এ বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হল পোস্টাল ব্যালটে। ওই দেশের ইতিহাসে এত বেশি ব্যালট কখনও ডাকযোগে প্রেরিত হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে এ ভাবে সকলের কাছে ভোট দেওয়ার সুযোগ পৌঁছে না দিলে এই বৃহৎ গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অন্য রকম হত। এ থেকে ভারতেরও কি কিছু শেখার নেই? সশরীরে বুথে হাজির থাকতে হবে, এই শর্ত অগণিত মানুষকে কার্যত গণতন্ত্র থেকে নির্বাসিত করে রেখেছে। তাঁদের ইচ্ছা, চাহিদার প্রতিফলন হয় না রাজনীতিতে। এঁদের অন্যতম পরিযায়ী শ্রমিকরা। ২০১২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৭৮ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকের ভোটার কার্ড রয়েছে। কিন্তু অপর একটি সমীক্ষা বলছে, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পেরেছিলেন মাত্র ৪৮ শতাংশ, ভিন রাজ্যে কর্মরতদের মাত্র ৩১ শতাংশ। আর্থিক কারণে অধিকাংশই বাড়ি ফিরতে পারেননি।
এর ফলে রাজনৈতিক প্রচারে তাঁদের সমস্যাগুলো উঠে আসে না, নীতিতেও তার প্রতিফলন হয় না। অন্য দেশে, অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে নিয়মিত প্রতারিত, নির্যাতিত হচ্ছেন তাঁরা। খুনও হয়েছেন অনেকে। সম্প্রতি লকডাউনে তাঁদের দলে দলে রাস্তায় হাঁটতে দেখা সত্ত্বেও যে কেন্দ্র কিংবা রাজ্যগুলির কার্যত কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না, তা-ও এই কারণে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কর্মরত বেশ কিছু সংস্থা ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে, যাতে তাঁদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করা হয়।
সমিরুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ
আহ্লাদ কেন?
‘স্বস্তিচিহ্ন’ (সম্পাদকীয়, ১০-১১) বলছে, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয় আমেরিকা কেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বের পক্ষেই একটি সুসংবাদ।’’ ডেমোক্র্যাটের এ জয় সান্ত্বনামাত্র। ভোটের সংখ্যায় পার্থক্য উনিশ-বিশ, তাও সেনেটে রিপাবলিকানরা এগিয়ে। বাইডেন নামেই প্রেসিডেন্ট হবেন। রিপাবলিকানরা সর্বদাই ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলবেন। এই নির্বাচনী ফলে আমেরিকার দেশি ও বিদেশি নীতির মৌলিক বদল হবে, এ আশা অবান্তর। আমেরিকান পুঁজিবাদের স্বার্থ আগে দেখতে হবে বাইডেনকে। আমেরিকার নাগরিককে আগে কাজের সুযোগ দিতে হবে। যুদ্ধাস্ত্র-নির্ভর আমেরিকান বিদেশনীতির বদল হবে না, কারণ এ সব দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিনির্ভর। সুতরাং, ভারতবাসীর আহ্লাদিত হওয়ার কারণ দেখি না।
শুধু একটি ব্যাপারে ক্ষীণ আশা জাগছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ও ব্যক্তি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের খামখেয়ালি, উদ্ধত, অবৈজ্ঞানিক, অসঙ্গত আচরণ দেখতে হবে না। বিশ্বে তো বটেই, ভারতেও অসংযত রাষ্ট্রনায়করা এ থেকে শিক্ষা নেবেন। এইখানেই গণতন্ত্রের জয়।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
অনন্য কমলা
আমরা প্রবাসী ভারতীয়, আমেরিকার নাগরিক নই। নেই সেখানে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা। কিন্তু এ বার নির্বাচন যেন হাল্লা রাজার শাসন ভাঙার লড়াই। ব্যালট বাক্সের সামনে না যেতে পারলেও আমাদের কাছে বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়ার সুযোগ, মন থেকে চাইলে রাজনীতিটাকে ‘বাই দ্য পিপল’ করা যায়। সেই পরিবর্তনের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছে কে? এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত, শ্যামবর্ণা, দাপুটে কিন্তু সংযমী, অনন্য ব্যক্তিত্বময়ী মেয়ে— কমলা হ্যারিস। বাইরে থেকে অনেকেই বুঝতে পারেন না, কতটা পুং-শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী এই দেশ। গাত্রবর্ণ এবং লিঙ্গ, দুই দিকেই আধিপত্যের ধারণা প্রবল। সেখানে মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হ্যারিসের উপস্থিতি আশার আলো দেখায়।
ডেলাওয়ারের মঞ্চে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা শুনে আবার আশা জাগল, কমবে সংক্রমণ, সুস্থ হবে স্টক মার্কেট এবং অর্থনীতি। হবে যথার্থ বিশ্বায়ন। জো বাইডেন-কমলা হ্যারিসের হাত ধরে অনেক দিন পর আমেরিকার আকাশ আজ ফের নীল।
সুস্মিতা রায়চৌধুরী, নিউ জার্সি
গণতন্ত্রের নেতা
আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর জোসেফ বাইডেন বললেন ‘‘আমাকে ভোট দিন বা না দিন, আমি সব আমেরিকানেরই প্রেসিডেন্ট।’’ এই একটা কথাতেই উনি বুঝিয়ে দিয়েছেন গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কেমন মানসিকতা হওয়া উচিত। আমাদের দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জয়ী হওয়ার পর বুঝিয়ে দেন, তাঁকে যে এলাকার মানুষ ভোট দেননি, সেখানে কোনও উন্নয়ন হবে না। ভোটের আগেও একই হুমকি দেওয়া হয়। আর সেটাই বাস্তবে দেখা যায়। পরাজিত এলাকার উন্নয়ন থমকে থাকে।
আসলে এঁরা ‘আমরা-ওরা’-তে বিশ্বাসী। মন্ত্রী হওয়ার পরও তাই নিজেদের সকল মানুষের প্রতিনিধি ভাবতে পারেন না। অথচ এঁরাই নিজেদের গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক হিসেবে ঘোষণা করেন!
শ্রীমন্ত দাস, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি
সাদা-কালো
সেমন্তী ঘোষের ‘একেই তবে বলে গণতন্ত্র’ (৬-১১) শীর্ষক নিবন্ধে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটা সঙ্কটের ছায়া দেখতে পাচ্ছি, যা আমেরিকা ছাড়িয়ে ভারতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি এক জায়গায় বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্রের নামে একাধিপত্যের তন্ত্র’’ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি ফ্রান্স, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা ঘোষণা করছেন যে, তাঁরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁদের পদে আসীন থাকতে চান! গণতান্ত্রিক একনায়কত্বের একটা চেতনা যেন দেখা যাচ্ছে। আমেরিকায় এ বার আমরা যেটা দেখলাম, সেটা মূলত সাদা চামড়া বনাম কালো চামড়ার লড়াই। ট্রাম্প বরাবর প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, তিনি কালো চামড়ার আধিপত্যকে মানতে পারবেন না। এতে সংখ্যাগুরু সাদা চামড়ার মানুষদের অধিকাংশের সমর্থন তিনি অর্জন করতে পেরেছেন। বাইডেন বেশির ভাগ সাদা চামড়ার সমর্থন পাননি। আমেরিকা এক সময় গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল। সেই যুদ্ধে আবার অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে।
বাঁধন চক্রবর্তী, আগরতলা, ত্রিপুরা
চাকা ঘোরাতে
জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তবু্ও তো চাকা ঘুরল’ (৯-১১) নিবন্ধের মূল কথা, ভারতবাসী কি পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে আমেরিকার মতো পরিবর্তনের পথ বেছে নেবেন? এটা খুব সত্যি যে, ট্রাম্প ও মোদী একে অপরের ‘কার্বন কপি’। কিন্তু আমাদের দেশের শিল্পপতি, বলিউড এবং মিডিয়ার গরিষ্ঠ অংশ মোদী সরকারের পেটোয়া। আমেরিকাতে কিন্তু এঁরাই বিরোধী সমাজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাহায্য করেছেন। বিভিন্ন রাজ্যে দেখতে পাই সংবাদমাধ্যমের একাংশের উপর আক্রমণ নেমে আসছে, কিন্তু বাকিরা তার বিরোধিতা করে গর্জে ওঠে না। কিছু শিল্পপতি অনৈতিক ভাবে নানা সুযোগ পেলেও অন্যরা নীরব থাকেন। বিরোধী প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর অর্থের বিনিময়ে শাসক দলে নাম লেখান। আর সেই জন্যই নোটবন্দি, দাঙ্গা, কোভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের চূড়ান্ত হয়রানি সত্ত্বেও বিরোধী স্বর সে ভাবে জেগে ওঠে না। দেশ জুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব, অবসরের পর কিছু টাকা থাকলেও যে হারে সুদ পাওয়া যাবে, তাতে ভাল ভাবে বেঁচে থাকা মুশকিল। এত সব কিছুর পরেও যখন দেখি ভোটবাক্স ভরে ওঠে শাসক দলের, তখন শঙ্কিত হতে হয় ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
তবু ভেঙে পড়লে চলবে না, লড়াই জারি রাখতেই হবে, কেন না আজ সত্যিই সময় এসেছে পরিবর্তনের। ভাল ভাবে আগামী দিনে বেঁচে থাকার জন্যে পরিবর্তন।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।