প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
সম্পাদকীয় ‘ন’বছর পরে’ (১-৬) বলেছে— বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ভারত কল্যাণরাষ্ট্রের মূলগত দর্শন থেকে ক্রমেই বিচ্যুত হয়েছে...। হ্যাঁ ঠিকই, সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বিরোধী দল হল রাষ্ট্রের ‘ছায়া সরকার’। দুঃখের কথা, গত ন’বছরে সরকারের সাফল্য নিয়ে মোদীজি হাজার সাফাই গাইলেও, কয়েক দিন আগে দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস কেন্দ্রের শাসক দলের যে ন’টি ব্যর্থতার দিক তুলে ধরেছে, সে ব্যাপারেও অভ্যাসমতো মৌনী থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। আশ্চর্য, শুধু বিরোধী দল কেন, কোনও বিশিষ্ট তথা গুণী ব্যক্তিদেরও কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। দেশের গভীর কৃষিসঙ্কট, মাত্রাহীন কর্মহীনতা, ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য, সংখ্যালঘু, দলিত এবং সমস্ত ধরনের বিরোধী কণ্ঠস্বরের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে দ্বিধা করেনি এই সরকার।
স্বাধীনতার পর গণতান্ত্রিক ভারতে নরেন্দ্র মোদীই এক জন প্রধানমন্ত্রী, যিনি সরকারের ন’বছরের মেয়াদকালে একটিও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। ২৮ মে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন হল। নতুন সংসদ ভবনে ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল হলটি আর স্থান পেল না। পরিবর্তে নতুন সংসদ ভবনের লোকসভা হলটি যৌথ অধিবেশনের জন্য তৈরি করা হল। সাংসদদের সঙ্গে সাংবাদিকদের আলোচনা/আড্ডার পরিসরটা তুলে দিয়ে অবজ্ঞা করা হল সাংবাদিকদের অনিবার্য অধিকার।
অতীতে দেখা গিয়েছে, ‘মিডিয়া ফ্রেন্ডলি’ মন্ত্রীরা মিডিয়ার ভিড় না-দেখলে কেমন যেন অস্বস্তিতে পড়তেন। রাজনীতিতে তাঁদের যেমন মিডিয়াকে প্রয়োজন, মিডিয়ারও প্রয়োজন তাঁদের। তাই অধিবেশন চলাকালীন সেন্ট্রাল হল জুড়ে দেখা যেত এক-এক জন নেতা বা মন্ত্রীকে ঘিরে এক-একটি ছোটখাটো বৃত্ত। আগামী দিনে সেই ছবি আর দেখা যাবে না। অর্থাৎ, সাংবাদিকদের দূরে সরিয়ে রাখা, যা ছিল মোদীজির নিজস্ব রীতি, নতুন সংসদ ভবন যেন মেন নিল সেটাই। আশ্চর্য, প্রধানমন্ত্রীর এ-হেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের তথা সংবাদ সংস্থার তরফে কোনও প্রতিবাদ বর্ষিত হল না। মোদীজি সহজে ফাঁকা মাঠে গোল করার মতো ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে দিলেন সেন্ট্রাল হলকে।
সবুজ সান্যাল, ধাড়সা, হাওড়া
সাফল্যের হিসাব
দেশে ঘটা করে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের ন’বছর পূর্তির অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই উপলক্ষে বলেছেন, ন’বছর সরকার দেশবাসীর পাশে থেকেছে, জনগণের স্বার্থে কাজ করেছে। তাঁর কথায়, সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তই জনসাধারণের প্রয়োজন ও স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে তাদের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়। সত্যিই কি তাই?
মোদী সরকারের আমলে বছরের পর বছর ধরে জনগণকে মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত মোকাবিলা করতে হয়েছে। নোটবন্দি এক দিকে যেমন দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে, তেমনই এর জেরে কিছু লোককে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে। পণ্য ও পরিষেবা কর, অর্থাৎ জিএসটি-র ফলে ব্যবসায়ীরা প্রকৃতপক্ষে তাঁদের ভাগের অর্থনৈতিক বোঝা ভোক্তাদের কাঁধে সোজাসুজি চাপিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা, প্রতিটি নাগরিককে বাড়ি দেওয়া, কালো টাকা ফিরিয়ে আনা, প্রতি বছর দু’কোটি চাকরি দেওয়ার মতো ঘোষণা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
ক্ষমতায় আসার আগে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল প্রতিটি পরিবারের জন্য পাকা বাড়ি। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা দেশবাসীর জন্য ২০১৫ সালে চালু করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, যার লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের মধ্যে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় প্রতিটি পরিবারকে পাকা বাড়ি দেওয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় সেই সময়সীমা ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। সেই সময়সীমাতেও লক্ষ্য পূরণ হবে না, তা আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ২০২১-এ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানিয়েছিলেন, এই প্রকল্প চালুর সময় গ্রামীণ ভারতে ২.৯৫ কোটি পাকা বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ পর্যন্ত সেখানে ১.৬৫ কোটি তৈরি করা গিয়েছে। প্রত্যেকের পাকা বাড়ির মতোই ২০১৫-র সেপ্টেম্বরে প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সরকারের দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও দেশের সব বাড়িতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দূরে থাক, অনেক এলাকায় এখনও বিদ্যুতের সংযোগই হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৭-তে বলেছিলেন ২০২২ সাল নাগাদ দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কৃষি দফতর মোট প্রকৃত বাজেট বরাদ্দ পেয়েছিল ১.২৩ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি, পরের বছর তা কমে দাঁড়ায় ১.১৯ লক্ষ কোটি টাকা। এ বছর বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা, কিন্তু প্রকৃত ব্যয় তার চেয়ে কম হবে কি না, বলা মুশকিল। ২০১৭-র ১৪ সেপ্টেম্বরে মোদী জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজ়ো আবের সঙ্গে মুম্বই ও আমদাবাদের মধ্যে বুলেট ট্রেন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০২২-এর ১৫ অগস্ট স্বাধীনতার পঁচাত্তর উদ্যাপনের সময় দেশে বুলেট ট্রেন চলতে শুরু করবে। এখন বলা হচ্ছে, ২০২৬ সালে তা হতে পারে।
এই সরকারের শাসনকালে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর অনেক হামলা হয়েছে। দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।
অভিজিৎ রায়, জামশেদপুর
পরিপূরক
শিবাজীপ্রতিম বসুর প্রবন্ধটি (দু’টি দিকে গেছে বেঁকে, ২-৬) প্রসঙ্গে বলি, সকলকে সব কিছু বুঝতে হবে, এমন নয়। বরং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এই যে, আমরা স্কুলে, কলেজে, কোচিং ক্লাসে, সর্বত্র এক ধরনের মুরগির লড়াই খেলতে দিই— সায়েন্স বনাম আর্টস। প্রশ্নটা এমনই দাঁড়ায় যে, আমি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে কী ভাবে সাহিত্য বিষয়ে শ্রদ্ধা প্রকাশ করব? আমাকে তো ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে এমন ভাবে যাতে আমি ‘সাহিত্য’-কে বিজ্ঞানের পরিপন্থী বলে বিশ্বাস করি। আবার সাহিত্যের ছাত্রের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। দোষ আমাদের। আমরা নিজেরা শিখিওনি এবং পরের প্রজন্মকে শেখাতেও পারিনি যে, পড়াশোনার প্রতিটি বিভাগ, প্রতিটি শাখা পরস্পরের পরিপূরক, পরিপন্থী নয়। বিএড-এর প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় ক্লাসে পড়ানো হয়, প্রতিটি বিষয় পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু স্কুলে, কলেজে, টিউশনিতে ক’জন আর তা মনে রাখে? ভারতের সেরা ইতিহাসবিদদের মধ্যে অনেকেই বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও সাবলীল দক্ষতার সঙ্গে ইতিহাস রচনা করেছেন বা করছেন। তাই কিছুতেই বিশ্বাস করতে মন চায় না যে, কোনও বিদ্যাশৃঙ্খলা তার আপন ঘেরাটোপেই শিক্ষার্থীকে আটকে রেখেছে।
অভিজিৎ চক্রবর্তী, কলকাতা-১১৩
লেবু-লঙ্কা
আমার বাড়ির সামনে প্রতি দিন ফুলের মেলা বসে। ব্যাপারিরা ফুল, মালার সঙ্গে নিয়ে আসেন লেবু আর লঙ্কার মালা। সাতটা করে লঙ্কা আর একটা করে লেবু— এই হিসাবে পর-পর গেঁথে মালা তৈরি হয়। দিনে এই মালা প্রায় চল্লিশটা বিক্রি হয়। গৃহস্থ থেকে টোটোওয়ালা, সকলেই কেনেন। এই মালা ঝুলিয়ে রাখা নাকি শুভ লক্ষণ। পাতিলেবু ভিটামিন সি-র আধার। আর লঙ্কায় প্রচুর ভিটামিন এ, বি এবং সি থাকে। অর্থাৎ, আমরা কী পরিমাণ ভিটামিন নষ্ট করছি, সহজে বোঝা যায়। আমরা আর একটু বিজ্ঞানমনস্ক হলে হয়তো এটা আটকানো যেত।
শ্যামলী রায় মুখোপাধ্যায়, হালিশহর, উত্তর ২৪ পরগনা