অভিজ্ঞান সরকারের ‘পেটে খিদে, ব্যাগে সুখাদ্য’ (২-৯) লেখাটি পড়ে মুহূর্তে চোখে ভেসে ওঠে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের পাতায় রানারের ছবি— হাতে লণ্ঠন আর পিঠে চিঠির বোঝা। মনে পড়ে গায়ে কাঁটা দেওয়া সেই পঙ্ক্তি, “পিঠেতে টাকার বোঝা তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া।” প্রায় এক শতাব্দী আগে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সেই রানার আজও ছুটে চলেছে। আজও যখন দেখি পেটে খিদে চেপে ডেলিভারি বয় স্বাদ ও গন্ধে ভরপুর খাবারের প্যাকেট বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়, কিন্তু সে খাবার কিনে খাওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস করতে পারে না, বুকের ভিতর বড় আন্দোলন হয়।
আমার সতেরো বছরের ছেলে যখন মাঝে মাঝে বায়না ধরে খাবার অর্ডার করার জন্য, খুব রাগ করি, বিরক্ত হয়ে যাই। বকাবকি করি অকারণে টাকা নষ্ট হওয়ার কথা ভেবে। কিন্তু আমাকে শান্ত করার অছিলায় নিছকই মজার ছলে সে যখন বলে, এই অর্ডারে শুধু আমার ঘরেই খাবার আসবে না, বরং সেই ডেলিভারি বয়ের ঘরেও কিছু খাবার আসবে; এই করোনা-জনিত আকালে ওই তরুণেরও কিছু সাহায্য হবে, তখন মনটা হঠাৎ নরম হয়ে যায়। মনে হয়, সমাজের জন্য কিছুই তো করা হল না। অনিশ্চয়তার পথ ধরে এগিয়ে-চলা মানুষের জন্য যদি এ ভাবেও কিছু করা যায়, মন্দ কী।
দীপান্বিতা সরকার
দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান
খিদের যন্ত্রণা
স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিক্রম করার পরেও সেই শ্রেণির মানুষের সংখ্যাধিক্য দেখা যাচ্ছে, যাঁরা প্রদীপকে ধরে রাখা পিলসুজ। অভিজ্ঞান সরকারের লেখায় পাওয়া গেল খাবারের ‘কুরিয়র’ তরুণদের, যাঁরা পিঠে রসালো, সুগন্ধি খাদ্য-সহ বিভিন্ন জিনিস বহন করেও খিদের যন্ত্রণা চেপে রেখে এগিয়ে চলেছেন। মানুষ যে বাঁচার জন্য কত যান্ত্রিক, জড়পদার্থ হয়ে গিয়েছে, তা এই খাবার-বহনকারী শ্রমিকদের মর্মন্তুদ জীবনচিত্র দেখলেই বেশ বোঝা যায়। এই করোনা কালে বিশেষ বিশেষ ধনী শ্রেণির অকল্পনীয় সম্পদবৃদ্ধি এ ভাবেই যদি চলতে থাকে, তার অন্ধকার দিকটিও যে জাতির জীবনে হানা দিতে পারে কোনও এক সকালে, তা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না।
মৃত্যুঞ্জয় বসু
কলকাতা-৩০
ই-শ্রম
সরকার অসংগঠিত খাতে নিয়মতান্ত্রিক কাজ করেছে। কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক পরিযায়ী শ্রমিক-সহ অসংগঠিত খাতে শ্রমিকদের নথিভুক্তি শুরু করেছে, কর্মীদের পোর্টাল ই-শ্রমে জাতীয় ডেটাবেসে। লক্ষ্য পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নিবন্ধন প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য, ভারতে প্রায় এক কোটি শ্রমিককে নথিভুক্ত করা। তার পরে নথিভুক্ত শ্রমিকদের ১২ ডিজিটের ই-শ্রম কার্ড প্রদান করা হবে, যাতে শ্রমিকরা সরকার-প্রদত্ত সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলির সুবিধা পেতে সক্ষম হন।
এখন এটাই দেখার বিষয় হবে, কী ভাবে সরকার ভোটার তালিকার মতো সময়ে সময়ে শ্রম তালিকা সংশোধন করে। সম্ভবত এখন শ্রমিকরা সংগঠিত সেক্টরের মতো স্বীকৃতি এবং সুবিধাগুলির একই আশ্বাস পাবে। যদি এই প্রোগ্রামটি সফল ভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে, তা হলে এটি ৭৫ বছরের ইতিহাসে অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে
প্রমাণিত হবে।
নিখিল রাস্তোগী
অম্বালা ক্যান্ট, হরিয়ানা
পরীক্ষার অপেক্ষা বিএড ডিগ্রিধারীদের যন্ত্রণার শেষ নেই। শেষ শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৬ সালে। অর্থাৎ, শেষ সাড়ে চার বছরে কোনও নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আসেনি। কিন্তু এর মধ্যে প্রতি বছরেই পশ্চিমবঙ্গের বহু সরকারি এবং বেসরকারি কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করে ফেলেছেন বহু ছাত্রছাত্রী। বর্তমান ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার স্বাভাবিক নিয়মে স্নাতকোত্তর (ন্যূনতম স্নাতক) হওয়ার পরে বিএডের ডিগ্রি অর্জন করতে এক জন শিক্ষার্থীর বয়স পঁচিশের চৌকাঠে পৌঁছে যায়। লাখ টাকা খরচ করতে হয় শুধুমাত্র শিক্ষকতার পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা অর্জনের জন্য। এর পর পাঁচ বছর ধরে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকা যে কতটা যন্ত্রণার, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। মহার্ঘ বিএড ডিগ্রি অর্জন করতে এঁদের কাউকে বাজার থেকে ধার করতে হয়, কাউকে গয়না বন্ধক রাখতে হয়। পরীক্ষার আশায় বসে থাকতে থাকতে এঁদের মনে সৃষ্টি হচ্ছে প্রবল হতাশা, সহ্য করতে হচ্ছে সামাজিক অপমান। ফলে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সার্থকতা নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে। এ সব কিছু সহ্য করেও অনেকে বসে রয়েছেন নিজেদের প্রমাণ করার জন্য। শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়মিত হলে, এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত ও স্বচ্ছ হলে বিএড ডিগ্রিপ্রাপকদের দুর্দশার অবসান হতে পারে।
শান্তনু নন্দ
পটাশপুর,পূর্ব মেদিনীপুর
স্বাবলম্বন
অসিত কুমার রায়ের ‘অনুদানের অন্য পিঠ’ (সম্পাদক সমীপেষু, ২৯-৮), অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং যুক্তিপূর্ণ। রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের অনুদান প্রকল্পের আজ ছড়াছড়ি। প্রশ্ন একটাই, এই অনুদান যাঁরা পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের কি মাসিক ৫০০-১০০০ টাকা অনুদান পেয়ে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধী হয়ে থাকার অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি মিলবে, যদি না তাঁরা ন্যূনতম মাসিক ৫০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকার রোজগারের কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পান? যদি বিভিন্ন স্বনিযুক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে কর্মনিযুক্ত করা যেত, তাতে পাকাপাকি ভাবে অন্তত কিছু মানুষের মাসিক আয়ের পথ নিশ্চিত হত। মানুষ অনুদান চান না, চান অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। অনুৎপাদক অনুদান ভোটব্যাঙ্ক প্রসারে সহায়ক হলেও, অর্থনৈতিক অগ্রগতির পরিপন্থী।
মিহির কানুনগো
কলকাতা-৮১
সামান্য দান
মাইলফলক (২০-৮) সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে নারীর হাতে মাসে পাঁচশো থেকে হাজার টাকার ব্যয়ক্ষমতা থাকা তাঁদের ক্ষমতায়নের পক্ষে সদর্থক পদক্ষেপ। কথাটি ঠিক নয়। রাজ্য জুড়ে প্রতিটি স্তরে কর্মসংস্থান ও কাজের পরিসর বাড়াতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরীক্ষা চালু করতে হবে। মা-বোনেদের বাড়িতে বসে নিশ্চিত রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে সেই পরিকাঠামো গড়ে দিতে হবে, যা থেকে তাঁরা নিজেরা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হবেন। না করে শুধু অনুদান নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে যথেষ্ট নয়।
সেক ইমরান
গোলকুঁয়াচক,পশ্চিম মেদিনীপুর
কর্মনাশা
আমরা দিনের অধিকাংশ সময় সমাজমাধ্যমে ব্যয় করছি। অসংখ্য সুফল বয়ে আনার সঙ্গে, সমাজমাধ্যম আমাদের ক্ষতিও করে চলেছে। নানা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, হতাশা-সহ নানা অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। বিদেশের এক জন মনোচিকিৎসক বলেছেন, তিনি বছরে প্রায় ১০০ জনকে চিকিৎসা করছেন, যাঁরা সমাজমাধ্যম ব্যবহারের ফলে মনোবিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়াও, সমাজমাধ্যমের অবাধ ব্যবহার বেশ কিছু মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি করছে। ব্ল্যাকমেলিং, সাইবার হয়রানি, গোপন ছবি, ভিডিয়ো ফাঁস ইত্যাদি থেকে এক জন সুস্থ মানুষ সহজেই আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়েন। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই ঝোঁক বেশি। তাই, সমাজমাধ্যমে সক্রিয় থাকার প্রবণতা কমাতে হবে।
মোহাম্মদ রায়হান
ঢাকা, বাংলাদেশ