দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘হাওয়ায় ছড়াচ্ছে সৌরভ’ (১৬-৭) প্রসঙ্গে জানাই, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা অনস্বীকার্য এবং ব্যক্তিত্বও আকর্ষক। শুধু ক্রিকেট নয়, অন্য যে সব কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িয়েছেন, সেখানেও যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। সৌরভ বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না, বা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ওই দলের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হবেন কি না, সেটা ভবিষ্যতের বিষয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কয়েকটি গুণ তাঁকে অন্যান্যদের থেকে আলাদা করে রাখে। যেমন, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, বা আত্মশ্লাঘার অনুপস্থিতি।
কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে নেতা নির্বাচিত না করা সেই দলটির দুর্বলতা নয়, বরং সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। কারণ প্রায় সমপর্যায়ের একাধিক নেতা থাকার অর্থ, দলটি শক্তিশালী। অনেকটা ফুটবল বা ক্রিকেট খেলায় রিজ়ার্ভ বেঞ্চের মতো। উপরন্তু এ সব ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্রের ভয় থাকে না।
প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গ এবং কেন্দ্রে ভিন্ন শাসক দল ছিল। কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা পশ্চিমবঙ্গবাসী ভাঙা রেকর্ডের মতো শুনে আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলোর সুবিধা থেকে রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যবাসীকে বঞ্চিত করার চেষ্টা। কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই শাসক দল এলে আশা করা যায় যে রাজ্যবাসীর কিছু সুরাহা হলেও হতে পারে।
অমিত কুমার চৌধুরী
কলকাতা-৭৫
পুরনো প্রথা
মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম উঠে আসা মানে বিজেপি দলের ভিতরে রাজনৈতিক প্রার্থী নেই, সেটাই বলার চেষ্টা করেছেন দেবাশিস ভট্টাচার্য। কিন্তু এই সংস্কৃতি তো আজকের নয়! মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী না হলেও, বিভিন্ন অরাজনৈতিক ব্যক্তি নানা সময়ে এই বাংলাতেই বিভিন্ন দলের হয়ে নির্বাচনে লড়েছেন। কংগ্রেস, বামফ্রন্ট সকলেই তাঁদের প্রার্থী করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসও চিত্রতারকাদের বিভিন্ন লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। কেন, ওই অঞ্চলে শাসক দলের কোনও মুখ ছিল না? কে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবে, সেটা ওই রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ব্যাপার। মানুষ যদি মেনে নেয়, ভাল। নয়তো সিদ্ধান্তের ঠাঁই হবে আঁস্তাকুড়ে।
তপন ভৌমিক
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
নতুন দল
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা জানিয়েছেন, “সৌরভ রাজনীতিতে যুক্ত হবেন কি না, তা বলতে পারব না। তবে এটা বিশ্বাস করি, যদি তিনি রাজনীতিতেও যান, শিখরেই (টপ) থাকবেন” (‘রাজনীতিতেও শীর্ষেই থাকবেন সৌরভ: ডোনা’, ৯-৭)। উক্তিটি ইঙ্গিতবাহী। খেলোয়াড়দের রাজনীতিতে যোগদান নতুন নয়। আমাদের উপমহাদেশেই কীর্তি আজাদ, মনোজ প্রভাকর, আজহারউদ্দিন, গৌতম গম্ভীর, অর্জুন রণতুঙ্গা, হাসান তিলকরত্নে, সরফরাজ নওয়াজ, ইমরান খান প্রমুখ এসেছেন রাজনীতিতে। একমাত্র ইমরান ছাড়া আর কেউ খুব একটা সফল নন। তার অন্যতম কারণ, তাঁরা কোনও না কোনও প্রতিষ্ঠিত দলে যোগদান করেছেন। সেই দলের সংস্কৃতির সঙ্গেই মানিয়ে নিতে হয়েছে। অনেককে দলের মধ্যে অপদস্থ হতে দেখেছি। তাঁদের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা অনেক হ্রাস পেয়েছে।
ইমরানের ব্যাপারটা ব্যতিক্রমী এই কারণে যে, তিনি প্রথম থেকেই নিজস্ব ক্যারিশ্মায় রাজনৈতিক দল তৈরি করে মাঠে নেমেছিলেন। আজ তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর খেলোয়াড় জীবনের মতোই রাজনৈতিক জীবন চূড়ান্ত সফল।
সৌরভের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা সহজাত। দল গঠনের ক্ষেত্রে বহু দিনের ‘কোটা সিস্টেম’-এর কুপ্রথাকে গুঁড়িয়ে, নিরপেক্ষ ভাবে দল গঠন করে, ভারতীয় দলকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দলে পরিণত করেছিলেন। তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতাও আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই আমি চাই না সৌরভ কোনও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলে যোগদান করুন। প্রতিটি দলই কুরুচিপূর্ণ, অপরাধপ্রবণ লোকদের দ্বারা পূর্ণ। যদি সৌরভের প্রতিষ্ঠিত দল দুর্নীতিমুক্ত সুশীল সমাজ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে পূর্ণ আস্থা রাখতে অসুবিধে নেই।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৫৭
সৎ, স্বচ্ছ
যোগ্য এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী ব্যক্তির নেতৃত্বই চায় দেশ তথা রাজ্য। আমাদের রাজ্য আজ পর্যন্ত যাঁদের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছে, তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও অবকাশই নেই। সৌরভ যদি রাজনীতিতে আসতে চান এবং তাঁর মতো ব্যক্তি যদি বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে সামনে আসে, তা হলে অবশ্যই স্বাগত। তবে বাইশ গজ নয়, এ ক্ষেত্রে ব্যাটিং করতে হবে তেইশ জেলা জুড়ে।
সত্যকিঙ্কর প্রতিহার
যমুনা দেশড়া, বাঁকুড়া
ভর্তুকির যুগ
‘সকলকে রেশন?’ চিঠিতে (১১-৭) পত্রলেখক বলেছেন, ‘‘রেশন যাঁদের দেওয়া হচ্ছে, তেমন বেশ কিছু পরিবারের মাসিক আয় পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ বা তার বেশি। ফলে রেশনের চালের অপব্যবহার হচ্ছে।’’ তাঁর বোধ হয় জানা নেই, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী অনেক পরিবারের কপালে জুটেছে এপিএল রেশন কার্ড। আর এমন বেশ কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের বাড়ি-গাড়ি কিছুরই অভাব না থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বিপিএল কার্ডের মালিক। অতএব কেন্দ্রের ফর্মুলা মেনে যদি পশ্চিমবঙ্গের ৬.১ কোটি মানুষকে রেশন দেওয়া হয়, তবে অন্তত দেড়-দু’কোটি দরিদ্র মানুষ রেশনের খাদ্যসামগ্রী থেকে বঞ্চিত হবেন, যা কখনওই কাম্য নয়।
একই ভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে, যে সব পরিবারে এক-দেড় লক্ষ টাকার বেশি মাসিক আয়, তাদের কেন ভর্তুকি-সহ রান্নার গ্যাস দেওয়া হচ্ছে? কেনই বা সেই সব পরিবারের লোকেরা লোকাল ও মেল-এক্সপ্রেস ট্রেনে অল্প মূল্যের টিকিটে যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছেন? আসলে যে গলদগুলো চলে আসছে দীর্ঘ দিন, কখনওই তার প্রতিকারের কথা ভেবে দেখে না কোনও সরকার। ফলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভর্তুকির ‘সদ্ব্যবহার’-এর প্রশ্নটা নিরর্থক হয়ে দাঁড়ায়।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত
ধাড়সা, হাওড়া
নুনের ছিটে
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের নিবন্ধ (‘কিছু একটা তো করতে হবে’, ৮-৭) প্রসঙ্গে এই চিঠি। চিন ভারতের ভূখণ্ড বিনা প্ররোচনায় দখল করেছে এবং ২০ জন জওয়ানকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। সমস্ত ভারতবাসী এই ব্যাপারে ব্যথিত। যতই আলোচনা চলুক, যুদ্ধের বিপদ এখনও ঘাড় থেকে নামেনি। অর্থনৈতিক এবং সামরিক, উভয় দিক থেকেই ভারত চিনের কাছে হেরে বসে আছে যুদ্ধের আগেই। যার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে যে ভারতের কোনও ভূখণ্ড কেউ দখল করেনি। আমাদের এমন দুর্দশা যে এখন যুদ্ধ এড়িয়ে বাফার জ়োনটুকু নিশ্চিত করাই চরম লক্ষ্য, যাতে চিনকে মে মাসের আগের অবস্থানে ফেরত পাঠানো যায়। এই পরিস্থিতিতে ভারতবাসীর ক্ষোভ স্বাভাবিক। তারই প্রতিফলন চিনা পণ্য বয়কটের ডাক। জনগণ সচেতন বলেই চিনের আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। ভারতীয়দের এই প্রতিক্রিয়াকে লেখক বর্ণনা করেছেন ‘ছাপোষা লড়াই’, ‘খেপাদের আস্ফালন’, ‘অন্ধ জাতীয়তাবাদের হুঙ্কার’ বলে। এক দিকে চিনের হাতে আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত, অপর দিকে নাগরিক মানসিকতার প্রতি শ্লেষ ও বিদ্রুপ— এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে।