COVID-19

সম্পাদক সমীপেষু: প্রবীণদের বিপদ

যে প্রবীণের বাড়ি নেই বা পরিবারের কেউ নেই, তিনি দৈনিক রোজগারে না বেরোলে খাবার জুটবে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ০০:০৩
Share:

করোনায় বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি প্রবীণদের। কেন্দ্রীয় মন্ত্রক সোশ্যল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট ১৩ এপ্রিল সব রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন, ১৮ লক্ষ অসহায়, গৃহহীন ও পরিবার-পরিত্যক্ত প্রবীণকে করোনা সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে যেন কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা পালন করা হয়। কিন্তু এই সরকারি নির্দেশ সরকারি সাহায্য ব্যতিরেকে কতটুকু মানা সম্ভব? যে প্রবীণের বাড়ি নেই বা পরিবারের কেউ নেই, তিনি দৈনিক রোজগারে না বেরোলে খাবার জুটবে? আর, গৃহহীনের আবাসে অর্গল দিয়ে ভাইরাস আটকানো যায় না। তা ছাড়া, ভিক্ষের চাল কাঁড়া না আকাঁড়া যেখানে, সেখানে পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার দিবাস্বপ্ন।

Advertisement

অতীশ ঘোষ, মুখ্য প্রচারক, সিনিয়র সিটিজ়েন ফোরাম, মাখলা, হুগলি

Advertisement

অমানবিক

এই বিপদের দিনে সরকারের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে বহু স্বেচ্ছাসেবী যুবক। তারা নিজেরা চাঁদা তুলে গরিব মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে চাল, ডাল, আলু, তেল প্রভৃতি। কেউ কেউ লকডাউনে ভিন রাজ্যে চিকিৎসার জন্য আটকে থাকা শ্রমিকের হাসপাতালের বিল মেটাচ্ছে। এই সময় এক অদ্ভুত অমানবিক চিত্র দেখা গেল ১৫ এপ্রিল। এখানে অনেকগুলি ইটভাটা আছে। ছেলেরা আগে গিয়ে শ্রমিকদের নামধাম নিয়ে এসেছে। তাঁরা বেশির ভাগই বিহার ঝাড়খণ্ডের নিম্নবর্ণের মানুষ। তাঁদের কোনও রেশন কার্ড নেই। এখন তাঁরা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এ রকম শতাধিক মানুষের জন্য ৫ কেজি করে চাল, আলু, আটা, ১ কেজি ডাল, সাবান প্রভৃতি নিয়ে বেলা ১১টায় একটি ভাটায় তিনটি টোটো ও গাড়ি নিয়ে যায় ছেলেরা। গিয়ে দেখে গেট বন্ধ। ম্যানেজার বলেন, মালিকের হুকুম, কোনও ত্রাণ নেওয়া হবে না। কিছু পরে মালিক এসে একই কথা জানান। ছেলেরা বলে, তারা শ্রমিকদের দিতে এসেছে, মালিককে নয়। তাতেও মালিকের মন গলেনি। অসহায় মানুষগুলি গেটের ও-ধারে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। জানা যায়, এই সব মানুষকে ১০০০ ইট বইয়ে মাত্র ১৩৫ টাকা দেওয়া হয় রোজ। ঠিকাদার পায় ১৫ টাকা। আর এখন কাজ বন্ধের সময় এই টাকা অগ্রিম দিয়ে, পরে কাজ করিয়ে উশুল করে নেওয়া হবে। ছেলেরা পাশের ভাটাতেও খোঁজ নিয়ে দেখে, সব মালিক এ বিষয়ে এককাট্টা। কেউ নিতে রাজি হন না। গ্রামেও জানিয়ে কোন সুরাহা হয় না। তখন ওরা বাধ্য হয়ে অন্যান্য জায়গায় গরিবদের হাতে সামগ্রীগুলি তুলে দিয়ে বাড়ি ফেরে বিকেল গড়িয়ে।

সমর সিংহ, হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর

তা বলে এই

টিভিতে যখন দেখি বা কাগজেও ছবি বেরোয়: কাউকে রাস্তায় সকলের সামনে কান ধরে ওঠবোস করানো হচ্ছে লকডাউন ভাঙার অপরাধে, তখন একটা ধাক্কা লাগে। যিনি লকডাউন ভাঙছেন, তিনি নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ করছেন, কিন্তু পুলিশ তা বলে তাঁকে ওই ভাবে শাস্তি দেবে? ওই ছবি তো সোশ্যাল মিডিয়াতেও ঘুরবে। ওই ব্যক্তির আত্মীয়রাও ছবিটি দেখবেন, বন্ধুরাও। লোকটির লজ্জা, কষ্টের সঙ্গে, তাঁদের কষ্টও বুঝতে হবে। ঘটনাটি মানবিক অধিকারের চূড়ান্ত অবমাননা। সেই এক্তিয়ার কি পুলিশবন্ধুদের আছে?

প্রদীপ কুমার দাস, শ্রীরামপুর, হুগলি

অন্ধকার সময়

অদ্ভুত এক সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা। সভ্য সমাজের মুখোশটা প্রতিটি মুহূর্তে খুলে যাচ্ছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন সমাজটাকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে, তখন কিছু মানুষ অমানুষিক কাজ করছেন, বাস্তুচ্যুত করেছেন তাঁদের। কিছু মানুষ নিজেরাই মাতব্বরি করে ঠিক করে দিচ্ছেন কোন স্বাস্থ্যকর্মীকে গৃহচ্যুত করতে হবে, কাকে দেখে করোনা-আক্রান্ত এই সন্দেহের বশে মাথা ফাটিয়ে দিতে হবে। মধ্যপ্রদেশে ঘটে যাওয়া এক ঘটনায় দেখা গেল, বাড়ির ছাদ থেকে কয়েক জন মহিলা ইট ছুড়ে মারছেন উপস্থিত পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। খুব জানতে ইচ্ছে করে, যাঁরা এই পাশবিক ঘটনা ঘটালেন, একই ঘটনা যদি তাঁদের প্রিয়জনদের ক্ষেত্রে ঘটত, তবে তাঁদের প্রতিক্রিয়া কি হত ? করোনা আতঙ্কে মানুষকে গাছতলায়, নৌকায়, পার্কে অবর্ণনীয় অবস্থায় কাটাতে দেখছি আমরা। বাংলাদেশে অসুস্থ বৃদ্ধা মা’কে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেল সন্তানরা। কালের নিয়মেই এক দিন মুছে যাবে করোনা। সমাজের অমানবিকতার এই দগদগে ক্ষতগুলো মুছবে কি?

কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা

যত দোষ

মিলন দত্তর লেখা ‘তবলিগি জামাতের ইতিবৃত্ত’ (১৭-৪) নিবন্ধ পড়ে অনেকেই সমৃদ্ধ হবেন, আশা রাখি। নিজামুদ্দিনের ঘটনার পর মিডিয়ার একটা অংশ এমন ভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে, তাতে কিছু মানুষের মনের গভীরে এটাই গেঁথে গেছে যে, ভারতে করোনাভাইরাসের এক মাত্র জনক, ধারক ও বাহক মুসলিমগণ। এর আগে করোনা নিয়ে আলোচনা ও খবরগুলি যেন ঠিক জমত না। ভারতে সবচেয়ে বড় রাজনীতি করার অ্যাজেন্ডা হল, সব কিছুতে শেষ পর্যন্ত ধর্মের রং লাগানো। সত্যি-মিথ্যা যাচাই করার কোনও প্রয়োজন নেই। কিছু দিন তো এই নিয়ে চালিয়ে দেওয়া যাবে। পরে ছোট করে ক্ষমা চাওয়া যাবে। তবে, লেখায় আছে, জামাতে থাকাকালীন বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ। এমন নিয়ম নেই। যোগাযোগ রাখাই যেতে পারে। আসলে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বললে অনেক সময় মন খারাপ হয়ে যায়। ধর্মীয় কাজে মন বসানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই যোগাযোগ কম রাখার অনুরোধ করা হয়।

আনিসুল হক, নজরুল পল্লি, পূর্ব বর্ধমান

সম্প্রদায়-বিদ্বেষ

মহারাষ্ট্রে শিরদি সাঁইবাবা আশ্রম থেকে আরম্ভ করে কেরলে আরাট্টু উৎসব বা উত্তরপ্রদেশে অযোধ্যায় ‘রামলাল্লা’ আরাধনায় জনসমাগম দেখেও দেখব না, চোখে পড়বে শুধু নিজামুদ্দিন মসজিদ, যেখানকার ধর্মীয় সমাবেশ শুধু কেন্দ্রের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের অনুমতি গ্রহণ করেই সংগঠিত হয়নি, উপরোক্ত হিন্দু জনসমাগমগুলির আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল! তা সত্ত্বেও কী অসম্ভব সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ কৃত্রিম ভাবে প্রস্তুত করা হল।

অতি সম্প্রতি পাতিয়ালার বুকে শিখদের এক দল লকডাউনের বিধিনিষেধকে না মেনেই ক্ষান্ত হল না; তাদের আইনভঙ্গের প্রতিরোধ করার ‘অপরাধে’ তারা পুলিশের উপর চড়াও হল। পুলিশের উপর গুলিচালনাও হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি যদি অংশতও সত্য হয়, তবে তা প্রতিবাদযোগ্য। যদিও তেমন প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। প্রসঙ্গত, এই ক্ষেত্রেও যাঁরা দুষ্কর্ম করেছিলেন, তাঁদের কাজের সঙ্গে ধর্মের কোনও সংযোগ নেই, সেই প্রসঙ্গ উত্থাপিত হওয়া উচিতও নয়।

কিন্তু যদি ঘটনাচক্রে এই দুষ্কৃতীরা মুসলিম সম্প্রদায়ের হত! কী পরিমাণ ঘৃণার তরঙ্গ ছড়ানো হত, ভাবলেও উদ্বেগ হয়। যে দুষ্কৃতী দুষ্কর্ম করেছে, তাকে ছাপিয়ে গোটা মুসলিম সমাজের প্রতি ঘৃণা নিক্ষিপ্ত হতে দেখতাম আমরা।

কখনও উত্তর-পূর্ব ভারতীয়দের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন ‘চিনা’ হওয়ার ‘অভিযোগে’; কখনও বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের চরিত্রহনন এবং শুধুমাত্র সেই ধর্মাচরণ করার ‘অপরাধে’ নিরীহ দরিদ্রদের উপর পীড়ন, কখনও ঈশ্বরের রূপ নিয়ে আসা চিকিৎসক-নার্স-সেবা প্রদানকারীদের নিজ পাড়া থেকে বহিষ্কার! আবার এই ভারতেই— কাঁসর ঘন্টা থালা বাটি মোমবাতি মোবাইল বাজি পটকা সমেত ‘হম সব এক হ্যায়’-এর প্রদর্শনও চলছে।

কাজল চট্টোপাধ্যায়, সোদপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement