Salary Issues

সম্পাদক সমীপেষু: বেতন বৃদ্ধি কেন?

বাকি সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি বা মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে না কেন?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৩৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

‘চল্লিশ হাজার বেতন বৃদ্ধি মন্ত্রী-বিধায়কদের’ (৮-৯) শীর্ষক খবরে জানা গেল, বেতন-ভাতা মিলে পূর্ণমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিধায়কদের পাওয়া টাকার পরিমাণ হল যথাক্রমে এক লক্ষ বাহান্ন হাজার, এক লক্ষ একান্ন হাজার ন’শো, ও এক লক্ষ বারো হাজার। এই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা উত্থাপন করতে চাই। এই বৃদ্ধির কি খুব দরকার ছিল? এঁরা কি কেউ সরকারি চাকরির মতো নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন? জনগণের সেবার জন্য জনগণই ভোট দিয়ে এঁদের নির্বাচিত করেছেন। তা হলে এঁদের বেতন ভাতা কিসের? সাংসদের ক্ষেত্রেও তাই। অথচ, নিজেদের বেতন এঁরা নিজেরাই ঠিক করেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে তাঁদের কথা সরকার ভেবেছে। শুনেছি, এঁরা নাকি পেনশনও পান। তা হলে বাকি সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি বা মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে না কেন? যে রাজ্যে এত দেনা, যার সুদ মেটাতে জনগণের কাছ থেকে আদায় করা করের টাকা সরকারি কোষাগার থেকে সব চলে যায় বলে সরকারের দাবি, সেখানে সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিধায়কদের দিতে বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসবে? সরকারি চাকরি করেন না যাঁরা, তাঁদের চলছে কী করে, তার খবর কতটুকু রাখেন এঁরা?

Advertisement

যদি জানতেন, তা হলে এর বিরুদ্ধে হয়তো প্রতিবাদ করতেন। এসইউসিআই(সি) দলের সাংসদ তরুণ মণ্ডল এক সময় সংসদে দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করেছিলেন। অন্যান্য দলের সাংসদরা তাঁর বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আপনার প্রয়োজন নেই, আপনি নেবেন না। উনি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিয়েছিলেন, যদি আইনে না নেওয়ার বিধি থাকে, নেবেন না। আর যদি বাধ্যতামূলক ভাবে নিতে হয়, তবে সেই বর্ধিত টাকা সংসদ এলাকায় মেধাবী ছাত্রছাত্রী এবং দুঃস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য খরচ করবেন। করেওছিলেন তা। এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এই রাজ্যে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন শ্রমমন্ত্রী হিসাবে এসইউসিআই দলের নেতা প্রয়াত সুবোধ বন্দ্যোপাধ্যায় সবচেয়ে কম খরচ করেছিলেন বলে কথিত আছে। এখানে জনগণের প্রতি সহমর্মিতা, দায়িত্ব পালনই মূল কথা। জনগণের অর্থ যেমন খুশি খরচ করা যায় না। যেখানে দেশের মানুষের অবস্থা এতই খারাপ, তাঁদের জন্য সরকারের ভাবা উচিত।

বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া

Advertisement

দেশসেবা কই?

আজকে যাঁরা দেশসেবক বা সমাজসেবক হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন বা মানুষ তাঁদের প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন, যাঁদের মুখে ‘উন্নয়ন’-এর স্রোত বয়ে চলে, সেই উন্নয়ন আসলে কাদের? এক ধাক্কায় চল্লিশ হাজার টাকা বেতনবৃদ্ধি সেই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে। কিন্তু এ দেশে এমন সমাজসেবকরা বেতন তো পান-ই, পেনশনও পান। অথচ, এক সময় দেশসেবা বা সমাজসেবার ধর্ম ছিল ত্যাগের ধর্ম। যে ধর্মের পথে দেশবন্ধু, নেতাজি, ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা-সহ সব স্বাধীনতা সংগ্রামীই হেঁটেছেন। স্বাধীনতার ছিয়াত্তর বছর পরে সেই ত্যাগের আদর্শ কি এখন অচল? অথচ, ‘দেশসেবা’ কী— এ প্রশ্নে শরৎচন্দ্র এক প্রবন্ধে বলেছিলেন, “দেশসেবা কথার কথা নয়। দেশসেবা মানবের শ্রেষ্ঠ সাধনা। স্বার্থ-গন্ধ থাকবে না... প্রাণের ভয় পর্যন্ত থাকবে না, এক দিকে দেশসেবক নিজে, আরেকদিকে তার দেশ, মাঝে আর কিছু থাকবে না। যশ, অর্থ, দুঃখ, পাপ, পুণ্য, ভালো, মন্দ সব যে দেশের জন্য বলি দিতে পারবে, দেশসেবা তার দ্বারাই হবে।” আর কবিগুরু বলেছিলেন, “যে লোক দেশের প্রত্যেক লোকের মধ্যে সমগ্র দেশকে দেখিতে পায় না, সে মুখে যাহাই বলুক দেশকে যথার্থ ভাবে দেখে না।” আজকের এই দেশসেবকরা মানুষের সঙ্কটকে ঠিক ভাবে দেখতে পাননি বলেই নিজেদের সঙ্কটকে প্রশমিত করার চেষ্টার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন।

পাঠক মিত্র, কলকাতা-৩৪

কেন এত খরচ

চার দিকে বেকারত্বের হাহাকার। রাজ্য সরকারের অর্থনৈতিক সঙ্কট গভীর থেকে গভীরতর। সরকারি কর্মচারীরা ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। দিনেদুপুরে চাকরি চুরি হচ্ছে। এরই মাঝে নির্দ্বিধায় রাজ্যের বিধায়ক এবং মন্ত্রীদের বেতন বেড়ে গেল। এই বেতন বৃদ্ধির কোনও প্রয়োজন ছিল কি? এই বর্ধিত বেতন রাজ্যের প্রকৃত উন্নয়নে কি ব্যবহার করা যেত না? আমরা জানি, রাজনীতি মানে নিঃস্বার্থ সেবা। কিন্তু এই সেবার পিছনে মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতনবৃদ্ধি করে আত্মসেবাকে সিলমোহর দেওয়া হল। দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে পুজো কমিটিগুলিকেও যে অনুদান দেওয়া হল, তারও কি খুব প্রয়োজনীতা আছে? কারণ, এই সরকার আসার আগে থেকেই কলকাতা এবং শহরতলির পুজোগুলি নিজের চেষ্টাতেই স্বনির্ভর। তবু শারদোৎসবকে বকলমে শাসক দলের কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যেই পুজো কমিটিগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হল।

এ দিকে রাজ্যের সাধারণ দরিদ্র মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন সংগ্রহ করতে পারেন কি না, সন্দেহ। যেখানে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ৫০০ টাকা, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা বর্তমান বাজারদরকে লজ্জা দেয়, সেখানে কোন মুখে রাজ্যের মন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন ঊর্ধ্বমুখী হয়? এমনিতেই রাজ্যের মন্ত্রী এবং বিধায়করা নানা সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তা সত্ত্বেও প্রায়শই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছেন তাঁরা। যখন-তখন তাঁদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ইডি, সিবিআই-এর চিঠি। ফলে প্রশ্ন উঠবেই বেতনবৃদ্ধি নিয়ে।

কুন্তল চক্রবর্তী, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা

দ্বিচারিতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় ঘোষণা করেছেন, এ রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের মাসিক চল্লিশ হাজার টাকা করে বেতন বৃদ্ধি পাবে। এই বিষয়ে তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, অন্য অনেক রাজ্যের চেয়ে এই রাজ্যে মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন-ভাতা অনেক কম। তাঁর যুক্তিকে মান্যতা দিয়ে প্রশ্ন করতে হয়, ডিএ বকেয়া থাকার কারণে এ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের বেতনও অন্য অনেক রাজ্যের চেয়ে কম। তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য বকেয়া ডিএ-র দাবিতে ধর্না আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতে মামলা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বকেয়া ডিএ দিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিএ দেওয়া আটকাতে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। এই বকেয়া ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের যুক্তি, অর্থাভাব। কেন্দ্র লক্ষ কোটি টাকা রাজ্যের পাওনা অন্যায় ভাবে আটকে রেখেছে। তার মধ্যেও রাজ্য সরকার অসংখ্য জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। ডিএ দিতে গেলে সেই সব প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। শাসক দলের কেউ কেউ বলছেন, কেন্দ্র থেকে বকেয়া পাওনা আদায় করে এনে দিতে পারলে ডিএ দিতে অসুবিধা হবে না। শুধু রাজ্যের স্থায়ী কর্মচারীদের ডিএ দেওয়া নয়, রাজ্যে অসংখ্য চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী আছেন, যাঁরা মাসিক পাঁচ-দশ হাজার টাকা বেতন বা সাম্মানিক নিয়ে সারা মাস কাজ করেন।

২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন সরকারি অফিসে এবং স্কুল-কলেজে নিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। যেটুকু হয়েছে, সেখানে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি সামনে এসেছে। কাজ চালানোর জন্য নিতান্ত প্রয়োজন হলে চুক্তিভিত্তিক অবসরপ্রাপ্ত বা চাকরিপ্রার্থীদের নামমাত্র বেতনে নিয়োগ করা হচ্ছে। সবের পিছনেই অর্থাভাবকে যুক্তি হিসাবে দাঁড় করানো হচ্ছে। অথচ, পুজো কমিটিগুলিকে পুজো অনুদান বা মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই অর্থাভাব বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে কাজের সাযুজ্য না থাকায় প্রশ্ন জাগে, বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে এমন দ্বিচারিতার কারণ কি অর্থাভাব, না কি আন্তরিকতার অভাব?

প্রদ্যোৎ পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement