Pension

সম্পাদক সমীপেষু: মাত্র হাজার টাকা?

চার বছরের বেশি সময় ধরে দিদি চরম অর্থ সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আজকের দিনে এক হাজার টাকায় কারও সংসার চলে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:১১
Share:

ছেলের মৃত্যুজনিত কারণে ‘ডিপেন্ডেন্ট পেনশন’ পাননি মা। প্রতীকী ছবি।

আমার দিদির ছেলে উত্তর ২৪ পরগনার জঙ্গলপুর হাই স্কুলের শিক্ষক ছিল। ২০০৯ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে চাকরি পায়। তার পরেই কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে ও কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। সোদপুর থেকে জঙ্গলপুর যাতায়াত করতে সমস্যা হচ্ছিল বলে বাড়ির কাছে বদলির জন্য আবেদন করা হয়েছিল তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। কোনও সাড়া মেলেনি। ২০১৮ সালে আমার ভাগ্নে অকালে মারা যায়। তার মা ছেলের মৃত্যুজনিত কারণে ‘ডিপেন্ডেন্ট পেনশন’ পাননি। আমার জামাইবাবু একটি অসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন, তিনিও মারা গিয়েছেন। সেই সুবাদে দিদি মাসে এক হাজার টাকা পেনশন পান। কিন্তু ছেলের চাকরির পেনশন পাননি। বহু ফাইল চালাচালি হয়েছে। বলা হয়েছিল, ভাগ্নে প্রায় এক লক্ষ টাকা বাড়তি পেয়েছিল। সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এখন পেনশন দফতর বলছে, যে-হেতু দিদি ফ্যামিলি পেনশন পাচ্ছেন এক হাজার টাকা করে, তাই ডিপেন্ডেন্ট পেনশন পাবেন না। কিন্তু সরকারি দফতরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, এটা ঠিক নয়। আইনজীবীরাও বলছেন, এটা অযৌক্তিক। চার বছরের বেশি সময় ধরে দিদি চরম অর্থ সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আজকের দিনে এক হাজার টাকায় কারও সংসার চলে? পেনশন না পেলে দিদি না খেতে পেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন। সরকারের কাছে আবেদন, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি দেখা হোক।

দেবাশিস দাশগুপ্ত, কলকাতা-৩৭

Advertisement

শ্রমিকদের স্বার্থে

ভারতে ইউপিএ সরকারের আমলে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল, গ্রামের দরিদ্র মানুষদের একশো দিনের কাজের প্রকল্প। সেই লক্ষ্যে ২০০৪ সালে সংসদে ও রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হয় এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্প আইন তৈরি হয়। দক্ষ ও অদক্ষ— দু’ধরনের মজুরির ব্যবস্থা করা হয়। প্রকল্পের দেখভালের জন্য বহু বেকার যুবক-যুবতীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হয়। পঞ্চায়েত থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত বহু অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। এঁদের বেতন কাঠামো ও ঘন ঘন বদলি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ও অসন্তোষ রয়েছে। মূলত প্রকল্পের সমস্ত কাজ রূপায়ণের জন্য একশো দিনের কাজে এই অস্থায়ী কর্মীদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এঁদের বেতন নিয়ে নানা কারচুপি চলছে।

প্রথম দিকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাটি কাটা, রাস্তা তৈরি, ড্রেন পরিষ্কার করা হত। পরবর্তী কালে উদ্যান পালন, কৃষি কাজ, আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরিতে কর্মী নিয়োগের মতো অনেক জনমুখী কাজ যুক্ত করা হয়। প্রকল্পের মাস্টার রোল তৈরি, জব কার্ড এন্ট্রি ও তার বিতরণ, মাটি, রাস্তা মাপ করা প্রভৃতি কাজ করেন পঞ্চায়েতের গ্রাম রোজগার সহায়ক। অথচ, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যেমন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা-১ ব্লকের গ্রাম রোজগার সহায়কদের চার বছরের মধ্যে বদলি করে দেওয়া হয়। ন্যূনতম বেতন দিয়ে কাজ করানো হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চাপে গ্রামের বিভিন্ন কাজে গরমিল ও কারচুপি হয়। এই প্রকল্পের দুর্নীতির কয়েকটা নমুনা নিয়ে আলোচনা করা যাক। ধরা যাক, পঞ্চায়েত সদস্য বা গ্রামের শাসক দলের নেতার পরিবারের সবার নামে জব কার্ড থাকবে। কিন্তু তাঁরা কেউ মাঠে কাজ করবেন না। তার পর চারশো শ্রমিকের মাস্টাররোল বেরোলে কাজ হবে দু’শো শ্রমিকের। ঢালাই রাস্তা হলে তা তৈরির জিনিসপত্র দেওয়া হবে নিম্নমানের। সেই নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কোনও কোনও জায়গায় পুকুর, ড্রেন, রাস্তার পরিকল্পনা ও টাকা বরাদ্দ হলেও বাস্তবায়িত না হওয়ার অভিযোগও আছে। অভিযোগগুলি সরেজমিনে তদন্ত করতে কিছু দিন আগে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্যে এসেছিলেন। এই প্রকল্পের কাজ করে বহু গরিব মানুষ জীবনযাপন করেন। গত দশ বছর পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের কাজ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পের টাকা নিয়ে লাগামছাড়া দুর্নীতিও হয়েছে। এমনকি এই প্রকল্পের টাকা অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী দল। কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্পের বরাদ্দ টাকার অডিট রিপোর্টও রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা আটকে রেখেছে। ফলে গ্রামের মানুষ খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকে কাজ করেও দীর্ঘ দিন মজুরি পাননি।

কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে বলে জনমানসে প্রচার করছে রাজ্য সরকার, কিন্তু হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে না। অথচ, বিভিন্ন দুর্নীতি ও গরু, কয়লা চুরির হাত থেকে নেতা-মন্ত্রীরা রেহাই পেতে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। সময় এসেছে এই সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার। সাধারণ মানুষ শ্রম দিয়ে মজুরি পাবেন, সেই টাকা রাজ্য সরকারের দোষে কেন্দ্রের আটকে রাখাটা বোধ হয় সমীচীন নয়। তাই গ্রামের গরিব মানুষের এবং গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এই বরাদ্দ অবিলম্বে দেওয়া হোক।

চিত্তরঞ্জন মান্না, চন্দ্রকোনা রোড, পশ্চিম মেদিনীপুর

রুট বদল

টালা ব্রিজ মেরামতির জন্য বিটি রোডের বাসগুলো আগে বাগবাজার ও পাইকপাড়া হয়ে চলাচল করত। যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাগবাজারগামী ৯৩, ২৪০ নম্বর বাসগুলো যথাক্রমে শ্যাম স্কোয়ার ও গ্যালিফ স্ট্রিটে দাঁড়াতে শুরু করে। ৭৯বি বাস ভূপেন বোস অ্যাভিনিউ দিয়ে বাগবাজার যাওয়ার পরিবর্তে যেতে শুরু করে গ্যালিফ স্ট্রিট দিয়ে। অন্য দিকে, পাইকপাড়া অঞ্চলে ৩বি, ৩ডি বাস ছাড়া ৪৭বি, ২১৯-এর মতো যে বাসগুলো আগে যেত, তারাও সবই শ্যামবাজারের দিকে যাওয়ার সময় যশোর রোড ব্যবহার করতে থাকে। এখন টালা ব্রিজ খুলে যাওয়ার পরও বাসগুলোর অস্থায়ী রুটই স্থায়ী রুট হয়ে গিয়েছে। ফলে পাইকপাড়া থেকে কোথাও যাওয়ার বাস যেমন কমে গিয়েছে, তেমনই শ্যামবাজার থেকে বাগবাজার যাওয়ার বাসও অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। বাসগুলো আগের রুটে চলাচল করলে অনেক মানুষ উপকৃত হবেন।

তারক নাথ ঘোষ , কলকাতা-

বিলম্ব কেন

হাওড়া-তারকেশ্বর লাইনে স্বাভাবিক রেল পরিষেবা কামারকুন্ডু স্টেশনে রেলব্রিজ আর লাইন সংস্কারের কারণে অথবা ‘অজানা’ কোনও কারণে স্থগিত থাকছে বার বার। দেড় বছরের অধিক সময়ে অনেক ট্রেন বাতিল হয়েছে। শম্বুক গতিকেও হারিয়ে চলছে রেলের সেই কাজ। মেয়াদ প্রথমে গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল, পরে তা আরও তিন মাস বর্ধিত হয়ে হল মে মাস। মে মাস থেকে পর পর বেড়ে তা অক্টোবর পর্যন্ত গড়ায়। পুজোর পরে আবার ঘোষণা করা হল যে, আগের বাতিল ট্রেনগুলো বাতিলই থাকছে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।

কর্তৃপক্ষের যুক্তি, যে-হেতু কামারকুন্ডুর আগে ও পরের, সিঙ্গুর থেকে নালিকুল দু’টি স্টেশনের মধ্যের অংশে সিঙ্গল লাইনে ট্রেন চলাচল করাতে হচ্ছে, তাই দিনের অন্য সময়ে তো বটেই, অফিস টাইমেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ গাড়ি এত দিন পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়েছে। রেলের কোনও সংস্কার প্রকল্পের কাজ কত দিন চলতে পারে, তা নির্ধারণে কি রেল কর্তারা অক্ষম? না কি, যে রেলপথে মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল নেই, শুধু লোকাল ট্রেনের যাত্রী পরিষেবাই বিদ্যমান, তার গুরুত্ব রেল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই? এই প্রকল্পের শুরুতেই ‘অনির্দিষ্টকাল এতগুলো ট্রেন বাতিল থাকবে’— এই মর্মে রেল ঘোষণা করে দিলে তা যুক্তিযুক্ত হত না কি? এক দশকের কিছু আগে শেওড়াফুলি থেকে তারকেশ্বর, পুরোটা সিঙ্গল লাইনেই চলত ট্রেন। এখন বাতিল প্রায় সব ট্রেনই সেই সময়ে চলত কী করে? রেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছু ভাবছে কি?

মধুসূদন দাশঘোষ, হরিপাল, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement