশেষত ছোটখাটো কাজের ক্ষেত্রে সাধারণত এ সব কিছুই নিশ্চিত করা হয় না। ফলে শ্রমিকরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন, এবং দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত হলে ক্ষতিপূরণ পান না, পেলেও তা যৎসামান্য।

নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে কি না, এবং তা সঠিক ভাবে ও নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করা শ্রম কমিশনার, এবং নির্মাণ সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার ও সুপারভাইজ়ারদের নৈতিক দায়িত্ব। ঠিকাদার নিয়ম না মানলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। দুর্ঘটনা ঘটলে শাস্তি হওয়া উচিত। কাজ শুরুর আগে সব শ্রমিক ও মিস্ত্রির জীবনবিমা করানো নিয়ম। কোনওটাই ঠিকঠাক মানা হয় না।

পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

ভয়হীন

দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘কী আছে শেষে...’ (২-১১) প্রসঙ্গে বলতে চাই, যে ভাবে রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী এবং নেতারা জেলবন্দি হয়ে আছেন, তাতে আমাদের লজ্জিত হওয়ারই কথা। যে কেলেঙ্কারি সামনে আসছে মিডিয়ার দৌলতে, তাতে আর জনসাধারণের বোঝার বাকি নেই যে, এঁরা কোনও রকমেই ধোয়া তুলসী পাতা নন। তবুও দেখা যাবে ভোট এলে এই রাজ্য থেকে বিজেপি তেমন কোনও ফল করতে পারছেই না৷ আর ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ সরকারকেও হটাতে পারছে না। এখানেই সাধারণ মানুষ বুঝে নিয়েছেন যে, চোর-পুলিশের খেলা চলছে। সরকার গড়ার সময়ই তার প্রমাণ হাতেনাতে মিলবে। কিন্তু তৃণমূল এতে ভয় পায় না৷ দুর্নীতির বৃত্তে থেকেই তারা যে ভাবে ক্ষমতার সিংহাসন উপর্যুপরি দখল করছে, তাতে বোঝা যায়, এ রাজ্যে বিপক্ষ দল এখনও পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পায়নি! তাই নিশ্চিন্ত আছেন রাজ্যের তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা।

মনশ্রী চৌধুরী, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement