বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ দেবজ্যোতি মিশ্র তাঁর প্রবন্ধে (‘হে আমার আগুন, তুমি’, ১৯-৯) বেঠোফেনের জীবন, সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এবং পরবর্তী কালের সংস্কৃতিতে তাঁর প্রভাবকে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এমন অসাধারণ লেখায় একটি তথ্যপ্রমাদ চোখে পড়ল। লেখক লিখেছেন, হিটলার নাকি “বেঠোফেনের ‘নাইন্থ সিম্ফনি’-কে করে নিলেন জার্মানির জাতীয় সঙ্গীত।”
যত দূর জানি, হিটলার ১৯৩৩ সালে ক্ষমতা দখল করার আগে জার্মানির জাতীয় সঙ্গীত ছিল জোসেফ হেইডেনের সুরে আউগুস্ট হাইনরিশ হফমান ফন ফালের্সলেবেন রচিত ‘ডাস লিড ড্যের ডয়েশেন’ বা ‘দ্য সং অব দ্য জার্মানস’ সঙ্গীতটি (যার তৃতীয় স্তবক বর্তমান জার্মানির জাতীয় সঙ্গীত)। নাৎসি দল ক্ষমতা দখলের পর (১৯৩৩ সালে) এই সঙ্গীতটির কেবল প্রথম স্তবককে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করে। একই সঙ্গে নাৎসি দলের যুবনেতা হোর্স্ট ওয়াসেল রচিত ‘হোর্স্ট ওয়াসেল লিড’ বা ‘হোর্স্ট ওয়াসেল সং’ গানটিকে, যা ইতিপূর্বে ছিল নাৎসিদের দলীয় সঙ্গীত, জার্মানির জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া হয়।
অর্থাৎ, হিটলারের আমলে জার্মানির দু’টি জাতীয় সঙ্গীত ছিল, এবং এই দুই সঙ্গীতকে একত্রে বলা হত ‘সং অব নেশন’। ১৯৪৫ সালে নাৎসি জার্মানির পতনের পর এই জাতীয় সঙ্গীতগুলি বাতিল করা হয়। ‘হোর্স্ট ওয়াসেল লিড’কে জার্মানি ও অস্ট্রিয়াতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ‘ডাস লিড ড্যের ডয়েশেন’ গানটির তৃতীয় স্তবকটি ১৯৫২ সালে পশ্চিম জার্মানির এবং ১৯৯০ সালে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির ঐক্যের পর সমগ্র জার্মানির জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি পায়।
জিতাংশু নাথ
কলকাতা-৫৯
এলিজ়ের জন্য
দেবজ্যোতি মিশ্রের ‘হে আমার আগুন, তুমি’ শীর্ষক প্রবন্ধ সম্পর্কে কিছু কথা। বেঠোফেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি একটি অদ্ভুত শব্দের অবতারণা করেছেন— ‘ফিউরেলিস’। শব্দটি বেশ কয়েক বার ব্যবহৃত হয়েছে প্রবন্ধটিতে। এই শব্দের কোনও অস্তিত্ব জার্মান ভাষাতে নেই। শুধু জার্মান কেন, কোনও ভাষাতেই নেই। শব্দটি হবে ‘Für Elise’, অর্থাৎ ‘ফর এলিজ়ে’ বা ‘এলিজ়ের জন্য’। জার্মান ভাষায় এস-এর উচ্চারণ ‘জ়েড’-এর মতো হয়। ‘ফর এলিজ়ে’-র রচনাকাল ২৭ এপ্রিল, ১৮১০। এই সুরসৃষ্টির ইতিহাস বিতর্কিত। তবু একটা বিষয়ে অনেকেই সহমত। এই ‘এলিজ়ে’-র আসল নাম টেরেসে মালফাট্টি, যাকে বেঠোফেন প্রণয় নিবেদন করেছিলেন ১৮১০ সালেই।
কিন্তু এই প্রণয়প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন টেরেসে। বেঠোফেন-এর বয়স তখন ৪০ আর টেরেসের ১৯। কিন্তু টেরেসে অমর হয়ে রইলেন এলিজ়ে নামে, সোলো পিয়ানোর ঝঙ্কারের মধ্যে।
অমিত সান্যাল
কলকাতা-১০৬
সুরসাধকের সুর
দেবজ্যোতি মিশ্রের লেখায় নতুন ভাবে পেলাম সংগ্রামী সঙ্গীতের বেঠোফেনকে। এমন দার্শনিক চিন্তাশীল সুরসাধকের সুর সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সুখ, দুঃখ, সংগ্রামের মুষ্টিবদ্ধ জীবন চেতনার হাতিয়ার। তাঁর সৃষ্টিসুর যেন কবি সুকান্তের ‘ছাড়পত্র’-এ প্রতিধ্বনিত হয়, “যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল।” বেঠোফেন সেই সাধক, যিনি এখনও সমান প্রাসঙ্গিক।
আমাদের প্রাণের শহর কলকাতাও কিন্তু নিরুত্তাপ নয়। এখন হয়তো সেই বড় বাড়ি, সেই বৈঠকখানা পাওয়া যায় না, যেখানে অনেক কষ্ট করে কেনা পিয়ানোটা রাখা যাবে। কিন্তু বেহালা কিংবা সিন্থেসাইজ়ার নবীন প্রজন্মের অনেকে শিখছে।
মস্ত ডানা মেলে পাখিগুলো যে সুরের খড়কুটো এ নবীন হৃদয়ে গেঁথে দেবে, সেই সুরেই জেগে উঠবে প্রেমের সংগ্রাম। যেখানে লিখবে কোনও নবীন কবি, “হে আমার আগুন, তুমি পুড়িয়ে দাও জ্বালিয়ে দাও ধ্বংস করে দাও, পৃথিবীর যত রোগ যত ব্যাধি আমায় দাও, শুধু তুমি এ পৃথিবী এই মানুষদের সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ভরিয়ে দাও, আর সেই জন্যই আমাকে একটু সুর দাও ওই বেঠোফেনের মতো।”
প্রদীপ
কলকাতা-১৪৪
জার্মানির নয়
১৯১৯ সালের উইমার প্রজাতন্ত্রের সময় থেকেই জার্মানির জাতীয় সঙ্গীত ‘দ্য সং অব দ্য জার্মানস’। এই গানটি ১৮৪১ সালে ফালের্সলেবেন-এর লেখা ও ১৭৯৭ সালে দেওয়া জোসেফ হায়ডেন-এর সুর এতে ব্যবহৃত হয়। ১৯৫২ সাল থেকে এই গানটিরই তৃতীয় অনুচ্ছেদ দেশটির জাতীয় সঙ্গীত (আগে পশ্চিম জার্মানির, ১৯৯০-এর পরে পুরো দেশের)।
অন্য দিকে, বেঠোফেনের ‘নাইন্থ সিম্ফনি’-র একটি অংশ, ‘ওড টু জয়’ জার্মানির নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গীত হিসাবে মনোনীত হয়, এবং বর্তমানে এই অংশটি লাটিন, ফরাসি, ইটালীয় ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে।
দীপ্তক সরকার
কলকাতা-৩১
প্রচলিত গল্প
‘পান্তাবুড়ির গল্প’ শীর্ষক চিঠি (২৪-৯) প্রসঙ্গে এই পত্রের অবতারণা। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৃতীয় শ্রেণির পাতাবাহার বইয়ে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের নাম উল্লেখ থাকা অবশ্যই ভুল বলেই বিবেচিত হবে। তবে এই গল্পের লেখক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীও নন। ‘পাঞ্চজন্য’ প্রকাশিত উপেন্দ্রকিশোর রচনা সমগ্র (অখণ্ড সংস্করণ)-তে গ্রন্থকারের নিবেদন অংশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী লিখেছেন, “সন্ধ্যার সময় শিশুরা যখন আহার না করিয়াই ঘুমাইয়া পড়িতে চায়, তখন পূর্ববঙ্গের কোনো অঞ্চলের স্নেহরূপিনী মহিলাগণ এই গল্পগুলি বলিয়া জাগাইয়া রাখেন। সেই গল্পের স্বাদ শিশুরা বড় হইয়াও ভুলিতে পারে না।” একই ধরনের অনেক গল্পই উপেন্দ্রকিশোর কিংবা যোগীন্দ্রনাথ সংগ্রহ করে তাঁদের সঙ্কলন-গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। অবশ্য গ্রন্থগুলিতে ওঁদের মৌলিক লেখাও রয়েছে। তাই তৃতীয় শ্রেণির পাতাবাহার বইতে লেখকের নাম উল্লেখ না করে ‘প্রচলিত গল্প’ থাকাই বাঞ্ছনীয়।
সুবীর সাহু
মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
ভ্রমণে প্রতারণা
আগে পর্যটকরা বেড়াতে যাওয়ার জন্য সাহায্য নিতেন কিছু নামকরা ভ্রমণ সংস্থার এবং সামান্য কিছু বেশি পয়সা খরচ করে নির্বিঘ্নে ঘুরে আসতেন। কিন্তু মানুষের দুয়ারে দুয়ারে না যাওয়ায় ক্রমশ এদের ব্যবসা কমতে শুরু করে। পরিবর্তে সৃষ্টি হয় প্রচুর ছোট ছোট ভ্রমণ সংস্থার, যারা বিনা সরকারি অনুমোদনে সমাজমাধ্যমের সাহায্যে সব সময় থাকে মানুষের চোখের সামনে। এদের আবার দু’টি ভাগ— প্রথম ভাগ, এরা মানুষকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে ও তাঁদের টাকা লুট করে। এর পর ভোল বদলে নতুন নামে আবার পূর্ণ উদ্যমে শুরু করে দেয় লোক ঠকানো।
দ্বিতীয় ভাগ, এরা তথাকথিত বুদ্ধিমান মানুষের একটি দল, যারা একটি ভ্রমণ পরিচালনা করে এবং একটা বিশাল অঙ্কের ট্যাক্সবিহীন লাভের মুখ দেখে। এরা কাউকে কোনও খরচের হিসাব দেয় না, বিদেশ-বিভুঁইয়ে প্রতিবাদীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করে থাকে। প্রতি টুরের শেষে পরিচালকদের মুখোশ খুলে গেলে আবার কিছু দিন পরে নতুন নতুন লোককে নিয়ে এরা নতুন টুর পরিচালনা করে। তাই পর্যটন দফতরের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করা হোক, যাতে এরা নতুন করে মানুষকে বিপদে ফেলতে না পারে।
দেবাশীষ সিংহ
কলকাতা-৫৪