পশ্চিমবঙ্গের নিম্ন আদালতগুলিতে বকেয়া মামলার সংখ্যা বরাবরই চিন্তার বিষয়। মাননীয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ঠিক জায়গাটাই ধরেছেন। মুর্শিদাবাদে ডোমকল মহকুমা চালু হয়ে যাওয়া আজকের কথা নয়। কিন্তু সেখানে কোর্ট চালু এখনও হল না। এ দিকে সদর ফৌজদারি কোর্টগুলো বকেয়া মামলার চাপে নাজেহাল। বাইশ বছর ধরে দেখছি, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সংখ্যা আর বাড়ে না। তিনটিতে আটকে গিয়েছে। পরিকাঠামো বলে কিছু নেই। রেকর্ডে উই ধরছে। এসি মেশিন বসেছে এজলাসে। কিন্তু অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। দীর্ঘ দিন দেওয়ালে রং হয়নি। শৌচালয় নিয়মিত পরিষ্কার হয় না কর্মীর সংখ্যা কম থাকায়। মামলার কাজে আসা মানুষ ঝোপজঙ্গলের আড়াল খোঁজেন শৌচকর্মের জন্য। ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নেওয়া হয়েছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে। তাদের গতিতে কখনও কখনও সারা দিন কেটে যায় একটা মেল করতে। বিচারাধীন বন্দিদের টিফিন বাবদ বরাদ্দ ১৩ টাকা করে। তাতে এত বকেয়া যে, সরবরাহকারী কেবল ‘পালাই পালাই’ করেন। সব মিলিয়ে বিচারের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। আবার বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার একটা প্রবণতা চোখে পড়ে। উকিলের যুক্তি (‘আর্গুমেন্ট’) অবশ্যই লিখিত হওয়া উচিত। তাতে অনাবশ্যক সময় নেওয়ার সুযোগ কমবে। কত দিন মামলার জন্য সময় নেওয়া যায়, তার সংখ্যা কেস প্রতি নির্দিষ্ট হোক। বিশেষ চাপ দিয়ে এক-এক ধরনের কেস নিষ্পত্তিতে মনোযোগ দিতে হবে। তাতে হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ মিলবে আশা করা যায়।
মানব শঙ্কর চৌধুরী
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
কার্ড হয়রানি
‘রাজ্য চায় রেশনে দ্রুত আধার-যোগ’ (১০-৮) শীর্ষক খবরের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। বিপিএল নই বলে রেশন দোকান থেকে আগে কেবল চিনি, ধূপ, দেশলাই নিতে পারতাম। পরে সরকারি নির্দেশমতো ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য অনলাইনে দরখাস্ত করি। গত বছর ১১ মে স্থানীয় পোস্ট অফিস থেকে মেসেজ পেয়ে আমাদের ভর্তুকিবিহীন ডিজিটাল রেশন কার্ডগুলি সংগ্রহ করে রেশন দোকানে সেগুলোকে নথিবদ্ধ করতে গিয়ে জানতে পারি, ওই কার্ড দোকানে নথিবদ্ধ করা হয় না।
গত ২২ জুলাই সন্ধ্যায় পুরসভার এক কর্মী বাড়ি বাড়ি এসে খবর দেন যে, পরের দিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে আমরা যেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের অফিসে আধার কার্ড নিয়ে যাই, নতুন রেশন কার্ডের সঙ্গে তা যোগ করার জন্য। তিনি এ কথাও জানান যে, ওই সময়ের মধ্যে খাদ্য দফতরের অফিসারও ওয়ার্ড অফিসে উপস্থিত থাকবেন। সেই উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট দিনে প্রথমে রেশন দোকানে যাই আবার জানতে যে, আমাদের কার্ডগুলি নথিবদ্ধ হবে কি না রেশনে আধার যোগ করতে গেলে। কিন্তু সেই একই উত্তর মেলে। পরে পুরসভার ওয়ার্ড অফিসে গেলে জানতে পারি, ডিজিটাল রেশন কার্ডে আধার যোগ হবে না। যখন অফিসের কর্মীদের বললাম যে, তেমন কথা তো জানানো হয়নি, তখন তার সদুত্তর তাঁরা দিতে পারেননি। খাদ্য দফতরের অফিসারেরও খোঁজ পাইনি সেখানে। শুধু শুধু হয়রান হয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। ভর্তুকিবিহীন ডিজিটাল রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড যোগ হবে কি না— এ প্রশ্নের উত্তর সরকারি ভাবে দ্রুত ঘোষণা হওয়া উচিত।
সুভাষ চন্দ্র সরকার
কলকাতা-৩৫
অসম বাসভাড়া
বাসভাড়া নিয়ে সরকার কোনও সিদ্ধান্তে আসছে না। অথচ, প্রতি দিন নানা জায়গায় ভাড়া নিয়ে বচসা লেগেই আছে। দানেশ শেখ লেন-ধর্মতলা মিনিবাসের দশ টাকা ভাড়া আঠারো টাকা হয়েছে। হাওড়া হসপিটাল থেকে দানেশ শেখ লেন-এর ছয় কিলোমিটার পনেরো টাকা নিচ্ছে। আগে আন্দুল রোডে সরকারি বাস চলত। এখন সে সব বন্ধ। আবার সাঁতরাগাছি রুটের এক-একটা বাসের এক-এক রকম ভাড়া। কন্ডাক্টররা এমন ভাবে ভাড়া দাবি করেন, যেন সরকারই তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। কলকাতায় খুব বেশি হলে এক বা দু’টাকা বাড়তি নিচ্ছে বাসগুলি। কিন্তু হাওড়া রুটের বাসগুলি এক লাফে ভাড়া অনেকটা বাড়িয়ে নিয়েছে। এই সমস্যার সমাধান একমাত্র সরকারই করতে পারে।
কিশোর চট্টোপাধ্যায়
হাওড়া
টিকা অপ্রতুল
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর থেকেই রাজ্য জুড়ে ভ্যাকসিনের চাহিদা তুঙ্গে। তারই মধ্যে আবার তৃতীয় ঢেউয়ের ভ্রুকুটি। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বহু মানুষ দিনের পর দিন হন্যে হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরছেন, টিকাকরণ কেন্দ্রগুলির সামনে রাত জেগে লাইন দিচ্ছেন। তাতেও যে সবার টিকা মিলছে, তা নয়। শুধু শহরতলি নয়, জেলার হাসপাতালগুলিতেও এমনই চরম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। এই পরিস্থিতির কারণ কী? চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকা একটা বড় কারণ তো বটেই, তা ছাড়াও হাসপাতালকর্মীদের ‘স্বজনপোষণ’ তত্ত্বটাও এড়ানো যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হাসপাতালের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত বিভিন্ন কর্মী তাঁদের প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের পরিজন ও পরিচিতদের টিকা পাইয়ে দিচ্ছেন। এমনকি অনেক অসাধু কর্মী টাকার বিনিময়েও টিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। স্বাভাবিক ভাবেই হাসপাতালগুলির টিকার দৈনিক কোটা খুব তাড়াতাড়ি পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় দালালচক্রও সক্রিয় হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সুদীপ সোম
নতুনগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা
টোলের দুরবস্থা
‘কম্পিউটার চালু করে মূল স্রোতে আসছে টোলও’ (১১-৮) প্রতিবেদনের সূত্রে এই চিঠি। ভারতীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে এই উদ্যম প্রশংসনীয়। প্রসঙ্গত, বহু বছর আগে রাজ্য সরকার টোলগুলির উন্নতিতে কী করণীয়, সেই বিষয়ে অধ্যাপক রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায় কমিটি গড়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সুপারিশ জমা পড়েছিল। অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় আধুনিক শিক্ষা এবং চতুষ্পাঠীর চিরন্তন শিক্ষার মেলবন্ধনের প্রয়োজন ও পদ্ধতির সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন সেই সুপারিশ দিনের আলো দেখেনি। এখন তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে দেখে ভাল লাগল।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদাসীনতায় বীরভূমের চতুষ্পাঠীগুলি মৃত্যুমুখে ঢলে পড়েছে। সিউড়িতে দীর্ঘ দিনের শঙ্করী চতুষ্পাঠী বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থান, নয়া দিল্লির তথাকথিত প্রতিনিধিবর্গ শঙ্করী চতুষ্পাঠীতে এসে বিরুদ্ধ রিপোর্ট দিয়েছিলেন। অতএব, এই উদাসীনতায় যে কিছু টোল বন্ধ হল, তার দায় কে নেবে?
পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়
অধ্যক্ষ, বীরভূম মহাবিদ্যালয়, সিউড়ি
অনলাইনে হোক
‘চেয়ার ও বেঞ্চ ঠিক আছে তো? ফর্মে প্রশ্ন সব স্কুলকে’ (১৪-৮) শীর্ষক খবর পড়ে স্কুলবেলার কথা মনে পড়ল। আমাদের স্কুলে মাঝেমাঝেই রাজনৈতিক দলের জেলা সম্মেলন হত। অতএব ছুটি থাকত বেশ কিছু দিন। তার পর যখন স্কুল খুলত, ক্লাসরুমে ঢুকে দেখতাম, বেঞ্চের উপরে পড়ে আধখানা আলু, শুকনো ভাত, ঝোল। মেঝেতে ছড়িয়ে থাকত সিগারেট-বিড়ির অবশিষ্টাংশ। এমনকি স্যরেরা যে ডায়াস-টেবিল-চেয়ারে বসতেন, তা-ও বাদ যেত না। ব্ল্যাকবোর্ডে দেখা যেত বিচিত্র ‘শিল্পকর্ম’! সেগুলো পরিষ্কার করানো হত। শিক্ষকরা বলতেন, “স্কুলটাকে একেবারে ধর্মশালা বানিয়ে ছাড়ল!”
তখনও যদি ইমেলে ফর্ম পাঠিয়ে স্কুল খোলার আগে জানতে চাওয়া হত ক্লাসরুম ব্যবহার উপযোগী আছে কি না, তবে আমাদের কিঞ্চিৎ সুবিধা হত, স্যরেদেরও।
শঙ্খমণি গোস্বামী
কলকাতা-১২২