Letters to the editor

সম্পাদক সমীপেষু: অর্জনের উপায়

কল্যাণকামী রাষ্ট্রের কর্তব্য, যাতে মানুষ যোগ্যতা, পরিশ্রম অনুযায়ী নিজ অর্থ অর্জন করে নিতে পারে, তার ব্যবস্থাটি কায়েম রাখা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২১ ০৫:৩৭
Share:

‘মধ্যবিত্তের মহা বিপদ’ (২১-৯) নিবন্ধে অভিরূপ সরকার বলেছেন, অতিমারি মধ্যবিত্তের জীবনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে দিয়েছে। নিম্নবিত্তের পাশে তবু রাষ্ট্র, বিভিন্ন অলাভজনক ও লাভজনক সংস্থা থাকে। মধ্যবিত্ত না পারে হাত পাততে, না পারে নিজের উপার্জন দিয়ে সংসার চালাতে। অনেকের এ সময়ে উপার্জন নেই, কারও মাইনে অর্ধেক হয়েছে, কেউ অপেক্ষা করছেন যে কোনও সময় চাকরি চলে যাওয়ার। মধ্যবিত্ত শুধুমাত্র কেনাকাটার মাধ্যমে অর্থনীতি সচল রাখে না। নিম্নবিত্তকে ঠেলে তোলে, উচ্চবিত্তকে টেনে নামায়। সমাজে একটা সমতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। অতিমারির বিপদ পৃথিবী জুড়ে, তবু ভারতেই মধ্যবিত্তের দুর্দশা সবচেয়ে বেশি, পরিসংখ্যান দিয়ে তা বুঝিয়েছেন লেখক।

Advertisement

তার মধ্যেও শহুরে মধ্যবিত্তের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। যাঁরা গ্রামে থাকেন, কিছুটা কৃষিভিত্তিক জীবনযাপন করেন, তাঁদের অবস্থা এতটা খারাপ নয়। তার বিচার-বিশ্লেষণ অর্থনীতিবিদ ও সমাজতাত্ত্বিকরা করবেন। তবে অতিমারি-পরবর্তী রোজগার ব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন আসবে। দক্ষতা ও পরিশ্রম করার ক্ষমতা কাজের বাজারের প্রধান মাপকাঠি হবে। উদ্বৃত্ত কর্মীর কাজ থাকবে না। এক বার চাকরি পেলে সে চাকরি বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে। সরকারি চাকরিও ক্রমশ দুর্লভ হবে। সে চাকরি দিয়ে দেশের বেকার সমস্যার সমাধানও হবে না। এখন তো আবার বহুজাতিক সংস্থাগুলি পর্যন্ত সরাসরি কর্মী নিয়োগ কম করে। মাঝের একটি সংস্থার কাছে চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়ে নেয়। যে কোনও সময় চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ছাড়িয়ে দিলে সংস্থাটি দায়ী থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে মাঝের সংস্থাটি ভুঁইফোঁড়। আজ আছে, কাল নেই। আবার অনেক সংস্থা নিজের আর্থিক অবস্থা ভাল করার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের আর্থিক সংস্থানের দায়িত্ব নিচ্ছে, এটা কম কথা নয়। সুতরাং, কর্মসংস্কৃতির উন্নতি করে সংস্থাটি যাতে বাঁচতে পারে, তা দেখা দায়িত্ব। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের কর্তব্য, যাতে মানুষ যোগ্যতা, পরিশ্রম অনুযায়ী নিজ অর্থ অর্জন করে নিতে পারে, তার ব্যবস্থাটি কায়েম রাখা।

চম্পা খাতুন

Advertisement

কলকাতা-৯৯

কাজের সুযোগ

মন্টুবাবুর ছোট্ট জামাকাপড়ের দোকান জেলা শহরে। সেই দোকানে রাতদিন পরিশ্রম করে সপরিবারে ভাড়াবাড়িতে থেকে ছেলেকে পড়িয়েছেন, মেয়েকে পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বছর চারেক আগে ছেলে দিল্লি বিমানবন্দরে চাকরি পাওয়ার পর ছোট্ট একটু জায়গা কিনে, অনেক পরিশ্রম করে একটা বাড়ি বানিয়েছেন। দু’বছর আগে পুজোর সময়ে গৃহপ্রবেশ হল। গতকাল হঠাৎ দেখলাম সেই বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন। ফোন করে জানলাম, লকডাউনে ছেলের চাকরি গিয়েছে। কাপড়ের দোকানে বিক্রি কমেছে। সংসার চালাতে হিমশিম, গৃহঋণের ইএমআই দেবেন কী করে? আরও শুনলাম, ছোট দোকানদাররা অনেকে অন্য কাজের খোঁজে ঘুরছেন। এক জন তো ঋণের ধাক্কা সামলাতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।

‘মধ্যবিত্তের মহা বিপদ’ প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। তা দেখাল, করোনার ক্রান্তিকালে অধিকাংশ মধ্যবিত্তের অবস্থা মন্টুবাবুর মতো। মধ্যবিত্তরা শিক্ষিত এবং শিক্ষানুরাগী। আত্মসম্মানবোধ প্রবল এবং একটু অহঙ্কারী। এঁরা চাকরিজীবী অথবা ছোট ব্যবসায়ী। দেশের অর্থনীতির চাকা মসৃণ ভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে এঁদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ, আয়ের বেশির ভাগ অংশ এঁরা ব্যয় করতে ভালবাসেন। প্রয়োজনে ধার করলেও ধার শোধের মানসিকতা ও চেষ্টা থাকে। লাইনে দাঁড়িয়ে সরকারি অনুদান নিতে এঁদের কুণ্ঠা হত। সংসারের চাপে এখন অনেকে সে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অতিমারির আবহে মধ্যবিত্ত সমাজের অনেকেই এখন নিম্নবিত্ত অথবা দারিদ্রসীমার নীচে নেমে গিয়েছেন। এটা দেশের অর্থনীতির পক্ষে খারাপ ইঙ্গিত। রাজ্যে বড় শিল্প নেই। লকডাউনের ফলে ছোট শিল্প, ব্যবসা ধুঁকছে। কাজ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। আয় কমেছে বহু পরিবারের। শুধুমাত্র অনুদান দিয়ে এর সমাধান সম্ভব নয়। দরকার কর্মসংস্থানের।

গৌতম পতি

তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

স্বপ্নসন্ধানী

অভিরূপ সরকার করোনাকালে মধ্যবিত্তের দুর্বিষহ জীবনের ছবি তুলে ধরেছেন। মধ্যবিত্ত স্বপ্ন দেখেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আজীবন লড়াই চালিয়ে যান। নিম্নবিত্ত মানুষেরা অনেক সময়েই ভেবে নেন, ব্যয়বহুল আধুনিক জীবনযাপন সবার জন্য নয়। বিশ্বায়নের বাজারে তাঁরা ভাল উপভোক্তা নন। অন্য দিকে, মধ্যবিত্তের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বিরাট ফারাক, তবুও তাঁরা স্বপ্ন পূরণের জন্য দৈনিক ১৮ ঘণ্টা ছুটছেন রোজগার করতে। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, নববর্ষ কিংবা ধর্মীয় উৎসব পালনে তাঁদের দেদার কেনাকাটা বাজার অর্থনীতিকে পুষ্ট করে। আবার ‘চলুন যাই নরওয়ের সূর্যোদয় দেখে আসি’, ‘আপনার বাড়িই আপনার পরিচয়’ কিংবা ‘২০৩৬ সালে আপনার সন্তান হোক হার্ট স্পেশালিস্ট’— এই জাতীয় বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে মধ্যবিত্তরাই ধার করে বেড়াতে যান, বাসস্থান কেনেন অথবা নামী বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করেন। ঋণ নিয়ে স্বপ্ন পূরণ করেন এবং দৈনন্দিন সংগ্রামের মাধ্যমে সেই ঋণ পরিশোধও করেন। এই ভাবে সচল রাখেন বাজার অর্থনীতি। অন্য দিকে, যাঁরা অনুদান পান তাঁরা অনেকেই সেই অনুদান অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করেন। অতিমারিতে কাজ হারানো, বেতন কমা, অথবা লকডাউনে ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা না হওয়ার কারণে মধ্যবিত্তের আর্থিক অবস্থা তলানিতে ঠেকেছে। মধ্যবিত্তকে শুধুমাত্র দুগ্ধপ্রদানকারী গাভী হিসাবে দোহন করার আর্থিক নীতি গ্রহণ করলে হবে না। গতিশীল মধ্যবিত্তদের জন্যও কল্যাণকর সরকারি আর্থিক নীতি দরকার। নয়তো মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাসে দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যেতে বাধ্য।

তন্ময় মণ্ডল

গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা

অসহায় প্রবীণ

সুদের হারে ক্রমাগত হ্রাস সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় ফেলছে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে। অপেক্ষাকৃত তরুণ যাঁরা, একটা চাকরি জোগাড় করেছেন বা ছোটখাটো ব্যবসায়ে পা রাখতে পেরেছেন, তাঁদের বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত। অনেকেই শেয়ার বাজারে নিত্য বিচরণ করেন। এ ছাড়াও দৃষ্টিক্ষেত্র অনেকটা বিস্তৃত হওয়ায় তাঁরা অপেক্ষাকৃত বেশি লাভপ্রদানকারী ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু বয়স্কদের সঞ্চিত টাকার উপর সুদ হ্রাস মর্মান্তিক। আজীবন পরিশ্রম করে, বা চাকরি চলে যাওয়ার সময় এককালীন যেটুকু পেয়েছেন, সেইটুকু নিরাপদ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মেয়াদি জমায় রেখে তাঁরা মনে করেছিলেন ডাল-ভাত খেয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। এঁরাই পড়েছেন আতান্তরে। বলা হয়, সুদ কমলে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন। চাকরির বাজার খুলে যাবে। বাস্তবে ঘটে উল্টোটা। মেয়াদি জমায় প্রদেয় সুদও কমল, উপার্জনশীল মানুষ চাকরি খুইয়ে বাড়িও ফিরে এলেন। প্রবীণদের বিপন্নতায় বিপদগ্রস্ত দেশের অর্থনীতি।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি

শ্রীরামপুর, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement