Fire

সম্পাদক সমীপেষু: আগুনে যে পোড়ে না

কলকাতার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় হোর্ডিং-এ আগুনের ছবি আর লেখা ‘অগ্নি যাহাকে দগ্ধ করিতে পারে না’, ছোট্ট করে নীচে লেখা ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২২ ০৭:৪৬
Share:

আনন্দবাজার পত্রিকা-র ১০০ বছরের ইতিহাস সত্যিই গর্বের। ব্যক্তিগত ভাবে আমার তেইশ বছর আগের সেই দিনটার কথা (৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯) মনে পড়ছে। তখন আমি কলকাতার বালিগঞ্জে আইআইবিএস-এ শিক্ষকতা করতাম। শনিবার দিন সকালে নবদ্বীপ থেকে গিয়ে ক্লাস করতাম, রবিবার সারা দিন ক্লাস করে রাতের ট্রেনে ফিরতাম। সে দিন ছিল শুক্রবার, আনন্দবাজার-এর দফতরে আগুন লাগার খবর শুনে মনটা অত্যন্ত খারাপ। পরের দিন সকালে ট্রেনে চেপে কলকাতা যাচ্ছি। অন্য সব খবরের কাগজ বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু আনন্দবাজার পেলাম না। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। কলকাতায় নেমে বাসে-ট্রামে একটাই আলোচনা— আনন্দবাজার-এর কী হবে। অফিসে পৌঁছে আমি স্তম্ভিত। ভুল দেখছি না তো? আজকেরই আনন্দবাজার পত্রিকা তো? জানলাম, পাশের স্টেটসম্যান-এর ছাপাখানা থেকে নাকি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাগজ ছাপানো হয়েছে। মনে শান্তি এল। বাঙালি হিসাবে গর্ব হল। ক্লাসে গিয়েও ওই একই আলোচনা। কিন্তু তখনও বুঝিনি, রবিবার ফেরার সময় চমকের আরও কিছু বাকি আছে। এই খবরের কাগজটাকে আবার নতুন করে চিনব। দেখি, কলকাতার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় হোর্ডিং-এ আগুনের ছবি আর লেখা ‘অগ্নি যাহাকে দগ্ধ করিতে পারে না’, ছোট্ট করে নীচে লেখা ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল।

Advertisement

রামমোহন চক্রবর্তী

নবদ্বীপ, নদিয়া

Advertisement

বলিষ্ঠ

১৯২২ সালের ১৩ মার্চ। দোলপূর্ণিমার পুণ্যলগ্নে রক্তিম অক্ষরে তোমার আত্মপ্রকাশ। তখন তুমি নিতান্তই এক অঙ্কুর মাত্র। দেখতে দেখতে সেই অঙ্কুররূপী কলেবর বৃহৎ এক বৃক্ষের আকার নিল। বিস্তৃত কত ডালপালা-ফুল-ফলের সম্ভার নিয়েও ক্লান্তিহীন ভাবে তুমি শতবর্ষে পদার্পণ করলে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে জানা-অজানা কত ঝড়ঝাপ্টাই না তোমার মাথার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। তবুও তুমি দৃঢ়তার সঙ্গে মাথা উঁচু করে ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে আজ অবধি অমর ও অক্ষয়। নির্ভীকতা, নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতায় তোমার জুড়ি মেলা ভার। সততা ও জনহিতকর শক্তি নিয়ে যে কোনও অশুভ শক্তি ও আঁতাঁতকে তুমি পরাভূত করেছ। তাকে সম্বল করেই আজও তাই লক্ষ লক্ষ পাঠকের মন জয় করে চলেছ।

শতবর্ষের ভারে তুমি আজও নবীন, দুর্নিবার ও অপ্রতিরোধ্য। আরও দুর্বার গতিতে হোক তোমার শ্রীবৃদ্ধি। তোমাকে ছাড়া সকালের প্রথম চায়ের চুমুকটাই যেন বিস্বাদ লাগে। জন্মলগ্নের কাঠের ব্লকের সেই মলিন অক্ষরবিন্যাস ছেড়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ যন্ত্রগণককে দোসর করে সংবাদ পরিবেশন করছ। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নিজেকে আরও বৈচিত্রময় করে তুলেছ।

এই সুদীর্ঘ পথে তোমার মন-ক্যানভাসে দেশ-বিদেশের অতীত-বর্তমানের তাবড় বিশ্ববরেণ্য মহান ব্যক্তিত্বের যেমন অবস্থান, তেমনই সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, বাণিজ্য, ইতিহাস, রাজনীতি ও ক্রীড়া জগতে তুমি এক অনন্য এনসাইক্লোপিডিয়া। পাঠকের কাছে নিতান্ত সংবাদ পরিবেশন করেই ক্ষান্ত থাকোনি, জানতে চেয়েছ তাঁদের সুচিন্তিত মতামত-পরামর্শ। দেশের আর্থ-সামাজিক দিক-সহ বিভিন্ন সমস্যার প্রতি সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণই শুধু নয়, সেগুলির আশু সমাধানের পথ বাতলে দেওয়াতেও তোমার জবাব নেই। তোমার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ যথার্থই বুঝিয়ে দেয় দেশ ও দশের প্রতি ‘চতুর্থ স্তম্ভ’-এর দায়-দায়িত্ব। তাই তোমার লড়াই দীর্ঘজীবী হোক।

শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ, নদিয়া

পাঠকই প্রথম

বাঙালি মানে ঘুম থেকে উঠেই চায়ের কাপ আর খবরের কাগজ চাই। খুব ছোট থেকেই আমারও খবরের কাগজ পড়ার নেশা, আর খবরের কাগজ বলতে আমি বুঝি আনন্দবাজার পত্রিকা-কে। একশো বছর আগে এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি পুরোপুরি লাল কালিতে ছাপা হয়, যাকে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের মুখপত্র ইংলিশম্যান এক বিপদসঙ্কেত বলে গণ্য করেছিল। সত্যিই পরাধীন ভারতের স্বাধীনতার লক্ষ্যে আনন্দবাজার-ও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আপসহীন ভাবে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল থেকে দেশের স্বাধীনতা, নেতাজির সংগ্রাম থেকে তাঁর অন্তর্ধান, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে গান্ধী হত্যাই হোক বা জরুরি অবস্থা, ২৬/১১-র মুম্বই হামলা বা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম, সব খবর সব সময় গ্রাউন্ড জ়িরো থেকে পাঠকের বৈঠকখানায় পৌঁছে দিয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদল এসেছে তার কলেবরে, কিন্তু বদল হয়নি মানসিকতায়। আজও গণতন্ত্র রক্ষায়, দেশের ঐতিহ্য, ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রেখে রাজনীতির রং না দেখে খবর করে চলেছে। নির্ভীক, নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ খবর পরিবেশনই তার একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই তো আনন্দবাজার আজ ভারতে সর্বাধিক প্রচারিত প্রথম শ্রেণির বাংলা দৈনিক। অতিমারির সময় যখন ‘কাগজ থেকে করোনা সংক্রমণ’-এর গুজবে কান দিয়ে অনেক পাঠকই কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তখনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দবাজার পৌঁছে গিয়েছে পাঠকের দরবারে। কারণ, শতবর্ষে পৌঁছে আনন্দবাজার-এর কাছে আজও ‘পাঠকই প্রথম’।

দীপ্তরাজ সরকার

রানাঘাট, নদিয়া

একশোয় একশো

‘বাঙালির ভোরবেলা’ আনন্দবাজার পত্রিকা শতবর্ষ পার করে আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র হিসেবে এক অনন্য নজির তৈরি করেছে। প্রাক্-স্বাধীনতার সময় থেকে আজ পর্যন্ত এই পত্রিকা সংবাদপত্র জগতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে চলেছে। বলিষ্ঠ সম্পাদকীয়, উত্তর-সম্পাদকীয় ও সংবাদ বিশ্লেষণ এই কাগজকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। তথ্যনির্ভর স্বাদু, ঝরঝরে গদ্যে সংবাদ পরিবেশন পাঠককে টানে। সব খবরে সহমত না হয়েও বুঝতে পারি আনন্দবাজার-এর শিকড় পাঠকমনের অনেক গভীরে প্রোথিত। শাসক ও বিরোধীর রোষানলে দগ্ধ হয়েও আনন্দবাজার ব্যতিরেকে ‘তাঁদের দিন কাটে না’। সচিন তেন্ডুলকরের টেস্ট ও ওয়ান ডে ক্রিকেট মিলিয়ে শততম সেঞ্চুরির পরের দিনের (১৭ মার্চ, ২০১২) শিরোনাম ধার করে লিখি বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রভাতী দৈনিক হিসেবে আনন্দবাজার পত্রিকা ‘একশোয় একশো’।

দেবাশিস দাস

বোলপুর, বীরভূম

অবদান

গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে শতবর্ষ অতিক্রম করে যে সংবাদপত্র এখনও স্বমহিমায় বিরাজমান, ধারাবাহিক ভাবে তথ্যনিষ্ঠ, যথার্থ, প্রাসঙ্গিক ও নিরপেক্ষ, নিরন্তর সংবাদ প্রকাশে অবিচলিত, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, অনেক প্রতিকূলতাকে জয় করে বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণে, চিন্তনে, চেতনায়, অনুভবে সম্পৃক্ত হয়েছে, যে সংবাদপত্র পাঠ ব্যতীত বাঙালিয়ানা অপূর্ণ থেকে যায়, যা না পড়লে পিছিয়ে যেতে হয়, সেই সংবাদপত্র সমস্ত বাঙালির বড় প্রিয়, ভাল লাগার সঙ্গী। কত স্মৃতি, ইতিহাস, গৌরব, অমলিন মুহূর্ত এই কাগজ ঘিরে। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে হাতেখড়ি হয়েছিল এই কাগজের পাতায় চোখ বুলিয়ে। এখনও মনে গেঁথে আছে বাবার সেই কথা “বাংলা ভাষা শুদ্ধ ভাবে শিখতে, লিখতে ও পড়তে গেলে, খবরাখবর জানতে গেলে, সিলেবাসের পাশাপাশি সংবাদপত্রটাও পড়া দরকার।” বাবার কথাকে মান্যতা দিয়ে সুদীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একনাগাড়ে সানন্দে, সযত্নে পড়ে আসছি বাংলা ভাষার ধারক আনন্দবাজার পত্রিকা। বাঙালি হিসেবে যতটুকু বাংলা ভাষা শিখেছি, ভালবেসেছি, সেই চেতনা ও অনুভূতি বোধ সৃষ্টিতে আনন্দবাজার পত্রিকা-র অবদান অপরিসীম।

পাভেল আমান

হরিহর পাড়া, মুর্শিদাবাদ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement