পশ্চিমবঙ্গে স্মার্ট প্রিপেড মিটার বসানোর উদ্যোগ চলছে। ফাইল চিত্র।
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও স্মার্ট প্রিপেড মিটার বসানোর উদ্যোগ চলছে। রাজ্য সরকার দু’বছর আগে উচ্চ পর্যায়ের মিটিং করে এই মিটার বসানোর কাজ শুরু করেছে। প্রথমে সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্প বিদ্যুৎ-গ্রাহক, তার পর বাণিজ্যিক ও কৃষি বিদ্যুৎ গ্রাহকদের এবং শেষ পর্যন্ত গৃহস্থদের ক্ষেত্রে এই স্মার্ট প্রিপেড মিটার লাগানো হবে বলে জানা গেছে।
স্মার্ট প্রিপেড মিটারের নতুনত্ব কী? প্রথমত, কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করার আগেই গ্রাহকের বিদ্যুৎ লাইনে কানেক্টেড লোডের ভিত্তিতে আগাম টাকা জমা দিতে হবে। তার পর বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। টাকা শেষ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত, মাসিক বা ত্রৈমাসিক বিলে বর্তমানে মিটার ভাড়া, গভর্নমেন্ট ডিউটি, এনার্জি চার্জ পূর্ববর্তী রিডিং, বর্তমান রিডিং-এর ব্যবধানের ভিত্তিতে (ব্যবহৃত ইউনিট ধরে) মাসুলের হার নির্ধারিত হয়। এবং বণ্টন কোম্পানি ও গ্রাহকের যৌথ পর্যবেক্ষণের মধ্যে বিষয়টা থাকে। কিন্তু স্মার্ট মিটার চালু হলে পুরো বিষয়টা গ্রাহকের কাছে অন্ধকারে থেকে যাবে। এখন যেমন মিটার খারাপ হলে, কোনও সমস্যা দেখা দিলে গ্রাহক বুঝতে পারেন এবং প্রতিকার চাইতে পারেন, ওখানে তার সুযোগ খর্ব হবে। কোম্পানির দ্বারা গ্রাহকের কাছ থেকে যথেচ্ছ টাকা আদায়ের সুযোগ করে দেওয়া হবে। এমনটা সম্প্রতি অসমে ঘটেছে। কিছু দিন আগে সেই রাজ্যের সরকার স্মার্ট মিটার চালু করার পরই রাজ্যবাসীর বিদ্যুৎ বিল অবিশ্বাস্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। গ্রাহকদের প্রবল বিরোধিতার সামনে পড়ে পিছু হটে শেষ পর্যন্ত সরকারকে স্মার্ট মিটার প্রত্যাহার করতে হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যেও এমন ঘটনা ঘটছে।
তৃতীয়ত, ভুক্তভোগী গ্রাহকরা তিক্ত অভিজ্ঞতায় জানেন, পশ্চিমবঙ্গে (অন্য রাজ্যেও) খারাপ মিটার বা বন্ধ মিটার পরিবর্তন করানো বা সেই সব মিটার থেকে উদ্ভূত অন্যায্য বিদ্যুৎ বিল সংশোধন করানো কী ভীষণ কষ্টসাধ্য, সময়সাধ্য ও অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভবও। স্মার্ট প্রিপেড মিটার চালু হলে তখনকার অস্বচ্ছ পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য গ্রাহক-হয়রানির কথা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।
চতুর্থত, যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাটাই চরম অপদার্থতা, কন্ট্রাক্টররাজ, মধ্যবর্তী দালালরাজ, চুক্তিমাফিক ভোল্টেজে বিদ্যুৎ না দেওয়া, ট্রান্সফরমার বা মিটার খারাপ হলে দিনের পর দিন ফেলে রাখা, গ্রাহকদের অভিযোগে কর্ণপাত না করা— এ সব নিয়েই বহাল তবিয়তে চলছে, সেখানে এই সব পরিষেবার দিকটাকে স্মার্ট না করে হঠাৎ মিটারটাকে স্মার্ট করে দেওয়ার কথা কেন আসছে? বিদ্যুৎ আইন ২০০৩-এর ১৪নং ধারায় বিদ্যুৎ বণ্টনে একাধিক বেসরকারি সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়ার বিধি রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে বেসরকারি কোম্পানিগুলির হাতে ছেড়ে দিয়ে তাদের লুটের স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার পুরোপুরি সহায়ক হবে এই স্মার্ট প্রিপেড মিটার।
সুশান্ত পাত্র, কলকাতা-১০
দুর্ব্যবহার
আমি এক জন নিত্যযাত্রী। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে প্রতি দিন যাতায়াত করতে হয় শহরতলি থেকে। বজবজ থেকে পার্ক সার্কাস রেলস্টেশনে নেমে প্রতি দিন অফিস যাওয়া রীতিমতো এক যুদ্ধযাত্রা। কখনও কিছু শাটল গাড়ি পাওয়া যায়, আবার মাঝেমধ্যেই তারা কর্পূরের মতো উবে যায়। কোথায় যায়, কেন যায়, কেউ জানে না! সম্প্রতি কোনও শাটল গাড়ি না পেয়ে একটি ডব্লিউবিটিসি-র এসি বাসে উঠেছিলাম। সাধারণত এই পথে যে বাস যায় সেটি এসি ১২। সেটিও সরকারি পরিবহণ সংস্থার বাতানুকূল বাস। সেখানে ২৫ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায় সেক্টর ফাইভ (কলেজ মোড়) পর্যন্ত। ওই নতুন রুটের বাসের কন্ডাক্টরকে পঞ্চাশ টাকার নোট দিলে তিনি ৩৫ টাকা ভাড়া হিসাবে নিয়ে ফেরত দেন ১৫ টাকা। কারণ জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন, এই স্টেট বাসে এই ভাড়াই লাগবে। তাঁর আচরণে ছিল রীতিমতো ঔদ্ধত্যের ছোঁয়া। আচরণটা এমন, যেন আমরা বাসযাত্রীরা মহা অপরাধ করেছি বাসে চড়ে। দু’-চার কথার পর যখন রেট চার্ট দেখতে চাইলাম, তখন ভদ্রলোক নিজের মোবাইল ফোনে খোঁজাখুঁজি করে একটি ছবি দেখালেন। ছবিটি একটি কাগজের। যেখানে কোনও সরকারি পরিবহণ সংস্থার নাম, ঠিকানা ছিল না। ছিল না কোনও উপযুক্ত ব্যক্তির স্বাক্ষর কিংবা সিল। সেখানেই কিছু ভাড়ার তালিকা লেখা ছিল। তার পর রীতিমতো অশালীন কথাবার্তা শুরু করলেন। নিজের সম্মান বাঁচাতে ওঁর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার প্রবৃত্তি হয়নি। ওঁর ছবি তুলে অফিসে পৌঁছে পরিবহণ সংস্থার ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে অভিযোগও জানাই। জানি না কর্তৃপক্ষ আদৌ কোনও পদক্ষেপ করবে কি না। ভিন্ন রুট নম্বরে দু’রকম ভাড়া যদিও হয়, তার যথাযথ রেট চার্ট কেন থাকবে না কন্ডাক্টরের কাছে? সরকারি কর্মচারী হলেও তাঁর কি যাত্রীদের সঙ্গে এমন উদ্ধত আচরণ করার অধিকার আছে?
শুভাশিস ঘোষ, কলকাতা-১৩৭
আগুন জ্বলছে
মহেশতলা পুরসভার অন্তর্গত সারেঙ্গাবাদে জঞ্জাল ফেলার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে গত এক মাস ধরে আগুন জ্বলছে। ফলস্বরূপ আশপাশের বাসিন্দারা নরক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। গ্রীষ্মের দাবদাহের সঙ্গে এই নিরন্তর আগুন জ্বলার ফলে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়েছে, পরিবেশ দূষণ মাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ নাগরিকেরা সঙ্কটের মধ্যে আছেন। এলাকাবাসীরা এই প্রচণ্ড গরমেও দূষিত বায়ু ও প্লাস্টিক পোড়ার বেয়াড়া গন্ধের কারণে জানলার আগল মুক্ত করতে পারছেন না। অনেকেই চোখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় জর্জরিত। মহেশতলা পুরসভা, পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তরে অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা অপারগ হয়ে রাস্তা অবরোধ করেন এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে ও স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে সেই অবরোধ ওঠানো হয়। কিন্তু আগুন এখনও নেবেনি এবং প্রশাসনের তরফে এর প্রতিকারে এখনও পর্যন্ত কোনও সদর্থক ভূমিকা দেখা যায়নি। প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে আবেদন, ঘটনার গুরুত্ব অনুভব করে যথাযথ ব্যবস্থা করে স্থানীয় জনসাধারণকে অস্বাভাবিক দূষণের হাত থেকে রক্ষা করুন।
সুকোমল মাশ্চরক, মহেশতলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কমুক কর
সম্প্রতি ব্যক্তিগত কাজে নিজের গাড়িতে শান্তিনিকেতন গিয়েছিলাম। পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর থেকে শান্তিনিকেতন যাওয়ার সময় টোল ট্যাক্স দিলাম ১৭০ টাকা। আসার সময় তার রসিদ দেখালেও পুনরায় একই টাকা দিয়ে রসিদ কাটতে হল। অর্থাৎ, যাওয়া-আসার দরুন একই দিনে একই জায়গায় ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি আমার কাছ থেকে ৩৪০ টাকা টোল ট্যাক্স নিল। একই রকম ভাবে রাজ্য সড়কের এক জায়গায় টোল ট্যাক্স, আসা-যাওয়ার দরুন ডাবল টাকা নিল। সেখানে পড়ল চল্লিশ টাকা।
তা হলে শুধুমাত্র যাওয়া-আসার দরুনই আমাকে টোল ট্যাক্স দিতে হল ৩৮০ টাকা। একই দিনে যাওয়া-আসা করলে অন্তত এই রেট কিছুটা কম হবে— এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই আমাকে দ্বিগুণ টাকা দিতে হল। ব্যক্তিগত গাড়ি হোক অথবা ব্যবসায়িক, অন্তত এক দিনে ফিরে এলে টোল ট্যাক্স এক বারই নেওয়া হোক। এতে যেমন ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক কিছুটা সুরাহা পাবেন, তেমনই ব্যবসায়িক গাড়ির ক্ষেত্রে টোল ট্যাক্স কমলে জিনিসপত্রের দামেও কিছুটা কমতি হবে। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সরকারের অন্তত উচিত, যে সমস্ত জায়গায় কর কমালে জনসাধারণ সরাসরি উপকৃত হবেন, সেই সব জায়গায় কর কমানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা।
কৌশিক সরকার, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া