Gender Inequality

সম্পাদক সমীপেষু: একচোখা বাজারও

আমাদের দেশে গত শতকের মাঝামাঝি থেকে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে শিক্ষিতা মেয়েরা কাজে আসতে থাকেন। এ দেশের গোঁড়া রক্ষণশীল সমাজে সে এক টানাপড়েনের সময়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:২৫
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

সীমন্তিনী মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘কয়েকটা নাছোড় প্রশ্ন’ (২০-১২) শ্রমের বাজারে লিঙ্গসাম্যের অভাব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিল। প্রবন্ধকার এ বছরের অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ক্লডিয়া গোল্ডিনের কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। শ্রমের বাজারে পিছিয়ে পড়ার দায় শুধু মেয়েদের নয়। ছেলেদের প্রতি কাজের বাজার একচোখা। মোকাবিলা করতে হলে মেয়েদের আরও প্রতিযোগিতামুখী হতে হবে, শ্রমের বাজারের
দরাদরির ক্ষেত্রে কঠিন মনোভাব দেখাতে হবে, বৈষম্যমূলক আচরণের কথা আরও বেশি করে প্রকাশ্যে আনতে হবে। ১৯৬৩ সালে বেটি ফ্রিডান লিখেছিলেন কলেজশিক্ষিতা, বাড়িতে থাকা বাচ্চার মায়েরা হতাশায় ভোগেন, যদিও তার এক দশকের মধ্যেই আমেরিকায় মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

Advertisement

আমাদের দেশে গত শতকের মাঝামাঝি থেকে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে শিক্ষিতা মেয়েরা কাজে আসতে থাকেন। এ দেশের গোঁড়া রক্ষণশীল সমাজে সে এক টানাপড়েনের সময়। সংসারের উপার্জনের প্রয়োজনে মহিলারা বাইরে কাজ করতে গেলে পুরুষের কর্তৃত্ব ফলানোর অহমিকায় টান পড়ে, অভ্যাসের আরাম কমে, ঘরের কাজেও হাত লাগাতে হয়। অনেক পুরুষই তখন বলেন, “করতে হবে না চাকরি, যে করে হোক আমিই চালিয়ে নেব সংসার।” শিক্ষা চাকরিতে অনেকটা সুযোগ পেয়েও মেয়েরা মানসিকতায় এগোতে পারেননি। নইলে পারিবারিক মূল্যবোধের দোহাই দিয়ে যে সব বস্তাপচা সিরিয়ালে মেয়েদের অবদমিত দেখানো হয়, সেগুলো দেখতে বসে? রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে এখন সন্তান হওয়ার পরে পিতৃত্বকালীন ছুটি, মায়েদের দু’বছরের জন্য ‘চাইল্ড কেয়ার লিভ’ দেওয়া হয়। তা হলেও মহিলারা প্রোমোশন নিয়ে উচ্চপদে যাচ্ছেন না কেন? কিছু বাস্তব সমস্যা আছে। দীর্ঘ দিন সরকারি ব্যাঙ্কে চাকরির অভিজ্ঞতায় দেখেছি, উচ্চপদের জন্য অফিসে বেশি সময় থাকলে সংসারে অশান্তি, প্রোমোশনের জন্য ট্রান্সফার হলে সংসার থেকেই বাধা আসে। “তোমার উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে সন্তানপালন জরুরি”— এমন কথা শুনতে হয়। আগে মানসিকতার বদল দরকার। আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে নিজের অধিকার বুঝে নিতে হবে।

শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

গীতার মর্ম

ক্রিসমাসের প্রাক্কালে ব্রিগেড ময়দানে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ হল, তা নিয়ে বিতর্ক জমে উঠল। বিতর্ক আর বিনোদন এখন মুদ্রার এ-পিঠ আর ও-পিঠ। অনেকেই বলছেন, রাজনীতির ময়দানে এ ভাবে গীতাকে টেনে নামানো অন্যায়, অনুচিত ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ গীতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, যুদ্ধের ময়দানে তুমুল যুদ্ধ শুরুর আগে যে গীতার মতো গভীর দর্শন শোনানো হতে পারে, এটা ভারতবর্ষের পক্ষেই সম্ভব। সেখানে রাজনীতির ময়দানে, বিশেষ করে যখন ‘রাজনীতির যুদ্ধ’ (আসন্ন লোকসভার ভোট, ভোট তো এখন এক প্রকার যুদ্ধই) শুরু হতে চলেছে, লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ তো স্বাভাবিক ঘটনা। যুদ্ধের ময়দান আর রাজনীতির ময়দান আজ একাকার।

তা ছাড়া ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। যে কোনও ধর্মের মানুষ প্রকাশ্যে তাঁদের নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ পাঠ কি‌ংবা প্রচার করতেই পারেন। অচিরেই হয়তো এমন বৃহৎ সমাবেশে অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষও এই পথ অনুসরণ করে তাঁদের নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ পাঠ করবেন। ভারতের সংবিধান সবাইকেই এই স্বাধীনতা দিয়ে থাকে।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভাল। সেটাই একটু উল্টেপাল্টে যদি এ ভাবে বলি, রাজনীতির ময়দানে গালভরা বচন আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বদলে ধর্মগ্রন্থ পাঠই বরং ভাল। তা ছাড়া গীতা এমনই এক গ্রন্থ, যা যুগে যুগে বহু দেশের বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, মানসিক শক্তি জুগিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের পরিবারের কথাই যদি ধরি, প্রচলিত হিন্দু ধর্মকে তাঁরা ত্যাগ করেছেন। জোড়াসাঁকোয় সব রকম পুজো বন্ধ করেছেন। তবুও গীতাচর্চা বন্ধ করেননি। রবীন্দ্রনাথের মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যাঁর উদ্যোগে গীতা অনুবাদ, ব্যাখ্যা-সহ প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন, “গীতা জ্ঞানমার্গাবলম্বী এবং গীতা কোন সাম্প্রদায়িকতার গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ নহে। জ্ঞানী-অজ্ঞান, পণ্ডিত-মূর্খ শ্রেষ্ঠ-কনিষ্ঠ অধিকারী সকলেই— স্ব স্ব বুদ্ধি ও যোগ্যতা অনুসারে তাহার অগাধ ভাণ্ডার হইতে আধ্যাত্মিক অন্ন গ্রহণ করিয়া থাকেন।” সত্যিই তো, গীতা কেন বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে! এপিজে আব্দুল কালাম তো গীতার শ্লোক মুখস্থ বলতে পারতেন। যুগে যুগে বহু পণ্ডিত, জ্ঞানী মানুষের সংযোজনে জন্ম হয়েছে গ্রন্থ-গীতার। এর ফলে এই গ্রন্থের জ্ঞান গভীরতা আরও বেড়েছে।

এখন প্রশ্ন হল, এমন গভীর দর্শন মহা সমারোহে লক্ষ কণ্ঠে আবৃত্তি করার অসুবিধা কোথায়? যদি এটা রাজনীতির আস্ফালন হয়, তবে অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি গীতার প্রকৃত মর্মার্থ অনুধাবন করতে হয়, তবে নিভৃতে পাঠই প্রয়োজন। গীতার তৃতীয় অধ্যায়ে যজ্ঞের স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষ হোমের দ্বারা দেবতাদের তৃপ্তি সাধন করবে। দেবতারাও তুষ্ট হয়ে বৃষ্টি দান করে মানব সভ্যতাকে পোষণ করবে। আধুনিক যুগে এ ভাবে যজ্ঞে ঘৃতাহুতি দিয়ে বৃষ্টি আনার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। গীতায় আসলে পারস্পরিক আদানপ্রদানের উপরেই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সূর্য গ্রহ নক্ষত্রকে উত্তাপ প্রদান করছে, আবার গ্রহরাও পরস্পরের আকর্ষণের মাধ্যমে সূর্যকে ধরে রাখছে। সমুদ্র থেকেই মেঘের জন্ম হচ্ছে, আবার সেই মেঘ থেকেই জল গ্রহণ করে সমুদ্র উজ্জীবিত হচ্ছে। এটাই গীতায় ভাবার্থে আদানপ্রদান তত্ত্ব। এখানে যজ্ঞ, ঘি, বৃষ্টি ইত্যাদি উপেক্ষা না করলে মূল তত্ত্বে পৌঁছনো সম্ভব নয়।

আমার শিক্ষক ত্রিপুরেশ্বর ভট্টাচার্য একটা কথা প্রায়ই বলতেন, মিষ্টির দোকানে রসগোল্লার কড়াইয়ে পিঁপড়ে দেখেছিস? অসংখ্য পিঁপড়ে রসের কড়াইয়ে মরে পড়ে আছে। ওরা কিন্তু রসগোল্লা খাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু চার পাশে অগাধ রসের মোহে পড়ে রস গিলে পেট ফেটেই মরে গেল। রসগোল্লা আর খাওয়া হল না। লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠে এমনটা হবে না তো? গীতার গভীর মর্মার্থ লক্ষ জনতার কোলাহলে পথ হারাবে না তো? যার জন্য গীতার অনুবাদক রাজশেখর বসু বলেছিলেন, জনগণকে গীতা মুখস্থ করিয়ে লাভ নেই।

সুদীপ বসু, কলকাতা-১১৮

চাই তদন্ত

‘আইপিএস-দের সম্পত্তির হিসাব তলব কেন্দ্রের’ (১৮-১২) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে বলি, এটা নিতান্তই প্রশাসনিক রুটিন ব্যাপার, যা রিপোর্টে উল্লেখও করা হয়েছে।

দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রের প্রাথমিক শর্ত প্রশাসন যন্ত্রের মূল কাঠামো, কর্মীদের সততা। সার্ভিস কন্ডাক্ট রুল অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় এবং রাজ‍্য সরকারি কর্মীদের প্রতি বছর নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে সম্পত্তির খতিয়ান দাখিল করা বাধ‍্যতামূলক। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির পরিমাণ নিরূপণে এই খতিয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুর্নীতি দমনের মূল সংস্থা রাজ‍্য ভিজিল্যান্স কমিশনে প্রয়োজনীয় সংখ‍্যক কর্মী এবং তদন্ত আধিকারিকের অভাবে অসৎ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা করা কতটা ঢিমেতালে চলছে, তার প্রমাণ নিয়োগ দুর্নীতি-সহ অন‍্য দুর্নীতিতে বেশ কয়েক জন সরকারি কর্মী এবং আধিকারিকের প্রত‍্যক্ষ যোগ এবং স্ব-নামে ও বে-নামে তাঁদের অবৈধ সম্পত্তির পরিমাণ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দ্বারা তদন্ত না হলে এ সব হয়তো লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যেত। প্রশাসনের উঁচু তলায়ও যে এই বিষবৃক্ষ বিস্তার লাভ করেছে, তা বিএসএফ-এর এক ডিজির গ্ৰেফতারিতেই প্রতীয়মান। রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ-সহ দুর্নীতি দমন সংস্থাকে সক্রিয় করা না হলে সরকারি কর্মীদের সম্পত্তির খতিয়ান ‘বস্তাপচা কাগজ’ ছাড়া কিছুই নয়।

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement