বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রাজ্য সভাপতির পদে দিলীপ ঘোষের জায়গায় সুকান্ত মজুমদারকে মনোনীত করা প্রসঙ্গে দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘পালাবদলে নতুন হাওয়া’ (২৩-৯) নিয়ে এই চিঠি। সরল পাটিগণিতের সূত্রে সমাধান খোঁজার চেষ্টা অর্থহীন। মনে রাখতে হবে, বিজেপি দলটির পিছনে সঙ্ঘ পরিবারের প্রভাব সর্বজনবিদিত। কে দলীয় সর্বোচ্চ পদে মনোনীত হবেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, এমনকি ক্ষমতাসীন রাজ্যগুলিতে কে কোন দফতরের মন্ত্রী হবেন, সব নির্ভর করে সঙ্ঘ পরিবারের উপর। এটাই সর্বভারতীয় দলটির নিজস্ব অনুশাসন। ফলস্বরূপ, ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সাংসদ সংখ্যা দুই থেকে ২০১৮-তে তিন শতাধিক। যে অঙ্ক সঙ্ঘ পরিবার বোঝে, তা বুঝতে অন্য দলগুলোর প্রাণপাত করতে হয়।
সুকান্তবাবু নবাগত হলেও তিনি সঙ্ঘ পরিবারের। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে, মুকুল রায়কে কেন দলীয় পদ দেওয়া হয়েছিল? উত্তরটা সহজ। এমন একটি পদ, যা হাতির গজদন্তের সঙ্গে তুলনীয়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে করা হলেও মনে হয় না, তিনি সব সিঁড়ি অতিক্রম করে শীর্ষে পৌঁছবেন! অন্তরায় একটাই, তিনি সঙ্ঘ পরিবারের কেউ নন এবং এই মুহূর্তে দক্ষ সঙ্ঘী হয়ে ওঠার কোনও সহজ পথ তাঁর জন্য নেই। সুকান্তবাবু পেশায় অধ্যাপক, কথাবার্তা গুছিয়ে বলতে পারেন, বেফাঁস মন্তব্য করার কোনও অতীত উদাহরণ নেই। এত গুণ-সমন্বিত মানুষের জন্য এই পদ এত দিনে এল, দেখেই আশ্চর্য হচ্ছি। তবে, তিনি মূলত উত্তরবঙ্গের। তাই গোটা রাজ্যটাকে বুঝতে সময় লাগবে। সেই কাজটি শুভেন্দুবাবু স্বচ্ছন্দে করতে পারবেন তাঁর হয়ে, দল কৌশলে বিতর্ক সৃষ্টি হতে দেয়নি।
দিলীপবাবুর সঙ্গে দলের কোনও বিরোধ নেই, তিনি বিশ্বস্ত সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য, দল সেটা জানে বলেই এত বড় একটা সিদ্ধান্ত এত সহজে নিতে পেরেছে। আশঙ্কা হয় শুভেন্দুবাবুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে, কারণ উনি এখনও সঙ্ঘ পরিবারের কাছে দলবদলু রাজনৈতিক নেতা ছাড়া অন্য কিছু নন। তবে শুনেছি রাজনীতিতে, যুদ্ধে আর খেলার মাঠে সব কিছু নিয়ম মোতাবেক হয় না। তাই ড্রাইভার পরিবর্তন গাড়িকে কতটা দ্রুতগতি সম্পন্ন করতে পারে, সেই দিকেই তাকিয়ে থাকব।
রাজা বাগচি
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
চাই আত্মত্যাগ
দেবাশিস ভট্টাচার্য যে ভাবে বিজেপির নতুন সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ ছবি তুলে ধরেছেন, তা যে বাস্তবে পরিণত হবে না, তা আগাম বলে দেওয়া যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের আস্থা অর্জন করে ক্ষমতা দখল করেছেন বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে। ওই অবিরাম আত্মত্যাগ, অবিরত সংগ্রাম করার নেতা কোথায়? সব ভোগী, একটুতেই হাঁপিয়ে যান! বামপন্থীদের সাজানো বাগান হাতছাড়া। কংগ্রেসও জাদুঘরে। তাই মমতাকে আমজনতা আগলে রেখেছেন, তা কি বুঝতে অসুবিধা হয়? আর বিজেপি তো উগ্র সাম্প্রদায়িক, হিন্দুত্ববাদী, পুরুষতান্ত্রিক দল, তারা এই বাংলাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসতে কখনও পারবে না। রাজ্যের বিজেপি দল যে ভাবে তৃণমূল-সহ বিভিন্ন দল থেকে নেতা-কর্মী কিনে এনেছে, তাতে দলের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় না। শুধু ‘মিসড কল’ দিয়ে দলীয় সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি দেখানো কোনও সুস্থ রাজনীতিকের কাজ নয়। সুকান্ত মজুমদার নবীন বলেই বাংলার জনগণের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবেন, তা অসম্ভব বলে মনে করি।
মৃত্যুঞ্জয় বসু
কলকাতা-৩০
গলাগলি
‘পারাপার’ (সম্পাদকীয়, ২৩-৯) প্রসঙ্গে কিছু কথা। সন্ন্যাসীর পূর্বাশ্রম স্মৃতি বিলুপ্ত হওয়ার কথা সত্যিই মনে করায় সাম্প্রতিক রাজনীতির দলবদলের পালা দেখে। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের পূর্বে বিজেপি সাংসদের তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে বলা কথাগুলি নাগরিকদের মনে এখনও দগদগে ক্ষত হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।
পরস্পরের প্রতি কটু বাক্যের চালাচালিতে রাজনীতির পরিসরটি উত্তপ্ত হয়। সেখানে থাকে না সৌজন্যবোধের সামান্যতম নিদর্শন। অথচ, সেই উষ্মার সম্পর্কটিই যখন গলাগলিতে পরিণত হয়, তখন বিস্ময়ের চাইতেও আরও বেশি কিছু মনের ভিতরে জন্ম নেয়। দলে সামান্যতম স্বার্থ লঙ্ঘিত হলেই আজকাল নেতা, মন্ত্রী, পারিষদবর্গ সকলেই অন্য একটি ক্ষমতাশালী দলে চলে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। তাঁদের মুখে শোনা যায় মানুষের জন্য কাজ করার আকুতি। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবং পরে দল বদলের এই ধারাটিই বহমান। নির্বাচনের আগে এক দল রাজনীতিবিদ শাসক দলের অনুশাসনে দমবন্ধ হয়ে ছটফট করতে করতে অন্য দলে ‘কাজের পরিসর’ খুঁজে পেতে ভিড় জমিয়েছিলেন। আবার ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ‘কাজের পরিসর’ খুঁজে পেতে পুনর্বার শাসক দলের আঁচলতলে আশ্রয় পেতেই মরিয়া। এক সময়ে হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী এক সাংসদকেও দেখা গেল, মন্ত্রিত্ব খোয়া যেতেই আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে পরমত-সহিষ্ণুতার মন্ত্রে দীক্ষা নিলেন। তবে দলবদলু রাজনীতিকরা জার্সি বদলের পরেও কেন যে ছেড়ে-আসা দলের সাংসদ বা বিধায়ক পদে থেকেই যান, তা বোধগম্য হয় না। তাই জনগণকে পারাপারের এই খেলা এখনও দেখে যেতেই হবে।
সঞ্জয় রায়
দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
বহুরূপীর লজ্জা
‘পারাপার’ দলবদলুদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। এই ধরনের রাজনৈতিক নেতাদের কোনও মতাদর্শ নেই, এঁরা হলেন সুবিধাবাদী, যখন যে দিকের পাল্লা ভারী, সে দিকে ঢুকে পড়েন। যখন যে দলে থাকেন, সেই দল নিয়ে আস্ফালন করেন, এবং বিরোধী দলকে নিয়ে কুৎসা রটান। আবার যে-ই দেখলেন দলের জনপ্রিয়তা কমছে, বা তিনি আর সুবিধা পাচ্ছেন না, অমনি হুমড়ি খেয়ে বিরোধী দলে আশ্রয় নিচ্ছেন। যুক্তি দেখাচ্ছেন, ছেড়ে-আসা দলে কোনও স্বাধীনতা নেই, দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এঁরা হলেন বহুরূপী। শুধু নিজের ফয়দা বোঝেন এবং দরকার হলেই নীতি বিসর্জন দেন।
সর্বানী গুপ্ত
বড়জোড়া, বাঁকুড়া
চাষির আয়
‘আয়ে পিছিয়ে রাজ্যের চাষি’ (২০-৯) সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের ২০১৮-১৯ সালের জাতীয় নমুনা সমীক্ষায় সামনে এসেছে এ রাজ্যের কৃষকের করুণ চিত্র। দেশের কৃষকের মাসিক গড় আয় যেখানে ১০,২১৮ টাকা, সেখানে এ রাজ্যের কৃষকের মাসিক গড় আয় ৬৭৬২ টাকা। এ রাজ্যের কৃষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সূত্রে জানি, বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, শ্রম ইত্যাদি খাতে প্রচুর খরচের পর ফসলের অনিশ্চিত দাম এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির ফলে কৃষকের প্রকৃত আয় তলানিতে ঠেকেছে। তাই অনেক ছোট চাষি নিজের জমিতে চাষ করার চেয়ে অপরের জমিতে মজুর খাটাকে লাভজনক মনে করছেন। অথচ রাজ্য সরকার ২০১৮ সালে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল যে, এ রাজ্যের কৃষকের আয় ২০১০ সালের আয়ের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি, যা বিভ্রান্তি বাড়িয়ে তুলেছে। কেন্দ্রের রিপোর্ট প্রকাশের পর রাজ্য তার বিরোধিতা করেনি। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায়, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের রিপোর্ট সঠিক। তা হলে রাজ্যের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে যে রিপোর্ট কেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে কোন কোন সূচকের উপর ভিত্তি করে, কী ভাবে সমীক্ষা করে, কৃষকের এই বিরাট আয়ের পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছিল, তা প্রকাশ হওয়া দরকার। নয়তো হিসাবে ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে।
প্রদ্যোৎ পালুই
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া