সম্প্রতি ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পটিকে শব ব্যবচ্ছেদের ভঙ্গিতে যুক্তির টেবিলে যে ভাবে কাটাছেঁড়া করেছেন সম্পাদক (‘সফল’, ১৬-৯), সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশে তা সত্যিই সমর্থনযোগ্য। তা সত্ত্বেও জানতে ইচ্ছে করে, নিরাপদ দূরত্বে থেকে যুক্তি-তথ্য সমন্বিত বক্তব্য রাখা, আর সরকারের ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টা, দুটোর গুরুত্ব কি এক হতে পারে? যখন প্রশাসনকে রাজ্যের ব্লকে ব্লকে নিয়ে গিয়ে গতি দিতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল এই সরকার, তখনও অনেক সমালোচনা হয়েছিল। কারণ, এই রকম কাজকর্ম এর আগে কোনও সরকার করেনি। তা যখন হতে পেরেছে সফল ভাবে, তখন ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প আসায় অবাক হওয়ার কী আছে? এটাই তো মমতার কাজের গতিধারা। এখন রাজনৈতিক দল, নাগরিক ও সরকার যদি সত্যিই সুসংহত ভাবে কাজ করতে পারে, সকলের কাছেই মঙ্গল। তৃণমূল দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেও তা সাহায্য করবে বলে মনে হয়।
দুয়ারে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বিরোধীরা প্রবল সরব। অথচ, দুয়ারে সরকারের শিবিরে নানা প্রকল্পে নাম লিখিয়েছেন প্রায় তিন কোটি মানুষ। তীব্র মমতা-বিরোধীরাও দলে দলে হাজির হয়েছেন। বহু কষ্ট সহ্য করে ৬-৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা না থাকলে তা কি সম্ভব? এই খবর জানার পর মমতা জনগণকে সরকারের সুবিধা পাইয়ে দিতে সচেষ্ট হবেন না, ভাবা যায়? মমতা এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেকে জনপ্রিয়তার যে শিখরে তুলতে সমর্থ হয়েছেন, তাকে রক্ষা করতে গেলে তাঁর প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেই হবে।
পরিশেষে বলি, লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী-সহ ৫৭টি প্রকল্প, যাকে বহু স্বঘোষিত পণ্ডিত ‘ভিক্ষার দান’ বলে ব্যঙ্গ করছেন, তার প্রয়োজনীয়তা কিন্তু অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুগত মারজিৎ প্রমুখ অস্বীকার করছেন না। তা হলে মমতার ভুল কোথায়?
মৃত্যুঞ্জয় বসু
কলকাতা-৩০
কেবলই অনুদান?
বিনা পয়সায় রেশন, বিনামূল্যের ভ্যাকসিন, মাসে মাসে ৫০০-১০০০ টাকা সরকারের কাছ থেকে হাতখরচের আশ্বাস মহিলাদের জন্য, সস্তায় গ্যাস, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, ইমাম ভাতা,পুরোহিত ভাতা— অনুদান আর ভাতায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে সোনার বাংলাকে। আমাদের দেশকে। বেকার মানুষের দল রোদ, বৃষ্টি ভুলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবেন বিভিন্ন অনুদানের স্বপ্ন নিয়ে, করোনাভাইরাসকে উপেক্ষা করে। লাইনে দাঁড়িয়ে ভাঙা রাস্তা, পানীয় জলের সমস্যা, জমা জল, পরিবহণের সমস্যা, বেহাল পুরপরিষেবা নিয়ে সমালোচনা করবেন। তবু এক বারও ভেবে দেখবেন না, এই হাজারো অনুদানে ঘি ঢালতে গিয়েই বাকি সব সরকারি পরিষেবা আজ লাটে উঠেছে।
অনুদান বা ত্রাণ বিতরণ সাময়িক। কখনও তা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হতে পারে না। অনুদানের রাজনীতি দেশের উন্নয়নের পরিপন্থী। সব নেতাই জানেন, তবু এই সহজ পথেই চলেন। কোভিডের জন্য ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে না। মোবাইল গেম আর পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হবে। তাদের বাবা-মায়েরা কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে থাকবেন। মদ, গাঁজার নেশায় গার্হস্থ অশান্তি বাড়বে। বাড়বে নারী পাচার ও ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ। শিক্ষাবিহীন, সংস্কৃতিবিহীন, কেবলমাত্র অনুদান-নির্ভর একটা সমাজব্যবস্থা আগামী দিনে আমাদের প্রজন্মকে কোথায় দাঁড় করাবে?
কাজের ইচ্ছে, পড়াশোনার অভ্যাস, সুস্থ চিন্তা এই সব হারিয়ে কেবলমাত্র মোবাইলে মজে থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধিই হবে আগামী দিনের বাংলা তথা এই দেশের মানুষের একমাত্র নাগরিক কর্তব্য।
শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-১৪১
অপচয়
শারোদৎসব আগত। ক্লাবগুলোকে ৫০,০০০ টাকা অনুদান দিয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। খুশি হোক, আনন্দ করুক, ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’— তাতে যদি রাজকোষ শূন্য হয়, হোক। উন্নয়ন না হয়, না হোক। এই অতিমারি আবহে, লকডাউন কালে, আমপান-ইয়াসের ধাক্কায়, অত্যধিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ চরম আর্থিক সঙ্কটে । গত দু’বছরে অনেক মানুষের কাজ চলে গেছে, চাকরি নেই, মাইনে অর্ধেকের কম, পরিযায়ী শ্রমিকরা ভবঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কলেজছুট, স্কুলছুট পড়ুয়ারা কাজের সন্ধানে এ দিক-ও দিক চলে যাচ্ছে, করোনার তৃতীয় ঢেউ এলে তা সামলানোর তেমন পরিকল্পনা নেই। অথচ, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার ক্লাবগুলোর জন্য। এই টাকা কি উন্নয়ন খাতে খরচ করা যেত না?
স্বপন আদিত্য কুমার
বাণীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
রাজনীতির ঊর্ধ্বে
‘কেন্দ্রের অঙ্কেই কেন্দ্রকে বিঁধলেন অমিত’ (১১-৯) সংবাদটিতে জানা গেল, পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অতিমারি পরিস্থিতিতে মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন কেন্দ্রের ভুল নীতি ও ব্যর্থতাকে। তাঁর এই ব্যাখ্যা যথাযথ, এবং অবশ্যই প্রশংসনীয়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পরিসংখ্যান যুক্তি দিয়ে নস্যাৎ করে দেওয়ার মধ্য দিয়েই বোঝা যায়, অর্থনীতিবিদ হিসাবে অমিতবাবু কেন সামনের সারিতে। কিন্তু তিনিই যখন মানুষের হাতে অর্থের জোগান প্রসঙ্গে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন, তখন অর্থনীতিবিদের তকমাটা সরে গিয়ে ওঁকে অচেনা লাগে। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের প্রতি সম্মান জানিয়েই বলতে পারি, অতিমারি পরিস্থিতিতে গরিব মানুষ ও পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে অর্থের জোগান দিয়ে বাজারে চাহিদা সৃষ্টি আর লক্ষ্মীর ভান্ডারের মাধ্যমে নারীদের মাসিক সাহায্য এক নয়। অমিত মিত্রকে অনুরোধ, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ঠিক ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলা তথা ভারতকে পথ দেখান।
অশোক দাশ
রিষড়া, হুগলি
বিশ্বায়নের ঝুঁকি
এক সময় বলা হত, ভিয়েতনামে বৃষ্টি হলে বামপন্থীরা কলকাতায় ছাতা মেলেন। বামপন্থীদের কথা ছিল, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ঘটনা পৃথিবীর অন্য স্থানেও প্রভাব ফেলে। কারণ, বামপন্থীরা আন্তর্জাতিকতায় বিশ্বাস করেন। বিশ্বায়নের যুগে এটাই সত্য। তাই ওয়াল স্ট্রিটে বৃষ্টি নামলে ভারতের শেয়ার বাজারে ছাতা মেলা হয়। কারণ, আমেরিকার সরকার অতিমারি কালে আর্থিক অনুদান শুরু করলে বা ফেডারাল ব্যাঙ্ক সুদের হার কমালেই ভারতের শেয়ার বাজার স্ফীত হয়ে উঠে। ফেডারাল সুদের হার কম হওয়ায় ও আমেরিকার সরকারি অনুদানের কারণে বিপুল অর্থ ভারতের শেয়ার বাজারে লগ্নি হচ্ছে। ফলে, মেশিনে জং-ধরা কোম্পানির শেয়ারের দরও তরতরিয়ে বাড়ছে। শেয়ারের দামের সঙ্গে কোম্পানির উৎপাদন বা লাভ-লোকসানের সম্পর্ক নেই। এই কৃত্রিম ভাবে বর্ধিত শেয়ার লভ্যাংশ বাজারে অর্থের জোগান বাড়াচ্ছে। অন্য দিকে, সুদের হার কম হওয়ার জন্যেও বাজারে অর্থের জোগান বাড়ছে। ফলে, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা। তার উপর অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ বাড়ছে। এই অবস্থায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বর্তমানে রেপো রেট কমাচ্ছে না বটে, কিন্তু সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পথেও হাঁটছে না। সুদের হারের সঙ্গে শিল্প ঋণের খরচ জড়িত। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য সুদ আরও কমানো। ফলে, দেশের এক বৃহৎ অংশের মানুষ, যাঁদের সুদের উপর নির্ভর করতে হয়, তাঁদের অবস্থা দুর্বিষহ। কারণ, এক দিকে সুদের হার ক্রমাগত কমছে, অন্য দিকে মুদ্রাস্ফীতির ক্রমবর্ধমান হারের ফলে তাঁদের প্রকৃত আয় শূন্য বা ঋণাত্মক।
বিশ্বদেব কণ্ঠ
কলকাতা-৭৫