গ্রাহকেরা আরও বেশি করে ডিজিটাল ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল হয়েছেন। প্রতীকী ছবি।
‘যন্ত্রের দাপটে’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১৯-২) চিঠি প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা বলতে চাই। ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরা যে যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লেন, এর জন্য কিছুটা হলেও ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের ব্যবহারের প্রসঙ্গ আসবে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার, গ্রাহকদের সময়কে মূল্য না দেওয়ার উন্নাসিকতা। তা সত্ত্বেও বহু মানুষ সরকারি ব্যাঙ্কে গিয়েছেন, টাকা জমা রেখেছেন, তা একটাই কারণে— বাজারে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান অপেক্ষা সরকারি ব্যাঙ্কে টাকা রাখাটা তাঁরা অনেক বেশি নিরাপদ বলে ভেবেছেন। কিন্তু যখনই তাঁরা দেখেছেন, ডিজিটাল ব্যবস্থার সুযোগ নিলে কাজটা আরও দ্রুত হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারি বাবুদের ঘোরানোর মানসিকতা ও দুর্ব্যবহারের কথা মনে এসেছে, তখন গ্রাহকেরা আরও বেশি করে ডিজিটাল ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল হতে চেয়েছেন।
ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের এই মানসিকতা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অজানা ছিল, তা তো নয়। তার জন্য দরকার ছিল অন্য বড় সংস্থাগুলির মতো জনসংযোগ আধিকারিক রাখা, যিনি গ্রাহকদের কোনও সমস্যা হলে সে বিষয়ে দ্রুত সমাধান করতে পারেন। জনসংযোগ আধিকারিক থাকলে ব্যাঙ্কের সঙ্গে গ্রাহকদের সম্পর্ক আরও বেশি সহজ ও নিবিড় হতে পারত। জানি না, এ ধরনের কোনও প্রস্তাব ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছিল কি না। এ বার বর্তমান অবস্থায় আসি। এখন টাকা তুলতে গেলে, বিশেষ করে দশ হাজার টাকার কম তুলতে গেলে কাউন্টারে থাকা ব্যাঙ্ক কর্মচারীই বিরক্ত হন, বলেন এটিএম থেকে টাকা তুলে নিতে। আমাদের খলিসানি এলাকায় স্টেট ব্যাঙ্কে কুড়ি হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন গ্রিন চ্যানেলের মাধ্যমেই করতে হবে জানানো হয়েছে। ব্যাঙ্কের পাসবইগুলি এমন ভাবে তৈরি হচ্ছে, যার আপডেট পেতে গেলে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে করাতে হবে। এ সবের জন্যও গ্রাহকেরা আরও বেশি করে যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
এ বার আর একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। জানুয়ারি মাসে খলিসানি এলাকার পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখলাম, এক জন গ্রাহককে এক ব্যাঙ্ক কর্মচারী পরের দিন আসার কথা বলছেন। গ্রাহক জানাচ্ছেন, তিনি এই নিয়ে তিন বার একই কাজে ব্যাঙ্কে এলেন, অথচ সংশ্লিষ্ট আধিকারিক না আসায় তাঁকে প্রতি দিন ফিরে যেতে হচ্ছে। বার বার কাজ থেকে ছুটি নিয়ে আসা তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। যদিও তাঁর এই কথায় কোনও সুরাহা হল না, তাঁকে ফিরেই যেতে হল। এর পর আমি ওই অল্পবয়সি কর্মচারীর কাছে গিয়ে বলি, এ ভাবে গ্রাহকেরা অসন্তুষ্ট হয়ে চলে গেলে তো ব্যাঙ্কেরই ক্ষতি। গ্রাহকসংখ্যা কমতে থাকলে আগামী দিনে আপনাদের চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে, কর্মী-সংখ্যা কমলে, আগামী প্রজন্মের সরকারি চাকরি পেতেও অসুবিধা হবে। সেই কর্মচারীটি জানালেন, তাঁর যা শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, তাতে একটা চাকরি চলে গেলেও অন্য চাকরি পেতে অসুবিধা হবে না।
টাকা তোলা, জমার লাইনে কোনও বিষয়ে জানতে চাইলে, অথবা বেশি ভিড় দেখলে দেখি নব প্রজন্ম বেশ বিরক্ত। কেন গ্রাহকেরা ‘ব্যাকডেটেড’ রয়ে গেলেন, কেন তাঁরা অনলাইনে অভ্যস্ত হলেন না, এ নিয়ে হামেশাই আক্ষেপ শোনা যায়। আমরাই হয়তো তাঁদের বোঝাতে পারিনি, প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, প্রতিটি মানুষের থেকেই আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে। গ্রাহকেরা সন্তুষ্ট হলে ব্যাঙ্ক থাকবে, কাজ থাকবে, আগামী প্রজন্মের চাকরি সুনিশ্চিত হবে।
প্রশান্ত দাস, খলিসানি, হুগলি
চাষির আয়
গত দশ বছরে দেশে কৃষিতে বাজেট বরাদ্দ পাঁচ গুণ বেড়েছে (কৃষি বরাদ্দ বেড়েছে, কিন্তু আয়! ২৫-২) পাঁচ গুণ কেন, একশো গুণ কৃষি বরাদ্দ বৃদ্ধি হলেও কৃষকদের কোনও সুরাহা হবে না। স্বাধীনতার পর প্রতিটি সরকারই কৃষকের উন্নতির কথা বলেছে, এবং কৃষকের স্বার্থে বাজেট তৈরি করেছে, এমনই তারা ঘটা করে প্রচার করে। কারণ দেশের বেশির ভাগ ভোটদাতা চাষি, মজুর, কৃষক। বরাদ্দ বেশি হলেই কি চাষির যথার্থ উপকার হয়? বরাদ্দের কতটুকু প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছয়, সেটা কি আমরা জানি না? তা ছাড়া বীজ, সার, কীটনাশক বহুজাতিক সংস্থার হাতে এবং তারাই সেগুলির দাম নির্ধারণ করে। দিনের পর দিন বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এই দাম নির্ধারণও কৃষকের হাতে নেই। ফলে দিনের পর দিন কৃষিতে খরচ বাড়ছে। সার, কীটনাশক, বীজ, বিদ্যুৎ-সহ নির্দিষ্ট ফসল ফলাতে কত খরচ হয়, একমাত্র সেই কৃষকই বলতে পারেন। এবং তার উপর কত দামে ফসল বিক্রি করলে সেই কৃষক পরিবারের প্রতিপালন হবে, সেটা কৃষকরাই বলতে পারবেন। কিন্তু কৃষক তাঁর উৎপাদিত ফসলের দাম নির্ধারণ করতে পারেন না। এখানেই যত মারপ্যাঁচ। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নির্ধারণ করার ক্ষমতা চাষির নেই। অথচ, উৎপাদিত ফসলের দাম নির্ধারণ করে মজুতদার, বহুজাতিক সংস্থা বা অন্যেরা। ফসল ওঠার সময়ে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ফসলের দাম কমে যায়। মজুত করার হিমঘর বা গুদাম না থাকার কারণে সেই কম দামেই ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। আবার চাষির ঘর থেকে ফসল বেরিয়ে গেলেই দাম বেড়ে যায়। কৃষককে সেই বেশি দামেই তাঁর প্রয়োজনে ফসল কিনতে বাধ্য করা হয়। তাই উৎপাদন খরচের অর্ধেকও চাষির ওঠে না। প্রতিটি সরকার এ সব দেখেও কোনও উদ্যোগ করে না। আজ পর্যন্ত কত জন কালোবাজারি শাস্তি পেয়েছে, সন্দেহ আছে। সংবাদে প্রকাশ, গড়ে প্রতি ১২ মিনিটে দেশে এক জন কৃষক আত্মহত্যা করেন। সবুজ বিপ্লবের রাজ্যেও কৃষকের আত্মহত্যা অব্যাহত। সারা দেশে কৃষকদের মোট ঋণের পরিমাণ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। অনুরোধ, আবেদন করা সত্ত্বেও সেই ঋণ সরকার মকুব করেনি। অথচ, মুষ্টিমেয় শিল্পপতি পুঁজিপতির দশ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে দিয়েছে বলে সংবাদে প্রকাশ। কৃষি বরাদ্দ যতই বৃদ্ধি হোক, সমাজের পরিবর্তন না হলে কৃষকের আত্মহত্যা বন্ধ করা যাবে না।
নিখিল কবিরাজ, শ্যামপুর, হাওড়া
বাঁকুড়ার গান
না-ফেরার দেশে চলে গেলেন বর্ষীয়ান সুরকার ও গীতিকার, ‘ঝুমুরিয়া’ সুভাষ চক্রবর্তী। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন, পিতা গোবর্ধন চক্রবর্তীর কাছেই সঙ্গীতে হাতেখড়ি। সত্তরের দশকে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় কবি অরুণকুমার চক্রবর্তীর। অরুণবাবুর রচিত ‘লাল পাহাড়ি দ্যাশে যা রাঙামাটির দ্যাশে যা’ কবিতাটিতে সুরারোপ করেন সুভাষবাবু। ১৯৭৯ সালে বিখ্যাত সুরশিল্পী ভি বালসারার সহায়তায় গানটির রেকর্ড প্রকাশিত হয়। আর ফিরে তাকাতে হয়নি সুভাষকে। টুসু, ভাদু ও ঝুমুর গানের মতো বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার লোকগানকে নিজের কণ্ঠজাদুতে স্বতন্ত্র রূপ দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর গান ‘বাঁকুড়ার মাটিকে পেন্নাম করে দিনে-দুপুরে কত গুণী আইল-গেল খবর রাখে কে তারে’ বাঁকুড়া জেলার পরিচিতি হয়ে উঠেছে। সুভাষ চক্রবর্তীর মৃত্যুতে শুধুমাত্র বেলিয়াতোড় নয়, সারা বাংলার ভক্তমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি ছিলেন বাঁকুড়াবাসীর গর্ব।
বিপদতারণ ধীবর, বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া
শিল্পীর সম্মান
একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেখলাম, অতীতের অভিনেত্রী ডলি তালুকদার, যিনি বহু নামী শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন, এখন পার্ক স্ট্রিটে মানুষের কাছে অর্থ প্রার্থনা করছেন। তাঁর বয়স এখন ৭৫ বছর। এমন বহু শিল্পী পেটের জ্বালায় মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হন। শিল্পীদের জন্য সহায়তা প্রকল্প সত্ত্বেও এই অবস্থা কেন? সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সৌলীমা বিশ্বাস, কলকাতা-২৮