অর্ণব সাহা তাঁর ‘কলকাতা ময়দানের কালো দিন’ শীর্ষক রচনার (রবিবাসরীয়, ১৫-৮) এক জায়গায় বিদেশ বসুর চূড়ান্ত অখেলোয়াড়ি মনোভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা সংযোজন করতে চাই। ১৯৮০-র সেই বড় ম্যাচের আগে ময়দানে উত্তেজনা ছিল চরম পর্যায়ে। সে সময় মোহনবাগান ভারতীয় ফুটবলে সাফল্যের প্রায় সমস্ত চূড়া স্পর্শ করে ফেলেছিল। মোহনবাগান সমর্থকরা উজ্জীবিত ছিলেন। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও আশায় বুক বাঁধছিলেন নবাগত মজিদ বাসকার, জামশিদ নাসিরি ও মেহমুদ খাবাজির দিকে তাকিয়ে। ফেডারেশন কাপে দু’দলের শেষ সাক্ষাৎ ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকে। এহেন উত্তেজনাপূর্ণ আবহে ১৬ অগস্ট ইডেনে আরম্ভ হল ডার্বি। ৭০ হাজার দর্শকেরও বেশি উপস্থিতির সেই ম্যাচে রঞ্জি স্ট্যান্ড ছিল অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা, যা ছিল সবচেয়ে সস্তা দামের টিকিটের গ্যালারি। সেই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল দলে লেফট ব্যাক দিলীপ পালিতকে খেলানো হয়েছিল রাইট ব্যাক পজ়িশনে, শুধুমাত্র মোহনবাগানের বিদেশ বসুকে আটকাতে। খেলার প্রথম দিকে দিলীপ পালিত একটি দৃষ্টিকটু ফাউল করেন বিদেশ বসুকে। রেফারি সুধীন চট্টোপাধ্যায় কোনও কার্ড দেখাননি। বিদেশ বসু ছিলেন প্রকৃত ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড়। তিনিও কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এর পর দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিটে দিলীপ পালিত আরও একটি রাফ ট্যাকল করেন বিদেশ বসুকে। বিদেশ আর মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেননি। তিনি পাল্টা পা চালান এবং দু’জনে অনভিপ্রেত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। রেফারি দু’জনকেই লাল কার্ড দেখান। তত ক্ষণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। রঞ্জি স্ট্যান্ডে দু’-পক্ষের সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। লেখা হয় ভারতীয় ফুটবলের এক কলঙ্কিত অধ্যায়।
সৌম্য বটব্যাল
বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
সমাধান চাই
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে শতাব্দীপ্রাচীন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। আইএসএল-এ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের যোগদানও নিশ্চিত। কিন্তু খবর পড়ে বোঝা যাচ্ছে যে, মূল সমস্যাকে এড়িয়ে রাজনীতির ঢঙে দু’পক্ষকে হাত মিলিয়ে দিয়েই সমস্যার সমাধানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারী এবং কর্মকর্তাদের মতভেদ কিন্তু সেই একই জায়গায় আছে। অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে দল গঠন সম্পর্কিত সমস্যা। সময়াভাব এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে ভাল দল গঠন প্রায় অসম্ভব। জোড়াতালি দিয়ে একটা দল গঠন করে মাঠে নামার কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে, জানা নেই। তবে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা যে খুশি নন, এটা বোঝার জন্য কোনও বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। গত বছরের প্রায় শেষ সারির দলের এ বারের ফলাফলও যে বিশেষ ভাল হবে না, তা-ও আন্দাজ করা যাচ্ছে। কর্মকর্তা ও বিনিয়োগকারীদের মতভেদ চলতেই থাকবে, আর মাঠে দল খারাপ খেলতেই থাকবে। শেষমেশ লিগ টেবিলের নীচের দিকেই শেষ করতে হবে। ড্রেসিংরুমের রসায়ন ঠিক না থাকলে, মাঠে তার প্রতিফলন হতে বাধ্য। তাই সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকেই অনুরোধ, পরের বছর পর্যন্ত এই সমস্যাকে জিইয়ে না রেখে এর মধ্যেই সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করার চেষ্টা করুন।
দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য
কলকাতা-৫৭
ফুটবল-প্রেম
‘কলকাতা ময়দানের কালো দিন’ শীর্ষক প্রবন্ধটি অনেক পুরনো স্মৃতি উস্কে দিল। বাল্যকালে বাড়িতে বসে গড়ের মাঠের উত্তেজনা টের পেতাম দাদাদের দৌলতে। দাদা ও বন্ধুরা, বাবা, কাকা, প্রতিবেশী জেঠু সকলেই কম-বেশি ফুটবল নিয়ে গলা ফাটাতেন। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ডার্বি ম্যাচের দিন ঘটি-বাঙালের খুনসুটি ফুটে উঠত। অবলীলায় দু’দলের অধিকাংশ ফুটবলারের নাম পাড়াতুতো দিদি, কাকিমা, জেঠিমাদেরও মুখস্থ ছিল। দুপুরে এক টাকা সম্বল করে দাদারা দল বেঁধে ময়দানমুখো হত। ধর্মতলা থেকে চটি হাতে গলিয়ে, ঘোড়সওয়ার পুলিশের লাঠি এড়িয়ে, ৬০ পয়সার গ্যালারিতে খেলা দেখে বাড়ি ফিরত। প্রিয় দলের সঙ্গে কাস্টমস, পোর্ট, এরিয়ান, উয়াড়ি, চন্দ্র মেমোরিয়াল, রেল—কোনও ম্যাচ বাদ যেত না। মাঠে যেতে না পারলে ম্যাচের ধারাভাষ্য তারা তন্ময় হয়ে রেডিয়োতে শুনত। দলবদলের সময় খেলোয়াড় ছিনতাই, গোপন আস্তানায় লুকিয়ে রেখে নিজ দলে সই করিয়ে নেওয়ার মতো রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার ছিল সংবাদপত্রের পাতায় অন্যতম আকর্ষণ। শিল্ডের ম্যাচে ৫-০ গোলে হারের লজ্জায় ঘটিদের পাড়ায় অমাবস্যার অন্ধকার নেমে এসেছিল। লজ্জায় আত্মঘাতী হয়েছিলেন তরুণ উমাকান্ত পালোধি। বাবার দাহকাজ সেরে প্রিয় দলের খেলা দেখতে হাজির হয়েছিলেন জনৈক সমর্থক, এ কাহিনি মুখে মুখে ফেরে আজও। শ্যাম থাপার বাইসাইকেল কিক বাচ্চারাও মাঠে অনুকরণ করত। মোহনবাগানের গোলে দাঁড়িয়ে চার গোল খাওয়া ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের পুনর্জন্ম হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলে এসে। সবচেয়ে কাকে ভয় পান? সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল, “চিন্ময়ের ব্যাকপাসকে।” তত দিনে পাড়ায় দু’চার ঘরে টিভি এসে গিয়েছে। রবিশঙ্করের সিগনেচার টিউন আর অজয় বসুর অপূর্ব ধারাভাষ্য এক অন্য মাত্রা এনে দিত।
টিভিতেই প্রত্যক্ষ করেছিলাম ১৬ অগস্ট, ১৯৮০-র সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রঞ্জি স্ট্যান্ড থেকে লাফিয়ে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৬ জন তরতাজা ফুটবলপ্রেমী। পিজি হাসপাতালের সামনে তাঁদের নামের ফলক খোদাই করা আছে। তার পর থেকে ময়দানের ফুটবলের জনপ্রিয়তার গ্রাফ নিম্নমুখী। টিভির দৌলতে বিদেশি ফুটবল দেখা আর কপিলদেবের হাতে প্রুডেনশিয়াল কাপ ওঠা বাঙালিদের ফুটবল-বিমুখ করে তোলার বৃত্ত সম্পূর্ণ করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
সরিৎশেখর দাস
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
সমর্থকদের প্রতি
বিগত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে যে, স্পনসরদের সঙ্গে ক্লাবের কর্মকর্তাদের তেমন বনিবনা হচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, তিক্ততাটা প্রায়শই মাত্রাছাড়া পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় ক্লাবের। এই তিক্ততা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, দু’তরফের মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির তফাত। তবুও বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজন হয় অর্থের জন্য, ক্লাব চালাতে গেলে যার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে শুধুমাত্র বিনিয়োগকারীদের দরজায় থলি হাতে ঘুরে বেড়ানো ছেড়ে অন্য উপায় খুঁজে বার করা কি ক্লাবের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব? আমার বিশ্বাস, দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলের অগণিত সমর্থক চান যে, ক্লাব এই দুঃসময় থেকে ঘুরে দাঁড়াক। সে ক্ষেত্রে, এই সমর্থকদের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য একটা সৎ আবেদন কি রাখা যায় না? তাঁরা যদি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তা হলে যে কোনও আর্থিক সমস্যার মোকাবিলা করা কঠিন হবে না। আমার বিশ্বাস, প্রিয় ক্লাবের এই ঘোর দুঃসময়ে সমর্থকরা সবাই এগিয়ে আসবেন, যদি তাঁরা নিশ্চিত হন যে, তাঁদের পাঠানো টাকা সঠিক এবং সৎ ভাবে কাজে লাগানো হবে, যার পাইপয়সার হিসেব তাঁরা পাবেন। তবে এই ব্যবস্থার বাস্তবানুগ প্রয়োগে প্রয়োজন হবে অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং সামগ্রিক ভাবে সুষ্ঠু এক ম্যানেজমেন্টের। বর্তমান কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ভেবে দেখতে পারেন। অন্য ধাঁচের ভাবনা কিন্তু অনেক সময় জটিল সমস্যারও সমাধান করে দেয়।
সুমিত চক্রবর্তী
কলকাতা-১০৭