বিদ্যাসাগর সেতু পেরিয়ে টোল প্লাজ়ায় কয়েকটা দৃশ্য চোখে পড়ে। দেওয়ালে লেখা ‘থুতু ফেলিবেন না’। ঠিক যে জায়গাগুলিতে লেখা, সেখানেই অনেকখানি পিক বার বার ফেলার চিহ্ন। যেখানে যেটি বারণ, সেখানেই সেটি করতে পারলে অনেকের আনন্দের মাত্রা দ্বিগুণ হয়, এমনটাই অনুমান। ‘এখানে বাস থামিবে না’ লেখা থাকা মানে বেশির ভাগ বাস ওখানেই দাঁড়াবে। যে রাস্তায় সাইকেল চালানো বারণ, সেখানেই সাইকেল বেশি চলবে। ‘পার্কিং করিবেন না’ লেখা থাকলে অবধারিত ভাবে ওখানে পার্কিং হবেই। বিধিভঙ্গের চরম আনন্দ তিলোত্তমার সর্বাঙ্গে। টোল ট্যাক্সের স্লিপটা ওখানেই ফেলার চরম আনন্দ কেন? ওটা হাতে ধরে থাকতে কী এমন কষ্ট হয়? চার দিকে টুকরো কাগজ উড়ছে, নোংরা জমছে। সাফাইকর্মীকে বাধ্য হয়ে লেন বন্ধ করে সাফ করতে হচ্ছে। এই অভ্যাস থামানো যায় না? তা নইলে স্লিপ না দিয়ে অন্য ব্যবস্থা করা দরকার, যেমন ফাস্ট্যাগ-এ হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কলকাতায় নানা বিজ্ঞাপনে, দেওয়াল লিখনে ভুল বানান। এগুলোও সকলের চোখে পড়ছে না কি? বানান কি ঠিক করা যায় না? ভাষা দিবসে বাংলা ভাষার গৌরব নিয়ে কত আলোচনা হয়, কিন্তু ভাষার শরীর তৈরি যে শব্দগুলিতে, তার বানানে ছোট ছোট ভুলগুলো শুধরে দেওয়া যায় হয়তো। নিজেদের চোখ শান্তি পাবে, ছোটরাও ঠিক বানানটি শিখবে।
ট্র্যাফিকের কড়া আইন হয়েছে। প্রয়োগে কী হচ্ছে, তা সবাই দেখছেন। বড় ক্রসিংগুলোতে ট্র্যাফিক পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। হলুদ আলো থেকে লাল হওয়ার সময় এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয় যে, প্রতি দিন ক্যামেরা চমৎকার ভাবে সরকারের ঝুলি ভরাবে। বলা যাবে না কিছু, ক্যামেরা বলেছে।
ফুটপাতে নতুন মন্দির তৈরি হচ্ছে এ দিকে-ও দিকে। যোধপুর পার্কে ব্যস্ত রাস্তার মোড়ের দু’কোণ অধিকার হয়ে গেল। এক কোণে বসবাসের প্লাস্টিক-মোড়া আস্তানা, উল্টো দিকে প্লাস্টিক ঢেকে দোকান। লোকে হাঁটবে রাস্তায়, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। পূর্ণদাস রোডে, ত্রিকোণ পার্কের কাছেও সেই ছবি। কিছু বলা যাবে না, শুনতে হবে, “আহা, ওরা কোথায় যাবে!” তবু ডাক দেওয়া হল, সর্বত্র কলকাতার মতো ঝকঝকে শহর তৈরি করার (‘সব শহর হোক কলকাতার মতো চকচকে: মমতা’, ১৫-২)।
সুকুমার বারিক
কলকাতা-২৯
অবহেলিত
সরকার পোষিত ও অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলে শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে অন্যতম পদটি হল ‘করণিক’। স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব, ছাত্র-ভর্তি, কর্মীদের বেতন প্রস্তুত, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক রেজিস্ট্রেশন, ফর্ম ফিল-আপ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি দশকের পর দশক ধরে করণিকদের দায়িত্বেই হয়ে আসছিল। সেই সঙ্গে কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজসাথী, ঐক্যশ্রী, মাইনরিটি স্কলারশিপ ইত্যাদির মতো সরকারি উন্নয়নমূলক প্রকল্প, যেগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সরাসরি ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, তার দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে করণিকদের। কাজগুলো করতে হয় কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের দক্ষতা অর্জন করে। এ দিকে সরকার পোষিত ও অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলির মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ স্কুলেই এক জন, ২০ শতাংশ স্কুলে দু’জন করণিক আছেন। স্কুলের চিরাচরিত কাজের সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত হওয়া এই সব সরকারি প্রকল্পের বিপুল কাজ এক জন বা দু’জন করণিক কী ভাবে করবেন? ‘করণিক’ পদটির শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে ‘মাধ্যমিক উত্তীর্ণ’। এক জন মাধ্যমিক পাশ করণিকের কাঁধের উপর এই সব দক্ষতা-নির্ভর কাজের দায়িত্ব চাপানো কতখানি ন্যায়সঙ্গত? আবার কোনও স্কুলের করণিক ‘তাঁর নিয়োগ যোগ্যতা মাধ্যমিক’— এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওই যোগ্যতার সমতুল কাজই শুধুমাত্র করবেন— এই অবস্থান নিলে, সেই স্কুলের প্রধান-শিক্ষক পড়ছেন সমস্যায়। কারণ, তাঁর কাছে হিসাবরক্ষক, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, অফিস অ্যাসিসট্যান্ট ইত্যাদি কর্মী নেই। ফলে, বরাবরের অফিসের কাজগুলির পাশাপাশি বর্তমানে যুক্ত হওয়া সরকারি প্রকল্পের কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে।
উল্লেখ্য, এই স্কুলগুলিতে এক জন বা দু’জন করণিক বা এলডিসি থাকলেও, নেই কোনও ইউডিসি বা হেডক্লার্ক। গোটা কর্মজীবনে তাঁদের কোনও পদোন্নতিও হয় না। অথচ ব্যাঙ্ক, পঞ্চায়েত অফিস, ব্লক অফিস-সহ রাজ্য সরকারি প্রায় সব অফিসে, এমনকি একই শিক্ষা দফতরের অধীনস্থ সরকারি স্কুল, কলেজ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদেও করণিকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে সরকারি অধিকাংশ অফিসেই উচ্চ মাধ্যমিক অথবা স্নাতক যোগ্যতার করণিক নিয়োগ করা হচ্ছে। এ দিকে পদের আপগ্রেডেশন-এর প্রয়োজনীয়তা প্রকট হওয়া সত্ত্বেও করণিকদের নিয়োগ-যোগ্যতা আজও ‘মাধ্যমিক’ই রয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারি স্কুলের করণিকদের কর্মজীবনের ৮, ১৬, ২৫ বছরে বেতনক্রমের উন্নতি ও কর্মজীবনে উচ্চ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ আছে। ওই ধরনের সরকারি স্কুলগুলিতে এলডিসি হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের পর ইউডিসি, হেডক্লার্ক ইত্যাদি পদে উন্নীত হওয়া যায়।
এই করণিকদের আবার সুনির্দিষ্ট কোনও কর্মতালিকাও নেই। তাই তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কাজের পাহাড়। স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে প্রিলিমিনারি, মেনস, কম্পিউটার প্রফিশিয়েন্সি টেস্ট, টাইপিং টেস্ট, মৌখিক— এই পাঁচ ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই নিয়োগপত্র হাতে পান এই করণিকরা। অথচ, তাঁদের নিয়োগপত্রে ‘কম্পিউটার প্রশিক্ষিত’ হিসাবে কোনও স্বীকৃতিই থাকে না। ফলে কর্মজীবনে পদমর্যাদা ও বেতনক্রম উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে চলার পিছনে অন্যতম ভূমিকা এই করণিকদের। আজ তাঁদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।
দীপঙ্কর সিদ্ধান্ত
সাধারণ সম্পাদক, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল অ্যান্ড মাদ্রাসা ক্লার্কস অ্যাসোসিয়েশন
বেহাল পরিষেবা
‘হাওড়ার হাসপাতালে অমিল ওষুধ, চরমে রোগী-ভোগান্তি’ (২০-২) সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে জীবনদায়ী ওষুধ বা ইঞ্জেকশন, এমনকি সাধারণ প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড বা অ্যান্টিবায়োটিক্সের অপ্রতুলতা রাজ্যে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা তুলে ধরেছে। অসংখ্য দরিদ্র মানুষ, যাঁরা সরকারি চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল, তাঁরা এই করুণ কাহিনির অংশীদার। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত স্বাস্থ্য পরিষেবা অনুসারে এই সব ওষুধ নিখরচায় রোগীদের প্রাপ্য। ওষুধ না পাওয়ার কারণ সরকারি কোষাগারে টাকা নাই। সরকারের কাছে কোটি কোটি টাকা বাকি থাকায় ওষুধ সংস্থাগুলো ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সরকারের বিভিন্ন জনহিতকর সামাজিক প্রকল্পের রূপায়ণে ‘দুয়ারে সরকার’ এই দরিদ্র মানুষগুলির কাছে বিদ্রুপের শামিল।
জহর সাহা
কলকাতা-৫৫
এখনও পাঁচ ঘণ্টা
পূর্ব-রেলের শিয়ালদহ লালগোলা রেলপথ ডবল লাইন এবং বৈদ্যুতিকরণ করার পরও ২৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে এখনও সাড়ে পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। তা হলে এই রেলপথে ডবল লাইন এবং বৈদ্যুতিকরণ করে কী লাভ হল? ভাগীরথী এক্সপ্রেসে বহরমপুর থেকে শিয়ালদহ পৌঁছতে লেগে যাচ্ছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। মোটামুটি ভাবে তিন ঘণ্টার মধ্যে ১৮০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কলকাতায় যাতায়াত করতে পারলে এই প্রান্তিক জেলার নিত্যযাত্রী থেকে ব্যবসায়ী, সবারই সুবিধে হবে। এই পরিষেবা কি শিয়ালদহ লালগোলা রেলপথে আদৌ কোনও দিন পাওয়া যাবে?
তুষার ভট্টাচাৰ্য
কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ