Kanchenjunga Express Accident

সম্পাদক সমীপেষু: দুয়োরানি নিরাপত্তা

এই কলঙ্কজনক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ট্রেন-দুর্ঘটনায় মানুষের মূল্যবান প্রাণ হারিয়ে যাওয়া দুঃখজনক হলেও বিস্ময় আর সৃষ্টি করে না!

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৪ ০৫:১৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

‘বন্দে অবহেলা’ (১৮-৬) শীর্ষক প্রথম পাতার শিরোনামটি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। যখন রাষ্ট্রের যাবতীয় মূল্যবান সম্পদ, সময় এবং শক্তি ঝকঝকে মন্দির, বিশালকায় মূর্তি, উজ্জ্বল আলোকিত সেন্ট্রাল ভিস্টার জন্য বরাদ্দ করা হয়, তখন এটা খুবই স্বাভাবিক যে, সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক প্রয়োজন, সামাজিক/জাতীয় পরিকাঠামোর উন্নতি ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা দুয়োরানির মতো উপেক্ষিত হতেই থাকবে! এই কলঙ্কজনক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ট্রেন-দুর্ঘটনায় মানুষের মূল্যবান প্রাণ হারিয়ে যাওয়া দুঃখজনক হলেও বিস্ময় আর সৃষ্টি করে না!

Advertisement

অন্ধ রাজনৈতিক আনুগত্য এবং ধর্মীয় উগ্রতার গরল থেকে মুক্ত হয়ে কবে সাধারণ ভারতীয়রা সরব হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই বার্তা প্রদান করবে যে, সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে মানুষের জীবন এবং দেশের মৌলিক পরিকাঠামোকে আর অবজ্ঞা করা চলবে না! মন্দির, মূর্তি, সৌধ বা ব্যক্তিমহিমা প্রতিষ্ঠার দামামার ক্ষেত্রে যখন আর্থিক অনটন দেখা যায় না, তখন রেল বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রযুক্তি স্থাপন এবং ট্র্যাক পরিদর্শনের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত তহবিলের ঘাটতি কী ভাবে হতে পারে! গণকর্মী নিয়োগের মাধ্যমে দেশের অফুরন্ত মানবসম্পদ যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা হোক এবং রাষ্ট্রের সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তার উন্নতিতে নিবেদিত করা হোক, যাতে মানুষের পর্যবেক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণে ভবিষ্যতে এই ধরনের রেল বিপর্যয় প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

শুধুমাত্র অভিজাত বা বিত্তশালীদের ভোগের জন্য এবং সস্তার করতালি অর্জনের জন্য বুলেট/ বন্দে ভারত ট্রেনের জাঁকজমকে নিমজ্জিত না থেকে আরও অধিক সংখ্যক জনবান্ধব ট্রেন (দরিদ্রতম মানুষও যার পরিষেবা নিতে পারেন) সারা দেশে চালু করা উচিত। স্মরণে রাখা দরকার যে, আলো, পাখা ও পরিচ্ছন্ন টয়লেটের মৌলিক সুবিধা-সহ নির্ধারিত সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছনোটাই হল যাত্রীদের মূল লক্ষ্য! বিলাসবহুল হাই-স্পিড ট্রেনের বহু বিজ্ঞাপিত অন-বোর্ড ওয়াই-ফাই, বা ঘূর্ণায়মান আসন সম্ভবত এখনও কিঞ্চিৎ অপেক্ষা করতে পারে!

Advertisement

কাজল চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-১১৪

সুরক্ষা কই

রেলের পরিষেবা যে দিন দিন তলানিতে এসে ঠেকছে, তা কি রেল কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করতে পারবেন? কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘায় কেন পুরনো কোচ, উঠছে প্রশ্ন’ (১৮-৬) শীর্ষক প্রতিবেদনটি খুবই সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ। যাত্রীদের কাছে রেলের পরিষেবার মান নামতে নামতে আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তার খবর কি রাখেন বর্তমান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মহাশয়? ট্রেনের টিকিট কাটার সময় লেখা থাকে ‘হ্যাপি জার্নি’। কিন্তু বাস্তবে সেই ‘হ্যাপি জার্নি’ এখন যে দুশ্চিন্তার যাত্রায় পর্যবসিত হয়েছে, সেটা কি রেলকর্তারা অনুধাবন করতে পারছেন? যেখানে এই ট্রেনটি এখন প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পথ চলে, সেখানে পুরনো প্রযুক্তির কোচ ব্যবহার করে ট্রেন চালানো হচ্ছিল কেন? আর কবে ঘুম ভাঙবে? আমরা জানি ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ করে পূর্ব রেল। কাগজেই দেখলাম এই পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেছেন, এই বিষয়টি জানি না। তবে আমরা চেষ্টা করব, যাতে এলএইচবি রেক দিয়ে ভবিষ্যতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চালানো যায়। প্রশ্ন জাগে, এত দিন কি তবে জেগে ঘুমোচ্ছিলেন? এই নির্মম উদাসীনতার জন্য পাপের প্রায়শ্চিত্ত কে করবে? যাত্রীদের সুরক্ষা মাথায় থাকলে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে না।

গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১

দায় এড়ানো

নাগরিক সুরক্ষা এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রমের অদ্ভুত মিল খুঁজে পাওয়া যায় কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গের শাসক শিবিরের মধ্যে। অগ্নিকাণ্ড থেকে বেআইনি বাড়ি ভেঙে পড়া কিংবা সড়ক-দুর্ঘটনা থেকে রেল-দুর্ঘটনা— সর্বত্র একই চিত্র। রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন, সুরক্ষা প্রদান, এবং পরিকাঠামোর উন্নয়নের পরিবর্তে কয়েক বছর অন্তর তেমন কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে পীড়িতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করে দায় এড়ানো বেশি সহজ বলে মনে হয়। কারণ, সারা বছর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে দুর্ঘটনা এড়ানোর চেষ্টায় সরকারি বিভাগগুলিতে যোগ্য আধিকারিক এবং কর্মী নিয়োগ করতে হবে, দুর্নীতির ঘোলাজলকে পরিষ্কার করতে হবে, খারাপ যন্ত্রাংশের পরিবর্তন নিয়মিত করতে হবে ইত্যাদি। এই সকল কাজের তুলনায় কয়েক বছর অন্তর কিছু মানুষের প্রাণ চলে গেলে ক্ষতিপূরণের নামে অর্থ ঘোষণা করা অনেক সহজ এবং কম খরচসাপেক্ষ হয়তো। মৃতরা কখনও প্রতিবাদ করেন না। তাই হয়তো তদন্তের আগেই মৃত মালগাড়ির চালককে দোষারোপ করতে মন্ত্রকের সময় লাগে না। অথচ, খারাপ সিগন্যালিং ব্যবস্থার কথা, চালককে প্রয়োজনীয় বিশ্রামের সময় না দিয়ে একের পর এক শিফ্‌ট করিয়ে যাওয়ার কথা উহ্য থেকে যায়। এর পর সব দায় যখন ‘মানুষের ভুল’-এর নামে ঝেড়ে ফেলা হয়, তখন কাজ এবং কর্মীর অনুপাতের দিকে এক বারও তাকানো হবে না কি? যদিও একশো ত্রিশ কোটিরও বেশি মানুষের দেশে জীবন বড় সস্তা। মাঝেমধ্যে মৃত্যুমিছিল নেমে এলে তাই বিশেষ কিছু যায় আসে না।

সৌম্যকান্তি মণ্ডল, কলকাতা-১৪৪

ত্রুটি অনেক

২০২৩ সালের ২ জুন বালাসোরের সেই ভয়ানক দুর্ঘটনার কথা কেউ কি ভুলেছেন? ওই দিন ২৯৬ জনের মৃত্যু ও হাজারের বেশি আহতের আর্তনাদে আকাশ বাতাস বিদারিত হয়েছিল। তাকে মনে রেখে যাত্রীদের সুরক্ষা ও রেলপথ সুরক্ষিত রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা করেনি মোদী সরকার। প্রথমত, ১৯৮৯ সালের কমিশন অব রেলওয়ে সেফটি-কে রেল মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে অসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, রেল মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, এই মুহূর্তে গ্রুপ সি পদে আড়াই লক্ষেরও অধিক পদ শূন্য রয়েছে। ওই পদের সঙ্গে যুক্ত দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ রেল-সুরক্ষার জন্য যুক্ত। তৃতীয়ত, অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস সর্বত্র ব্যবহার না করার দায় রেল মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।‌ এই ডিভাইস লাগালে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই লাইনে ট্রেন এসে গেলেও দুটো ট্রেনই একটা গ্যাপে দাঁড়িয়ে যাবে। এবং চালককে সাবধানবার্তা পাঠাবে।

পঞ্চমত, গার্ড ও ড্রাইভারদের নাগাড়ে দু’-তিন দিন ডিউটি করানো হচ্ছে। ষষ্ঠত, রেলের স্বতন্ত্র বাজেট তুলে দিয়ে কোন ঘটনা লুকোনোর চেষ্টা করছে মোদী সরকার।

অবিলম্বে শূন্য পদে নিয়োগের মাধ্যমে এই সব দুর্ঘটনা বন্ধ হোক। এনডিএ সরকারের রেল মন্ত্রণালয় এই সব কাজ অবিলম্বে শুরু করুক— চাইছেন সমগ্র দেশের জনসাধারণ।

বীরেন্দ্র নাথ মাইতি, বুলবুলচটি, পশ্চিম মেদিনীপুর

দোষ কার

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মালগাড়ির মৃত চালকের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রথমেই বলি, চালক দু’জন থাকেন। এক জন ভুল করলে আর এক জনও কি ভুল করবেন? সহকারী চালকের কাছে আপৎকালীন ব্রেক থাকে। তিনিও কি ভুল করবেন? পিছনে গার্ডের কাছে ভ্যাকুয়াম ব্রেক সিস্টেম থাকে। তিনি কী করছিলেন? তাঁকে প্রশ্ন করা হলে কিছু তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। এর পর অন্তর্ঘাতমূলক ব্যাপারটাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সবশেষে শেষ মুহূর্তে ব্রেক ফেলের ব্যাপারও থাকতে পারে।

তপেশ ভৌমিক, গুড়িয়াহাটি, কোচবিহার

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement